প্রশান্ত পশ্চিম



মাহমুদ হাফিজ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

পর্ব-৬

ক্রিস্টাল মাউন্টেনের সাত হাজার ফুট উচ্চতায় উঠে আকস্মিক আমার গা কাঁপছে। সামিট হাউসের ইলিশিয়ান ডেস্ক থেকে ব্লুবেরি সাইডার কিনে সামনের আকাশরেখায় পাতা টেবিলসারির একটা জুড়ে বসেছি। অন্য টেবিলেগুলোতে নানাদেশের পাহাড়প্রেমী পর্যটকের খানাপিনার টুংটাং। আমার সঙ্গীরা তখনও স্যান্ডউইচ ও বিফ র‍্যাপ সংগ্রহের লাইনে। একসঙ্গে আটাত্তর ডলার দাম চুকানো হলেও সাইডার ক্যানটি কাউন্টার থেকেই হাতে পেয়েছি, অন্য আইটেম বানিয়ে দেয়া হবে বলে সময়সাপেক্ষ। আমার তর সইছে না। তবিয়ত ঠিক রাখতে দ্রুত রক্তস্রোতে কিছু চালান করে দিতে হবে।  ক্যানটি ডাবল সাইজ বিয়ারের মতো, মাত্রাও সাত শতাংশের মতো। পাহাড়শীর্ষে জীবন বাঁচাতে আর কিছু করার নেই। ক্যানটি খুলে যখন চুমুক দিতে যাবো, তখনই কুট্টুস শব্দ করে এক পাহাড়ি পাখি এসে টেবিলে হাজির। একদম হাতের কাছে। আমাদের দোয়েলের চেয়ে ছোট, চড়ুইয়ের চেয়ে বড় ভাই। ভদ্রগোছের শান্তপাখি। এখানে নাম উইলো ফ্লাইকাচার। মনুষ্যভীতিতে তোয়াক্কা না করে আদুরে ভঙ্গিতে ফুরুৎ করে উড়ে কাছে আসায় ভাবি খাবারের খোঁজে হন্যে সে। ন্যাটজিও টের পেলে এতো উচ্চতা বাস করার পাখির ওপর প্রামাণ্যচিত্র বানাতো। এতোটা উচ্চতায় আমার মতো তার গাও কাঁপছে কিনা কে জানে!

হেঁটে চলেছি মাউন্ড রেইনিয়ারের দিকে

ওয়ানটাইম গ্লাসে খানিকটা মিস্টি সাইডার ঢেলে পাখিকে  দিতে যাচ্ছি, এমন সময় পাশের নোটিশবোর্ডের দিকে শাহাদত আঙুল উঁচিয়ে সতর্ক করলো মধ্যবয়স্ক রেস্তোরা কর্মী। নোটিশে লেখা’ হিউম্যান ফুড ক্যান বি ডেডলি ফর হাই অলডিচ্যুড ক্রিটার্স, ডন্ট ফিড দেম, ইভেন ইফ দে বেগ’। কথা পরিস্কার। আমি পাত্র সরিয়ে সাইডার না ঢেলে  লম্বা একটা চুমুক দিই। বিয়ারের স্বাদ তিতা হলেও এই ব্লুবেরি সাইডার মিষ্টি। টাইটন সাইডার ওয়ার্কস কোম্পানি  ইয়াকিমা উপত্যকার নিজস্ব খামারের তাজা ফল থেকে তৈরি করেছে এই মহার্ঘ। গুনাগুন ও ফুডভ্যালুর কথা লেখা আছে ক্যানের গায়ে। কয়েক চুমুকে থাতস্থ হওয়ার পর আমি  পরিচ্ছন্নকর্মীর ওপর মনোযোগ দিই। ইতোমধ্যে পাখিটি ফুরুৎ করে উড়ে হাতের নাগালের মধ্যেই পাশের ঝাওগাছের ডালে বসেছে। আজন্ম অকর্তিত শ্রুশ্মুগুম্ফওলা মধ্যবয়স্ক রেস্তোরাকর্মী টকটকে ফর্সা ও নাদুসনুদুস চেহারার। যেসব পাহাড়প্রেমী প্রচুর টাকা খরচ করে গন্ডোলাচেপে বা পাহাড় বেয়ে  মাউন্টেন সামিটে পৌঁছেছে, তাদের কারও চেয়ে চেহারাসুরত তার কম নয়। এমনকি চোখেমুখে শিক্ষা, বুদ্ধিবৃত্তি ও আভিজাত্যের চাপ। খাকি রঙের ইউনিফর্মধারী লোকটি বিশেষ ধরনের হাতানি দিয়ে টেবিলের  উচ্ছ্বিস্ট সরাচ্ছে। মনে হলো, সে এখানে গোয়েন্দাগিরি করছে, নয়তো পাহাড়প্রেমে বুঁদ হয়ে আমাদের মতো ঘুরতে এসে এই চাকরি যেচে রয়ে গেছে।  আমি মেলাতে পারি না। ভাবি, কতো রঙের মানুষ আছে এ জগতে!

