প্রশান্ত পশ্চিম



মাহমুদ হাফিজ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

পর্ব-৩

লাউঞ্জ ফ্লোর থেকে বিপনীতলায় নেমে লিফটে উঠি। নিচের ফ্লোরের ডি-১১তে আমাদের বোর্ডিং গেট। তুসু সমান্তরাল চলন্ত ওয়াকওয়ের ওপর কেবিন ব্যাগ রেখেছে। পিঠে ব্যাকপাক নিয়ে চলেছে আমাদের আগে আগে। সে আমাদের পিছনে ভৃপৃষ্ঠে এলেও এখন অগ্রবর্তী, আশার আলো।  জলি আর আমি আস্তে আস্তে গিয়ে উঠি স্বতঃশ্চল সে রাস্তায়। যেসব গেটমুখে বিমানের বোর্ডিং শুরু হয়েছে কিংবা বিমান ছাড়ার সময় লাস্ট কল দেয়া হচ্ছে, সেসবের দিকে চলন্ত ওয়াকওয়ে’র ওপর দিয়ে  যাত্রীরা দৌড়ে যাচ্ছে। বিমানবন্দরে এই এক সুবিধা। লাগেজপত্র নিয়ে ঘুরে ঘুরে গেটমুখে যেতে যাতে ক্লান্তি না আসে যাত্রীদের, সে জন্য থাকে চলন্ত পথ। নতুন বিমানবন্দর হলে তো কথাই নেই।

মাথার ওপর অর্ধবৃত্তাকার ডোমের নিচে এই চলন্ত ওয়াকওয়ের দু’পাশে যুক্ত অসংখ্য বোর্ডিং গেট। একটি ওয়াকওয়েতে উঠে লোকজন একেক গেট থেকে যাত্রা করছে একেক দেশের দিকে। কেউ পাড়ি দেবে আটলান্টিক, কেউ প্রশান্ত। আবার কেউ ফিরতি পথে আরবসাগর পার, ভারত, চীন, জাপান সাগর বা বঙ্গোপসাগরের দেশের দিকে ছুটবে।  জীবন চলার পথে কখনো আমরা একই পথের পথিক, শেষমেষ পথ চলে যায় ভিন্নপথে। এ যেন ‘লাকুম দ্বীনুকুম, ওয়ালিয়া দ্বীন’-তোমার জন্য তোমার ধর্ম, আমার জন্য আমার। কিংবা ওই যে গান ‘আজ দু’জনার দুটি পথ, ওগো দুটি দিকে গেছে বেঁকে’…..।

ডি-১১ থেকে ছাড়বে ফ্লাইট ২৮৯, ইস্তাম্বুল-সানফ্রানসিস্কো। গেটমুখে বেশিই কড়াকড়ি। আমেরিকা ঢোকার আগে এখান থেকেই যেন সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হচ্ছে। বিশেষ নিরাপত্তা সংস্থা বোর্ডিং ওয়েটিং এরিয়ায় প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করছে।  কোভিড টেস্টের সনদ, পাসপোর্ট-ভিসা, বোর্ডিং পাস দেখানোর পর আমাদের  লাগেজপত্র নিরাপত্তা চেকের যোগ্য হয়। পুঙ্খানুপুঙ্খ চেকের পর প্রবেশাধিকার পাই। কিছুক্ষণ পর ডাক আসে বিমানে ওঠার। আমি এক্সাইটেড। জীবনের শত শত উড়ালের মধ্যে আজ উঠতে যাচ্ছি ব্রান্ড নিউ বোয়িং ড্রিমলাইনার এর ৭৮৭-৯ এয়ারক্রাফটে। গেটমুখে আসার সময় ট্যাক্সিওয়েতে টার্কিশ উড়োজাহাজের যে বিশাল সারি দেখেছি, বোয়িং ড্রিমলাইনার তার মধ্য সবচেয়ে বিলাসবহুল ও আধুনিক। আমাদের আলটিমেট গন্তব্যও বোয়িংরাজ্য সিয়াটলে।

