জাহালমের মতোই বিনা দোষে জেল খাটলেন শুক্কুর শাহ
রাজধানীর শাহবাগ থানার একটি মাদক মামলার আসামি না হয়েও পুলিশের ভুলে ১১ মাস কারাভোগ করলেন আরেক মো. শুক্কুর শাহ। অনেকটাই কিছুদিন আগে বিনাদোষে কারাভোগ করে জেল থেকে মুক্তি পাওয়া জাহালম এর মতোই ঘটনা।
তাকে এ মামলায় গ্রেফতারের ৫ মাস পর বিষয়টি আদালতের গোচরে আসলে। বিচারক থানার প্রতিবেদন তলব করেন। এ সংক্রান্ত একটি পুলিশ প্রতিবেদন চাইলে পুলিশ মামলার ঠিকানার বাড়িওয়ালার প্রত্যয়নপত্রসহ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে। যাতে বলা হয় সঠিক আসামিকেই গ্রেফতার করা হয়েছে।
আর এভাবেই শুক্কুর শাহ হয়ে গেলেন শুক্কুর আলী। অন্যের পাপ মাথায় নিয়ে জেল খাটলেন ১১ মাস। তবে ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। গত ৩০ জানুয়ারি মামলার বাদী আদালতে সাক্ষ্য দিতে আসলে তিনি জেরায় বলেন, 'কাঠগড়ায় দাঁড়ানো আসামিকে তিনি চেনেন না। এ মামলায় তিনি তাকে গ্রেফতার করেন নি।'
এতেই নড়েচড়ে বসেন বিচারক। তিনি জেল সুপারকে এ মামলার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আদালতে তলব করেন। একই সাথে সংশ্লিষ্ট থানার ওসি ও ওয়ারেন্টে তামিল কর্মকর্তাকেও তলব করেন। পুলিশ এবার নিজেদের ভুল স্বীকার করে আদালতে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
শুক্কুর শাহ এ মামলার আসামি নয়। বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় ঢাকার ২ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক এ এইচ এম রুহুল ইমরান অন্য কোনো মামলায় আটক না থাকলে শুক্কুর শাহকে আজই মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় শুক্কুর শাহকে মুক্তি দেয় বলে জানান তার ভাই নজরুল শাহ।
মামলার ঘটনা সূত্রে দেখা যায়, মো. শুক্কুর আলী, পিতা আবুল কাশেমের নামে রাজধানীর শাহবাগ থানায় একটি মামলা হয়। ২০১১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি তিনি গ্রেফতার হন। এরপর ২০১২ সালের ২০ জুন তিনি এ মামলায় জামিন পান।
জামিন পেয়ে তিনি এ মামলায় হাজিরা না দিয়ে পলাতক হন। ২০১৩ সালের ৩ এপ্রিল তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। এ পরোয়ানা তামিলের দায়িত্ব পান এসআই মো. মমিনুল ইসলাম।
তিনি সংবাদ পান যে, হাজারীবাগ থানার ৯(৩)১৮ মামলায় শুক্কুর নামে এক আসামি গ্রেফতার হয়েছে। তার পিতার নামও কাশেম। তিনি যাচাই বাছাই না করেই শাহবাগ থানার মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করেন। এভাবেই আদালতের নথিতে শুক্কুর শাহ হয়ে যান শুক্কুর আলী।
শুক্কুর শাহ'র আইনজীবী মো. জাকির হোসেন সাংবাদিকদের জানান, হাজারীবাগ থানার মামলায় জামিন পেয়েও শুক্কুর শাহ কারাগার থেকে বের হতে পারেননি। পরে খোঁজ নিয়ে তারা জানতে পারে তাকে শাহবাগ থানার মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। অথচ এ মামলায় শুক্কুর শাহ আসামিই নন।
তিনি বলেন, '২০১৮ সালের ৮ আগস্ট বিষয়টি আদালতের নজরে আনা হয়। তিনি আসামির জাতীয় পরিচয়পত্র আদালতে দাখিল করতে বলেন। কিন্তু গ্রেফতারের সময় পুলিশ পরিচয়পত্র নিয়ে যাওয়ায় তারা তা আদালতে দাখিল করতে পারেননি। তবে শুক্কুর আলীকে এ মামলায় জামিন দিলেও শুক্কুর আলী ও শুক্কুর শাহ এক ব্যক্তি না হওয়ায় তাকে মুক্তি দেয়নি কারা কর্তৃপক্ষ।'
আইনজীবী জাকির আরও বলেন, 'গত ৩০ জানুয়ারি মামলার বাদী আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় জেরায় বলেন যে, তিনি এ আসামিকে চিনেন না। তাকে তিনি গ্রেফতার করেন নি। ফলে বিচারক পুলিশের পরোয়ানা তামিল কর্মকর্তা, শাহবাগ থানার ওসি ও জেল সুপারকে কাগজপত্রসহ ডেকে পাঠান।'
মঙ্গলবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) তারা আদালতে হাজির হন। কারাগারে রক্ষিত প্রথমে আটক শুক্কুর আলীর ছবি ও শুক্কুর শাহ ছবি, তাদের মায়ের নাম এক না হওয়ায় আদালত শুক্কুর শাহকে এ মামলায় খালাস দেন।
শুক্কুর শাহ যে শুক্কুর আলী নন। তা আদালতে জানানোর পরও অতিরিক্ত ছয়মাস তাকে কারাগারে থাকতে হয়েছে জানান তার আইনজীবী জাকির হোসেন। বাদী তাকে সনাক্ত না করলে আরও কতদিন তাকে থাকতে হতো কে জানে।