ইডেন টেস্টে যে বদল দেখাতে চায় বাংলাদেশ
দিল্লি দিয়ে শুরু। তারপর নাগপুর, রাজকোট; সপ্তাহখানেক ইন্দোরে কাটিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এখন আনন্দের শহরে। কোলাহল আর প্রাণের শহর, কলকাতায়! দোমিনিক লাপিয়েরের সিটি অফ জয় ‘সুরতালের’ নাম বদলে কলকাতা এই মুহূর্তে এখন অবশ্য সিটি অব পিঙ্ক। সব জায়গাতেই একই রঙ-গোলাপি!
নতুন করে যেন সেজেছে ইডেন গার্ডেন্স। প্রথমবারের মতো নন্দন কাননে দিন-রাতের ক্রিকেট। বিশেষ এই টেস্ট ম্যাচ দেখতে হাজির হচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সঙ্গে দেখা যাবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও।
বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টের একাদশের ক্রিকেটারাও আমন্ত্রিত। একইসঙ্গে ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড প্রেসিডেন্ট সৌরভ গাঙ্গুলির আমন্ত্রণে হাজির থাকবেন কিংবদন্তি ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকার, সুনীল গাভাস্কার, অনিল কুম্বলে, রাহুল দ্রাবিড়দের মতো কিংবদন্তি!
আর হতাশা পেছনে ফেলে নতুন করে করে ইডেনে জেগে উঠার তাগিদে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। প্রথম টেস্টে ইন্দোরে শুধু হতাশায় সঙ্গী হয়েছে। মধ্য প্রদেশের মাঠে তিনদিনে টেস্ট হেরেছে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। ব্যাট-বল সব বিভাগেই ব্যর্থ। তবে এমন ব্যর্থতা নিয়ে দেশ ফিরতে চাইছেন না মুমিনুল হকরা। টেস্ট সিরিজ থেকে ইতিবাচক কিছু অর্জনের অপেক্ষায় দল।
ইডেনে গোলাপি বলে দিবা-রাত্রির টেস্ট ম্যাচটি মাঠে গড়াবে ২২ নভেম্বর, শুক্রবার। তার আগে কম করে হলেও টাইগারদের বদল দেখাতে হবে আট জায়গায়।
এক.
শুরুতেই হলকার স্টেডিয়ামের ব্যর্থতাকে ভুলতে হবে। পারফরম্যান্সের উন্নতি ছাড়া অতীতকে আড়াল করার কোনো সুযোগই নেই। আগের টেস্টের প্রথম ইনিংসে দল ১৫০ রানে অলআউট হয়েই সর্বনাশ হয়েছিল। এরপর আর ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হয়নি। এবার সেই নৈপুন্যের উন্নতি ছাড়া পথে ফেরার সুযোগ নেই। অবশ্য মুমিনুল হক জানিয়ে দিয়েছেন, কলকাতায় অন্তত সুযোগগুলো কাজে লাগাতে চায় তার দল। ভারতের মাঠে ভারতের কাছ থেকেও কিছু শিখে নিতে চায়।
দুই.
অতি অবশ্যই ক্রিকেটারদের মধ্যে ফিরে আসতে হবে লড়াইয়ের তাগিদ। তেমনটা চোখে পড়েনি ইন্দোরে। উইকেটে থিতু হয়েই বাজে শট খেলে ফিরে গেছেন দলের ক্রিকেটাররা। দল পায় নি ভাল কোনো জুটি। কিছুটা সময় মুশফিকুর রহিম লড়ে গেলেও অন্যদের মধ্যে প্রতিপক্ষের কোয়ালিটি বোলিংয়ের বিপক্ষে যেভাবে লড়ে যাওয়ার কথা সেভাবে লড়াইয়ের দেখা মেলেনি।
তিন.
ইন্দোরে টেস্টের মজাটাও ছিল না মুমিনুল হকদের খেলায়। যদিও হেড কোচ রাসেল ডমিঙ্গো এজন্য প্রস্তুতির ঘাটতির প্রসঙ্গটাও বারবার সামনে এনেছিলেন। ২০ ওভারের ক্রিকেট দিয়ে শুরু হয়েছিল ভারত সফর। এ কারণেই নাকি পুরো দলের মেজাজ সেই টি-টোয়েন্টিতেই ছিল। যার প্রভাব পড়ে পারফরম্যান্সে। কলকাতায় মাঠে নামার আগে অবশ্য তেমন অজুহাতের সুযোগ নেই। এরইমধ্যে ইন্দোরে দল টানা দু'দিন কৃত্রিম আলোতে সেরে নিয়েছে দীর্ঘ অনুশীলন। দু'দিন ইডেনেও নিজেদের প্রস্তুত করে নিতে পারবেন টাইগার ক্রিকেটাররা।
চার.