বিমানের ভিতরে ঢুকেই ‘সেইরাম’ শব্দটি মুখ ফসকে বেরিয়ে গেলে আমার। আধুনিক বিমানটিতে তিন সারিতে তিনটি করে আসন। তুসু বিজনেস ক্লাসের পিছনের কম্পার্টমেন্টেই জানালার কাছে আসন পেয়েছে। আমি আর জলি এর পেছনেই পাখার ওপরের কম্পার্টমেন্টে আসন পেয়েছি। তুসুর পাশে বসেছে রাশভারী দুই গদাধরি মধ্যবয়স্ক। জানালার পাশ থেকে বাথরুমে যাওয়ার প্রয়োজনে দুই গদাধরিকে উঠতে বলা তার কম্ম নয়। তাই তার আসন জুৎসই হয়েছে বলে বলা যাবে না। যদি উপকারে না আসে, বহু মূল্যবান জিনিসও ফেলনা হয়ে যায় জীবনে।  আমাদের সারিতে তিন আসনের একটি ফাঁকা। ভয় পাচ্ছি কেউ যদি চলে আসে , দীর্ঘযাত্রার আয়েশ আরাম হারাম হবে। তুসুর পাশে দুই গদাধরিকে দেখার পর আল্লাহ আল্লাহ করছি কেউ যেন না আসে পাশে।


ভাবনার মধ্যেই বোর্ডিং চলার শেষপর্যায়ে  এক তন্বী তরুণী এগিয়ে এলো ঘাড় ঘুরিয়ে আসন নম্বর খুঁজতে খুঁজতে। মধ্য সারিতে নিজের আসন পাওয়ার পরও  সামনের আসনে বসা তরুণের পাশে ‘মে আই’ বলে বসে পড়লো । সদাহাস্য তরুণটি একাই বসেছিল তিন আসনের সারিতে। এখনও দুটি ফাঁকা। আলাপে বুঝেছি, ইউরোপ থেকে সে পাড়ি জমাচ্ছে আমেরিকায়। বোর্ডিং প্রায় শেষ। আমাদের সামনে পেছনে সবাই বসে গেছে। বিমান রানওয়ের দিকে রওয়ানা হবে হবে ভাব। এমন সময় হন্তদন্ত হয়ে সামনের দিক থেকে এক চিকন সুন্দরী আসন দেখতে দেখতে এগিয়ে আসছে। আধুনিক পরিধেয়সজ্জিত। পরনে জিন্স, ছোট্ টি শার্ট। লম্বা, স্লিমফিগারের। মন বলে ওঠে: সে যদি বসে বসুক।

জলিকে বললাম,

: আসন বোধ হয় আর ফাঁকা রাখা গেল না। পাশের আসন বোধ হয় এই আগমনীর। সে যদি বসে বসুক। 

: এতোক্ষণ তো আল্লাহ আল্লাহ করছিলে, কেউ যাতে না আসে। এখন তোমার আল্লাহ কোথায় গেল?’-জলি বললো।

: তার আসন হলে আর নিষেধ করতে পারবো না।

: হ্যাঁ, বুঝছি’

বলে জলি জানালা আমাকে ছেড়ে দিয়ে মাঝের আসনে বসতে উদ্যত হলো।

চিকনসুন্দরী ধীরপদক্ষেপে এগিয়ে এসে আমাদের সামনেই থামলো। হার্টবিট বাড়ছে, এই বুঝি এক্সিউজ মি বলে বসে পড়ে।

একবার  সেওপরের দিকে তাকালো। নব্য আগন্তুকা তখনও পাশের সদাহাস্য তরুণের সঙ্গে আলাপরতা। দু’চার কথায় কেবলতারা ঘনিষ্ঠমান। এ অঙ্কেই চিকন সুন্দরীর  উদয়। আসন নম্বরে চোখ বুলিয়ে অস্থিরকন্ঠে মেয়েটিকে প্রশ্ন করলো-

‘হোয়াটস ইওর সীট নম্বর”?

আগন্তুকা বিনাবাক্যব্যয়ে আসন ছেড়ে মধ্য সারিতে নিজ আসনে বসলো।

চিকন সুন্দরীর কন্ঠনি:সৃত ‘হোয়াটস ইওর সীট নম্বর’ বাক্যটি আমার কানে শোনালো ‘তুই ক্যাঠা, আমার ভাগ্যে ভাগ বহাতে আইছোস’ এর মতো। 

