পাশের দেশ আমাদের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে: জামায়াত সেক্রেটারী
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল ও বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, পাশের দেশের সরকার ও সরকারি দলের নেতারা বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে কথা বলে আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে। আমাদের অভিন্ন নদীসহ বিভিন্ন বিষয়ে তারা আমাদের অধিকারে হস্তক্ষেপ করছে। আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারকে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্বশীলদের আমরা বলছি, সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোনো অপশক্তি ও আধিপত্যবাদীর চোখ রাঙানিকে আপনারা ভয় পাবেন না।
শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম রেলওয়ে পলোগ্রাউন্ড মাঠে চট্টগ্রাম মহানগরী শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমরা আজ বেদনা ও শ্রদ্ধার সাথে শহীদ অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফের নাম স্মরণ করছি। শহিদ আলিফের নাম বাংলাদেশের ইতিহাসে আধিপত্যবাদবিরোধী সংগ্রামী হিসেবে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। সারা দেশের মুক্তিকামী মানুষ আপনাদের সাথে আছে। একটি গ্রহণযোগ্য সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অন্তবর্তীকালীন সরকারকে কাজ করতে হবে। নতুন বাংলাদেশ নির্মাণে আজকের এই সম্মেলন ঐতিহাসিক ভূমিকা রাখবে।
শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় এ উপদেষ্টা বলেন, সকল কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন করার অবাধ অধিকার দিতে হবে। একসময় ট্রেড ইউনিয়ন ছিল স্কুল অব কম্যুনিজম। অবশেষে ইসলামী আদের্শ বিশ্বাসী কিংবদন্তি দুই শ্রমিকনেতা ব্যারিস্টার কুরবান আলী ও ব্যারিস্টার আক্তার উদ্দিন শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম শুরু করেন। আর ট্রেড ইউনিয়নে নতুন ধারা তৈরি হলো। ট্রেড ইউনিয়নকে স্কুল অব ইসলামে পরিণত করার চেষ্টা শুরু করেছেন আমাদের পূর্ববর্তী নেতারা। আজকে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ ট্রেড ইউনিয়ন নিয়ে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন সর্ববৃহৎ শ্রমিক সংগঠন। আমাদের পূর্বসুরিরা যে পতাকা আমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন, সেটা বিজয়ী না হওয়া পর্যন্ত আমাদের পথচলা থামবে না।
প্রধান বক্তা মুহাম্মদ শাহজাহান তার বক্তব্যে বলেন, শ্রমিক-মালিক পরিচয়ের ভিত্তিতে আল্লাহর কাছে মর্যাদা নিরুপিত হয় না। বরং তাকওয়ার মাধ্যমে মর্যাদা নিরুপিত হয়।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে হারুনুর রশিদ খান বলেন, ইসলামী শ্রমনীতি প্রতিষ্ঠার আহ্বান সকল শ্রমিকের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। ক্ষুধার্থ, বস্ত্রহীন মানুষদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলামী শ্রমনীতি প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। তাই শ্রমিকজনতাকে ইসলামী শ্রমনীতি প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
বিশেষ অতিথি সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী বলেন, শ্রমিক-কর্মচারী ভাই-বন্ধুরা আগস্টের গণ-আন্দোলনে রাজপথে দুর্বার ভূমিকা রেখেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্রজনতার পাশে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শ্রমিক-কর্মচারীরা রাজপথে রক্ত দিয়েছে। মধ্যবিত্ত পরিবারের ও গরিবের সন্তানরাই চব্বিশে রাজপথকে রক্ত দিয়ে লাল করেছে।
বিশেষ অতিথি অধ্যাপক আহসান উল্লাহ বলেন, বেকারত্ব দূর করা ছাড়া বাংলাদেশের অর্থনীতিকে চাঙা করা যাবে না। আর কলকারখানা বন্ধ রেখে বেকারত্ব দূর করা যাবে না। তাই অবিলম্বে চট্টগ্রাম মহানগরীর আদমজী জুটমিলসহ সারা দেশে বন্ধকৃত মিল-কারখানা চালু করতে হবে।
সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান, চট্টগ্রাম মহানগরীর উপদেষ্টা নজরুল ইসলাম, অধ্যক্ষ নূরুল আমীন, উত্তর জেলার প্রধান উপদেষ্টা আলাউদ্দীন সিকদার, ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক মুহাম্মদ ইসহাক, মহানগরীর উপদেষ্টা খায়রুল বাশার, সাবেক কাউন্সিলর অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী, উত্তর জেলা সভাপতি ইউসুফ বিন আবু বকর, ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম মহানগরী দক্ষিণ সভাপতি শহীদুল ইসলাম এবং মহানগরীর নির্বাহী পরিষদ সদস্যবৃন্দ ও থানা-সেক্টর নেতারা।
সম্মেলনে কাউন্সিলরদের অংশগ্রহণে নির্বাচন পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক লস্কর মুহাম্মদ তসলিম। ২০২৫-২৬ সেশনের জন্য চট্টগ্রাম মহানগরীর সভাপতি নির্বাচিত হন এস এম লুৎফর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন আবু তালেব চৌধুরী।’