ব্লুবেড়ি সাইডার

জনপ্রিয় লেখক ব্রাজিলিয়ান পাওলো কোয়েলহো’র তীর্থভ্রমণমূলক বেস্টসেলার ‘পিলগ্রিমেজ’ এর যে কপিটি মার্কিন মুলুকে এসে হাতে পেয়েছি, এর প্রচ্ছদে পুঞ্জপাহাড়ের সন্নিবেশ, ক্যাসেকডেময়। এর আগে সিয়াটলের ডাউনটাউনসহ নানা দ্রষ্টব্য আমাদের দেখা হয়ে যাওয়ায় সিয়াটলে আমাদের সাময়িকবাসের গৃহকর্তা পল ওয়াশিংটন স্টেটের বিভিন্ন ওয়ান্ডার ও পর্যটকপ্রিয় এলাকাগুলোতে নিয়ে যেতে যাওয়া শুরু করেছে। আমাদের সিয়াটল বাস ও পর্যটন যাতে আরামদায়ক,ভ্রমণপ্রিয়চোখে সুখকর হয়,সেজন্য  পল-জেরিন দম্পতির রাতের আরাম হারাম হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে আজকের লংড্রাইভ ক্রিস্টাল মাউন্টেন। পাওলো কোয়েলহোর পিলগ্রিমেজ এর প্রচ্ছদ সে আগ্রহকে উস্কে দেয়। আমি ত্বরিত সায় দিয়ে গাড়িতে উঠে বসি।  লিনউড এর বাসা থেকে রওয়ানা দিতে দিতে বেলা বারোটা। ক্রিস্টাল গন্তব্যে দুই, সোয়া দুইঘণ্টা লাগবে। আবহাওয়া সকাল থেকেই রৌদ্রকরোজ্জ্বল।

বহুদূর থেকে মাউন্ট রেইনিয়ার

লিনউড থেকে ডামসন রোড দিয়ে বেরিয়ে এই ড্রাইভ ৫২৪ ও ৫২৭ সড়ক ধরে ছুটে  চলে। ক্যানিয়ন পার্ককে বাঁয়ে রেখে বৃত্তাকার একটি চক্কর দিয়েই উঠে পড়ে  ফ্রি ওয়ে ফোর ও ফাইভে। এখানকার ড্রাইভে এই এক মজা। ফ্রিওয়েতে উঠলে থামার নাম নেই। এক্সিট দিয়ে আঞ্চলিক রাস্তায় নামার আগে শুধু ছুটে চলা। বিরতিহীন, উচ্চ গতিময় ফ্রিওয়েতে ড্রাইভের রোমাঞ্চই আলাদা। মার্কিনীরা দূরত্ব বোঝাতে মাইল-কিলোমিটারে না বলে ঘণ্টা মিনিটের সঙ্গে ড্রাইভ শব্দটি যোগ করে বলে। আমি ভোতো বাঙালি। মাপের ফিতায় দূর্তব না বললে মাথায় ঢোকে না আমার।  গুগলিং করে দেখছি, আমাদের যেতে হবে দেড়শ’ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে আমার জন্ম উপজেলা কুমারখালীর দূরত্বের সমান। আমরা যেখানে কমবেশি ছয় থেকে আটঘণ্টা ড্রাইভ করে যাতায়াত করি। অনেকটা পাহাড়ি সড়ক হওয়ার পরও এখানে দেখাচ্ছে, সোয়া দু’ঘণ্টা। কবি এখানেই নিরব। ঘণ্টা দুয়েক পর্বত আরোহণ শেষ করেও  এ ড্রাই্ভে সন্ধ্যার আগে বাড়ি ফেরা যাবে অনায়াসে। বহু দেশের মানুষ বিশ্বরাজনীতিতে মার্কিন কূটনীতির কট্টর সমালোচনা করলেও স্বপ্নের দেশ হিসাবে বিশ্বজুড়েই এর খ্যাতির কমতি নেই। সব দেশ থেকেই  স্বপ্নবাজ তরুণের গন্তব্য আমেরিকা।