জলি আর আমার চোখ সামনের আসনের দিকেই স্থির। তিন আসনের সারিতে জানালায় তরুণের একাকী বসা, আরেক তন্বীর তার পাশে বসে আলাপ জমানো আর শেষমেষ আরেক এসে তাকে ভাগিয়ে নিজের আসন বুঝে নিয়ে আলাপ জমানোর মধ্য দিয়ে নাট্যাংশের যবনিকা। আমরা চোখাচোখি করি। পাশের আসনের গুঞ্জরণ প্রলম্বিত হওয়া শুরু হয়।  জানি না, ফ্লাইটের সঙ্গ আসন কতোজনের ভাগ্যে প্রেম জুটিয়ে দিয়েছে। আজকের গুঞ্জরণে মনে হচ্ছে অন্তত একটি হলেও সঙ্গআসন সঙ্গী জুটাবে।এরই মধ্যে বিমান রানওয়েতে টেকঅফের জন্য দৌড়াচ্ছে।


ইস্তাম্বুল থেকে সোজা পশ্চিমে আটলান্টিক সাগরের দিকেমুখ না করে ড্রিমলাইনার যাত্রা করলো সোজা উত্তরে।হালে আমেরিকা-কানাডার আকাশ রাস্তায় অতলান্ত-প্রশান্তকে এড়িয়ে যাওয়ার চল হয়েছে। পৃথিবী বৃত্তাকার, তাই যে কোন দিক থেকেচক্কর দিতে বাধা নেই।  অনেক এয়ারলাইন বেছে নিয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ মেরু। আমি নিজে একযুগ আগেই থাইএয়ারওয়েজের ননস্টপ ফ্লাইটে এসেছি নিউইয়র্কে। আটলান্টিক ও প্রশান্ত রুটে পানির ওপরই টানা আটদশঘণ্টা উড়তে হয়। উড়োহাজাজগুলো বাতাসের বেগ নিয়ে আকাশে চললেও মৃত্তিকামুখী। মাটির স্পর্শ না পেলেও এর ওপর দিয়েই চলতে চায়। মাটির স্পর্শ আমাদের বড় প্রয়োজন।

বলগেরিয়া, রোমানিয়া, ইউক্রেন, পোল্যান্ড ও ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেন এর ওপর দিয়ে তা পাড়ি জমালো নরওয়ের আকাশে। গতিবেগ ঘন্টায় নয়শ কিলোমিটারের বেশি। আকাশ পথে পাড়ি দিতে হবে এগারোহাজার কিলোমিটার। নরওয়েজিয়ান সাগর পাড়ি দিয়ে পৌছালো গ্রিনল্যান্ডের বরফরাজ্যে। এসব দেখছি যখন বিমানের ত্রিমাত্রিক মানচিত্রে, তখন ভেতরে এক ভিন্ন জগত। বিমানের জানালাগুলোর গ্লাসের স্বাভাবিক রঙ বদল করে রাতের নীবিড়তা আনা হয়েছে। নিচের তুষাররাজ্যের ওপর সূর্যের আলো বড়  তীর্যক হয়ে পড়ে। জানালার রঙ বদল করে সূর্যালোকের কড়া তেজ থেকে যাত্রীদের প্রশান্তি দেয়ার আয়োজন। কৃত্রিম আলোয় ভেতরে আয়োজন খানাপিনার।

টার্কিশ এয়ার এ রুটটিতে অনেকখানিই উদার। ঢাকা-ইস্তাম্বুল যে আতিথ্য পেয়েছি, এখানে পাচ্ছি তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। ড্রিমলাইনারের হোস্টেজগণকে ডানাকাটা পরী বললে কম বলা হবে। ফর্সা লম্বালতা দেহে আঁটসাটো খয়েরি ইউনিফর্ম তাদের দিয়েছে আরও কমনীয়তা। তুরস্ক মুসলিম দেশ হলেও ইরেশিয়ার দেশ। ব্যবসা জানে। আজকের আতিথ্যে মেন্যু সার্ভ হয়েছে আগে ভাগে। যাতে খাওয়ার আগেই সিদ্ধান্ত নেয়া যায়। মেন্যুতে দেখি,পাস্তা ও বিশেষ তুর্কি কেতার বিফ । এ্যাপিটাইজার, চা, কফি, কোমল ও’শক্ত’ পানীয়ও নেয়া যাবে ইচ্ছেমতো। তেরোঘন্টার ফ্লাইটে সারাক্ষণই থাকবে জুস আর স্যান্ডউইচ। পুরো দিন কাটাতে হবে আকাশে বাতাসে।  ভারী খাবার চাই। আমরা বিফেই কম্পোর্টেবল। পাতে তাই এলো।

