সাধারণ ছাত্রদের কষ্টের কারণ হতে চায় না ছাত্রশিবির

  • স্টাফ করেপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা। ছবি: বার্তা২৪.কম

সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা। ছবি: বার্তা২৪.কম

চট্টগ্রাম মহানগর (উত্তর) ছাত্রশিবিরের সভাপতি ফখরুল ইসলাম বলেছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে আমাদের সিদ্ধান্তের কিছু নেই। সেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীরাই থাকবে। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রশিবির আছে। কিন্তু আমরা প্রতিষ্ঠানে ওপেন, যেটি আগে ছাত্রলীগ করে আসছে বা রাজনৈতিক সংগঠনগুলো করে আসছে সেটা আমরা করতে চাচ্ছি না। কারণ যতদিন না সাধারণ ছাত্রদের ভেতরে ছাত্র রাজনীতির প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হবে ততদিন এ কার্যক্রমগুলো সাধারণ ছাত্রদের অনেক বেশি কষ্ট দিবে। আমরা চাই না সাধারণ ছাত্রদের কষ্টের কোনো কারণ ছাত্রশিবির হোক। সেজন্য সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আমরা আমাদের একইনীতি অবলম্বন করছি।

শনিবার (৩০ নভেম্বর) বেলা ১২টার দিকে নগরীর চকবাজার থানার ডিসি রোড এলাকায় সংগঠনির কার্যালয় আরইসরা ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

এর আগে ছাত্রশিবিরের বিভিন্ন কার্যক্রমের বিষয়ে সাংবাদিকদের কাছে মতামত চান নগর শিবিরের সভাপতি ফখরুল ইসলাম। এসময় চট্টগ্রামে কর্মরত অর্ধশতাকি সাংবাদিক নানা বিষয় তুলে ধরে ছাত্রশিবিরকে মতামত দেন।

ফখরুল ইসলাম বলেন, বর্তমান সময়ে ছাত্রদের মধ্যে ছাত্ররাজনীতে সম্পর্কে একটা নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। ছাত্রশিবির চায় প্রথমত ছাত্রদের ভেতর থেকে এই ধরনের ভয়টা দূর করতে। বিগত ১৬ বছর ছাত্রলীগ যেমন ছাত্ররাজনীতির নামে দমনপীড়ন ও এক ধরনের স্বৈরাচারীর চেতনার চিন্তা ছাত্রদের মাঝে ঢুকিয়ে দিয়েছে। ছাত্রশিবির চায় এই ধরনের আধিপত্যবাদী ছাত্ররাজনীতি যেন না থাকে। সকলেই যাতে রাজনীতির প্রতি আন্তরিক হয়। এজন্য ছাত্রশিবির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঢোকার সময় কাউকে বাধা দেয় না। ছাত্রশিবিরের ঘোষণা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সাধারণ ছাত্রদের। যে সাধারণ ছাত্র সে তার প্রতিষ্ঠানে যাবে, তার দায়িত্ব পালন করবে।

বিজ্ঞাপন

‘অনেকে চট্টগ্রাম পলিটেকনিক, মহসিন ও চট্টগ্রাম কলেজ প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করেছেন। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, সাধারণ ছাত্ররাই ক্যাম্পাসগুলো পরিচালনা করছে। এবং সাধারণ ছাত্রের ভেতর ছাত্রশিবির, ছাত্রদলসহ বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীরা আছেন। এককভাবে যে শিবির আধিপত্যবাদ কি সেটাতে আমরা বিশ্বাসী নয়। সম্প্রতি পলিটেকনিক গেট ইস্যুতে অনেক গণমাধ্যম ছাত্রশিবির কে দোষারোপ করেছেন। আমরা অনুরোধ করবো আপনারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন আসলে সেখানে কি ঘটেছিল। সাধারণ ছাত্রদের ভূমিকা যেটাই ছাত্রশিবির সেটাতেই সমর্থন দিবে। মূলত ওইখানে হল খোলাকে কেন্দ্র করে গণ্ডগোল হয়েছিল। সাংবাদিকরা ভালোভাবে তদন্ত করলে বিষয়গুলো আরো ভালো করে উঠে আসবে।’

সঠিক তথ্য প্রচারের অনুরোধ জানিয়ে সাংবাদিকদের নগর শিবির সভাপতি বলেন, সাংবাদিক বা পত্রপত্রিকা যে বিষয়টি প্রকাশ করে মানুষ আগে তা বিশ্বাস করে। পরে মানুষ সেটা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করে। আপনারা যখন নিউজ করেন আমরা খুব বেশি কষ্ট পাই, আপনাদের শিরোনাম দেখে। সরাসরি শিবিরের নাম সম্পৃক্ত করতে চায় অনেক সাংবাদিক ভাইয়েরা। আপনারা জাতির বিবেক। নিউজের ভেতরে সবার মতামত থাকবে ঠিক আছে, শিরোনামটাও ওভাবে হওয়া দরকার। মানুষ শুরুতে শিরোনামটা দেখে বিশ্বাস করে। তাই বলবো ভেতরে যেভাবে থাকবে শিরোনামে যেন সেটি উঠে আসে। আমরা আপনাদেরকে অনুরোধ করব, আপনারা সঠিক বিষয়টি তুলে আনেন। আর এই সঠিক ইনফরমেশনটা আসে শিরোনামের মাধ্যমে। আমরা অনেক সময় আমাদের সাংবাদিক বন্ধুদেরকে ফোন করে বিষয়টি অনুরোধ করেছি, এভাবে না দিলেও চলতো। অনেক সময় সত্যতা যাচাই না করে আমাদেরকে দোষী সাব্যস্ত করা হচ্ছে, সামনে থেকে বিষয়টি খেয়াল রাখতে সাংবাদিকদেরকে অনুরোধ করব। অনেক বেশি সচেতনতার সাথে বিবেকবান হয়ে আপনারা সংবাদ প্রচার করবেন বলে আশাকরি।