গাড়ি ছুটছে একশ চল্লিশ কিলোমিটার গতিতে। ঘরের বাইরে যাচ্ছি, অথচ শুনতে মন চাইছে ঘরে ফেরার গান। এ সময় মার্কিন শিল্পী স্কাইলার গ্রে’র ‘টেল দ্য ওয়ার্ল্ড, আই এম কামিং হোম’ গানটি প্লেয়ারে চললে হলে মন্দ হতো না। অন্তত আইস শিল্পী আসগের এসনাইরসনের ‘গোয়িং হোম’। এমনই মন আমার, বিপরীতমুখী উপাদানে গড়া। নিজের সম্পর্কে নিজের  ট্যাগলাইন:’ বোহেমিয়ান ও ঘরকুনো, কোলাহলপ্রিয়  ও অন্তরালপরায়ণ’। মন চাইলে কি হবে কে যেন চালিয়ে দিয়েছে সাহানা বাজপেয়ীর রবীন্দ্রসঙ্গীত- ‘ আজি ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার, প্রাণ সখা বন্ধু হে আমার’, আকাশ কাঁদে হতাশ সম, নাই যে ঘুম নয়নে মম, দুয়ার খুলি হে প্রিয়তম, চাই যে বারে বার’।

সামিট হাউজ রেস্তোরাঁ

গতিময় গাড়ির বিপরীতে ধীরলয়ের এই গানও মনে  বিপরীতধর্মী আনন্দ জোগাচ্ছে।

রবিঠাকুরের গানের কথা ব্যাকগ্রাউন্ডে রেখে গাড়ির ভেতর চলছে সফলতা, ব্যর্থতাসহ জীবনের স্বপ্নজাগানিয়া সব প্রণোদনার আলোচনা। বলি, আমি সব বিষয় অনুপুঙ্খ বলতে পছন্দ করি। শ্রোতাকে প্রেক্ষাপট সম্পর্কে অজানা ভেবে প্রেক্ষিতসহ সব বলতে গিয়ে কালক্ষয় হয়। ডেল কার্নেগীর একটা জনপ্রিয় জীবনভাবনা হচ্ছে বক্তার ধৈর্যশীল শ্রোতা হতে পারা সাফল্যের এক বড় উপাদান। আজকালকার মানুষ সোস্যালমিডিয়াতাড়িত। শ্রোতা হিসাবে তার সময় কম, তারা  সবকিছু নাটশেলে শুনতে চায়। অধৈর্য হয়ে বক্তব্যের মধ্যেই দুম করে উপসংহার জানতে চায়। আমি বলেই চলি, ছোট জিনিসকে কল্পনার বিস্তারে বড় করতে পারা এক আর্ট, অন্তত সাহিত্যে।  এই ডিটেইলাররা জীবনে খুব অসফল তাও বলা যাবে না। অর্থের মাপকাঠিতে সাফল্য বিচার এদের কাছে গৌণ।

