মাঠে অধিনায়ক একজন, কিন্তু বাইরে মাতব্বর অনেক!
সমস্যার শুরু কুমিল্লার ইনিংসের ১৯ নম্বর ওভারের খানিক আগে। ১৮ নম্বর ওভারটা করেন পেসার রুবেল হোসেন। সেই ওভারে রুবেল মাত্র ১ রান খরচ করে তুলে নেন দুটি উইকেট।
-১৯ নম্বর ওভার কাকে দিয়ে করাবেন চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান?
১৭তম ওভারে দারুণ মিতব্যয়ী বোলিং করা স্পিনার রায়ান বার্লকে আবার ডাকলেন চট্টগ্রাম অধিনায়ক। মাঠে অধিনায়ক সোহানের এই সিদ্ধান্ত দেখে ড্রেসিংরুমের সামনে এসে দাঁড়ানো মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ দু’হাত তুলে হতাশা প্রকাশ করেন। জোরে চিৎকার করে এবং ইশারা দিয়ে মাহমুদউল্লাহ বলতে থাকেন- পেসার আনো, পেস বোলারকে আক্রমণে আনো। মাঠে এই ম্যাচের অধিনায়ক সোহান তখন কিছুটা বিচলিত। চিন্তিত। ৩ ওভারে মাত্র ৯ রান দেওয়া রায়ান বার্লকেই পরের ওভার করার জন্য বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্তে স্থির থাকেন তিনি। এরই মধ্যে ড্রেসিংরুম থেকে ইমরুল কায়েসও বেরিয়ে আসেন। ইনজুরির জন্য ইমরুলও এই ম্যাচে বিশ্রামে ছিলেন। মাঠের বাইরে থেকে দাঁড়িয়ে তারা দু’জনেই পরের ওভারটা কোনো পেসারকে দিয়ে করানোর জন্য চিৎকার এবং শারীরিক অঙ্গভঙ্গি করতে শুরু করেন।
ততক্ষণে স্পিনার রায়ান বার্লের হাতে বল তুলে দিয়েছেন মাঠের অধিনায়ক সোহান। বোলিংয়ের জন্য ফিল্ড সেটিংও করা হয়ে গেছে। কিন্তু মাঠের বাইরে এই ম্যাচে না খেলা দুই সিনিয়রের নির্দেশাবলীর ভঙ্গি দেখে সোহান বেচারা সিদ্ধান্ত বদলাতে বাধ্য হন। বার্লের হাত থেকে বল নিয়ে নেন তিনি। অধিনায়কের এমন সিদ্ধান্তে বার্ল নিজেও অবাক। তবে করার কি আছে! মাঠের বাইরে থেকে উড়ে আসা নির্দেশ অমান্য করার মতো ‘সাহস’ দেখাতে পারেননি সোহান।
৩১ ডিসেম্বর, মঙ্গলবার কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সের বিপক্ষে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের এমন সব সিদ্ধান্তহীনতায় খেলার অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়। মাঠের দুই আম্পায়ার বারবার চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহানকে এ নিয়ে সতর্ক করে দিচ্ছিলেন। ইচ্ছাকৃতভাবে খেলার সময় নষ্ট বা খেলা থামিয়ে রাখার জন্য চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের পুরো দলকে সতর্ক করেন আম্পায়ার। জানিয়ে দেন-দ্বিতীয়বার এমনভাবে ম্যাচের সময় নষ্ট করলে নিয়ম অনুযায়ী পুরো দলকে ৫ রান পেনাল্টি করা হবে।
মাঠের বাইরে দাঁড়ানো মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ শুধু বোলার বদলের বিষয়ে নয়, ফিল্ডিং সেট আপের বিষয়েও পরামর্শ দিতে শুরু করেন। নিজের সিদ্ধান্ত নিয়ে খানিকবাদে সেটা বাইরের ‘চাপে’ বদলে ফেলা- এমন কাণ্ডে মাঠে সোহানকে ভীষণ অসহায় মনে হচ্ছিল।
ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময় অধিনায়ক হিসেবে সোহানের ওপর কি তাহলে আস্থা রাখতে পারছিলেন না মাহমুদউল্লাহ? তাহলে কেন অধিনায়ক হিসেবে সোহানকে বেছে নেওয়া? অধিনায়কত্ব সোহানের জন্য নতুন কিছু নয়। ঘরোয়া ক্রিকেটে আরো বড় ম্যাচে তিনি অধিনায়কত্ব করেছেন। বাংলাদেশ ‘এ’ দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু ম্যাচের মাঝখানে যেভাবে এবং যে কায়দায় অধিনায়ক সোহানকে দিক নির্দেশনা দিলেন এই ম্যাচে না খেলা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও ইমরুল কায়েসরা- সেটা ঠিক ক্রিকেটীয় ডিসিপ্লিনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। মাঠের অধিনায়কের জন্য মর্যাদাকরও নয় বটে! ম্যাচের অধিনায়ককে কোনো পরামর্শ দিতে হলেও তো তার জন্য স্ট্র্যাটেজিক টাইম আউট থাকছেই। তাছাড়া মাঠে দ্বাদশ ব্যক্তিও আম্পায়ারের অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করতে পারেন। টিম ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্ত তিনিই জানাতে পারেন অধিনায়ককে। কত রকমই তো কৌশল আছে?
কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো- সোহানের সিদ্ধান্তের বিষয়ে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হেড কোচ বা বোলিং কোচ এই সময় মাঠের বাইরে থেকে কোনো কিছু বলেননি। যা বলার বলেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও ইমরুল কায়েস।
সেই দুজনেই আবার এই ম্যাচের দ্বাদশ ব্যক্তিও নন! মাঠের বাইরে থেকে তারা যা করলেন তাকে সহজ ভাষায় বলে-মাতব্বরী! পেসারকে দিয়ে শেষের ওভার করানোর জন্য তারা যেভাবে চাপাচাপি করলেন সেটা মোটেও শোভনীয় কিছু ছিল না।
হ্যাঁ, এতো কিছু করেও ম্যাচে হার বাঁচাতে পারেনি চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। শেষ ওভারে দুই চার ও এক ছক্কায় ম্যাচ জিতে নেয় কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স।
জ্বি, শেষ ওভারটা করেছিলেন লিয়াম প্লাঙ্কেট। ওনার মূল পরিচয় পেসার!