সিরিজের আবিষ্কার মোহাম্মদ নাঈম
ধারাভাষ্য কক্ষে বসা সুনীল গাভাস্কারের গলায় মুগ্ধতা ‘ওয়াও, হোয়াট অ্যা শট!’ তার সঙ্গী আতহার আলী খানও মোহিত-‘এলিগেন্ট ড্রাইভ। সুপার্ব এক্সিকিউশান!’ ফেসবুকে স্ক্রল করতেই দেশের প্রখ্যাত ক্রীড়া সাংবাদিক উৎপল শুভ্র’র স্ট্যাটাস মিলল-‘দিস কিড ক্যান ব্যাট’। সেই স্ট্যাটাসের নিচেই আরেক অভিজ্ঞ ক্রীড়া সাংবাদিক ও বিশ্লেষক অঘোর মন্ডলের মন্তব্য-‘হি হ্যাস ডান দ্যাট।’
প্রশংসা সূচক এই মন্তব্যগুলো মোহাম্মদ নাঈমের ব্যাটিং নিয়ে। ১২ রানে ২ উইকেট হারানো বাংলাদেশ দল নাগপুরের শেষ ম্যাচে জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়ে রেখেছিল মূলত মোহাম্মদ নাঈমের ব্যাটিংয়ের কল্যাণেই।
শুরুটা একটু দেখেশুনে করলেন এই বাঁহাতি। তারপর যখন শটস খেলতে শুরু করলেন তখন পুরো মাঠ এবং গ্যালারি জুড়ে সুনশান নিরবতা! বাংলাদেশি এই তরুণের পাওয়ার ব্যাটিং দেখে দর্শকরা পর্যন্ত বিস্মিত এবং হতবাক। যুগবেন্দ্র চাহালকে এমনভাবে কেউ মারতে পারে? এত প্রভাবী ব্যাটিং করতে পারে? এটা যে তাদের কারোর জানাই ছিল না! সেই বিস্ময়ের ঘোর কাটতে না কাটতেই তারা দেখল ম্যাচ জয়ের অবস্থানে দাঁড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ! যার পুরো কৃতিত্ব মোহাম্মদ নাঈমের ঝলমলে ৮১ রানের ইনিংসের।
চাহালকে তার প্রথম ওভারের প্রথম তিন বলেই বাউন্ডারি হাঁকান মোহাম্মদ নাঈম। সেই ওভারে চাহালের খরচা ১৫ রান। যার ১৪ রানই এলো মোহাম্মদ নাঈমের ব্যাটে।
নাঈম ও মিঠুন তৃতীয় উইকেট জুটিতে যেভাবে সামনে বাড়ছিল দলের ইনিংস তাতেই নাগপুরের ম্যাচে বিজয়ী মঞ্চে সম্ভাবনার নিক্তিতে বাংলাদেশের নামটাই বেশি উজ্জ্বলতা ছড়াচ্ছিল। মাত্র ৩৪ বলে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে নিজের প্রথম হাফসেঞ্চুরি পুরো করেন মোহাম্মদ নাঈম। ৭ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায় আসা তার শুরুর ৫৩ রানের এই ইনিংসের প্রতিটি শটস নিখুঁত ক্রিকেটীয় ব্যাকরণ সম্মত।
যে শটস দেখে ক্রিকেট লিজেন্ড সুনীল গাভাস্কার পর্যন্ত উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করলেন। ব্যাটিংয়ে এমনই মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন এই বাংলাদেশি তরুণ। হাফসেঞ্চুরির পর তার ইনিংস আরও বেশি পরিণত এবং একটা দৃঢ়তার ছাপ রেখেছে। নাগপুরে ৪৮ বলে তার ৮১ রানের ইনিংস হয়তো বাংলাদেশকে ম্যাচ জেতাতে পারেনি। তবে ১০ বাউন্ডারি ও ২ ছক্কার তার এই ইনিংস জানিয়ে দিল-তামিম ইকবালের সঙ্গী হিসেবে তরুণ এক বাঁহাতি ওপেনারকে পেয়ে গেছে বাংলাদেশ!
নাঈমের ৮১ রানের ইনিংস টি-টোয়েন্টিতে ভারতের বিপক্ষে খেলা বাংলাদেশি কোনো ব্যাটসম্যানের সেরা ইনিংস। বাংলাদেশের জার্সি গায়ে ২১ বছর বয়সী এই তরুণের অভিষেক হয়েছিল দিল্লির টি-টোয়েন্টিতে।
দিল্লিতে ২৮ বলে ২৬ রান, রাজকোটে ৩১ বলে ৩৬ রান এবং নাগপুরে ৪৮ বলে ৮১ রান- এই তিন ইনিংসে তার ব্যাটিং বিশ্লেষণই প্রমাণ করছে-‘এই তরুণ ব্যাট করতে জানে।’
নাগপুরে নিজের ৮১ রানের ইনিংসের বিশ্লেষণও করলেন এই তরুণ খুবই নির্মোহ ভঙ্গিতে। বললেন- ‘ম্যাচ শেষ করে আসতে পারলে তো যে কোনো ব্যাটসম্যানের ভালো লাগার কথা। আমি এই ম্যাচটা শেষ করে আসতে পারিনি, এটা ঠিক আফসোস না-আমি মনে করি এখান থেকে শেখার আছে অনেক কিছু। শিখলাম যে এই পরিস্থিতি থেকে কিভাবে খেলা উচিত ছিল, কিভাবে ম্যাচ বের করে নিয়ে আসতে হয়।’
তিন ম্যাচে সবমিলিয়ে ১০৭ বলে তার রান ১৪৮। রান গড় ৪৭.৬৬। ১৭ বাউন্ডারি ও তিন ছক্কা। স্ট্রাইক রেট ১৩৩.৬৪। এই পরিসংখ্যানই বলছে মোহাম্মদ নাঈম বাংলাদেশ দলে লম্বা সময় জুড়ে খেলার জন্যই এসেছেন।
শুভ কামনা, তরুণ!