আমার পাশ্ববর্তিনীর অনুযোগ খাওয়ার প্রসঙ্গ এলেই আমি নাকি দুইবার জিহ্বা নাড়িয়ে ঠোঁট লেহন করি। লোভাতুর মুখ চকচক করে ওঠে আমার। সে এখন চল্লিশ হাজার ফুট নিচে দেখার কসরত করে যাচ্ছে কিংবা ফ্লাইট রুটের মানচিত্রে বুঁদ, তাই খাওয়া নিয়ে আমার মুখের অভিব্যক্তি দেখার ফুরসত নেই তার।

আইসল্যান্ডকে বাঁয়ে রেখে গ্রিনল্যান্ডর সফেদ বরফরাজ্য কেটে উড়ছে বোয়িংয়ের বিস্ময়কর উড়ালপাখি ড্রিমলাইনার। নিচে সাদা ফকফকে। এখানে শ্বেতভল্লুকই কেবল বাঁচতে পারে। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলে দেখেছি, বাঁচা ও খাবারদাবারের সন্ধানে বরফরাজ্যের বিয়ার কতো না লড়াই করে চলে নিত্যদিন। উত্তরমেরুর ওপর দিয়ে উড়াল নিয়ে যখন নানা ভাবনা ভাবছি, আমাদের ফ্লাইট বাফিন বে পাড়ি দিয়ে কানাডায় ঢুকে পড়েছে। কানাডা বৃটিশ কলাম্বিয়া রাজ্যের ক্যালগেরি শহরকে ডানে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ও অরেগন রাজ্য পেরিয়ে উড়তে থাকে সানফ্রানসিস্কোর আকাশে। ভাগ্যিস, এখন কোন বন্ধুর সঙ্গে আলাপ করছি না। তখন বন্ধু হয়তো বলতো, আমেরিকা যাবা তো কানাডা গেছো ক্যানে? সে দেশে তো আরও পশ্চিমে! একবার যুক্তরাষ্ট্রে আসার পথে চীনে একরাতের ট্রানজিটে ছিলাম। একবন্ধুর সঙ্গে ফোনে আলাপ হচ্ছিলো, সে বললো, আমেরিকা যাবা তো পূবের দেশ চীনে ক্যানে?

এখন বন্ধুর নয়, কেবিনক্রুর কণ্ঠ শুনি‘লেডিজ এ্যান্ড জেন্টেলম্যান, উই এ্যরাইভড সানফ্রানসিস্কো ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট।

আরও পড়ুন: প্রশান্ত পশ্চিম-২

প্রশান্ত পশ্চিম, পর্ব-১

 

   

ইতিহাস-ঐতিহ্যের শালবন বিহারে একদিন



মুহাম্মাদ মুনতাজ আলী, চবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
শালবন বিহারে চবি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থীরা

শালবন বিহারে চবি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থীরা

  • Font increase
  • Font Decrease

'বার্ষিক শিক্ষাসফর' শব্দটার সাথে ছোট থেকেই পরিচিত। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বয়স, পরিবর্তন হয়েছে শিক্ষার স্তর। তবুও পরিবর্তন হয়নি অতীতে শব্দটার সাথে কাটানো কৌতূহল। ক্লাস প্রতিনিধির কাছে বার্ষিক সফরের কথাটা শুনতেই মনটা নেচে উঠলো এক পরিচিত আনন্দে। তাই দেরি না করেই চাঁদা জমা দিয়ে নিশ্চিত করলাম নিজের আসনটি।

প্রতিক্ষিত দিনটি চলে এলো। পূবের সূর্যিমামার স্বরুপ ধারণের আগেই শেষ হলো প্রস্তুতি। ভোর ছয়টায় চলে এলাম স্পটে। সাথে বন্ধু, বড় ভাই ও বোন মিলে সর্বমোট ২২০ জন। এবং আরও আছেন ডিপার্টমেন্টের বশির আহমেদ স্যার ও সৈয়দ তৌহিদুল ইসলাম স্যার।

পাহাড় ঘেরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে এক সারিতে চারটি গাড়ি ছুটে চলছে বিরামহীনভাবে। গন্তব্য তার ইতিহাস ঐতিহ্যে মোড়ানো কুমিল্লার শালবহন বিহার ও বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড)।

