যেভাবে ডিআইজি মিজানকে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করা হলো
৩ কোটি ৭ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন এবং ৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের মামলায় পুলিশের বিতর্কিত ডিআইজি (ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল) মিজানুর রহমানকে পুলিশের হাতে সোপর্দের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, তিনি পুলিশের ইমেজ ধ্বংস করেছেন।
সোমবার (১ জুলাই) বিকাল ৩ টা ৪১ মিনিটে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
হাইকোর্টের আদেশের দুই ঘণ্টা পর এজলাসে অপেক্ষমাণ সাময়িক বরখাস্তকৃত উপ-মহাপরিদর্শক মো. মিজানুর রহমানকে শাহবাগ থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ। সেখান থেকে তাকে ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে হাজির করা হবে।
বিকাল ৫টা ৪৮ মিনিটে এজলাস থেকে ডিআইজি মিজানকে নিয়ে রমনা জোনের উপ-কমিশনারের (ডিসি) নেতৃত্বে একদল পুলিশ বিচারপতিদের গমনের পথ দিয়ে রওনা হন। হাইকোর্টের অ্যানেক্স ভবনের পশ্চিম দিকের পথ দিয়ে বের হয়ে আগে থেকে প্রস্তুত করে রাখা পুলিশের গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে।
এদিকে, আদেশের পর এজলাসেই ছিলেন ডিআইজি মিজান। বিচারপতিরা এজলাস ত্যাগ করলে সাধারণের প্রবেশ বন্ধ করে দেয় পুলিশ। ১০ মিনিট পর প্রথমে সুপ্রিম কোর্টের দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তা কফিল উদ্দিন আসেন। এরপর শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাসান এসে এজলাসে ঢুকেন। পরে আসেন রমনা জোনের ডিসি।
আদালতের আদেশে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত মিজানুর রহমান আদালতে আত্মসমর্পণ করে দুদকের ২৪ জুনের মামলায় আগাম জামিন প্রার্থনা করেন। তার আইনজীবীরা তাকে চিহ্নিত করেন। আমরা তার আইনজীবীর বক্তব্য শুনেছি। ঘটনা ও নথি বিবেচনায় আমরা আগাম জামিন দিতে অনিচ্ছুক। তার আবেদন সরাসরি খারিজ করা হলো। আসামি মিজানুর রহমান হেফাজতে যাবে। পুলিশের রমনা বিভাগের ডিসি তাকে গ্রেফতারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে হাজির করবে।
বেলা ৩ টা ৪০ মিনিটে ডিআইজি মিজানের আগাম জামিনের আবেদনের শুনানি শুরু হয়। তার আগে তার আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন আদালত ছেড়ে গেলে আইনজীবী মোমতাজ উদ্দিন মেহেদী দাঁড়ান। তিনি নট টুডে (আজ নয়) চাইলে আদালত নাকচ করে দেন।
মোমতাজ উদ্দিন মেহেদী বলেন, ‘ডিআইজি মিজান শান্তি মিশনে দায়িত্ব পালন করেছেন। খুবই সৎ কর্মকর্তা। জঙ্গি দমনেও তার ভূমিকা রয়েছে। গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার রাখার জন্য রাষ্ট্রপতি পদক পেয়েছেন।’
তখন আদালত তাকে দুদকের মামলার অংশ পড়তে বলেন। ৩ কোটি ৭ লাখ টাকা সম্পদের তথ্য গোপনের অংশ পড়ে আইনজীবী বলেন, ‘এতে খুব বেশি অসঙ্গতি নেই। এটা বিরাট কিছু না।’
আদালত বলেন, ‘আমরা জামিন দেব না। পুলিশকে বলছি তাকে এখান থেকে নিয়ে যেতে। তিনি পুলিশের ইমেজ ধূলিসাৎ করেছেন। টিভিতে বেপরোয়া কথা বলতে আমরা তাকে দেখেছি। আদালতের এমন মন্তব্যকে সমর্থন করে রাষ্ট্রপক্ষের উপস্থিত আইনজীবীরা ইয়েস ইয়েস বলতে থাকেন। এরপর আদালত মামলার অপর আসামি ও ডিআইজি মিজানের ভাগ্নে মাহমুদুল হাসানকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন।'