স্টেয়ারিং শক্ত করে চেপে ধরে পল নিবিষ্ঠ গাড়ি চালানোয়। গাড়িভর্তি সকলের নিরাপত্তা আপাত: তার নিবিষ্টতায়।  তবু ভেতরের আলোচনা সে মন দিয়ে শোনে,  অনুপুঙ্খ বলাটাকে আর্ট বলে স্বীকার করে নেয়। তবে তার বক্তব্য হচ্ছে, নিচের দিক থেকে ওপরের দিকে ক্রমশ: বিষয় সংক্ষিপ্ত হতে থাকে। নিচের পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা বয়ান শীর্ষকর্তার কাছে এক লাইন বা নাটশেল আকারে পেশ হয়। চাকরির ক্ষেত্রে যে যতো নাটশেলে বলতে পারে, সে ততো দক্ষ ও সফল। গাড়ির ভেতরের অন্য সবাই তার কথারই সমর্থন করে। আমার অনুপুঙ্খ বলার যুক্তি খুব একটা সমর্থন পায় না। সবাই প্রায় বয়সে আমার চেয়ে বয়ো:কনিষ্ঠ। এরা  প্রযুক্তিযুগের মানুষ। জেনারেশন গ্যাপে এদের চিন্তাচেতনা স্বভাবীরকমে আলাদা। অনুপুঙ্খ কথন ভঙ্গিটি  ষাট সত্তর দশকের গল্পবাজ মানসকিতা থেকে এসে থাকতে পারে ভেবে আমি প্রসঙ্গান্তরে যাই।

রেন্টনের লিবার্টি পার্ককে ডানে রেখে আমরা ফ্রি ওয়ে থেকে নেমে যাই ১৬৯ নম্বর সড়কে। এই সড়ক ধরে শর্টকার্টে ক্রিস্টাল মাউন্টেনে যাওয়া যাবে বলে জিপিস দেখাচ্ছে। তাকোমা বন্দর থেকে আরেক সড়ক ধরে গেলে পর্বতপ্রান্তে এলবি শহর পাওয়া যায়। এখান থেকে মিনারেল শহর পর্যন্ত ভিন্টেজ রেলের চড়ে রেলগাড়ি চড়েই  মাউন্টরেইনিয়ার দূর থেকে দেখা যায়। আমাদের আগ্রহ ক্রিস্টাল মাউন্টেনের চূড়ায় কোমর সমান্তরালে বসে রেইনিয়ারসুন্দরীকে দর্শন।

   

পায়ে হেঁটে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ায় শান্তা-শাওন দম্পতি



তৌফিক হাসান, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, ট্রাভেল এন্ড ট্যুর
পায়ে হেঁটে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ায় দম্পতি

পায়ে হেঁটে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ায় দম্পতি

  • Font increase
  • Font Decrease

সম্প্রতি এক প্রাণোচ্ছল ভ্রমণপিপাসু দম্পতি পায়ে হেঁটে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়াতে পৌঁছান। ‘প্রতিটি প্রাণ মূল্যবান, আত্মহত্যা নয়- বাঁচতে শিখি’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে চলতি বছরের গত ২৮ জুন পায়ে হেঁটে টেকনাফ থেকে ভ্রমণ শুরুর পর শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্টে ভ্রমণ শেষ করেন তারা।

ব্যাংকার শারাবান তহুরা শান্তা এবং আর্কিটেক্ট আল ইমরান শাওন তাদের পেশাগত ব্যস্ততার মাঝেও এই সময় বের করে আত্মহত্যা নয় বাঁচতে শেখার প্রতিপাদ্যকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছেন। দম্পতির ভাষ্যমতে তাদের এই ভ্রমণে তারা প্রচুর মানুষের সাথে বিশেষ করে তরুণ তরুণী এবং স্কুলের বাচ্চাদের সাথে কথা বলেছেন, দেশকে দেশের মানুষকে নতুন করে চিনেছেন এবং অনেককে নতুনভাবে চিনতে সাহায্য করেছেন ও সচেতন করেছেন। চলার এই পথে তারা নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। নতুন কিছু শিখতে, মানুষকে জীবন সম্পর্কে জানাতে ও সচেতন করার অভিপ্রায় তাদের পিছু হটতে দেয়নি।

ইনানীতে কয়েকজন তরুণ তাদের স্বাগত জানায়

বার্তা২৪ কে শান্তা বলেন, বিগত ২৮ জুন আমরা হাঁটা শুরু করি টেকনাফের শাহীপরীর দ্বীপ থেকে। প্রথমদিন প্রায় ২৮ কিলোমিটার পথ হেঁটে বড়ডিলের মরিসবুনিয়া স্কুলের নৈশপ্রহরীর বাড়িতে রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা হয়। সেদিন রাতে আমাদের সাথে একটা ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটে। মাঝরাতের দিকে হাতির পাল আমাদের থাকার ঘরে আক্রমণ করে বসে। নৈশ প্রহরীর পরিবারের সাথে দৌড় দিয়ে স্কুল ঘরে গিয়ে উঠি এবং বাকি রাতটা আমাদের সেখানেই কাটে। দ্বিতীয় দিন ছিল ঈদের দিন, সেদিন প্রায় ৩৬ কিলোমিটার হেঁটে থেকে ইনানী বিচ পর্যন্ত যাই। ঈদের ছুটিকে কাজে লাগিয়ে ১০ দিনে ৪০০ কিলোমিটার কুমিল্লার দাউদকান্দি পর্যন্ত পৌঁছাই। পরের সপ্তাহে দাউদকান্দি থেকে হেঁটে ঢাকার রামপুরা পর্যন্ত আসি। অতঃপর মায়ের অসুস্থতা, পারিবারিক সমস্যা এবং অফিসের ব্যস্ততার কারণে কয়েক সপ্তাহ বিরতি নিয়ে পুনরায় সাপ্তাহিক ছুটির দিনে হাঁটা শুরু করি। এভাবে হাঁটতে হাঁটতে আরিচা হয়ে ট্রলারে যমুনা পাড়ি দিয়ে কখনো হাইওয়ে ধরে আবার কখনো লোকাল রাস্তা দিয়ে হেঁটে উত্তরের সীমান্ত তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত পৌঁছে ভ্রমণ শেষ করি।

 পুরো ভ্রমণে কোনো সমস্যায় পরতে হয়েছিল কিনা তার জবাবে শান্তা জানান। ফেনী ক্রস করার পর আমার স্বামী আমাকে ফেলে বেশ খানিকটা এগিয়ে যাওয়ায় ৫/৬ জন বখাটে আমাকে ঘিরে ধারে নানানভাবে উত্ত্যক্ত করতে থাকে এবং অনৈতিক কথা বলতে থাকে। সেসময় আমি সাহস নিয়ে প্রতিবাদ করায় এবং উপস্থিত বুদ্ধি খাঁটিয়ে ওদের ভয় দেখানোতে ওরা দৌড়ে পালিয়ে যায়। এই ঘটনা ছাড়া তেমন কোন সমস্যা হয়নি। তবে আমাদের দেশে পাবলিক টয়লেট না থাকে চলতি পথে ভ্রামনিকদের খানিকটা সমস্যায় পড়তে হয়। আমাদের দেশের মানুষজন খুব ভাল এবং সাহায্যপরায়ণ।

অনিন্দ্যসুন্দর এক রাস্তায় ভ্রামনিক শান্তা

শাওন বার্তা২৪ কে বলেন, আমরা ঐকান্তিক চেষ্টা ছিল দেশব্যাপী পায়ে হেঁটে ঘোরার এবং মানুষের মধ্যে জীবনের বানী পৌঁছে দেবার এবং শত বাধার পরেও আমরা চেষ্টা করে গেছি। ভবিষ্যতেও আমাদের এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে এবং মূল প্রতিবাদ্যকে মাথায় রেখে দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও ভ্রমণ করার ইচ্ছে আছে আমাদের। আমি বন্ধু এবং শুভানুধ্যায়ীদের ধন্যবাদ জানাই এবং আউটডোর বিডি এর প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি এই ভ্রমণে বিভিন্ন ভাবে পরামর্শ ও সহায়তা দেবার জন্য।