বাস চালু হওয়ার সাথে সাথে বাঙালি সংস্কৃতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত বিভিন্ন গান ও বন্ধুদের নাচে সৃষ্টি হলো এক আনন্দ মুখর পরিবেশ। আমাদের মাঝে প্রশিক্ষিত কোন ড্যান্সার না থাকলেও আজ সকলে নেচে গেয়ে উপভোগ করছেন দিনটি। কেউবা হাতের ফোনটি দিয়ে মুহূর্তটুকু স্মরণীয় করে রাখতে তুলে রাখছেন কিছু ছবি। এভাবে নেচে গেয়ে প্রায় দেড়শ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করে যেন খুব দ্রুতই বার্ডের গেটে পৌঁছালাম আমরা। 

বাস  থেকে নেমে বার্ডের মুখে একটা গ্রুপ ফটো তুললাম। এ সময় শোভা পাচ্ছিল সকলের গায়ে একই রঙের টি-শার্ট। যেন মনে হচ্ছে কোন মায়ের জমজ সন্তান!

সবুজ গাছ গাছালি ও নিপুণ স্থাপত্য শৈলির সংমিশ্রণে শান্ত অথচ অসম্ভব সুন্দর বার্ড এলাকাটি। ধুলো-ধুঁয়োর শহর ছেড়ে স্বস্তির বাতাস নিতে আসা যে কারোর জায়গাটি ভালো লাগবে। আমরা কয়েজন বন্ধু মিলে বিভিন্ন জায়গা ঘুরে ফিরে দেখলাম আর ছবি তুললাম। এর মধ্যেই দুপুরের খাবারের সময় হয়ে গেলো তাই দেরি না করে চললাম বার্ডের ক্যাফেটেরিয়াতে। এখানে পূর্ব অর্ডার অনুযায়ী খাবার পরিবেশন করা হলো। খাবারের পর্বটি শেষ করে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বাসে উঠে বসলাম। গন্তব্য এবার শালবন বিহার!

শালবনে পৌঁছে প্রথমেই ঢুকলাম ময়নামতি জাদুঘর। এর পর গেলাম শালবন বিহারে। দেখতে পেলাম শত শত প্রাচীন স্থাপনা। যেগুলো এতদিন বইয়ের পাতায় কিংবা মোবাইলের স্ক্রিনে দেখেছি তা আজ চোখের  সামনে দেখতে পেয়ে সত্যিই অনেক ভালো লাগলো।

শালবন বিহারটি বাংলার প্রাচীন ইতিহাসের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। জানা যায়, প্রায় ১২শ বছর আগে বৌদ্ধরা এটি নির্মাণ করে। সারি সারি কক্ষ ও শক্তিশালী পাচীর গুলো দেখে সে সময়ের স্থাপত্যশৈলী কতটা উন্নত ছিল তা সহজেই অনুমেয়। আর আমরাও ইতিহাসের শিক্ষার্থী হওয়ায় খুটে খুটে সব দেখছিলাম, যেন ফিরে গেছি নয়শত শতাব্দির বৌদ্ধ রাজাদের আমলে।

এভাবে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ মাহবুব ভাইয়ার বাশিঁর সুর কানে আসল তার মানে সবাইকে একত্রিত হতে হবে। এবার পালা ফটোসেশন ও র‍্যাফেল ড্র। আনন্দপূর্ণ ভাবে পর্বটা শেষ হতে না হতেই দেখি সূর্যিমামা জানান দিচ্ছে সে আর বেশিক্ষণ ধরণীতে থাকবে না। তাই আমাদেরও আর বেশিক্ষণ থাকা হলো না। রওনা দিলাম বাসের দিকে। নিজর সিটট খুঁজে ক্লান্ত শরীরটাকে এলিয়ে দিলাম সিটের মধ্যে। চালু হলো বাস! এভাবে ইতিহাস ঐতিহ্যে ঢাকা কুমিল্লা শালবন বিহারকে পেছনে ফেলে  ক্ষণিকের সফর শেষে এগিয়ে চললাম নীড়ের উদ্দেশ্যে।

;

হিমালয়ের দুর্গম ফার্চামো চূড়ায় বাংলাদেশের পতাকা



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
হিমালয়ের দুর্গম ফার্চামো চূড়ায় বাংলাদেশের পতাকা

