করোনা আতঙ্কে করাচি, তবুও যাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল!
করোনাভাইরাস এখন বিশ্বব্যাপী আতঙ্কের অন্য নাম। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভয়াবহ এই ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে নানা ধরনের কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে। ইউরোপের দেশগুলো বড় ধরনের জমায়েত বা ভিড় হয়-এমন সমস্ত কর্মসূচি বাতিল করেছে। পদক্ষেপ হিসেবে পাকিস্তান সিন্ধু প্রদেশ তথা করাচিতে সমস্ত স্কুল-কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আগামী ১৩ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে ইরান ভ্রমণ শেষে বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি নাগরিক করাচিতে ফিরে আসেন। ফিরে আসা এই পাকিস্তানি নাগরিকদের অনেকেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। এদের সংস্পর্শে এসে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা যাতে না বাড়ে সেজন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে সিন্ধু সরকার। করাচি এবং বেলুচিস্তানের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দ্বিতীয় দফা বন্ধ করার নির্দেশ নামা জারি করা হয়েছে। আর করাচির ঠিক এমন পরিস্থিতিতে সামনের মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল পাকিস্তান সফরে যাচ্ছে। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ একটি ওয়ানডে এবং একটি টেস্ট ম্যাচ খেলবে।
প্রশ্ন উঠছে-করোনা ভাইরাস আতঙ্কে করাচিতে স্কুল-কলেজসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা কেন দিয়েছে পাকিস্তান?
উত্তর হলো-এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রচুর মানুষের জমায়েত হয়ে থাকে। সেই ভিড়ে এই ভাইরাসে আক্রান্ত কোনো এক ব্যক্তি হাজার হাজার সুস্থ মানুষকে অসুস্থ করে ফেলতে পারে। তাই বড় ভিড় বা গণ জমায়েত এড়াতে আপাতকালীন সময়টা ঝুঁকিহীন করতেই সিন্ধু প্রদেশের সরকার এই আদেশ জারি করেছে। এমনকি যে সকল স্কুল-কলেজ বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই নির্দেশ পালন করেনি তাদের রেজিস্ট্রেশন বাতিলের কঠোর সিদ্ধান্ত পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দল তাদের চলতি সূচির তৃতীয় দফায় পাকিস্তান সফরের ওয়ানডে এবং টেস্ট, দুটি ম্যাচই খেলবে করাচির জাতীয় স্টেডিয়ামে। এই ম্যাচকে ঘিরে করাচি স্টেডিয়ামে প্রচুর দর্শক উপচে পড়বে।
করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে বাংলাদেশ সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) একজন অন্যজনের সঙ্গে কোলাকুলি এমনকি হ্যান্ডশেক না করার জন্যও সতর্কতা জানিয়েছে।
এই প্রসঙ্গে আইইডিসিআর এর পরিচালক ডা. সেব্রিনা মীরজাদী ফ্লোরা তার নিয়মিত ব্রিফিংয়ে ২ মার্চ সোমবার ঢাকায় তার বক্তব্যে এই সতর্কতার কথা বলেন।
এদিকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের শঙ্কার কথা জানিয়ে শ্রীলঙ্কা সফররত ইংল্যান্ডের ক্রিকেটাররা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা মাঠে প্রতিপক্ষের সঙ্গে হ্যান্ডশেক না করার। ম্যাচ শেষে বা শুরুতে মাঠে একে অন্যের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করাটা একটা সাধারণ সৌজন্যতা। কিন্তু করোনাভাইরাসের শঙ্কায় এখন বাড়তি সতর্কতায় সেই সৌজন্যতাও না দেখানোর পথে হাঁটছেন খেলোয়াড়রা।
পাকিস্তানে চলতি মাসেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। দেশটির সংবাদ মাধ্যমই এই সংবাদ জানিয়েছে। গত ১৫ জানুয়ারির পর ইরান থেকে ৭৩৮ জন যাত্রী করাচির জিন্নাহ বিমান বন্দর দিয়ে পাকিস্তানে প্রবেশ করেছে। ধারণা করা হচ্ছে এদের মাধ্যমেই পাকিস্তানে করোনাভাইরাস ঢুকে পড়েছে।
করোনাভাইরাস আতঙ্কের কারণে দুবাইয়ে সম্প্রতি এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) নির্ধারিত সভাও বাতিল করা হয়েছে। আর যেখানে খোদ করাচি এই আতঙ্কে স্কুল-কলেজসহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দ্বিতীয় দফার মতো বন্ধ ঘোষণা করেছে সেখানে বাংলাদেশ কেন এবং কোন বিবেচনায় ক্রিকেট খেলতে যাবে?
প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ ভালো-বিসিবি নিশ্চয়ই এই সত্যটাও জানে!