একজন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদের চুপি চুপি চলে যাওয়া
সাদেক হোসেন খোকা আর নেইসাদেক হোসেন খোকা বাংলাদেশের বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদদের মধ্যে অন্যতম একজন। রাজনৈতিক জীবনের দীর্ঘ সময় তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের শেষ মেয়র ছিলেন তিনি। সোমবার (৪ নভেম্বর) বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের মেমোরিয়াল স্লোন ক্যাটারিং ক্যানসার সেন্টারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চুপি চুপি চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
সাদেক হোসেন খোকা ১৯৫২ সালের ১২মে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
সাদেক হোসেন খোকা মাওলানা ভাসানীর ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে (ন্যাপ) যোগ দিয়ে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে (বিএনপি) যোগ দেন এবং বিএনপির ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি হন।
১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারে মত তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। তার দল সরকার গঠন করলে তিনি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব লাভ করেন। পরবর্তীতে ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালেও তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন।
২০০১ সালে তার দল সরকার গঠন করলে তিনি মৎস ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব লাভ করেন। তিনি সরাসরি নির্বাচনে জয় লাভের মাধ্যমে ২০০২ সালের ২৫ এপ্রিল অবিভক্ত ঢাকার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ২৯ নভেম্বর ২০১১ পর্যন্ত মেয়র পদে দায়িত্ব পালন করেন।
চিকিৎসার জন্য ২০১৪ সালের ১৪ মে সাদেক হোসেন খোকা যুক্তরাষ্ট্র যান। যুক্তরাষ্ট্রে থাকাকালে সাদেক হোসেন খোকার বিরুদ্ধে দেশে কয়েকটি দুর্নীতির মামলা হয়। রাজধানীর বনানী সুপার মার্কেটের কার পার্কিংয়ের ইজারা দুর্নীতির মামলায় খোকাসহ ৪ জনের ১০ বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড হয়। গত বছরের ২৮ নভেম্বর ঢাকা বিভাগীয় স্পেশাল জজ মিজানুর রহমান খান এ রায় ঘোষণা করেন।
চিকিৎসার জন্য নিউইয়র্ক যাওয়ার পর তার স্ত্রী ইসমত আরার পাসপোর্ট মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার উপক্রম হলে বিগত ২০১৭ সালের ২৬ জানুয়ারি পাসপোর্ট নবায়ন করার জন্য কনস্যুলেটের নির্ধারিত ফি জমা দেওয়া হয় (রিসিট নং ৩৯৮৩৫৩৮, বুক নং ০৩৯৮৩৬)। ইসমত আরার বাংলাদেশি পাসপোর্ট নং এসি ১২৫০৯৬৯ । অনুরূপভাবে সাদেক হোসেন খোকার পাসপোর্টও মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার উপক্রম হলে বিগত একই বছরের ১৩ এপ্রিল পাসপোর্ট নবায়ন করার জন্য কনস্যুলেটের নির্ধারিত ফি জমা দেওয়া হয় (রিসিট নং৪২৪৯৩৩০, বুক নং ০৪২৪৯৪)। আর সাদেক হোসেন খোকার বাংলাদেশি পাসপোর্ট নং এসি ৬৮৩২৩৯৩। কিন্তু কনস্যুলেট থেকে তাদের পাসপোর্ট আর ফেরত দেওয়া হয়নি।
মৃত্যুর আগে দেশের মাটিতে আসার কথা জানিয়েছিলেন এ মুক্তিযোদ্ধা। শেষ ইচ্ছা বলতে জুরাইন কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে সমাহিত করার কথা পরিবারের কাছে বলেছিলেন। ভিসার জটিলতার কারণে এখনো অনিশ্চত তার দেশে ফেরা।
আরও পড়ুন: