৬ দফা ঘোষণাই ছিল স্বাধীনতার প্রথম ভিত্তির সোপান: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুর ঘোষিত বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফাই ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ভিত্তি সোপান।
শুক্রবার (৭ জুন) সকালে ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস পালনোপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউট হলে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের প্রথম স্বাধীনতা বার্ষিকীর দুদিন আগে ১২ আগস্ট এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, ১৪ আগস্ট স্বাধীনতা দিবস অর্থহীন। কেননা পাকিস্তান নামক সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র কাঠামোয় কখনো বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠা ও পরিপূর্ণ মুক্তি অর্জন সম্ভব নয়। ১৯৫৮ সালে বঙ্গবন্ধু যখন কারাগারে তখন কমিউনিস্ট পার্টি নেতা কমরেড মনি সিংহেকে লেখা এক চিঠিতে বলেছিলেন, আমি স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। আপনারা আমার সাথে থাকবেন কিনা বলুন। বঙ্গবন্ধু এও জানতেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য কে তাঁর পাশে থাকবেন বা থাকবেন না এটা বড় কথা নয়। তাঁকে কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতার জন্য ধাপে ধাপে প্রস্তুতি নিতে হবে। এই স্বাধীনতার লড়াইয়ের প্রথম প্রস্তুতি লড়াই ছিল ঐতিহাসিক ৬ দফার ঘোষণা।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান আন্দোলনের পক্ষে একজন সম্মুখ কাণ্ডারী হলেও দেশ বিভাগের পূর্বেই বুঝে গিয়েছিলেন বাঙালির দাসত্বের শৃঙ্খল ঘুচবে না। সেদিন এই অমোঘ সত্যটি তখনকার সময়ে অনেক সিনিয়র নেতা না বুঝলেও তরুণ শেখ মুজিবুর রহমান বুঝতে পেরেছিলেন বাঙালির স্বাধীনতা ও মুক্তির জন্য তাঁকে একাই হাল ধরতে হবে। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে অনেকগুলো ধাপ পেরিয়ে বঙ্গবন্ধু ডাক দিয়েছিলেন এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম; এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম। তিনি এই ঘোষণার মাধ্যমে সরাসরি স্বাধীনতা ঘোষণা না করলেও বাঙালিকে একটি জনযুদ্ধ শুরু করার প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
ঐ সময়কার পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এই মর্মে রিপোর্ট করেছিল যে, শেখ মুজিব সুকৌশলে স্বাধীনতার ঘোষণা করলেও আমাদের করার কিছুই ছিল না। আমরা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলাম। তাই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণার প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করার পরও তাঁকে বিচ্ছিন্নতাবাদী বলে অপবাদ দেওয়ার কোন সুযোগ তিনি দেননি। তাই মহান মুক্তিযুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিশ্ব বিচ্ছিন্নতাবাদী অপচেষ্টা বলে অভিহিত করতে পারেননি। এটাই ছিল বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী রাজনৈতিক কৌশলের সার্থকতা।
তিনি আরো উল্লেখ করেন, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পর একটি যুদ্ধ বিধস্ত দেশকে সোনার বাংলায় রূপায়নে স্বপ্ন দেখেছিলেন কিন্তু ৭১ এর পরাজিত শক্তি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তের মদদে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করলেও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও স্বপ্নকে চূর্ণ করতে পারে নি। তাঁর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা একটি বিপন্ন তরীর হাল ধরে এদেশকে আন্তর্জাতিক বিশ্বে মর্যাদাবান জাতিরাষ্ট্রে উন্নীত করেছেন।
বিগত ১৫ বছরে বাংলাদেশ ৬০তম অর্থনৈতিক দেশ থেকে ৩২তম দেশে অবস্থানে উন্নীত হয়েছে। ২৮টি দেশকে পেছনে ফেলেছে। পিছিয়ে ফেলা দেশগুলোর মধ্যে মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরও আছে। আমরা অনেক উন্নয়ন ও মানবিক সূচকে পাকিস্তান তো বটেই প্রতিবেশী ভারতকেও পেছনে ফেলেছি। জাতীয় প্রবৃদ্ধির হার ভারতের চেয়ে এগিয়ে। এসব কিছু সম্ভব হয়েছে একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণতা ও দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক চৌধুরী হাছান মাহমুদ হাসনীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এড. ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, সিডিএ চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য মোঃ ইউনুছ, উপদেষ্টা আলহাজ্ব সফর আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য নোমান আল মাহমুদ, কার্যনির্বাহী সদস্য আব্দুল লতিফ টিপু, নেছার উদ্দীন আহমেদ মঞ্জু প্রমুখ। এছাড়া ১৫টি থানা ৪৪ সাংগঠনিক ওয়ার্ড ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা স্বতঃর্ফূতভাবে ৬ দফা দিবসের আলোচনা সভায় অংশ গ্রহণ করেন।