পাবনায় স্কুলছাত্র হত্যা মামলায় সহপাঠীর ১৩ বছরের আটকাদেশ
পাবনা কালেক্টরেট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র হাবিবুল্লাহ হাসান মিশু (১৪) হত্যা মামলায় সহপাঠী ফয়সাল জামান শুভকে ১০ বছরের আটকাদেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়া দেড় লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও নয় মাসের দণ্ডাদেশ দেয় আদালত। এ রায়ে একজনকে খালাস দেয়া হয়েছে।
বুধবার (২৭ মার্চ) বিকেলে পাবনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক রোস্তম আলী এ আদেশ দেন।
সাজাপ্রাপ্ত ফয়সাল জামান শুভ (১৭) পাবনা শহরের রাধানগর মাঠপাড়া মহল্লার শেখ কামাল হোসেনের ছেলে। খালাসপ্রাপ্ত শামসুজ্জামান সিয়াম (১৬) পাবনা পৌর শহরের রাধানগর নারায়নপুর মহল্লার সাইদুর রহমানের ছেলে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, স্কুল শিক্ষার্থী মিশু হত্যা মামলায় গ্রেফতারকৃত আসামিদের মধ্যে ফয়সাল ও সিয়াম অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় তাদের বিচার কার্য শিশু আদালতে বিচার করা হয়। অভিযুক্ত অপর দুই আসামি আব্দুল হাদি ও সান প্রাপ্ত বয়স্ক। নিয়মিত আদালতে তাদের মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী শাহজাহান খান জানান, মিশু হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ফয়সাল জামান শুভর অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় বিজ্ঞ আদালত তাকে দশ বছরের আটকাদেশ ও দেড় লাখ টাকা জরিমানা করে। এছাড়া অন্য একটি ধারায় আরও তিন বছরের আটকাদেশ ও এক লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও নয় মাসের আটকাদেশ প্রদান করেন।
যশোর কিশোর অপরাধ সংশোধনাগারে এ আটকাদেশ কার্যকর করা হবে। মামলার অপর আসামি মোঃ শামসুজ্জামান সিয়ামের অপরাধ প্রমাণ না হওয়ায় আদালত তাকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন। তবে, মামলার রায়ে বাদী মো. মহসিন আলম সন্তুষ্ট না হওয়ায় উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, পাবনা পৌর সদরের শালগাড়ীয়া কসাইপাড়া মহল্লার মহসীন আলম সালামের ছেলে হাবিবুল্লাহ হাসান মিশু ২০১৬ সালের ২৩ মার্চ দুপুর থেকে নিখোঁজ ছিল। ওইদিন সন্ধ্যায় পাবনার সিংগা এলাকার একটি লিচু বাগানের পাশ থেকে বস্তাবন্দী অবস্থায় মিশুর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় মিশুর পিতা বাদী হয়ে সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এর দুইদিন পর ২৫ মার্চ ভোরে মিশু হত্যায় জড়িত সন্দেহে তার সহপাঠী ফয়সাল জামান শুভ ও শামসুজ্জামান সিয়াম এবং আব্দুল হাদিকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে দুই সহপাঠী জানায়, মিশুকে আটকে রেখে তার বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা আদায় করতে চেয়েছিল শুভ ও সিয়াম। কিন্তু মিশু তাতে রাজি না হওয়ায় তাকে মারপিট করে গলায় প্লাস্টিকের পাইপ পেঁচিয়ে চেপে ধরে। এতে শ্বাসরোধ হয়ে মৃত্যু হয় মিশুর। অবস্থা বেগতিক দেখে মিশুর মরদেহ বস্তায় ভরে রাস্তার পাশে লিচু বাগানে ফেলে পালিয়ে যায় সিয়াম ও শুভ।
পরে তারা পাবনার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতের কাছে হত্যাকাণ্ডে নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী প্রদান করে। মামলার তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুস সালাম। মামলার শুনানিতে ৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। তিন বছর শুনানি শেষে বুধবার (২৭ মার্চ) বিকেলে উল্লেখিত রায় প্রদান করেন বিচারক।
আসামি পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন মিয়া এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এপিপি অ্যাডভোকেট শাহজাহান আলী খান ও অ্যাডভোকেট সালমা খাতুন।