অর্থ সংকটে এরশাদের আত্মজীবনীর প্রকাশনা

  • সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

অপ্রকাশিত আত্মজীবনীর প্রচ্ছদ/ছবি: সংগৃহীত

অপ্রকাশিত আত্মজীবনীর প্রচ্ছদ/ছবি: সংগৃহীত

সব চূড়ান্ত হলেও শুধু নাকি টাকার অভাবে অপ্রকাশিত রয়ে যাচ্ছে প্রয়াত এরশাদের অসমাপ্ত আত্মজীবনী ‘আমার জীবনের অবশিষ্ট অধ্যায়’। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জীবদ্দশায় বইটি চূড়ান্ত করেছিলেন।

কিন্তু হঠাৎ হাসপাতালে চলে যাওয়ায় বইটির প্রকাশনা থেমে যায়। দেখতে দেখতে পরলোকগমনের এক বছর পেরিয়ে গেলো তবুও সেই বইটি আলোর মুখ দেখছে না।

বিজ্ঞাপন

অর্থ সংকটের কথা বলা হলেও সাধারণ কর্মীরা এটি মানতে নারাজ। তারা মনে করছেন, এরশাদ অনেকটা অনাদরে থাকছে শীর্ষনেতাদের কাছে। যতটুকু নিজেদের জন্য প্রয়োজন সেটাই করছেন। তা যদি নাই হবে তাহলে মৃত্যু বার্ষিকীতেও পার্টি কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো পোস্টার হলো না কেন।

জাতীয় পার্টির একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, দেখেন আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে সামনে রেখে রাজনীতি করছে। বিএনপির জিয়ার আদর্শকে ক্যাশ করে রাজনীতি করছে। জাতীয় পার্টিকেও বাঁচতে হলে এরশাদের আদর্শকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। জাতীয় পার্টি কিন্তু সেই কাজটি যথাযথ ভাবে করতে পারছে না। এমন হলে জাতীয় পার্টি ধীরে ধীরে হারিয়ে যাবে।

বিজ্ঞাপন

ওই প্রেসিডিয়াম সদস্য আক্ষেপ করে বলেন, এরশাদের প্রথম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষ্যে জাতীয় পার্টি কোনো পোস্টার করেনি। আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপির ক্ষেত্রে এমনটি কল্পনা করা যায়। মৃত্যু বার্ষিকীর কর্মসূচি অনেক জেলায় দায়সারা গোছের পালিত হয়েছে। জন্মদিনের কর্মসূচি নিয়েও সন্তুষ্ট নয় তৃণমূল। প্রিয় নেতা এরশাদ হয়তো আঁচ করতে পেরেছিলেন তাই হয়তো জীবদ্দশায় বইটি প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন। বিধাতা তাকে সেই সময়টুকু দিলেন না।

জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এরশাদকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়ে এসেছে। আয়-ব্যয় সবই ছিল এরশাদ কেন্দ্রীক। এরশাদ মারা যাওয়ার পূর্বেই তার সকল স্থাবর-অস্থাবর ট্রাস্টের নামে লিখে দিয়েছেন। সেই ট্রাস্টও এখন পুরোপুরি জাতীয় পার্টি তথা জিএম কাদের’র হাতছাড়া। পুরো ট্রাস্টের কলকাঠি নাড়ছেন বিদিশা। আবার নানা কারণে বিশেষ অনুদানের প্রবাহও কমে গেছে। প্রকৃত অর্থেই জাপা কিছুটা আর্থিক সংকটের মধ্যে রয়েছে। তবে বই প্রকাশ করতে পারবে না এতোটা খারাপ নয়। সদিচ্ছার অভাব দেখছেন নেতাকর্মীরা।


