মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন: ভারতের জয়, চীনের পরাজয়



রেজা-উদ্-দৌলাহ প্রধান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভারত-চীন কৌশলগত দ্বন্দ্ব বেশ পুরনো। কৌশলগত ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে এই অঞ্চলের দেশগুলোতে নিজেদের মিত্রদের ক্ষমতায় দেখতে চায় এশিয়ার দুই সুপার পাওয়ার ভারত ও চীন। সে ধারাবাহিকতায় মালদ্বীপ নিয়েও ভারত ও চীনের মধ্যে ছায়াযুদ্ধ ছিল। যাতে শেষ পর্যন্ত ভারতের জয় হয়েছে।

সোমবার (২৪ সেপ্টেম্বর) মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে চীনপন্থী আব্দুল্লাহ ইয়ামিনকে হারিয়ে দিয়েছেন ভারতপন্থী বিরোধী দলীয় নেতা ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ। নির্বাচনে ৫৮.৩ শতাংশ ভোট পেয়েছেন ইব্রাহিম সলিহ। নির্বাচনে নিজেদের মিত্র জয়ী হওয়ায় ভারতও দারুণ খুশি।

নির্বাচনের প্রাথমিক ফল ঘোষণার পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেন, ‘দেশটির তৃতীয় প্রেসিডেন্টশিয়াল ইলেকশনের সফলতাকে আমরা স্বাগত জানাই।’

‘নির্বাচনে বিজয় লাভ করায় ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহকে উষ্ণ অভিনন্দন জানাই।’

এদিকে নির্বাচনের প্রাথমিক ফল প্রকাশের পর চীন এখনো কোন প্রতিক্রিয়া দেয় নি। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপ নিয়ে গঠিত মালদ্বীপ নির্বাচনের পর কোনদিকে যায় সেটি দেখতে চায় বেইজিং।

২০১৩ সালে ইয়ামিন যখন ক্ষমতায় আসে তখন থেকেই চীন ও মালদ্বীপের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নতুন গতি লাভ করে। কিন্তু তার প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় ভারতের সঙ্গে মালদ্বীপের যে ঐতিহ্যগত জোট রয়েছে-সেটিও আরো উন্নত হয়।

২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিংপিং মালদ্বীপ সফর করেন। মালদ্বীপের রাজধানী মালের পার্শ্ববর্তী হুলহুয়েতে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণে চীনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দেশটির চুক্তি হয়।

একই সঙ্গে চীন সেখানে ১.৪ কি.মি দীর্ঘ সংযোগ সেতু নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করে, যেটি চলতি বছরের ৩০ আগস্ট শেষ হয়। সেতুটি হুলহুলে ও মালেকে সংযুক্ত করেছে।

শি জিংপিংয়ের সফরের দুইমাস পর ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে মালদ্বীপ চীনা প্রেসিডেন্ট শি’র স্বপ্নের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) প্রকল্পে যুক্ত হওয়ার জন্য সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে।

বিআরআই প্রকল্পের অংশ হিসেবে বিমানবন্দর, সংযোগসেতুর মত উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা শুরু হয়েছিল।

২০১৭ সালে প্রায় ৩ লাখ চীনা পর্যটক মালদ্বীপ ঘুরে গেছেন। যেটা বিশ্বের আর যেকোনো দেশের পর্যটকের চেয়ে বেশি। মোট কথা সবদিক দিয়েই চীন-মালদ্বীপ অর্থনৈতিক সম্পর্ক ইয়ামিনের শাসনামলে দারুণ উন্নতি হয়।

শুধু  তাই নয় কৌশলগত দিক দিয়েও সম্পর্ক বৃদ্ধিতে দুই দেশ এগিয়ে এসেছিল। চলতি বছরের শুরুর দিকে দুই দেশ যৌথভাবে ভারত মহাসাগরের মাকুনুদোহতে ‘জয়েন্ট ওশেন অবজারভেশন স্টেশন’ নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিল।