ফখরুল ইসলাম বলেন, আমরা ৩৬শে জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে একটি ফ্যাসিবাদ শক্তিকে দেশ থেকে দূর করেছি। আমরা চাই না নতুন কোনো ফ্যাসিবাদ এসে আমাদের সামনে উপস্থিত হোক। এক্ষেত্রে সাংবাদিক ভাইয়েরা সবচেয়ে বেশি অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। আমরা দেখেছি বিগত সরকারের আমলে হাউস পলিসির কারণে আপনারা অনেকে ফ্যাসিবাদের বাইরে আসতে পারেন নাই। আমরা এমন হাউজ পলিসি চাই না, যে হাউস পলিসি ফ্যাসিবাদকে পৃষ্ঠপোষকতা করে, সহযোগিতা করে। আমরা এমন হাউজ পলিমি চাই, যে ফ্যাসিবাদদের বিরুদ্ধে থাকবে, সাধারণ জনগণ এবং ছাত্রদের পক্ষে থাকবে। আমরা এমন হাউজ চাই যে হাউস সাংবাদিকতার মূল পেশাদারিত্ব তুলে ধরবে। এমন পলিসি কেন তৈরি হবে, যে পলিসির কারণে সাংবাদিকদের পেশাদারিত্ব নিয়ে জনগণ বা আমরা প্রশ্ন তুলবো না? আমরা চাইবো আপনাদের যারা পলিসি মেকার রয়েছেন তাদের কাছে বিষয়টি তুলে ধরবেন। যাতে আজীবন সাংবাদিকদের বন্ধু ও অভিভাবক গণ্য করি।

শিবির ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে নয় জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমরা অবশ্যই ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে নই, আমরা আধিপত্যবাদ ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে। আমরা চাই এদেশে নতুন কোন আধিপত্যবাদ ছাত্র রাজনীতি বা নতুন কোনো আধিপত্যবাদ আমাদের যেন গ্রাস না করে। যে গ্রাস থেকে অনেক কষ্টের বিনিময়ে দীর্ঘ ১৬ বছর পর প্রায় ২ হাজার শহীদদের রক্তের বিনিময় আমরা ফ্যাসিবাদকে দূর করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা চাই না নতুন কোনো আধিপত্যবাদ, নতুন কোন ফ্যাসিবাদ আমাদের ওপর এসে পড়ুক।

লিখিত বক্তব্যে শিবির সভাপতি বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছরের আওয়ামী স্বৈরতন্ত্রের  নির্মম পরিহাস থেকে রক্ষা পায়নি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ,  চট্টগ্রাম কলেজ, মহসিন কলেজ। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ছিল ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখল বাণিজ্যসহ নানান অপরাধের নিরব সাক্ষী। পতিত স্বৈরচার জুলাই বিপ্লবকে বেহাত করতে নানান ষড়যন্ত্রের পায়তারা করে আসছে। চট্টগ্রামেও  ইতোমধ্যে কয়েক দফা ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালানো হয়ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখনো পতিত স্বৈরচারের দোসরদের তৎপর পরিলক্ষিত হচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন ব্যনারে।

‘অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এই নগরীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পতিত স্বৈরচারের আমলে ক্ষতিগ্রস্থ শিক্ষার পরিবেশ সংষ্কারে ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে সকল ছাত্রসংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করার কোনো বিকল্প নেই।  দায়িত্বশীল ছাত্র সংগঠন হিসেবে শিক্ষা ও শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনে আমরা আমদের সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে সর্বোত্তমভাবে আমাদের কার্যক্রম পরিচালনার চেষ্টা করে থাকি। যেহেতু এই সংগঠন মানুষ দ্বারা পরিচালিত তাই মাঝেমধ্যে ছোটখাট ত্রুটিবিচ্যুতি হওয়া স্বাভাবিক এবং তা সংশোধনযোগ্যও বটে।’

‘তাই আমরা সর্বদা আমাদের গঠনমূলক সমালোচনা ও সংশোধনীকে স্বাগত জানাই। এবং একাজের সাথে সংশ্লিষ্ট সম্মানিত সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজকে আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী মনে করি। দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আপনাদের গঠনমূলক সমালোচনা আমাদের অব্যাহত অগ্রযাত্রাকে আরো বেশী গতিশীল করবে’ বলে তিনি লিখিত বক্তব্যে যোগ করেন।

নগর (উত্তর) ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি তানজীর হোসেন জুয়েলের সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন নগর (উত্তর) ছাত্রশিবিরের অর্থ সম্পাদক মুমিনুল হক, আফিস সম্পাদক খুররম মুরাদ, প্রকাশনা সম্পাদক আবরার হাসান রিয়াদ ও প্রচার সম্পাদক সালাউদ্দিন আকাশ প্রমূখ।