অবশ্য এই বইটি এরশাদের প্রথম জীবনী গ্রন্থ নয়। ২০১৬ সালে প্রকাশিত হয়েছে “আমার কর্ম আমার জীবন”। ওই বইয়ে স্থান পেয়েছে তার বেড়ে ওঠা, স্কুল জীবন, সেনাবাহিনীতে প্রবেশ, রাষ্ট্রপতি হওয়া, ক্ষমতা হস্তান্তরের পর জেলে যাওয়া এবং জেল থেকে মুক্তি পর্যন্ত। ৮৬৪ পৃষ্ঠার বইটিতে অনেক অজানা তথ্য তুলে ধরেছেন।


প্রথম বইয়ে নায়িকার নাম প্রকাশ না করলেও অকপটে স্বীকার করেছেন তার প্রথম প্রেম পত্রের চিঠির অনুভূতি। সেই চিঠির ভেতরে থাকা গোলাপের পাপড়ির ঘ্রাণ। চিঠির সেই নায়িকার প্রতি আকর্ষণের কারণে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু সেই প্রেয়সীর সাড়া না মেলায় বেশিদূর এগুতে পারেন নি। অকপটে তুলে ধরেছেন তার সেসব অনুভূতির কথা।

আবার জীবনে প্রথম অন্যের ‘টাই’ পরে চাকরির ইন্টারভিউ দেওয়া, চাকরিতে যোগদান, রওশনের বাবার সঙ্গে টেনিস খেলা থেকে কীভাবে পরিণয় সবই তুলেছেন তার প্রথম বইয়ে।


‘আমার জীবনের অবশিষ্ট অধ্যায়’। এতে স্থান পেয়েছে জেল থেকে বের হওয়ার পর তার রাজনীতি, বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রেক্ষাপট। থাকছে নানা রকম ঘটনা প্রবাহ ও জাপার ভাঙা-গড়ার নানা রকম উত্থান-পতন। বইটির প্রচ্ছদে এরশাদের কোট টাই পরা পোট্রেট ছবি। আর পেছনের প্রচ্ছদে গোধূলি লগ্নে চিন্তমগ্ন এরশাদের সাদাকালো ছবি প্রয়াত এই রাষ্ট্রপতি নিজেই পছন্দ করেছিলেন। পৃষ্ঠা সংখ্যা থাকছে ৮৩২টি।


হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রেস ও পলিটিক্যাল সেক্রেটারি সুনীল শুভরায় বইটির অনুলিখন করেছেন। এরশাদের দীর্ঘ সময়ের এ সহযোগী বার্তা২৪.কমকে জানুয়ারি মাসে বলেছিলেন, বইটির কম্পোজ শেষ, এখন ফিনিসিং দেখা হচ্ছে। ঈদের আগেই প্রকাশ করার চেষ্টা চলছে। আগের বইটিও আকাশ প্রকাশনা সংস্থা থেকে প্রকাশিত হয়। এবারও কাজটি করছেন আকাশ প্রকাশনা সংস্থা।

কী কী স্থান পাচ্ছে বইটিতে, এমন প্রশ্নের জবাবে সুনীল শুভরায় বলেন, জেল থেকে মুক্তির পর ২০১৮ সালের নির্বাচন পর্যন্ত অনেক অজানা সত্য জানতে পারবে পাঠক। তবে এরপরও কিছু সেন্সর থেকেই যায়। কারণ সব কথা বলা সম্ভব হয় না।

অপর একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। কীভাবে জাতীয় পার্টিকে ভাঙা হয়েছে। তার দলের সদস্যের মন্ত্রিসভায় থাকা না থাকার বিষয়। এরশাদ কী চেয়েছিলেন আর কী হয়েছে— অনেকখানি খোলাসা করার চেষ্টা হয়েছে।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আকাশ প্রকাশনা সংস্থার স্বত্বাধিকারী আলমগীর সিকদার লোটন বার্তা২৪.কমকে বলেন, বইটির সবই রেডি কিন্তু শুনেছি টাকার সংকটের কথা। তবে আমাকে যদি দায়িত্ব দেয় আমার ব্যক্তিগত খরচে করে দিতে আগ্রহী আছি। প্রয়াত এরশাদের কারণে আমি আজকের লোটন হতে পেরেছি। তার প্রতি অনেক ঋণ রয়ে গেছে।