কমেনি বাজারের তেজি ভাব!
দাম শুনে ভদ্রলোক এমনভাবে লাফ দিলেন যেন বিস্ফোরণ হয়েছে। ''কুঁচো চিংড়ির কেজি ছয় শ' টাকা!'' আঁতকে ওঠা লোকটি আর স্বাভাবিকই হন না। বিড়বিড় করে ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন।
রমজানের কয়েক দিন চলে গেলেও কমেনি বাজারের তেজি ভাব। দ্রব্যমূল্যে এখনো আগুন। মাছ, মাংস, তরকারির দামে নিম্নমুখী প্রবণতা নেই। রোজার শুরুতে বেড়ে যাওয়া অগ্নিমূল্য এখনো বহাল আছে।
বাজারে লম্বা বেগুনের দাম জেনে খেপে গেলেন একজন, ''বেগুনি খেলে কি লাভ! সবাই বেগুন বেগুন করছে আর সেই সুযোগে দাম বাড়াচ্ছে দোকানিরা। রোজার আগেও যে বেগুন কেজি প্রতি ৫০/৫৫ টাকা বিক্রি হয়েছে, তা এখন ১০০ টাকায় ঠেকেছে!''
অন্যান্য সবজির মধ্যে ঝিঙা ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা, কাঁচাকলার হালি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, মিষ্টি কুমড়া (মাঝারি সাইজের) একটির দাম ৩০ থেকে ৪০ টাকা, করলা ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। একবার বেড়ে যাওয়া দ্রব্যের দাম খুব সহজে নামছে না।
অতি সুলভ আলু কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা বেড়ে ২০/২২ টাকা, কাঁচা মরিচ ৪০ টাকা, টমেটো ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে রাজধানীর বাজার বিশেষে।
মাছের বাজারেও ঊর্ধ্বমুখী চিত্র। পাঙ্গাস, তেলাপিয়া ইত্যাদি চাষের মাছ রোজার আগের সপ্তাহের চেয়ে দাম রমজানের প্রথম থেকেই প্রতি কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। সে দাম আর নামে নি।
"নদীর মাছের সরবরাহ বেশি হওয়ার মৌসুম হলেও মাছের আমদানি নেই। হাওর-বাওরের শিং, মাগুর, পাবদা, বাইম, তারা বাইম, টেংরা, পুঁটি এবার খুব বেশি আসছে না। দামও তাই নাগালের বাইরে", বললেন কচুক্ষেত বাজারে মাছ কিনতে আসা মিসেস ফারজানা খন্দকার।
মাছ ব্যবসায়ী নুরু মিয়া বিরস মুখে সামান্য কিছু মাছ নিয়ে বসে আছেন । "মাছের দাম এতো বেশি কেন?" জানতে চাইলে বললেন, "ভালো জাতের মাছ দিনে দিনে কমতাছে। বাজারে কম মাছ আইলে দাম তো বাড়বোই।"
ঢাকার বিভিন্ন বাজার থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, সিলভার কার্প মাঝারি সাইজের কেজি ১৩০ টাকায় এবং মাঝারি সাইজের তেলাপিয়া কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়।
রমজানের আগে ইলিশের দাম কম থাকলেও এখন তা বেড়েছে। ৮০০ গ্রাম ওজনের প্রতি হালি ইলিশ ক'দিন আগে ২৫০০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৩০০০ টাকায়। ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশও হালিপ্রতি বেড়েছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা।
ছোট চিংড়ির দামও চড়া। ৫৫০ টাকা থেকে ৬৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাগদা চিংড়ি ৫৫০ থেকে ৬০০, আর গলদা চিংড়ি (বড়) ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
৩/৪ কেজি ওজনের চিতল মাছ ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি পাওয়া যাচ্ছে। ৫ কেজি ওজনের কাতল মাছ বিক্রি হচ্ছে ৪২০ টাকা থেকে ৪৫০ টাকা কেজি দরে। দেশি রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা। রমজানের আগের চেয়ে মাছের দাম ৫০/১০০ টাকা বেড়েছে।
রমজানকে সামনে রেখে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের মূল্য কেজি প্রতি বেড়েছে ৫ থেকে ৬ টাকা। অপর দিকে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকা পাল্লা (৫ কেজি)। রসুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকায়। আদা ৯০ থেকে ১১০ টাকা।
গরুর মাংসের কেজি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে ৪৫০ টাকা বেঁধে দেওয়া হলেও উত্তরে সেরকম কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি বলে অনেকেই বার্তা২৪.কমকে জানান। মাংসের বাজারে দামের ক্ষেত্র চলছে ফ্রি-স্টাইল। প্রতি কেজি ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস। মুরগী ও ডিমের দামেও ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে।
রোজায় বাজার নিয়ন্ত্রণ করার কথা উচ্চকণ্ঠে বলা হলেও বাস্তবে তেমনটি দেখা যাচ্ছে না। রোজার শুরুতেই প্রায়-সকল পণ্যের দামই কম-বেশি বেড়েছে। কিছু কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে মূল্য বৃদ্ধির হার অস্বাভাবিক রকমের বেশি। বেড়ে যাওয়া দাম রোজার কয়েক দিন পরেও না কমায় বাজারে এখনো চলছে দ্রব্যমূল্যের তেজি ভাব।