তখন টাইমস অব ইন্ডিয়াতে একজন বিশ্লেষক লেখেন, ‘প্রস্তাবিত প্রকল্পের মধ্যদিয়ে চীন ভারত মহাসাগরে শিপিং রুট হিসেবে ব্যবহারের উপযুক্ত জায়গা পাবে। সেই সঙ্গে ভারতের বিরুদ্ধে চীনা নৌবাহিনীর সম্মুখ অবস্থান আরো কার্যকর  করবে।’

এখন আদৌ বিষয়টা সেটা কি না-অথবা গুরুত্বপূর্ণ শিপিং লাইনে সতর্ক দৃষ্টি রাখার জন্য চীনাদের সরল চিন্তাভাবনা কি না-সেটিও দারুণ কৌতুহলের জন্ম দেয়।

কিন্তু মালদ্বীপের বিরোধীদলীয় ডেমোক্রেটিক পার্টি (এমডিপি), যারা সাম্প্রতিক নির্বাচনে সলিহ’র জোটের অন্তর্ভুক্ত, তারা তখন বলেছিল, এ প্রকল্প সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হতে পারে। এই প্রকল্প দিয়ে ভারত-চীন সম্পর্কের কৌশলগত রেড লাইন সেদিন চীন অতিক্রম করেছিল যেটি ভারতের প্রত্যাশিত নয়। কিন্তু  এর  পাল্টা জবাব হিসেবে ভারত কি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে তখন দেশটির নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকরা পরিষ্কার করে কিছু বলেন নি।

আয়তন ও জনসংখ্যা বিবেচনায় মালদ্বীপ ক্ষুদ্র রাষ্ট্র। মাত্র ৪ লাখ ১৭ হাজার মানুষের বসবাস।তবে মাত্র ২৯৮ একর ভূমি থাকলেও হাজারেরও অধিক প্রবাল দ্বীপের দেশটিকে বিশাল সমুদ্র সীমার মালিক করে দিয়েছে।

ভারতের সঙ্গে ভৌগলিক নৈকট্যের কারণে নয়াদিল্লী সবসময় দেশটিতে প্রভাব বজায় রাখার চেষ্টা করে আসছে। যা দ্বীপ দেশটির অস্থিরতা দূর করতে অতীতের ভারতীয় হস্তক্ষেপগুলো দেখলে বোঝা যায়।

১৯৯৮ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে ভারতের ১৬০০ সৈন্য মালদ্বীপে প্রেরণ করেছিল। শ্রীলঙ্কা থেকে আগত তামিল বিদ্রোহীরা তখন দেশটির সরকার উৎখাত করে বিদ্রোহীদের আস্তানা গড়ে তুলতে চেয়েছিল বিধায় মালদ্বীপ সরকারের সহায়তায় ঐ সৈন্য প্রেরণ করা হয়।

তিন দশকের অধিক সময় ধরে- ১৯৭৮ থেকে ২০০৮- মালদ্বীপ মামুন আব্দুল গাইয়ুমের স্বৈরশাসনে ছিল। মামুন ছিল ইয়ামিনের সৎভাই। গাইয়ুমের শাসনামলে দেশটি তাদের পর্যটন খাতের ব্যাপক উন্নয়ন করে। জীবনমানের উন্নয়ন ঘটানো হয়।

কিন্তু সে সময়টা দুর্নীতির জন্যও বিখ্যাত। ২০০৮ সালে দেশটির প্রথম সত্যিকারের গণতান্ত্রিক নির্বাচনে গাইয়ুম হেরে যায়, যা ছিল অনেকের কাছে আশ্চর্যজনক। নির্বাচনে রাজনৈতিক বন্দী, বিরোধী দলীয় তরুণ রাজনীতিবিদ মোহামেদ নাশিদ ক্ষমতায় আসেন।

ক্ষমতায় আসার পর তিনি দেশটির রাজনৈতিক ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ধরে রাখেন কিন্তু সেই সঙ্গে আরও দেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে মন দেন। কিন্তু ২০১২ সালে বিতর্কিত পরিস্থিতিতে নাশিদকে বাধ্য হয়ে পদত্যাগ করে ২০১৫ সালে জেলে যেতে হয়। তখন ইয়ামিন ক্ষমতায় ছিলেন।

