গ্রামীণফোনের সঙ্গে সাকিবের বাণিজ্যিক চুক্তি, বিসিবির আইনি নোটিশ!
পারফরমেন্স দিয়েই সাকিব আল হাসান সবসময় শিরোনামে থাকেন। তবে সাম্প্রতিক সময়টা তার কাটছে মাঠের বাইরের ‘পারফরমেন্স’ নিয়েই! ক্রিকেটারদের তিনদিনের ধর্মঘটের সময়ে প্রতিদিনই আলোচনায় ছিলেন সাকিব আল হাসান। সেই ধর্মঘট শেষ। বোর্ড ও ক্রিকেটারদের মধ্যে আপাতত ‘শান্তি চুক্তি’। তবে সাকিব আল হাসান এখনো দেশের ক্রিকেটে অব দ্য ফিল্ডে শিরোনামে!
তবে সমাধান সূত্রে নয়, সমস্যা নিয়েই সাকিব শিরোনামে!
সর্বশেষ সমস্যা বেঁধেছে সাকিবের গ্রামীণফোনের সঙ্গে বাণিজ্যিক একটি চুক্তি নিয়ে। গ্রামীণফোন সাকিবকে তাদের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে বেছে নিয়েছে। বিসিবি বলছে বাণিজ্যিক এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সাকিব যে চুক্তি করেছেন সেটা ঠিক নিয়ম মেনে হয়নি। নিয়ম ভাঙ্গায় সাকিবকে এবং গ্রামীণফোনকে আইনি নোটিশ দিচ্ছে বিসিবি।
আগে জানি গ্রামীণফোনের সঙ্গে সাকিবের এই সাম্প্রতিক চুক্তি নিয়ে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন কি বলছেন। তিনি জানিয়েছেন-‘সে (সাকিব আল হাসান) এমন কোন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের (কোন টেলিকম কোম্পানি) সঙ্গে বিজ্ঞাপন চুক্তি করতে পারে না। কেন পারে না? সে কথা বিসিবির সঙ্গে তার চুক্তিপত্রে পরিস্কার লেখা আছে।’
বিস্তারিত ব্যাখ্যায় বিসিবি সভাপতি বলছিলেন-‘টেলিকম সংস্থা রবি আমাদের টাইটেল স্পন্সর ছিল। তখন সেই টাইটেল স্পন্সরশিপের জন্য গ্রামীণফোন অংশও নেয়নি। অথচ সেই সময়টায় গ্রামীণফোন আমাদের কয়েকজন ক্রিকেটারকে এক কোটি দুই কোটি টাকা দিয়ে তাদের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে স্পন্সরশিপ চুক্তি করে। এর ফলে বিসিবি তিন বছরে প্রায় ৯০ কোটি টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়! কিছু খেলোয়াড় লাভবান হয়, আর বোর্ড পড়ে আর্থিক ক্ষতিতে। এমনটা তো ঘটতে দেয়া যায় না। খেলোয়াড়রা এখন কে কি চুক্তি করবে সেটা বোর্ডকে অবশ্যই কাগজপত্রের মাধ্যমে জানাতে হবে। শুধু তাই নয়, আমাদের চুক্তিপত্রে এটা বলা আছে যে, মন্ত্রণালয়কে না জানিয়ে কোন টেলিকম প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যেন ক্রিকেটাররা চুক্তি না করে। তাহলে এমন পরিস্থিতিতে আমাদেরকে না জানিয়ে কেন কোন ক্রিকেটার এমন বাণিজ্যিক চুক্তি করবে? আর তার (সাকিবের) এই চুক্তির সময়টা দেখেন? যখন কোন ক্রিকেট ছিল না (ক্রিকেটারদের ধর্মঘটের কারণে) তখনই চুক্তিটা হয়েছে। এটা তো ঔদ্ধত্য! আমরা আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছি। এই বিষয়ে আমরা কাউকে ছাড় দেবো না। অবশ্যই ক্ষতিপূরণটা দাবি করবো। শুধু খেলোয়াড় নয়, আমরা সেই প্রতিষ্ঠান থেকেও ক্ষতিপূরণ চাইবো। আমি সাকিব ও গ্রামীণফোনের এই চুক্তি সম্পর্কে ২৩ অক্টোবর জানতে পেরেছি। তারপর গ্রামীণফোনে কাছে ক্ষতিপূরণ চেয়ে আইনী নোটিশ পাঠিয়েছি। সাকিবকে এই বিষয়ে যথাযথ ব্যাখা দেয়ার জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে। সে যে কোন নিয়ম ভাঙ্গেনি সেটা প্রমাণ করার জন্য সুযোগ তাকে দেয়া হবে। আমাদের কাছে ব্যাপারটাকে মনে হয়েছে, বোর্ডের কোন নিয়ম-কানুন মানি না টাইপের মতো! এমন কিছু হলে আমরা অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেবো।’
সাকিবের এই চুক্তি সম্পর্কে বিসিবির কেউও কিছুই জানে না। বিসিবি’র প্রধান নির্বাহী নিজামুদ্দিন চৌধুরী সুজনও এই সম্পর্কে পুরোদুস্তর অজ্ঞ-‘গ্রামীণফোনের সঙ্গে সাকিবের এই চুক্তি সম্পর্কে আমরা মোটেও অবগত নই। সাধারণত জাতীয় দলের স্পন্সর প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারে এমন কোন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তিতে যেতে আমরা খেলোয়াড়দের উৎসাহিত করি না। এখন আমাদের জাতীয় দলের স্পন্সর ইউনিলিভার। কিছুদিনের মধ্যে তাদের সঙ্গে আমাদের চুক্তিটা শেষ হয়ে যাচ্ছে। ঠিক এমন সময় যদি কোন খেলোয়াড় কোন টেলিকম প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তি করে তাহলে জাতীয় দলের সঙ্গে সামনের সময়ের জন্য স্পন্সর চুক্তিতে অন্যান্য টেলিকম প্রতিষ্ঠান অংশ নিতে আগ্রহী হবে না।’
বিসিবির এক পরিচালক বার্তাটোয়েন্টিফোরকে জানান-বিশ্বকাপের আগে গ্রামীণফোন তামিম ইকবালের সঙ্গে বিপুল অংকের (প্রায় তিন কোটি টাকা) স্পন্সর চুক্তি করতে চেয়েছিল। কিন্তু বিসিবি সেই সময় তামিমকে তেমন চুক্তির জন্য অনুমতি দেয়নি। আর এখন একই ধরনের চুক্তিতে সাকিবকে কেন ছাড় দেবে বিসিবি?
অবশ্যই দিচ্ছে না!
মাঠের বাইরে বিসিবি-ক্রিকেটার লড়াই তাহলে এখনো শেষ হয়নি!