স্কুলের বাচ্চাদের সাথে মতবিনিম

আউটডোর বিডির ফাউন্ডার জুয়েল রানা বার্তা২৪ কে বলেন, আমি নিজে একজন ভ্রমণপাগল মানুষ। আউটডোর বিডি’র উদ্দেশ্যেই হলো একজন পরিব্রাজক বা ভ্রমণকারী যাতে হাতের কাছেই সহজলভ্যে সকল ভ্রমণ সামগ্রী পান। শান্তা ও শাওন দম্পতি এই ভ্রমণ সম্পন্ন করায় আমরা খুশি এবং তাদের এই ভ্রমণ দেখে আরও মানুষ উদ্বুদ্ধ হোক আমরা সেটাই চাই।

;

ইন-ফ্লাইট সার্ভিস ক্যাটাগরিতে গোল্ড পুরস্কার পেলো এয়ার এ্যাস্ট্রা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম ঢাকা
গোল্ড পুরস্কার নিচ্ছেন এয়ার এ্যাস্ট্রার সিইও ইমরান আসিফ। ছবি : সংগৃহীত

গোল্ড পুরস্কার নিচ্ছেন এয়ার এ্যাস্ট্রার সিইও ইমরান আসিফ। ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘মনিটর এয়ারলাইন অব দ্য ইয়ার ২০২৩’- এর বেস্ট ইন-ফ্লাইট সার্ভিস ক্যাটাগরিতে সেরা হয়েছে এয়ার এ্যাস্ট্রা।

রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাতে বাংলাদেশ মনিটর আয়োজিত গালা অ্যাওয়ার্ড নাইটে এয়ার এ্যাস্ট্রার সিইও ইমরান আসিফের হাতে বেস্ট ইন-ফ্লাইট সার্ভিস ক্যাটাগরির গোল্ড পুরস্কার তুলে দেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, এমপি।

যাত্রী সন্তুষ্টির প্রতিশ্রুতির জন্য পরিচিত এয়ার এ্যাস্ট্রা ২০২২ সালের ২৪ নভেম্বর যাত্রা শুরু করে বর্তমানে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, সৈয়দপুর এবং সিলেটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে।

এয়ার এ্যাস্ট্রা’র বহরে বর্তমানে তিনটি এটিআর ৭২-৬০০ এয়ারক্রাফট রয়েছে, যা ফ্রান্সে নির্মিত সর্বাধুনিক প্রযুক্তির টার্বোপ্রপ এয়ারক্রাফট এবং ৭০ জন যাত্রী বহন করতে সক্ষম।

বাংলাদেশ মনিটর তাদের বাৎসরিক কার্যক্রম হিসেবে ২০০৭ সালে বাংলাদেশে ‘এয়ারলাইন অব দ্য ইয়ার’ প্রবর্তন করে। এভিয়েশন ও পর্যটন বিষয়ক প্রকাশনা ‘বাংলাদেশ মনিটর’-এর জরিপের ভিত্তিতে বিজয়ীদের নির্বাচিত করা হয়।

বিগত এক বছরে যারা কমপক্ষে তিনবার আকাশপথে ভ্রমণ করেছেন, তারা অনলাইনে নিজের পছন্দের এয়ারলাইন্সকে ভোট দিতে পেরেছেন।

;

সিলেটে একসঙ্গে ঘুরে দেখা যাবে ২৩টি পর্যটন স্পট



মশাহিদ আলী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেট। সিলেটের অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বজুড়ে। যেদিকে চোখ যায় সেদিকে উঁকি দিয়ে ডাকছে প্রকৃতির সৌন্দর্য। আর সেই সৌন্দর্য উপভোগের জন্য দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন ভ্রমণপিপাসুরা। প্রতিদিন সিলেটে বেড়াতে আসেন হাজার হাজার পর্যটকরা।