হিমালয়ের দুর্গম ফার্চামো চূড়ায় বাংলাদেশের পতাকা

  • Font increase
  • Font Decrease

হিমালয়ের দুর্গম ফার্চামো চূড়ায় বাংলাদেশের ক্লাব বিএমটিসির দুই অভিযাত্রী এম এ মুহিত এবং কাজী বিপ্লব। হিমালয়ের ২০ হাজার ৩০০ ফুট উঁচু দুর্গম চূড়া ‘ফার্চামো’তে সফলভাবে আরোহণ করেছেন তারা। 

৩ নভেম্বর সকাল ৯টায় ‘ফার্চামো’র পর্বত চূড়ায় বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে দেন। দলের আরেক সদস্য নুরুননাহার নিম্নি অসুস্থতাজনিত কারণে সামিট সম্পন্ন করতে পারেনি। 

অভিযানের দলনেতা এম এ মুহিত জানান, ২৬ অক্টোবর আমরা রামেছাপ এয়ারপোর্ট থেকে লুকলার উদ্দেশ্যে বিমানে চড়ি। ওইদিনই আমরা পৌঁছাই এভারেস্ট অঞ্চলের প্রবেশ দ্বার খ্যাত হিলারি তেনজিং এয়ারপোর্টে। যেটি একই সাথে বিশ্বের অন্যতম বিপজ্জনক বিমানরবন্দর হিসেবেও পরিচিত। ওইদিন আমরা ট্রেকিং শুরু করি, বিকেলে পৌঁছাই মঞ্জো। ২৭ তারিখ আমরা যাই নামচে বাজার। ২৮ তারিখে বিশ্রাম নিয়ে পরদিন পৌঁছাই থামে। পরের দিন বিশ্রাম নিয়ে ৩১ তারিখে পৌঁছাই থ্যাংবোতে। পরদিন আমরা ৪ হাজার ৮০০ মিটার উচুঁ বেসক্যাম্প পৌঁছাই। ২ তারিখে ৫ হাজার ৭০০ মিটার উচু তাশি ফুক হাই ক্যাম্পে যাই। 

হাইক্যাম্প থেকে ১০০ মিটার নিচে দলের এক সদস্য নিম্নির শরীর খারাপ লাগা শুরু হয়। প্রধান শেরপা দাওয়া তেনজিং তাকে নিয়ে ফিরে যায়। চিরিং ওয়াংচু শেরপা, ফুর কাঞ্চা শেরপা আমাদের সাথে হাই ক্যাম্পে যান। হাইক্যাম্প পৌঁছাতে দুপুর হয়ে যায়। দিবাগত রাতে অর্থাৎ তিন নভেম্বর রাত সাড়ে তিনটায় হেডটর্চের আলোয় আমরা চূড়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেই। আধা ঘণ্টা পরে ক্র্যাম্পন পয়েন্টে পৌঁছি। ওই সময় তেমন বাতাস ছিল না। মেইন রোপে দেড় ঘণ্টা থাকি। 

তাশি লাপচা পাসকে ডানে আমরা এগিয়ে যেতে থাকি। দীগন্তে ভোরের লাল আভা দেখার সময় ফ্রিক্সড রোপে আমরা জুমার লাগিয়ে আরোহণ শুরু করি। তিনটি কঠিন জায়গায় ১০০ মিটার দড়ি লাগানো ছিল। সে জায়গাগুলো ৮০ থেকে ৯০ ডিগ্রি খাড়া ছিল। ছয়টার সময় জুমার শুরু করি যা শেষ হয় সকাল নয়টার দিকে সামিটে পৌঁছে। আমরা উড়িয়ে দেই বাংলাদেশের লাল সবুজ চূড়ায়। 

পা রাখার আগেই প্রচণ্ড বাতাস শুরু হয়, চূড়ায় ১৫ মিনিটের মতো ছিলাম। মনে হচ্ছিল সব জমে যাবে। হাইক্যাম্পে আসতে আসতে পৌনে এগারোটা বেজে যায়। ওইদনই বেসক্যাম্প হয়ে বিকেল পাঁচটার থ্যাংবো চলে আসি।

এর আগে বাংলাদেশের পর্বতারোহী দল গত ২৪ অক্টোবর নেপালের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করে। ২০ হাজার ৩০০ ফুট উঁচু ‘ফার্চামো’ পর্বতশিখর এভারেস্ট-এর দক্ষিণ-পশ্চিমে নেপালের রোলওয়ালিং হিমালয় অঞ্চলে অবস্থিত।

