বলটাই শুধু গোলাপি, খেলাটা কিন্তু ক্রিকেটই!
সব পথ গিয়ে মিলেছে এখন কলকাতার ইডেনে!
এমন কিছু নিয়ে এখন ক্রিকেটের একটা গান বাঁধাই কেবল বাকি যেন। নতুন ক্রিকেটীয় গান বাঁধা না হলেও ইডেন গার্ডেন্সে অবশ্য প্রথমদিনের খেলা শেষে গান ঠিকই থাকছে।
সূচি জানাচ্ছে, পিঙ্ক টেস্টের প্রথমদিনের খেলা শেষে ইডেনের খেলার মঞ্চে রুনা লায়লা গান গাইবেন। জিৎ গাঙ্গুলিও থাকছেন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনের অংশজুড়ে।
টেস্ট ম্যাচের শুরু হওয়ার আগে থাকছে পুলিশের ব্যান্ড শো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি আছেন পিঙ্ক টেস্টের মহাযজ্ঞে।
ম্যাচের চা বিরতির সময়েও গান-আনন্দ থাকছে। বাংলাদেশ-ভারতের সাবেক অধিনায়ক ও ক্রিকেটীয় তারকারা এই সময় মাঠে ল্যাপ অব অনারে অংশ নেবেন।
ইডেনের ইলেকট্রনিক স্কোরবোর্ডের চারপাশের বর্ডারের রংও বদলে গেছে। জ্বি আপনার অনুমান শতভাগ ঠিক-পিঙ্ক! গলায় অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডের ফিতের রংও তাই। ম্যাচের টিকেটের রংও তাই। মোটেও অবাক হবেন না যদি গ্যালারিতেও গোলাপি রংয়ের টি-শার্টের বাহার দেখেন। মাঠের বাইরে গোলাপি জার্সি বা টি-শার্ট বিক্রির একটা দোকান বসিয়ে দিলে ব্যবসা মন্দ হবে না!
টিভি সাংবাদিকরা ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে পিটিসি দিচ্ছেন, গোলাপি রঙয়ের শার্ট গায়ে দিয়ে। ফেসবুকে কলকাতা পৌঁছানোর ছবি পোস্ট করে একজন ক্যাপশন দিলেন- গোলাপি এখন কলকাতায়!
ইডেনের পিচ কিউরেটর সুজন মুখার্জিকে গত কয়েকদিনে গোলাপি বল নিয়ে এত বেশি কথা বলতে হয়েছে যে, সম্ভবত ২২ গজের সবুজ ঘাসকেও এখন তিনি গোলাপি দেখছেন!
দু’দলের সংবাদ সম্মেলন। সাইড টক। খবরের কাগজের খেলার পাতা। টিভি-অনলাইনে লাইভ। স্পোর্টস টক শো। সবকিছু জুড়েই যেন ইডেনের পিঙ্ক ক্রিকেটের জ্বর!
তবে এই ‘পিঙ্কির জ্বর’ এবং ঘোরের মধ্যে ভুলে গেলে চলবে না বলের রং বদলালেও খেলাটা কিন্তু বদলাচ্ছে না। মাঠের আকৃতি এবং পিচের ২২ গজের আয়তন আগের মতোই থাকছে। স্ট্যাম্পের উচ্চতা কমছে কিম্বা বাড়ছে না। ব্যাটের পুরুত্বও তাই থাকছে।
খেলার মৌলিক নীতিতে কোনো পরিবর্তন আসছে না। বরং চ্যালেঞ্জটা আরও কঠিন হচ্ছে। গোলাপি বলে সুইং বেশি হবে। বাউন্সও অতিরিক্ত মিলবে। আর ইডেনের শক্তপোক্ত উইকেটে ফ্লাডলাইটের তীব্রতায় ঝাঁ চকচকে গোলাপি বল ম্যাচ শুরুর প্রাক কথন পর্বেই ব্যাটসম্যানদের কাছেই একপ্রকারের নীল-হলুদ রংয়ের বিভীষিকা হয়ে উঠছে-সর্ষে ফুল!
দিনরাতের টেস্ট ম্যাচ দু’দলের জন্যই নতুন। কিন্তু পিঙ্ক বল নিয়ে তুমুল উচ্চমার্গীয় আলোচনার স্তবকে ভয় শুধু একটাই- খেলাটা না হারিয়ে যায়! অথবা দল যেন খেলাটা না ভুলে বসে!
ইডেনে পিঙ্ক টেস্টের আগেরদিন একজন ঠিকই সেটা আরেকবার দলকে মনে করিয়ে দিলেন। কাঁধের ওপর দিয়ে দড়ি টানার স্ট্রেচিংয়ের ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে লিখলেন- ‘মাঠে এবং মাঠের বাইরে সবসময়ে নিজের শতভাগ উজাড় করে দিতে হয়।’
ইনি মুশফিক রহিম। ইন্দোর টেস্টের উভয় ইনিংসে ব্যাট হাতে সত্যিকারের ক্রিকেট খেলার শতভাগ চেষ্টার দেখা মিলেছিল যার খেলায়। বাকিরা লাল বলের তোড়ে ব্যথায় নীল।
গোলাপি রংটা বেশ আকর্ষণীয়। কাছে টানে। আবেদনও জাগায়। তবে মাঠে ক্রিকেট যুতসই কিছু না হলে ইডেনের পিঙ্ক বলের টেস্ট রোমান্স ও রোমাঞ্চের উত্তাপ উবে যেতেও সময় লাগবে না!
মাঠের নাম ইডেন গার্ডেন্স। সহজ বাংলায়-স্বর্গোদ্যান। সেই স্বর্গে ক্রিকেটীয় সুখে ফেরার অপেক্ষায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দল।
স্বর্গে জায়গা না মিললে বিপরীত শব্দটা নিশ্চয়ই আপনার জানা!