হাতে পাওয়া সুযোগগুলোও ঠিকঠাক কাজে লাগাতে হবে। যেমনটা ইন্দোরে দেখিয়েছিলেন ভারতের মায়াঙ্ক আগারওয়াল। ৩২ রানে একবার জীবন পেয়েছিলেন। এরপর ডাবল সেঞ্চুরি তুলেই থেমেছেন ভারতীয় এই তরুণ ব্যাটসম্যানরা। অথচ টাইগার ব্যাটসম্যানরা দফায় দফায় সুযোগ পেয়েও ইনিংসটাকে টেনে লম্বা করতে পারেন না। এমন কী সেই চেষ্টাটাও যেন কোথায় হারিয়ে যায়!
পাঁচ.
ইন্দোরের বাংলাদেশ একাদশটা নিয়ে ঢের কথা হয়েছে। বিশেষ করে পেস সহায়ক উইকেটে টাইগাররা খেলেছে দুই পেসার নিয়েছে। যেখানে আবু জায়েদ রাহির দুর্দান্ত বোলিং শুধু আক্ষেপটাই বাড়িয়েছে। এক প্রান্তে এবাদত হোসেন ছিলেন ঠিকই কিন্তু টানা বল করতে গিয়ে ক্লান্ত হয়েছেন রাহি। তারপরও রোহিত শর্মা-বিরাট কোহলিদের দ্রুত ফিরিয়ে কিছুটা অন্তত প্রাপ্তি এনে দেন এই পেসার। কলকাতায় দিন-রাতের টেস্ট। গোলাপি বলের লড়াই। ভারত-বাংলাদেশ দুই দেশই প্রথমবারের মতো হতে যাচ্ছে এমন অভিজ্ঞতার সঙ্গী। আর এটা তো সবারই জানা গোলাপি বলে একটু বাড়তিই বাউন্স। আর সুইংটাও বেশি। শোনা যাচ্ছে ইডেনের উইকেটে পেসাররাই পাবেন বাড়তি সুবিধা। সেই কথা মাথায় রাখলে সন্দেহ নেই টাইগার একাদশে পরিবর্তন আসবেই। তিন পেসারে হয়তো যাবে টিম ম্যানেজম্যান্ট। সেক্ষেত্রে রাহির সঙ্গে যোগ হতে পারেন মুস্তাফিজুর রহমান ও আল আমিন হোসেন। সেক্ষেত্রে একাদশ থেকে একজন স্পিনারকে বাদ রাখার ঝুঁকি নিতেই হচ্ছে।
ছয়.
ব্যাটিং লাইন আপটা নিয়েও ভাবার অবকাশ আছে। বিশেষ করে মুশফিকুর রহিমকে চার নম্বরে ব্যাট করানো যায় কীনা তা নিয়েও স্থির পরিকল্পনা করতে হবে। ইন্দোরে পাঁচে দেখা গেছে এই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানটিকে। যিনি বরাবরই ভারতের বিপক্ষে সফল। হোলকার স্টেডিয়ামে উভয় ইনিংসে মুশফিকই যা একটু সমীহ আদায় করেছেন তিনি।
সাত.
একইসঙ্গে অধিনায়ককেও পারফরম করতে হবে। দলের নেতা যখন পারফরম করে সেটা পুরো দলের জন্যই বাড়তি অনুপ্রেরণা নিয়ে আসে। অবশ্য এই কথাটা স্বীকার করে নিয়েছেন মুমিনুল হক। ইন্দোরেই নেতৃত্বের অভিষেক হলো তার। কিন্তু শুরুতে কিছুই পাননি। এটা নিয়ে অবশ্য ভাবেনও নি তিনি। তবে চেষ্টাটা চালিয়ে যেতে চান। আর ইডেনেই ভাল কিছু করার প্রত্যয়ও ছিল তার গলায়।
আট.
সাফল্য পেতে হলে জ্বলে উঠতে হবে পুরো দলকেই। তাহলেই কেবল ভাল কিছু অর্জন সম্ভব। ভয়কে জয় করে সেই সাফল্যের জন্য অবশ্য মরিয়া টাইগাররা। আনন্দের শহরে টেস্ট ম্যাচটি পাঁচদিনে যাবে কীনা সেটা নিশ্চিত নয়। কারণ পিঙ্ক বল টেস্ট পাঁচদিনে যাওয়ার রেকর্ডই নেই! এবার যাবে কীনা সেটি সময়ই বলে দেবে। কিন্তু ইডেনে নাকি প্রথম চারদিনের টিকিট বিক্রি শেষ।
উন্মাদনার কোনো কমতি নেই। খোদ ভারতীয় সমর্থকরাও চাইছে মুমিনুল হকের দল অন্তত লড়াই করেই হারুক। পয়সা উসুলের অপেক্ষায় ইডেনের দর্শকরা।
আর বাংলাদেশ অপেক্ষায় অনেক কিছু প্রমাণ করার!