বাংলাদেশ ১৫৩, সিরিজ জয়ের সঞ্চয় হলো কি?
দিল্লির বায়ুদূষণে ঠিকঠাক মতো নিঃশ্বাস নিতে পারলেও রাজকোটের বিশুদ্ধ বাতাসে যেন দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল ব্যাটসম্যানদের। না হলে উইকেটে পা রেখেই এভাবে অস্থির হয়ে উঠবেন কেন? উইকেটে রান ছিল। সেটা দুই ওপেনার লিটন দাস ও মোহাম্মদ নাঈম বুঝিয়েও ছিলেন। প্রথম দশ ওভারে ১ উইকেটে ৭৮। কিন্তু এরপর এমন কোনো বোলিং হয়নি যে পরের ৬০ বলে ৫ উইকেট হারিয়ে ৭৫ রান উঠবে। উইকেট ছুঁড়ে আসলে স্কোর বড় হয় কী করে!
সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে চ্যালেঞ্জিং স্কোর করতে পারেনি বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে তুলেছে ১৫৩ রান। রাজকোটের সৌরাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন মাঠে সিরিজ জয়ের সঞ্চয় পেলো কি টাইগাররা?
রান তাড়ায় দল দুর্দান্ত- স্রেফ এ কারণেই টস জিতে শুরুতে বল করার সিদ্ধান্ত নেন রোহিত শর্মা। দিল্লিতে আগের ম্যাচেই শুরুতে ব্যাট করতে নেমে বড় পুঁজি না গড়েই শেষ হয়ে যায় ভারতের ইনিংস। তবে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা অবশ্য মন্দ ছিল না বাংলাদেশের।
বিশেষ করে পাওয়ার প্লেতে দলকে পথ দেখিয়েছেন লিটন দাস ও ওপেনিংয়ে নামা মোহাম্মদ নাঈম শেখ। প্রথম ৬ ওভারেই দলের সংগ্রহ বিনা উইকেটে ৫৪ রান। মনে হচ্ছিল ব্যাটিং উইকেটে সুযোগটা কাজে লাগাবে দল। বেশ মেজাজেই ছিলেন দুই ওপেনার।
ভারতীয় পেসার খলিল আহমেদকে পাত্তাই দিলেন না দুই ওপেনার। প্রথম ম্যাচে তার শেষ ওভারের শেষ চার বলে মুশফিক হাঁকিয়ে ছিলেন টানা চারটি বাউন্ডারি। এবার বল করতে এসেই প্রথম তিন বলেই বাউন্ডারি!
প্রথম উইকেট জুটি অবশ্য এরপর বেশি দূর এগোতে পারেনি। রান আউটের ফাঁদে কাটা পড়েন লিটন। তার আগে তুলে নেন ২১ বলে ২৯!
অবশ্য আউটের জন্য নিজেই অনুশোচনায় পড়েন এই ওপেনার। কারণ ভুলটা যে তারই। রিশাব পান্ত দারুণ ফিল্ডিংয়ে ফেরান লিটনকে। তিনি ফিরতেই ভাঙে ৪৫ বলে ৬০ রানের উদ্বোধনী জুটি। অবশ্য এর আগে রিশাবই প্রাণ দিয়েছেন লিটনকে। তার ভুলে টিকে যান টাইগার ওপেনার।
যুজবেন্দ্র চেহেলের বলে আক্রমণাত্মক লিটন ব্যাট হাতে এগিয়ে গিয়ে ঠিক সময় মতো ফিরতে পারেননি! কিন্তু স্ট্যাম্পিংয়ের সহজ সুযোগে বল ধরে বেলস ফেলে দেন পান্ত। যদিও টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, বল ধরার সময় পান্তের গ্লাভসের সামনের অংশ ছিল স্ট্যাম্পের সামনে! ব্যস, প্রাণে বাঁচেন তিনি। স্ট্যাম্পিংয়ের জন্য যা ক্রিকেট আইন আছে তা হলো- উইকেটকিপারকে বল ধরতে হয় স্ট্যাম্পের পেছন থেকে। তবে প্রাণ পেয়ে সেই সুযোগটা লিটন কাজে লাগাতে পারলেন কোথায়?
সঙ্গী হারিয়ে কেমন যেন অস্থির হয়ে উঠেন নাঈম। মাটি কামড়ানো শটে ভালোই খেলছিলেন। কিন্তু ধৈর্য হারিয়ে সর্বনাশ। ওয়াশিংটন সুন্দরের বলে স্লগ সুইপ করলেও মিড উইকেটে দাঁড়িয়ে বল মুঠোবন্দী করেন শ্রেয়াস আইয়ার। ৩১ বলে ৩৬ রান করেন নাঈম।
আর বাংলাদেশ ১০ ওভারে তুলে ৭৮ রান। তারপর হতাশ করেন আগের ম্যাচের জয়ের নায়ক মুশফিকুর রহিম। দিল্লিতে ৬০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে দলকে এনে দেন ৭ উইকেটের ঐতিহাসিক জয়। কিন্তু এবার মাত্র ৪ রানেই যুজবেন্দ্র চাহালের শিকার।
তারপর উইকেট পতনের বৃত্ত থেকে আর বেড়িয়ে আসা হয়নি! আগের ম্যাচে ৩৯ রান করা সৌম্য সরকার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু বড় ইনিংস খেলে দলের বিপর্যয়ে প্রতিরোধ গড়তে পারলেন কোথায়? ২০ বলে ৩০ রান তুলে চাহালের শিকার ওয়ান ডাউনে খেলতে নামা এই ব্যাটসম্যান।
যদিও আউট কীনা সেটা জানতে থার্ড আম্পায়ারের সাহায্য নিতে হয়। সেখানে শুরুতে অবশ্য ভুল করে শুরুতে ‘নট আউট’ ঘোষণা দেন তিনি। কিন্তু এরপরই জানান সৌম্য আউট। তারপর কিছু করতে পারেননি আফিফ হোসেনও। দলের বিপর্যয়ে এই তরুণ আক্রমণাত্মক হয়ে মাশুল গুনেন। খলিল আহমেদের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে আউট (৮ বলে ৬)। গর্জে উঠল সৌরাষ্ট্রের গ্যালারি!
তারপরও দল তাকিয়ে ছিল মাহমুদউল্লাহর দিকে। কিন্তু অধিনায়কও ঝড় তুলতে পারেননি। দিপক চাহারের বলে শর্ট থার্ড ম্যানে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। ২১ বলে ৩০ রান দলকে জাগিয়ে দিতে পারল না! গর্জন নিয়ে রোহিত শর্মাদেরও মাঠ ছাড়ার মঞ্চ অনেকটাই তৈরি। কারণ রাজকোটের ব্যাটিং উইকেটে যে পুঁজিটা চ্যালেঞ্জিং মনে হচ্ছে না! সিরিজে সমতার জন্য লড়তে থাকা ভারতকে কী আটকাতে পারবে বোলাররা?
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৫৩/৬ (লিটন ২৯, নাঈম ৩৬, সৌম্য ৩০, মুশফিক ৪, মাহমুদউল্লাহ ৩০, আফিফ ৬, মোসাদ্দেক ৭*, আমিনুল ৫*; চাহার ১/২৫, খলিল ১/৪৪, সুন্দর ১/২৫, চাহাল ২/২৮)।