সরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালকদের প্রশিক্ষণ শুরু রোববার
ব্যাংক খাতের অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা মোকাবিলায় সরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৪০ পরিচালকের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।
জানা গেছে, রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে সঠিক গ্রাহকদের ঋণ না দেওয়ায় খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। এমনকি অযোগ্য গ্রাহকদের ঋণ দিতে ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক নিয়োগের অভিযোগ আছে। ফলে ব্যাংক কার্যক্রমে দক্ষতা বাড়াতে দ্বিতীয়বারের মতো ১৩টি সরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে মোট ৪০ জন পরিচালককে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হবে রোববার (১৮ নভেম্বর) থেকে।
আরও জানা গেছে, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেট (বিআইসিএম) মিলনায়তনে ৫ দিনব্যাপী এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শেষ হবে ২২ নভেম্বর। এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলামের সভাপতিত্বে এ সময় অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের উপস্থিত থাকারও কথা রয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশের ব্যাংক খাতকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে রাজনৈতিক বিবেচনায় পরিচালক নিয়োগ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে। পরিচালক নিয়োগে গলদ রেখে এসব প্রোগ্রাম হাতে নিয়ে তেমন কোনো লাভ হবে না। বরং আইন অনুযায়ী নির্বিশেষে যোগ্য লোককে এ পদে নিয়োগ দিতে হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত প্রশিক্ষণ চলবে। প্রশিক্ষণে প্রধান প্রশিক্ষক হিসেবে থাকবেন মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং সাবেক অর্থ সচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের দু’জন ডেপুটি গভর্নর ও কয়েকজন টেকনিক্যাল বিশেষজ্ঞ। সোনালী, রূপালী ও বাংলাশে কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরাও প্রশিক্ষক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘অনেক সময় বিভিন্ন প্রফেশনের লোককেও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তাই তারা ব্যাংক খাতের নানা আইন-কানুন এবং তাদের কার্যপরিধির বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা রাখেন না। এসব বিষয়ে ধারণা দিতেই অর্থ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এ কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর পরিচালকরা ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালায় দক্ষ হয়ে উঠবেন।’
এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘অনেক সময় রাজনৈতিক বিবেচনায় অযোগ্য লোককে পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার। নিয়োগ পেয়ে তিনি আবার অযোগ্য ব্যবসায়ীদের ঋণ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে চাপ প্রয়োগ করেন। ফলে অযোগ্য ব্যবসায়ীরা ঋণ নিয়ে তা আর পরিশোধ করেন না। এ কারণে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। মূলত প্রশিক্ষণে বিভিন্নভাবে পরিচালকদের বোঝানো হবে, ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে পরিচালকদের হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। কে ঋণ পাবেন, সেটা বিভিন্ন ধরনের তথ্য বিশ্লেষণ করে ব্যাংকের কর্মকর্তারই ঠিক করবেন। এভাবে যোগ্যদের ঋণ দিলে বিতরণকৃত ঋণ ফেরত বাড়বে। কমবে খেলাপি ঋণের পরিমাণও।’
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে সরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ারম্যান ও পরিচালকদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।