এ অভিযানের দলনেতা এম এ মুহিত দুই বার এভারেস্ট আরোহণ করেছেন। ‘ফার্চামো’ পর্বতশিখর অভিযানটি পরিচালনা করছে বাংলা মাউন্টেইনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাব এবং স্পনসর করছে ইস্পাহানী টি লিমিটেড। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস লিমিটেড ২০ শতাংশ ছাড়ে অভিযাত্রীদের ঢাকা-কাঠমুন্ডু-ঢাকা বিমান টিকেট দেয়।

;

থাইল্যান্ডের ক্রাবিতে এখন সবচেয়ে বেশি পর্যটক



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, সাউথ ইস্ট এশিয়া, ব্যাংকক, থাইল্যান্ড
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

বছর না পেরোতেই থাইল্যান্ডের ক্রাবির পর্যটন এলাকা হাত নাপ্পারাথ থারা- মু কো ফি ফি ন্যাশনাল পার্ক থেকে আয় হয়েছে প্রায় ১০০০ কোটি টাকা (২৭০ মিলিয়ন বাথ)৷ দেশটির যে কোন ন্যাশনাল পার্কের তুলনায় এই আয় বেশি।

ক্রাবি ন্যাশনাল পার্কের প্রধান রাচানক পাইনই বলেন, আগামী নভেম্বর থেকে পর্যটন মৌসুম শুরু হচ্ছে। দেশের মেরিন ন্যাশনাল পার্কের মধ্যে সর্বোচ্চ আয় করবে ক্রাবি। পর্যটকদের সবচেয়ে আকর্ষণীয় গন্তব্যের মধ্যেও এখন ক্রাবি, বলে জানান তিনি।

গত বছরের অক্টোবর থেকে এই অক্টোবর পর্যন্ত শুধু টিকিট বিক্রিতেই আয় হয়েছে প্রায় ৩০ কোটি টাকা। গত মাসে পার্কে প্রবেশের ই-টিকিটের তথ্য থেকে জানা যায়, টিকিট বিক্রি বেড়েছে প্রায় ৪৬ শতাংশ৷


পার্কে এরই মধ্যে পর্যটন সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। মায়া বে'তে শৌচাগার বাড়ানো হয়েছে এবং সংস্কার করা হয়েছে। সমুদ্রপাড়ে মুরিং বো বসানো হয়েছে পর্যটন জাহাজ ভেড়ার জন্য এবং সমুদ্র সৈকত এলাকাকে আরো শৃঙ্খল করা হয়েছে।

গত বছরের পর্যটন মৌসুমের চেয়ে আগামী মাস থেকে শুরু হওয়া পর্যটন মৌসুমে ক্রাবিতে আরো অনেক বেশি পর্যটক ভ্রমণ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন রাচানক পাইনই।

আন্দানমান সাগর জুড়ে থাকা মেরিন ন্যাশনাল পার্কগুলোতে এই মৌসুমে পর্যটক আরো বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেছে থাইল্যান্ড পর্যটন কর্তৃপক্ষ।


সম্প্রতি দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং প্রাকৃতিক সম্পদ ও পরিবেশ মন্ত্রী ফাতচ্রাবাত ওয়াংসুয়ান বলেছেন, ওয়ার্ল্ড বীচ গাইড অনুসারে পৃথিবীর সেরা ১০০ টি সমুদ্র সৈকতের মধ্যে ৫ টি রয়েছে থাইল্যান্ডের।

;

পর্যটনের অন্যতম স্থান হতে যাচ্ছে কাতার!



পিকলু চক্রবর্তী, কাতার করেসপেন্ডন্ট, বার্তা২৪.কম
পর্যটনদের জন্য অন্যতম স্থান হতে যাচ্ছে কাতার!

পর্যটনদের জন্য অন্যতম স্থান হতে যাচ্ছে কাতার!

