তাসকিনের বোলিংয়ে নাটকীয়ভঙ্গিতে ফাইনালে নাজমুল একাদশ
এমন ম্যাচ হেরে হতাশায় হাত কামড় দিচ্ছেন তামিম ইকবাল। আর শেষের দিকে এসে বোলারদের কৃতিত্বে নাটকীয়ভাবে ম্যাচ জিতে নিল নাজমুল হোসেন একাদশ। সেই সঙ্গে নাম লেখাল ফাইনালে। দুই পর্বেই নাজমুল একাদশ হারাল তামিম একাদশকে। বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপের ফাইনালে খেলছে নাজমুল হোসেন একাদশ ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ একাদশ। টুর্নামেন্টে চার ম্যাচে মাত্র এক জয় পাওয়া তামিম ইকবাল একাদশ এখন ফাইনালে দর্শক।
যে কায়দায় মিরপুরে বুধবার রাতে তামিম ইকবাল একাদশ হারল তাকে বলে তীরে এসে তরী ডোবানো। শেষ ১২ বলে ম্যাচ জয়ের জন্য তামিম ইকবাল একাদশের প্রয়োজন দাড়ায় ১৭ রানের। ৩২ বলে ২৯ রান করে মোহাম্মদ মিথুন পরের ওভারে আউট হয়ে গেলে শেষ ওভারে কাজটা আরো কঠিন হয়ে গেল।
৬ বলে চাই ১৫ রান। মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন পারলেন না সেই বাধা পার করতে। শেষ ওভারে সাইফুদ্দিন চেষ্টা করেছিলেন। সৌম্য সরকারের করা শেষ ওভারে একটি ছক্কাও হাঁকিয়েছেন। কিন্তু শেষ হাসিটা হাসল নাজমুল একাদশ। ওভারে দ্বিতীয় ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে লং অনে ক্যাচ দিলেন সাইফুদ্দিন।
টুর্নামেন্টে দু’বারের মোকাবেলায় দু’বারই তামিম ইকবাল একাদশকে হারাল নাজমুল হোসেন একাদশ।
মিরপুরের বৃষ্টিভেজা ম্যাচে নাজমুল একাদশ গুটিয়ে যায় ৩৯.৩ ওভারে ১৬৫ রানে। বৃষ্টির কারণে ম্যাচটি ৪১ ওভারে সীমিত করা হয়। জয়ের জন্য ১৬৬ রানের সহজ টার্গেটের পিছু নামা নামা তামিম একাদশ আটকে গেল ১৫৬ রানে।
টুর্নামেন্টের প্রথম তিন ম্যাচে ব্যাট হাতে নীরব থাকা তামিম ইকবাল এই প্রথম হাফসেঞ্চুরি পেলেন। ৮৫ বলে ৬ বাউন্ডারিতে ৫৭ রান করেন। দলের তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে তামিম যখন আউট হন তখন ম্যাচ জয় থেকে তার দল ৬৫ রান দূরে। খানিকবাদে ইয়াসির রাব্বী ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ব্যর্থ হয়ে ফিরলে তামিম ইকবাল একাদশ টেনশনে পড়ে যায়। সেই টেনশন আরো বাড়ল যখন ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হলেন মাহাদি হাসান! চেপে বসা সেই টেনশন দূর করতে পারলেন না মোহাম্মদ মিথুনও। টুর্নামেন্টে ব্যর্থদের তালিকায় রয়ে গেলেন সিনিয়র এই ব্যাটসম্যান।
সামান্য সঞ্চয় নিয়েও আক্রমণাত্মক বোলিং ও ফিল্ডিংয়ের ছক সাজিয়ে দলকে ফাইনালে নিয়ে গেলেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত।
ফাইনালে উঠার ম্যাচে নাজমুল হোসেন একাদশ টসে জিতে ব্যাটিং বেছে নেয়। কিন্তু দলের ব্যাটসম্যানরা অধিনায়কের সেই সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান দেখাতে পারলেন কই? মিডলঅর্ডারে মুশফিকের হাফসেঞ্চুরি এবং আফিফ হোসেন ধ্রুবের ৪০ রান ছাড়া বাকি ব্যাটসম্যানদের সবাই ব্যর্থ।
দিনের এই পর্বের খেলায় নায়ক ছিলেন তামিম ইকবাল একাদশের পেসার মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। ৮.৩ ওভারে ১ মেডেনসহ মাত্র ২৬ রানে ৫ উইকেট শিকার করেন এই ডানহাতি পেসার। চলতি টুর্নামেন্টে এই প্রথম কোন বোলার এক ম্যাচে পাঁচ উইকেট শিকার করলেন। মুস্তাফিজুর রহমানকে এই ম্যাচে একটু দেরিতে ব্যবহার করেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। তার সেই সিদ্ধান্তও দারুণ কাজে দেয়। ৮ ওভারে ১ মেডেনসহ ৩৬ রানে মুস্তাফিজুর তুলে নিলেন ৩ উইকেট। স্পিনার মাহাদি হাসান পান ২ উইকেট। ১৬৫ রানে থামে নাজমুল একাদশের ইনিংস।
লো-স্কোর নিয়েও অবশ্য নাজমুল একাদশের বোলাররা লড়াই জমিয়ে দিলেন। শেষের দিকে এসে ম্যাচটা জমে যায়। আর এর পুরো কৃতিত্ব তাসকিন আহমেদের। তামিম ইকবাল একাদশের ফাইনালে খেলার জন্য ৩০ বলে চাই ৩১ রান। হাতে জমা ৫ উইকেট। এসময়ে তাসকিন আহমেদ তার শেষ স্পেলে জ্বলে উঠেন। মোসাদ্দেক, মাহাদি হাসান ও আকবর আলীর উইকেট ঝটপট তুলে নিয়ে ম্যাচে নাটকীয়ভাবে ফিরিয়ে আনেন দলকে। প্রথম স্পেলে ওপেনার আনামুল হক বিজয়কে ফিরিয়েছিলেন তাসকিন। ৮ ওভারে ৩৪ রানে ৪ উইকেট পান ফর্মে থাকা এই পেসার।
উইকেটে জমে উঠা মোহাম্মদ মিথুনকে ফিরিয়ে দেন আল আমিন। শেষ ওভারে ১৫ রানের বড় বাধা আর টপকাতে পারল না তামিম ইকবাল একাদশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নাজমুল একাদশ: ১৬৫/১০ (৩৯.৩ ওভারে, মুশফিক ৫১, আফিফ ৪০, সাইফুদ্দিন ৫/২৬, মুস্তাফিজ ৩/৩৬, হাসান মাহাদি ২/৩৪)।
তামিম একাদশ: ১৫৬/১০ (৪০.৩ ওভারে, তামিম ৫৭, মিথুন ২৯, তাসকিন ৪/৩৬)।
ফল: নাজমুল একাদশ ৭ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা: তাসকিন আহমেদ।
সেরা ব্যাটসম্যান: মুশফিকুর রহিম।
সেরা বোলার: সাইফুদ্দিন।
সেরা ফিল্ডার: তামিম ইকবাল।