ব্যাকফুটে খোকনের রাজনীতিতে কঠিন সময়
রাজনীতিতে উত্থান পতন দুটো যেন মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। কখনো মন্ত্রী আবার কখনো সাধারণ একজন নেতা। এটি যেন রাজনীতির আসল রূপ। রাজনীতিতে যখন খারাপ সময় আসে তখন কাছের লোকগুলোও অনেক অচেনা হয়ে যায়। তেমনই ঘটেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের ক্ষেত্রে। তিনি বলেছিলেন ‘রাজনীতিতে আমার কঠিন সময় যাচ্ছে, সেই সময় যেন শেষ হচ্ছে না’।
বাবার হাত ধরে রাজনীতিতে আসা সাঈদ খোকন বাবার মতো নগরপিতা হন। বাবা প্রয়াত মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ছিলেন বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সহচর। জনতার মঞ্চের রূপকার মোহাম্মদ হানিফ আমৃত্যু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের প্রতি আস্থা রেখে রাজনীতি করেছেন।
বাবার দেখানো পথ দিয়ে রাজনীতিতে হাঁটতে শুরু করেন খোকন। বাবা প্রয়াত হওয়ার পর খোকন যখন রাজনীতিতে যুক্ত হন তখন অনেকটাই অপরিপক্ক ছিলেন। এরমধ্যে দিয়ে সুযোগ আসে বাবার মতো নগরপিতা হওয়ার।
ঢাকা সিটি করপোরেশনকে উত্তর-দক্ষিণে ভাগ করার পর দক্ষিণের মেয়র হিসেবে প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হন সাঈদ খোকন। ২০১৫ সালে ২৮ এপ্রিল আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়ে একই বছর ৬ মে শপথ গ্রহণ করেন সাঈদ খোকন। আগামী ১৭ মে মেয়র হিসেবে ৫ বছর পূর্ণ হচ্ছে সাঈদ খোকনের। এরপর থেকে তিনি সাবেক মেয়র হয়ে যাবেন।
মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তার সফলতার পাশাপাশি অতিকথন এবং বেশ কিছু বিষয়ে অস্বচ্ছতার জন্য চরমভাবে সমালোচিত হন। তার বিশ্বাস ছিল সবকিছু ঠিকঠাক করে আবারও দলীয় মনোনয়ন পাবেন। সেই আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি হয় যখন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী হিসেবে দলীয় ফরম নেন ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
শেষ মুহূর্তে মেয়র হিসেবে দলীয় টিকিট সংগ্রহ করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয় ধানমন্ডিতে আবেগ তাড়িত হয়ে কান্না করেছিলে খোকন। তখন বলেছিলেন রাজনীতিতে আমি কঠিন সময় পার করছি।
যখন দলীয় মনোনয়ন জোটেনি তখন আশা করেছিলেন তাপসের ছেড়ে দেওয়া আসনে অন্তত উপ নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে জনপ্রতিনিধি হিসেবে কাজ করবেন। সেই চাওয়াও পূরণ হল না। যদিও মেয়র পদে টিকিট না পাওয়ায় তাকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য করা হয়েছে।
শেষ পর্যন্ত ঢাকা-১০ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী করা হয় ব্যবসায়ী নেতা শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনকে। যে কারণে এবারও কপাল পুড়লো খোকনের। সময়টা এতোই কঠিন যাচ্ছে যখন যে কাজে হাত দিচ্ছেন তাতেই সমস্যা হচ্ছে। কোথাও সাফল্য নেই, রাজনীতির চতুর্দিকের পথ যেন কাঁটাযুক্ত।
এমন দুঃসময়ে তার পাশে কেউ নেই। একসময় আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা তার অফিস থেকে বাস ভবন পর্যন্ত ভিড় জমাতো। এখন বড় একা হয়ে গেছেন খোকন। কোথাও কোন লোকের দেখা পাচ্ছেন না।
মেয়র থেকে অবসরে যাওয়ার পর বাকি সময় কি করবেন তাই নিয়ে দুঃচিন্তায় মেয়র খোকন। এখন কারো ফোনও রিসিভ করছেন না। মাঝে মাঝে নগরভবনে যাচ্ছেন কিছু সময় থেকে আবার বেরিয়ে যাচ্ছেন। আপাতত তার সবগুলো পথই বন্ধ। এখন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হয়ে খুব বেশি কিছু করার নেই। আগামী দিনগুলো একাকিই কাটাতে হবে সাঈদ খোকনকে। সহসাই যে তার জন্য ভাল খবর আসছে না তা উপ নির্বাচনের টিকিট বঞ্চিত হওয়ার পরই টের পেয়েছেন খোকন।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে দলের বিভিন্ন সভা সমাবেশে উপস্থিত থাকা ছাড়া রাজনৈতিকভাবে বেকার সময় কাটাতে হবে খোকনকে।
ঢাকা-১০ আসনের জন্য মনোনয়ন নেওয়ার পর বার্তা২৪.কম-কে মোবাইল ফোনে বলেছিলেন, “আমি সারাজীবন তো রাজনীতির সঙ্গেই ছিলাম। বাবার সঙ্গে থেকে রাজনীতিতে পথচলা। মানুষের সঙ্গে থেকেছি, মানুষের জন্য কাজ করেছি। তাই মেয়র থেকে অবসর যাওয়ার পর আর কোন কাজ থাকবে না, আমার অন্য কোন ব্যবসাও নেই, চাকরিও নেই। তাই ভাবছি বাকি সময় যদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে থেকে কাজ করতে পারি সেই সুযোগ নিতে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছি ও জমা দিয়েছি। এখন দল যদি মনোনীত করেন আমি আবার সর্বোচ্চটুক দিয়ে কাজ করব।