কিন্তু পর্যটন স্পটগুলোতে যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব একটা ভালো না থাকায় বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হয় ঘুরতে আসা পর্যটকদের। তবে এবার পর্যটক ও এই অঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থানের কথা চিন্তা করে নেয়া হয়েছে উদ্যোগ। দুই দিনে এক সঙ্গে ২৩টি স্পট ঘুরে দেখতে পারবেন ভ্রমণপিপাসুরা।

জানা যায়, সিলেটের ৪ আসনের সংসদ সদস্য এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এমপির দিক নির্দেশনায় সিলেটের জেলা প্রশাসক এবং বিভাগীয় কমিশনার প্রেরিত ২০২৩ সালের জেলা প্রশাসক সম্মেলনে কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর হয়ে জাফলং পর্যন্ত একটি সড়ক তৈরির প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। আর সেই প্রস্তাবনা শুনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রুত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। নির্দেশনা অনুযায়ী ইতোমধ্যে প্রাথমিক জরিপ সম্পন্ন করেছে সিলেট সড়ক ও জনপথ বিভাগ।

প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত এই তিনদিন সিলেটে পর্যটকদের আনাগোনা বেশি থাকে। কারণ শুক্রবার ও শনিবার সরকারি বন্ধ থাকায় চাকরিজীবিরা আসা যাওয়া করেন। তাদের অনেকেই একদিনে প্রাকৃতিক সৌন্দের্যের লীলাভূমি জাফলং ও পাথর সাম্রাজ্য সাদাপাথর ঘুরে দেখতে চান। কিন্তু সময় ও ভোগান্তির কারণে তা আর একদিনে ঘুরে বেড়ানো যায় না। কারণ যেখানে মাত্র ত্রিশ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিলে জাফলং থেকে সাদাপাথর যাওয়া সম্ভব সেখানে পাড়ি দিতে হয় ১২০ কিলোমিটার। আর এই ১২০ কিলোমিটারে পাড়ি দিতে গিয়ে হাতছাড়া হয়ে যায় আর ৫টি পর্যটন স্পট। জাফলং থেকে ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর প্রতিমধ্যে পান্তুমাই, বিছনাকান্দি, রাতারগুল, শ্রীপুর, শাপলা বিল, লাক্কাতুড়া চা বাগানসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখা যাবে।

সিলেটে বেড়াতে আসা পর্যটক দর্শনার্থীদের ভ্রমণকে সহজতর এবং আরামদায়ক করণে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশিত সড়কটি বাস্তবে রূপান্তরিত হলে এখানে আসা পর্যটকরা একটি সড়কে যাতায়াত করে ২ দিনে ২৩টি পর্যটন স্পট ঘুরে দেখতে পারবেন। সড়কটি নির্মাণ করা হলে সিলেটের পর্যটন শিল্প বিকশিত হবে। সেই সাথে পর্যটন শিল্পে সরকারি এবং বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও এই অঞ্চলের মানুষের কর্মস্থানের বিশাল সুযোগ তৈরি হবে।

জাফলং-কোম্পানিগঞ্জের সাদাপাথর পর্যন্ত সড়ক তৈরির বিষয়ে চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরকে নির্দেশনা দিয়ে পত্র পাঠানো হয়। ইতোমধ্যে প্রাথমিক জরিপের কাজ শেষ করেছে বলে জানিয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর সিলেট।

এব্যাপারে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ইতোমধ্যে তারা প্রাথমিক জরিপ কাজ শেষ করেছেন। এই প্রকল্পটির আশপাশে আরও কয়েকটি চলমান প্রকল্প থাকায় এই সড়ক নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর।

আর গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহমিলুর রহমান বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় জাফলং থেকে সাদাপাথর বা সাদাপাথর থেকে জাফলং যেতে হলে ভিন্ন সড়ক ব্যবহার করতে হয়।এতে করে সময় খরচ দুটিই বাড়ে।গোয়াইনঘাটের জাফলং থেকে কোম্পানিগঞ্জের সাদাপাথর পর্যন্ত একটি সড়ক নির্মাণে সরকারের প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। সড়কটি বাস্তবায়িত হলে এক সড়ক দিয়েই অনেকগুলো স্পট ঘুরে দেখতে পারবেন পর্যটক দর্শনার্থীরা।

;

থাইল্যান্ড ভ্রমণে তাপ ও বৃষ্টি থেকে সাবধান!



