তৃণমূলে ঐক্য সুদৃঢ় করতে মাঠে নামছে আওয়ামী লীগ
তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ঐক্য সুদৃঢ় করতে মাঠে নামছে দলটি। আগামী ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসের মধ্যে তৃণমূল আওয়ামী লীগের মাঝে পৌঁছে যাবে সুদৃঢ় ঐক্যের বার্তা। পরিকল্পনা করা হচ্ছে সারাদেশে সাংগঠনিক সফরের মাধ্যমে দলের বিভিন্ন শাখার দ্বন্দ্ব-কোন্দল নিরসন করে দ্রুত মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে তৃণমূল পর্যায়ের সম্মেলন সম্পন্ন করা। এ জন্য চলমান সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কার্যক্রম জোরদার করছে দলটি।পাশাপাশি চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলের সাংগঠনিক ঐক্য নিয়ে চুল চেরা বিশ্লেষণ। লক্ষ্য হচ্ছে আগামী বছর জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠানসহ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলকে সাংগঠনিক ভাবে শক্তিশালী করে তোলা।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, আগামী ১৯ নভেম্বর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে।বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, করোনাকালে রাজনৈতিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে কয়েক দফা উদ্যোগের পরও আওয়ামী লীগের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র ৩৩টি জেলার সম্মেলন করা গেছে। বাকি রয়েছে ৪৩টি সাংগঠনিক জেলা সম্মেলন। সিংহভাগ উপজেলা, পৌরসভা ও অন্য ইউনিট কমিটিও মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়েছে দীর্ঘদিন হয়। আর দীর্ঘদিন ধরে সম্মেলন না হওয়ায় প্রায় সব জায়গাতেই একচ্ছত্র ক্ষমতার বলয় তৈরি হয়েছে। বাড়ছে দ্বন্দ্ব-কোন্দল এবং মন্থর হয়ে পড়েছে সাংগঠনিক কার্যক্রম। যার প্রভাব পড়ছে চলমান স্থানীয় সরকার নির্বাচনে। ত্যাগী, দক্ষ ও স্বচ্ছ-পরিচ্ছন্ন ইমেজের নেতারা দলে জায়গা না পেয়ে হতাশ হয়ে নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছেন। এই অবস্থায় বিভিন্ন সম্মেলন শেষ করে দক্ষ ও স্বচ্ছ-পরিচ্ছন্ন ইমেজের নেতাদের নিয়ে নতুন নেতৃত্ব গড়ে তোলার পরিকল্পনাও রয়েছে দলের।
স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্ব-কোন্দলের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য এবং সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) ফারুক খান বার্তা২৪.কমকে বলেন, চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলের ভিতর ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হলেও জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সব কিছুর অবসান হবে। সংসদীয় কমিটির সভায় সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা তাদের রিপোর্ট উপস্থাপন করবেন। রিপোর্ট অনুযায়ী আমাদের নেত্রী সংসদীয় কমিটির সভার সভাপতি শেখ হাসিনা আলোচনা করে করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে কি কি বিষয়ে আলোচনা হতে পারে এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডিসেম্বর-জানুয়ারি থেকে সাংগঠনিক কার্যক্রম পুনরায় শুরু হবে। আগামী দুই তিন মাসে আমাদের যে সমস্ত প্রোগ্রাম আছে তার কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা হবে।
সংসদ নির্বাচনের এখনও দুই বছর বাকি তারপরও সংসদ নির্বাচনের জন্য আমরা প্রস্তুতি গ্রহণ শুরু করেছি। দ্বাদশ নির্বাচনে প্রস্তুতির পাশাপাশি স্থানীয় সরকারের যে কোনও নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য আমাদের প্রস্তুতি আছে। সেই অনুযায়ী সাংগঠনিকভাবে আমাদের নির্দেশনা দেওয়া আছে।
নির্বাচন ছাড়াও দলের ভিতরে অন্যান্য বিতর্ক সৃষ্টিকারীদের বিষয়ে তিনি বলেন, সংসদীয় কমিটির সভায় গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। এছাড়াও এদিন সাংগঠনিক শৃঙ্খলাবিরোধী কিছু উপস্থাপনীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।
সভায় নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনার কথা নাকোজ করার পাশাপাশি ৪র্থ ও ৫ম ধাপের ইউপি নির্বাচনে প্রার্থী উন্মুক্ত রাখার বিষয়ে দলে ভিতরে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি বলেও জানান আ.লীগের এই সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য।
সব মিলিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই দলের মধ্যে ঐক্য নিশ্চিত করে দলকে আরও শক্তিশালী করার সব পরিকল্পনা গুছিয়ে আনতে চায় আওয়ামী লীগ। দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি একাধিক অনুষ্ঠানে এ প্রসঙ্গে বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য দলীয় প্রস্তুতি এরই মধ্যে শুরু করেছেন তারা। আগামী দিনে এই প্রস্তুতি এগিয়ে নিতে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমকে আরও জোরদার করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।