যে কারণে এবার ফাইনাল খেলতে আশাবাদি ইংল্যান্ড!
‘মরুর বুকে বিশ্ব কাঁপে’গ্যারেথ সাউথগেটের ইংল্যান্ডের জন্য এখন শেষ সুযোগ বলা হচ্ছে। ২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপে দলটি সেমিফাইনাল খেলেছিল। বছর খানেক আগের ইউরোতে খেলেছে ফাইনাল যেখানে টাই ব্রেকারে ইতালির কাছে হেরে যায় দলটি।
এবার ইংল্যান্ডের জন্য পরের ধাপে যাওয়ার পালা এবং সেটা হল বিশ্বকাপের ফাইনাল।
ইংল্যান্ড দলে আছে বিশ্বের অন্যতম প্রতিভাবান দুই মিডফিল্ডার ডেক্লান রাইস ও জুড বেলিংহাম। এই দুজনের সাথে স্ট্রাইকার হ্যারি কেইনের বোঝাপড়া এই বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে সামনে এগুনোর পথ দেখাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে ।
প্রথম পর্বে ইংল্যান্ডের গ্রুপে আছে যুক্তরাষ্ট্র, ইরান ও ওয়েলস।
ইংল্যান্ডের দুশ্চিন্তা
যত দিন গড়িয়েছে তত ইংল্যান্ডের সমস্যা বেড়েছে, গ্যারেথ সাউথগেটের হিসেব নিকেশও নতুন করে কষতে হয়েছে।
যেমন ইংল্যান্ড ইউরোর ফাইনাল খেললেও ইউয়েফা নেশান্স লিগে কোনও প্রাপ্তি ছিল না এই বছর।
একইসাথে টুর্নামেন্ট শুরুর কিছুদিন আগে রেসে জেমসের ইনজুরির খবর আসে। চেলসির হয়ে খেলা জেমস ইংল্যান্ডের ডিফেন্সের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য।
রেসে জেমসের পজিশন রাইট ব্যাক, যেখানে কাইল ওয়াকার খেলবেন। যিনি সম্প্রতি খুব একটা ভালো ফর্মে নেই।
হ্যারি ম্যাগুয়ারকে নিয়েও গ্যারেথ সাউথগেটের সিদ্ধান্তে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। চলতি মৌসুমে ম্যাগুয়ার ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডেই মূল একাদশে নিয়মিত হতে পারেননি, সাউথগেট অবশ্য বলছেন ম্যাগুয়ার ইংল্যান্ড দলের গুরুত্বপূর্ণ এক সদস্য হিসেবেই বিশ্বকাপ খেলবেন।
এখন দেখার বিষয় হবে ম্যাগুয়ার কতটা সাউথগেটের ভরসার প্রতিদান দিতে পারবে?
ইনজুরির সমস্যা আরও তীব্র হয়েছে শেষ মুহূর্তে জেমস ম্যাডিসনের চোটের কারণে। ট্রেনিং এর মধ্যেই হাঁটুতে চোট পেয়েছেন লেসটার সিটির এই মিডফিল্ডার।
গ্যারেথ সাউথগেট কি অতি সতর্ক?
ইংল্যান্ডের ফুটবল বিশেষজ্ঞরা মনে করেন গ্যারেথ সাউথগেট অতি সতর্ক। যে কারণে টুর্নামেন্টে দারুণ ট্র্যাক রেকর্ডের পরে কোনও একটা জায়গায় সাউথগেট দলটাকে ঠিক অনুপ্রাণিত করতে পারছেন না।
সাম্প্রতিক ফর্মের কথা বিবেচনা করলেও ইংল্যান্ড খুব একটা ভালো অবস্থানে নেই। তবে গ্যারেথ সাউথগেট এটা মনে করেন না।
বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সাউথগেট বলেন, " যখন আপনি ফর্মের কথা বলেন সেটা এক সপ্তাহ বা দুই সপ্তাহ আগের প্রেক্ষিতে না, সেই খেলা কয়েক মাস আগের তখন আমরা স্কোয়াড নিয়ে নিশ্চিত ছিলাম না। "
"এখন আমরা এমন এক দল নিয়ে এসেছি যারা টুর্নামেন্ট খেলে খেলে অভিজ্ঞ হয়েছে।"
গ্যারেথ সাউথগেটের ইংল্যান্ড গত ছয় ম্যাচে জয় পায়নি।
ইংল্যান্ডের সাবেক ফুটবলার এবং বর্তমানে বিবিসির ফুটবল বিশ্লেষক গ্যারি লিনেকার মনে করেন- এটাই সময় সাউথগেটের জন্য।
তিনি বলেছেন, "আমি সত্যিই অবাক হবো এবার যদি ইংল্যান্ড কোনও শিরোপা না পায়, অন্তত এই দশকে। "
লিনেকারের মতে, সাউথগেটকে তার দলের ওপর আরেকটু বেশি ভরসা করতে হবে।
"একটা খোলস আছে, সেই খোলস ভাঙতে হবে। এটাই চ্যাম্পিয়ন ও রানার আপ দলের পার্থক্য হয়ে দাঁড়ায় অনেক সময় ।
ইরানের বিপক্ষে ম্যাচটাকে কঠিন বলছেন বিবিসি স্পোর্টের কলামিস্ট জারমেইন জেনাস।