মাজেদুল নয়ন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, সাউথ ইস্ট এশিয়া, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

তিন ঋতুর দেশ থাইল্যান্ড। বর্তমানে চলছে বর্ষাকাল। তবে বৃষ্টি যখন থাকে না তখন প্রচণ্ড রোদের তাপ। অন্তত গত এক সপ্তাহ ধরে প্রায়ই বিকেলের দিকে বৃষ্টি হচ্ছে এবং দিনের বেলায় গরমে অতিষ্ঠ হচ্ছে মানুষ।

এরই মধ্যে থাইল্যান্ডের আবহাওয়া অধিদফতর প্রয়োজন না হলে জনগণকে রোদে বের না হওয়ার জন্য এবং বৃষ্টিতে ভিজলে করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা দিয়েছে। 

এমন গরম আবহাওয়ায় স্থানীয় থাই জনগোষ্ঠীর পছন্দের বেড়ানো বা সময় কাটানোর জায়গা হচ্ছে বড় শপিংমলগুলো। তবে পর্যটকদের শুধু শপিং মলে ঘুরে পোষাবে না। তাই ছাতা, ক্যাপ এবং সঙ্গে পানি রাখার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।


শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) সকালে ব্যাংককের তামপাত্রা ৩২ ডিগ্রী ফারেনহাইট। তবে সেটা ৪০ ডিগ্রী ফারেনহাইট পর্যন্ত অনুভূত হচ্ছে। এমন গরমে বিশেষত শিশুদের বারবার পানি পান করানো এবং ছায়াযুক্ত স্থানে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

জুন মাসের পর থেকে থাইল্যান্ডে পুরোপুরি বর্ষা। তবে বর্ষাতেও বৃষ্টি ছাড়াও রোদের তাপ থাকে প্রচুর। থাইল্যান্ডে বর্ষা চলবে অক্টোবর পর্যন্ত। এরপরে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আর্দ্র এবং শীতল। এ সময়টায় চিয়াং মাই বা চিয়াং রাইয়ের মতো উত্তর থাইল্যান্ডে পুরোপুরি শীত অনুভূত হয়। তবে গালফ অব থাইল্যান্ড এবং আন্দামানের তীরের ভূমিতে শীত কখনোই অনুভুত হয় না। বরং গরমই থাকে।

যেহেতু বাংলাদেশের পর্যটকরা বেশিরভাগই সাগর তীরবর্তী অঞ্চলে বেড়াতে যান, তাই সবসময় হালকা এবং উজ্জ্বল রংয়ের কাপড় পড়ার পরামর্শ থাকবে। কারণ এই অঞ্চলগুলোতে এবং দ্বীপগুলোতে বেশিরভাগ সময় গরমই থাকে।

এসব স্থানে ভ্রমণের সময় শিশু ও বয়স্কদের গরম থেকে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকতে পারে। তাই ছায়ায় থাকা, পানি পান করা, ভিটামিন সি গ্রহণ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

তবে ব্যাংকক, উত্তর, উত্তর পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে এখন বৃষ্টির পরিমাণ অনেক বেশি। ব্যাংককে বিকেল নাগাদ ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। তাই এসময় নাইট মার্কেট বা খোলা স্থানে যাওয়ার সময় সঙ্গে ছাতা বা রেইনকোট রাখা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। আর এখানে সেভেন ইলেভেনের মতো সুপারশপগুলোতে একবার ব্যবহারের জন্য ছাতা এবং রেইনকোট পাওয়া যায়।

তবে বৃষ্টিতে ভিজে গেলে পরবর্তীতে গোসল করার পরামর্শ দিয়েছে শহর কর্তৃপক্ষ।

;