  • Font increase
  • Font Decrease

কাতারে ক্রমশই বড় হচ্ছে পর্যটন খাত। বাড়ছে পর্যটকদের আনাগোনা।দেশটিতে পর্যটক বাড়ার পেছনে প্রধান কারণ ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজন। পর্যটন প্রেমীদের কথা মাথায় রেখে দোহা একের পর এক পর্যটনখাতকে উন্নত করার পরিকল্পনা নিচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় মরুর বুকে সবুজ পরিবেশ প্রচারের লক্ষ্যে ২ অক্টোবর থেকে কাতারে শুরু হয়েছে ছয়মাস ব্যাপী দোহা এক্সপো-২০২৩।

এক্সপো ২০২৩ দোহাতে সর্বাধিক পরিদর্শন এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে ল্যান্ডমার্ক। এর ক্রিয়েটিভ বৈশিষ্ট্যগুলোর সংমিশ্রণ দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। আল বিদ্দা পার্কেটি প্রিয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে। এখানকার বিভিন্ন আয়োজন মুগ্ধ হওয়ার অভিজ্ঞতা প্রদান করবে।

এদিকে, আল মুরজান গার্ডেনের শৈপ্লিক কারুকাজ দেখে দর্শনার্থীরা খুবই আনন্দিত। এখানে বিশাল হলুদ টেডি বিয়ার, হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিখ্যাত ল্যাম্প বিয়ার স্থাপন করা হয়েছে।


কাতার এয়ারওয়েজ গার্ডেনের মনোরম দৃশ্য এক্সপোতে আসা পর্যটকদের সুন্দর ক্যানভাসের অভিজ্ঞতা দেবে। এর প্রাণবন্ত সৌন্দর্যে মুগ্ধ হাজারো দর্শনার্থী।

এক্সপোতে কুরআনিক বোটানিক গার্ডেনে, একটি শিক্ষামূলক পরিবেশের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। এখানে বন্যপ্রাণীর সাথে বাগানের দর্শকরা বিভিন্ন বিনোদনমূল ইভেন্টে অংশ নিতে পারে। কুরআনিক বোটানিক গার্ডেনের বিশেষ ফোকাস হচ্ছে- মরুকরণের বিরুদ্ধে লড়াই এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা। বাগানের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হল হার্বেরিয়াম, যেখানে উদ্ভিদের নমুনাগুলি সংরক্ষণ করা হয়েছে, যা এই প্রজাতির স্থায়ী রেকর্ড দেখানো হবে।

এই সংরক্ষণ বিভাগটি কাতারের স্থানীয় এবং বন্য উদ্ভিদ সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতিকে আন্ডারলাইন করে। এক্সপো ২০২৩ দোহা বোর্ড গেমস, আর্ট ওয়ার্কশপ এবং মঞ্চে লাইভ পারফরম্যান্সসহ অন্যান্য বিনোদনের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। সাংস্কৃতিক অঙ্গন, কংগ্রেস কেন্দ্র, প্রদর্শনী কেন্দ্র, এবং পিকনিকসহ বিভিন্ন স্থান পর্যটকদের মুগ্ধ করবে।


উল্লেখ্য, চলতি বছরের আগস্টে পর্যটন খাতে গত বছরের এই সময়ের তুলনায় ৭৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

আগস্টে ২ লাখ ৬৪ হাজার পর্যটক কাতার ভ্রমণ করেছে। অবশ্য পর্যটকের মোট সংখ্যা আগের মাস জুলাইয়ের তুলনায় ৮ দশমিক ৫ শতাংশ কম। জুলাইয়ে গত বছরের তুলনায় পর্যটক বেড়েছিল ৯১ দশমিক ৪ শতাংশ। মোট পর্যটকের সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৮৮ হাজার।

আগস্টের ৪৩ শতাংশ পর্যটকই ছিল উপসাগরীয় দেশগুলো থেকে আসা। ফিফা বিশ্বকাপের সফল আয়োজনের ফলে এ সাফল্য অর্জিত হয়েছে, যা কাতারকে পর্যটনে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্থান দিয়েছে।

কাতার ট্যুরিজমের চেয়ারম্যান এবং কাতার এয়ারওয়েজ গ্রুপের প্রধান নির্বাহী আকবর আল-বাকার বলেছেন, বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রীড়া ইভেন্টের গতিকে কাজে লাগাতে কাতার পর্যটনের নতুন পরিকল্পনা ঠিক করেছে। যার ভালো ফল দেখা যাচ্ছে। অর্থনীতিকে বহুমুখী করতে পর্যটন খাতকে বিশেষভাবে জোর দিচ্ছে সরকার।

;