সেই আল নূর মসজিদে এবার নামাজ পড়লেন যুবা ক্রিকেটাররা
ক্রাইস্টচার্চের শোকের স্মৃতিতে জীবনের জয়গান!
সেই মসজিদ। সেই পার্ক!
ক্রাইস্টচার্চ থেকে শুক্রবার বিকেলে টেলিফোনের ওপ্রান্তে জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার হান্নান সরকার ঠিকই কিছুটা আবেগী হয়ে উঠলেন।
মাত্র ছ’মাস আগে এই পার্কের ভেতর দিয়ে হেঁটে-দৌড়ে জীবন বাঁচিয়ে ছিলেন তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদসহ পুরো বাংলাদেশ ক্রিকেট দল! ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভাল পার্ক সংলগ্ন সেই আল নূর মসজিদে গত ১৫ মার্চ, শুক্রবার জুম্মার নামাজের সময় কি দুঃসহ বিভীষিকাময় সময় কেটেছিল পুরো দলের! নেহাত ভাগ্যগুণে পুরো বাংলাদেশ দল বেঁচে ফিরে আসতে পেরে ছিল সন্ত্রাসীর গুলির নিশানা থেকে। সেই শুক্রবার ক্রাইস্টচার্চের আল নূর মসজিদে এক উগ্র জাতীয়তাবাদীর স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় এখানে নামাজ পড়তে আসা ৫২জন মানুষ।
একটু দেরি করে নামাজ পড়তে রওয়ানা হওয়ায় বন্দুকধারীর গুলির সরাসরি আক্রমণ থেকে সেদিন বেঁচে ফিরে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। তবে সেদিনের খুনে পরিবেশ থেকে যে ভয়াবহ ও লোমহর্ষক অভিজ্ঞতা নিয়ে তারা ফিরে ছিলেন সেই দুঃস্মৃতি অনেক দিন তাদের যন্ত্রণা দেবে।
ছয় মাস পরে অক্টোবরের প্রথম শুক্রবারে ক্রাইস্টচার্চের সেই আল নূর মসজিদে জুম্মার নামাজ পড়তে গেলেন হান্নান সরকার ও বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের নিউজিল্যান্ড সফরে থাকা ক্রিকেটাররা। সাবেক ক্রিকেটার হান্নান সরকার এই দলের ম্যানেজারের দায়িত্বে রয়েছেন।
ক্রাইস্টচার্চ থেকে শুক্রবার বিকেলে বার্তাটোয়েন্টিফোরকে টেলিফোনে হান্নান সরকার বলছিলেন-‘সবাই যখন আমরা পার্কের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি, তখন মার্চে এখান থেকে ছুটে যাওয়া তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদসহ কয়েকজন বাংলাদেশি সাংবাদিকদের সেই ভয়ার্ত সময়ের দুঃস্মৃতিগুলো মনে পড়ল আমাদের। কি নারকীয় যন্ত্রণায় না কেটে ছিল তাদের সেই সময়টা! মসজিদের প্রবেশ পথের সামনে চারপাশের খুনের ভয়াবহ সেই দৃশ্য দেখে পার্কের ভেতর দিয়ে মাঠে ফিরে প্রাণে বেঁচে ছিলেন ক্রিকেটাররা সেদিন।’
হান্নান সরকার জানান-“সেই ঘটনার ছয় মাস পার হয়ে গেছে। কিন্তু এখনো মসজিদের চারপাশে নামাজের সময় পুলিশের কড়া পাহারা আছে। আল নূর মসজিদের সেই প্রবেশ পথ ঠিকই আছে। মসজিদের ভেতরের কাঠামোরও কোনো বদল করা হয়নি। শুধু সংস্কার করা হয়েছে। নতুন করে টাইলস বসানো হয়েছে। কার্পেটিং করা হয়েছে। এখন লোকজন এখানে নির্ভয়ে নামাজ পড়তে আসে। মসজিদের প্রবেশ পথের সামনে একটা ছোট্ট স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা হয়েছে। ফুলে ফুলে সুরভিত আছে সেই স্মৃতিফলক। যার ওপরে লেখা-‘আমাদের দেশে আল্লাহ’র দয়া আছে। এই ভূমি ভালবাসা ও সহানুভূতির’।’’
মানুষ সত্যিকার অর্থেই যে কোনো ভয়কে জিততে জানে। যে কোনো বিপদ মানুষকে একজোট হতে শেখায়। গত মার্চের মাঝামাঝিতে ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে সেই খুনে হামলা পুরো নিউজিল্যান্ডের অধিবাসীকে ঐক্যের শক্তিতে একত্রিত করেছে। যার প্রমাণ আল নূর মসজিদের ফুলে ভরা সেই ছোট্ট স্মৃতিফলক- যেখানে ছোট করে হাতে লেখা; ‘উই আর ওয়ান’!
আমরা সবাই এক, একজোট!
আরও পড়ুন-
লাইভস্ট্রিমিং করে হামলাকারী; বলে-‘পার্টি শুরু’!
দেশে ফিরছে ক্রিকেট দল, ক্রাইস্টচার্চ টেস্ট বাতিল
অল্পের জন্য রক্ষা পেল তামিম মিরাজরা
ভয়ানক অভিজ্ঞতা, দোয়া চাইলেন তামিম