‘অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রত্যাশা-প্রাপ্তির লাগাম টেনে ধরতে হবে’
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে যে সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তার কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক। কিন্তু আমাদের প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তির মধ্যে একটু লাগাম টেনে ধরতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
বুধবার (২৮ আগষ্ট) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ‘জাতীয়তাবাদী প্রজন্ম’৭১-এর ১৯ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা অনেক। ১৮ বছর যাবত জগদ্দল পাথরের মতো যারা বুকে চেপে বসেছিল, অন্যায়, দুঃশাসন, নির্যাতনে নিষ্পেষিত এদেশের মানুষ এবং এই সমাজ আজকে বিভাজিত। এই সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করতে হলে এই সমাজকে সামনের দিকে নিয়ে যেতে হলে ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্যারের নেতৃত্বে যে সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তার কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক। কিন্তু মনে রাখতে হবে প্রত্যাশা অনেক থাকলেও এই সরকার শুধু প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধন করে জনগণের সরকারের কাছে দায়িত্ব দিবে।
কাজেই আমাদের প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তির মধ্যে একটু লাগাম টেনে ধরতে হবে। কোন অবস্থাতেই এমন কোন কার্যক্রম গ্রহণ করা সঠিক হবে না, কারণ প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে নিম্ন পর্যায় পর্যন্ত প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে তাদের (আওয়ামী লীগ) লোক বহাল তবিয়তে বসে আছে। কিছু লোক সরেছে মাত্র। এদেরকে ক্লিন করতে হবে, সময়ও দিতে হবে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসরা শুধু বাংলাদেশে না, এই পৃথিবীতে অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় এবং যার প্রতি মানুষের আস্থা এবং বিশ্বাস রয়েছে। কাজেই এই বিশ্বাস দেওয়াকে খারাপভাবে দেখার কোন কারণ নেই। কাজেই যত দ্রুত সম্ভব তার যে কার্যনির্বাহী কমিটি আছে তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে বিচক্ষণতার সাথে এই প্রশাসন নির্দলীয়করণ করতে হবে অর্থাৎ বৈষম্যবিরোধী নয়, বৈষম্যের শিকার মানুষগুলোকে তাদের অধিকার দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফিরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে গুমের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করেছে, অর্থাৎ শুরু করেছে শেখ হাসিনা। বিনা বিচারে হত্যাকাণ্ড শুরু হয়েছিল। অর্থাৎ এরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেনা, আইনের শাসনে বিশ্বাস করেনা। শত শত সাংবাদিক চাকরিচ্যুত হলো। অনেক টিভিসহ পত্রিকা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। প্রত্যেকটা সংবাদপত্র এবং মিডিয়া হাউজকে তারা ভয়ভীতির সংস্কৃতির মধ্যে নিয়ে সেল্ফ সেন্সরশিপ এবং প্রেসার সেন্সরশিপ চালু করে দখল করে নিয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, সত্য কথা বলার জন্য কোটা আন্দোলন চলছিল। কিন্তু সে আন্দোলনকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছিল তৎকালীন নেতারা। সেগুলো যদি রিওয়াইন্ড করে শুনেন তাহলে বুঝতে পারবেন তাদের চিন্তা-ভাবনা কতটা সংকীর্ণ, কতটা প্রতিহিংসাপরায়ণ এবং কতটা কর্তৃত্ববাদী ছিল। সেই আন্দোলনই আস্তে আস্তে জনগণের আন্দোলনে পরিণত হয়েছিল। অনেকগুলো দফা থেকে এক দফায় চলে এসেছিল। কারণ জনগণ বুঝতে পেরেছিল তাদের (আওয়ামী লীগ) পতন ছাড়া এক দফা, আট দফা বা নয় দফা কোন কিছুই আর কাজ হবে না।
হাসপাতালের আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, এখনো হাসপাতালে শত শত ছাত্র-ছাত্রীরা, ভাই-বোনেরা আহত হয়ে ভর্তি আছে। কেউ হাত হারিয়েছে, কেউ পা হাতিয়েছে, কেউ চোখ হারিয়েছে। তাদের সুস্থতা তাদের পুনর্বাসনের জন্য সরকার এবং আমরা সবাই মিলে পাশে দাঁড়াবো। কারণ তারা এই দেশের মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য দায়িত্ব পালন করেছেন।