তার মতে, "ইরান অনেক সময় খুব কঠিন ও জেদি হয়ে দাঁড়ায়। হয়তো তারা তেমন আক্রমণ করবে না কিন্তু গোলের সামনে এমনভাবে রুখে দাঁড়ায় যে প্রতিপক্ষ বিরক্ত হয়ে যায় অনেক সময়।"
সোমবার ইরানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ মিশন।
জারমেইন জেনাসের মতে সাউথগেটের উচিৎ হবে ইরানের বিপক্ষে যে পদ্ধতি এবং ফরমেশন হাতে নেবেন সেটাকেই শেষ পর্যন্ত ধরে রাখা, তিনি বলছেন এটা ছন্দ বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
হ্যারি কেইন কেমন ফর্মে আছেন
ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপে ভালো করা ও খারাপ করা নির্ভর করবে অনেকটাই হ্যারি কেইনের ফিনিশিংয়ের ওপর।
গোটা দল হ্যারি কেইনের পায়ে বল দেয়ার জন্য মুখিয়ে থাকবে।
ইংল্যান্ডের অধিনায়ক কেইন দুটি পজিশনে নিজেকে রেখে খেলতে ভালোবাসেন। মূলত স্ট্রাইকার হলেও তিনি নাম্বার নাইন ও নাম্বার টেন পজিশনে অদল বদল করতে থাকেন।
চলতি বছর হ্যারি কেইন ২৯ বছর বয়সে পা দিয়েছেন।
তিনি এখন বিশ্বের সবচেয়ে নামি ও দামি স্ট্রাইকারদের একজন। একই সাথে ইংল্যান্ডে নিজের প্রজন্মের সেরা গোলদাতা তিনিই।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ২০২০-২১ মৌসুমের সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন কেইন। গত মৌসুমেও ১৭ গোল দিয়ে তিনি চার নম্বরে ছিলেন তালিকায়।
গ্যারেথ সাউথগেট হ্যারি কেইনের ওপর ভরসা রেখে স্বস্তিতে থাকেন।
“হ্যারি কেইন সর্বোচ্চ সামর্থ্যের একজন ফুটবলার। সবসময় তিনি নিজের ভূমিকা সম্পর্কে সচেতন থাকেন।
স্ট্রাইকারদের মূল কাজ গোল করা কিন্তু হ্যারি কেইন একই সাথে বল বানাতেও দক্ষতা অর্জন করেছেন।
নর্থ লন্ডনের ক্লাব টটেন্যাম হটস্পারে হ্যারি কেইনের সাথে দক্ষিণ কোরিয়ান তারকা হিউয়েন মিং সনের জুটি বর্তমান যুগের সবচেয়ে কার্যকরী ফরোয়ার্ড জুটির একটি।
ইতোমধ্যে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে সর্বকালের সবচেয়ে বেশি গোলদাতাদের তালিকায় সেরা পাঁচে আছেন হ্যারি কেইন, যিনি এখনও ত্রিশ স্পর্শ করেননি।
দুই হাজার আঠারো সালের ফিফা বিশ্বকাপে গোল্ডেন বুট জয়ী স্ট্রাইকার ছিলেন কেইন। গ্যারেথ সাউথগেট ২০১৬ সাল থেকে ইংল্যান্ডের কোচের দায়িত্বে আছেন।
কেমন মিডফিল্ড ইংল্যান্ডের
দুই হাজার আঠারো সালের ফিফা বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে এবং শেষ ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ইতালির বিপক্ষে ইংল্যান্ডের সেন্ট্রাল মিডফিল্ড এই দুই দলের চেয়ে কম সৃজনশীল ছিল।
তার ফলাফল পাওয়া গেছে স্কোরকার্ডেই।
যথেষ্ট সুযোগ তৈরি করতে পারেনি ইংল্যান্ড। রক্ষণভাগ ভালো হওয়ার কারণে কোনও মতে অতিরিক্ত সময় এবং টাই ব্রেকার পর্যন্ত গড়িয়েছিল খেলা।
সম্প্রতি ইউয়েফা নেশান্স লিগে ইংল্যান্ডের অবস্থান ছিল ৫৪টি দেশের মধ্যে ১৩ নম্বরে।
যেখানে মাঠে পাসের দিক থেকে ইংল্যান্ড ইউক্রেন, তুরস্ক, স্লোভাকিয়া এবং গ্র্রিসেরও নিচে ছিল।
এর একটা বড় কারণ ছিল ইংল্যান্ড খুব সহসাই মিডফিল্ডে খেলোয়াড় রোটেট করেছে এবং তারা কখনোই নিজেদের ছন্দের সাথে অভ্যস্ত হতে পারেননি।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় লিগ হিসেবে পরিচিত এখানেই ইংল্যান্ডের ফুটবলাররা মোটামুটি বেশ কয়েকটি দলে খেলে থাকেন।
জুড বেলিংহাম খেলেন জার্মান ক্লাব বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের হয়ে।
তাই স্পেনের বার্সেলোনা বা জার্মানির বায়ার্ন মিউনিখের মতো, ইংল্যান্ডের খুব বেশি ফুটবলার একই দলে খেলেন না, বড় টুর্নামেন্টে এই ফারাকটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।