নেতৃত্ব পাল্টে দিয়েছে মুমিনুলকে
হঠাৎ করেই অধিনায়কত্বের উত্তাপটা গায়ে এসে লাগে মুমিনুল হকের। বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো ক্রিকেট থেকে সাকিব আল হাসান যখন নির্বাসিত তখন সামনে ভারত সফর। তামিম ইকবাল ছুটিতে। মুশফিকুর রহিমকেও নেতৃত্বে ফেরানোর কোনো ইচ্ছে ছিল না বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি)। ঠিক তখনই দায়িত্বটা কাঁধে এসে পড়ে।
আচমকা টেস্ট অধিনায়ক হয়ে দুঃস্বপ্নের মতোই সময় কাটছিল মুমিনুলের। ভারতের দুটো টেস্টের দুটোতেই আড়াই দিনে হার। এরপর পাকিস্তান সফরেও তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরেছেন ক্যাপ্টেন মুমিনুল। ঠিক এমনই দৃশ্যপটে জিম্বাবুয়েকে পেয়ে মুখে হাসি কক্সবাজারের এই ক্রিকেটারের। তার দল যে মঙ্গলবার জিতল ইনিংস ও ১০৬ রানে।
এই জয়ের পর অবশ্য জানালেন কোনোরকম চাপেই ছিলেন না তিনি। মুমিনুল সংবাদ সম্মেলনে বলছিলেন, 'আমি জানি না আপনাদের আমাকে দেখে কখনও চাপে আছি মনে হয়েছে কিনা। তবে আমার নিজের কাছে মনে হয় না। আমি সবসময় যে জিনিসটা আশা করি, যেটা আমি চেষ্টা করি যে সবসময় আশাটা বড় রাখতে। আমি কোনো সময় চাপে ছিলাম না। দেখুন শুরুর দিকে একটু খারাপ হলে আমি বিষয়টিকে সেভাবে দেখি না। কারণ এটা হতেই পারে। আপনার যখন ভালো হবে তখন আসতে আসতে ভালো হতে থাকবে। আমার কাছে উন্নতি করাটাও গুরুত্বপূর্ণ। আগামী যে পাকিস্তান সিরিজ আছে সেখানে আমি কেমন এবং দল হিসেবে ক্রিকেটাররা কেমন করছে সেটার দিকে তাকিয়ে আছি।'
মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে চার দিনই দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলেছে বাংলাদেশ। মুমিনুল নিজেও পেয়েছেন শতরান। দারুণ নেতৃত্ব দিয়েছেন দলকে। এমন সাফল্যে অবশ্য উড়তে রাজি নন। জানাচ্ছিলেন, 'দল যেভাবে কাজ করবে, যেমনটা হওয়া উচিত-সেই জিনিসটা আমি সবসময় আসলে দেখতে চাইছিলাম। এটা আমি ফিল করতে চাইছিলাম। আমার কাছে মনে হয় যে প্রথম ইনিংস থেকে আপনারা হয়তো খেয়াল করেছেন। এমনকি পেস বোলার থেকে শুরু করে স্পিনার এমনকি ব্যাটসম্যানরা পর্যন্ত আপনার দলের যা দরকার সেভাবে করেছে। এই কারণে আমার কাছে মনে হয় ফলাফলটি এসেছে।'
এই জয়ে ক্রিকেটার মুমিনুলেরও থাকল অবদান। ব্যাটে চাপের মুখে থেকে করলেন শতরান। অধিনায়ক জানাচ্ছিলেন, 'একটু তো অবদান রাখতে পারলে ভালো। আমার কাছে মনে হয় অধিনায়ক হিসেবে এবং দলের একজন সদস্য হিসেবে সবসময় সবার কাছে এটা কাম্য যদি আপনি কিছু করতে পারেন। আমার মনে হয় আমি দলের জন্য কিছু অবদান রাখতে পেরেছি এবং সেটা করতে পারলে অনেক ভালো লাগে। আমার কাছে মনে হয় ছোট ছোট অবদান রাখাটাও অনেক বেশি কিছু।'
মাঠে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে কিছু পরিবর্তনও এসেছে মুমিনুলের। আগে অনেকটাই চুপচাপ ক্রিকেটার ছিলেন। এখন মাঠে সবকিছু নজরে রাখতে হয়। ব্যাপারটা বেশ উপভোগও করছেন তিনি। বলছিলেন, 'আমার ক্যাপ্টেন্সি শুরু হয়েছিল বিসিএল, এনসিএল দিয়ে। ওই জায়গায় প্রথম প্রথম এরকমই ছিলাম পরে দেখলাম যে না জিনিসটা চেঞ্জ করতে হবে। যারা মাঠে থাকে তারা জানে। একটু এগ্রেসিভ, রুট থাকতে হয়। সবাইকেই ঝাড়ি মারি!'
মুমিনুলের এমন কথায় হাসির রোল পড়ে যায় সংবাদ সম্মেলন কক্ষে। সত্যিই নেতৃত্ব পাল্টে দিয়েছে চুপচাপ কথা কম বলা ক্রিকেটারটিকেও!