রাজকোটে ইতিহাস গড়ার আনন্দের অপেক্ষায় বাংলাদেশ
দিল্লিতে পিছু নিয়েছিল বায়ুদূষণ! ম্যাচ শুরুর ঘন্টা চারেক আগে অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে পা দিতেই শুনেছি-বাতিল হতে পারে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি। কিন্তু না, শেষ পর্যন্ত তেমনটা হয়নি। হলে হয়তো স্বপ্নের মতো এক জয় অধরাই থেকে যেতো।
কী আশ্চর্য, দিল্লি ছেড়ে রাজকোটে পা রেখেও সঙ্গী সেই অনিশ্চয়তা! এবার আর বায়ুদূষণ নয়, গুজরাটের আলো-বাতাস বড় নির্মল! এখানে মাহা-নামের এক সাইক্লোনের ভ্রুকুটি! গত দুই দিন ধরেই চলছে সম্ভাব্য এই ঘূর্ণিঝড়ের চর্চা।
আবহাওয়া বিশ্লেষকরা একটানা বলে যাচ্ছেন রাজকোট থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি দূর দিয়ে বৃহস্পতিবার গুজরাট উপকূলে আঘাত হানবে সাইক্লোন মাহা। তার প্রভাবে ভারী বর্ষণ হতে পারে রাজকোটে। তারপর আরব সাগরে হারিয়ে যেতে পারে এই ঘূর্ণিঝড়।
অবশ্য বৃহস্পতিবার সকালেই হোটেলের জানালার পর্দা সরাতেই বাইরে ঝলমলে রোদের দেখা মিলেছে রাজকোটে। আকাশে তেমন মেঘও নেই! সৌরাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন মাঠে ম্যাচটা শুরু হবে স্থানীয় সময় ৭টায়। বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে সাতটায়।
এই ম্যাচে ইতিহাসের হাতছানি নিয়েই মাঠে নামবে বাংলাদেশ। অবশ্য দিল্লিতে জয়ের পরই দল পেয়েছে ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে প্রথম জয়ের স্বাদ! টানা ৮ হারের পর স্বস্তির জয় নিয়েই দল নামবে রাজকোটে।
এই ম্যাচে জয় ধরা দিলেই ভারতের মাঠে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতবে বাংলাদেশ।
ইতিহাস গড়তে যাওয়া ম্যাচের আগে টগবগে আত্মবিশ্বাসে টাইগাররা। আগের দিন অনুশীলনে হাসি-খুশি এক পরিবারের দেখা মিলল। এখানেও ভয়-ডরহীন ক্রিকেটের প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাখছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদরা। ফোকাস এখন একটাই- সিরিজ জয়!
মাহমুদউল্লাহ সাফ জানিয়ে রাখলেন, 'দেখুন, যখন আপনি প্রথম ম্যাচে জিতে এগিয়ে যাবেন, তখন সেটা সব সময়ই ভালো সুযোগ। আমার সতীর্থরাও ভালো কিছু করতে মরিয়া। সত্যি বলতে কী প্রথম ম্যাচে আমাদের হারানোর কিছু ছিল না। একইভাবে দ্বিতীয় ম্যাচেও আমাদের অর্জনের অনেক কিছুই থাকবে। আমরা আগ্রাসী আর ইতিবাচক ক্রিকেট খেলব।'
ভারতের বিপক্ষে জেতা যাবে না, ওদের বিপক্ষে শেষ মুহূর্তে এসে তরী ডুববে-এমন শঙ্কা আর নেই। খোদ ভারতের রাজধানী থেকে ৭ উইকেটের জয়ের পর প্রত্যাশাটাও বেড়ে গেছে। সেই সাফল্যই সাকিব-তামিম বিহীন দলকে জাগিয়ে দিয়েছে। টাইগার ক্যাপ্টেন মাহমুদউল্লাহ জানাচ্ছিলেন, 'গত কিছুদিনে আমাদের দেশের ক্রিকেটে যা হলো তারপর এমন একটা সিরিজ জেতা সত্যিই অনেক বড় কিছু হবে। এটা আমরা ভালো করেই জানি- ভারতকে হারাতে আমাদের সেরাটাই খেলতে হবে।'
প্রস্তুত ভারতও। ডু অর ডাই ম্যাচ রোহিত শর্মাদের। হারলেই সিরিজ শেষ। রাজকোটের ব্যাটিং উইকেটে কৌশলে কিছুটা পরিবর্তন আনবে স্বাগতিকরা। আগের দিনই সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক রোহিত জানাচ্ছিলেন, 'আমাদের অ্যাপ্রোচে পরিবর্তন থাকবে এই ম্যাচে। গত ম্যাচে আমরা উইকেটের কথা ভেবেই খেলেছিলাম। রাজকোটের পিচ ভালো হয়, ব্যাটিং-বোলিং দুই বিভাগেই আমাদের অ্যাপ্রোচ ভিন্ন হবে।'
ম্যাচটা ব্যক্তিগতভাবেও গুরুত্বপূর্ণ রোহিতের। এটি তার শততম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। মহেন্দ্র সিং ধোনিকে পেছনে ফেলে দেশের জার্সি গায়ে সবচেয়ে বেশি (৯৯টি) টি-টোয়েন্টি খেলার রেকর্ডটা গড়েছেন আগের ম্যাচেই। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ রানের (২৪৫২) কীর্তিটাও গড়েন এই মহাতারকা!
তবে ব্যক্তিগত অর্জন নয়, দলের সাফল্যেই চোখ থাকবে রোহিতের। কারণ এবার পা পিছলে গেলে যে সর্বনাশ। সিরিজে আন্ডার ডগ থেকে বাংলাদেশই এখন ফেভারিট। কিছুই হারানোর নেই মাহমুদউল্লাহদের। অর্জনের আছে অনেক কিছুই!