নাশিদের গ্রেফতার নিয়ে তখন যে পরিস্থিতি ছিল সেটাকে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামেনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, ‘রাজনৈতিক প্রভাবিত’ এবং এ জন্য তারা ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্টের নিন্দা করেন।

২০১৬ সালে নাশিদকে দেশত্যাগ করে ব্রিটেনে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়, যেখানে তাকে রাজনৈতিক আশ্রয়ের নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছিল। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে, মালদ্বীপে ‘রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি’ দেওয়ার প্রস্তাব প্রেসিডেন্ট ইয়ামিন ফিরিয়ে দেয়ার পর যখন দেশে রাজনৈতিক সংকট চলছিল তখন নাশিদ ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রকে সেখানে সামরিক হস্তক্ষেপের আহ্বান জানায়।

ভারতকে ‘সামরিক বাহিনীর সমর্থনে’ সেখানে যাওয়ার জন্য ‘যথেষ্ট দাঙ্গাপুলিশ বেষ্টিত’ একজন কর্মকর্তা পাঠানোর আহ্বান জানান তিনি।

নাশিদ সম্ভবত ভারত ও পশ্চিমা বিশ্বের সহমর্মিতা পাওয়ার চেষ্টায় তখন সংকটের জন্য চীনের দিকে আঙ্গুল তোলেন। সামরিক প্রয়োজনে চীনের বিরুদ্ধে দ্বীপ দেশটির ভূমি দখলের অভিযোগ তোলেন তিনি। তার বক্তব্য সংকটকে আরো ঘনীভূত করে।

মালেতে থাকা চীনা দূতাবাস অভিযোগ অস্বীকার করে বিবৃতিতে বলেন, ‘এধরনের বক্তব্য এ অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরু ‘। ‘চীনা জনগণের আবেগকে আহত করেছে এ ধরনের বক্তব্য’।

১৩ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্র পরিচালিত চীনা ট্যাবলয়েড পত্রিকা গ্লোবাল টাইমস খবরের শিরোনাম করে, ‘মালদ্বীপে ভারতীয় সামরিক আগ্রাসন রুখে দেবে চীন’- কিন্তু কিভাবে সেটা করা হবে খবরে বলাও হয় নি- জাতিসংঘের সমর্থন ছাড়া ‘উপযুক্ত কারণ’ ব্যতীত সামরিক হস্তক্ষেপের কোন পরিস্থিতিও সে সময় সেখানে ছিল না।

তাই ফেব্রুয়ারিতে দেশটিতে যখন সংকট ছিল তখন ভারত সামরিক হস্তক্ষেপের চাইতে নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করাকেই শ্রেয় মনে করে।

যখন নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হয়, তখন শ্রীলঙ্কায় নির্বাসনে থাকা নাশিদ সেখানকার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের হাতে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন।

নাশিদ এখনো এমডিপি চেয়ারম্যান। এমডিপিসহ আরো তিনটি রাজনৈতিক দল ইয়ামিনের বিপক্ষে নির্বাচনে লড়ার জন্য সলিহকে সমর্থন দিয়েছিল। এদিকে আগামী নভেম্বরের আগে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা হস্তান্তর হচ্ছে না। ক্ষমতা হস্তান্তরের এ বিলম্বের জন্য শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে।

ইয়ামিনের শাসনামলে যে ভারতের প্রভাব দেশটিতে কমতে শুরু করেছিল তারা অবশ্যই চাইবে যেন সলিহ শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল পরিবেশের মধ্যদিয়ে নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা গ্রহণ করতে পারে।

ক্রমবর্ধমান আঞ্চলিক স্বার্থে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠা দ্বীপ দেশটির নির্বাচনে সলিহর বিজয়ের পর, চীনের ক্ষতির মাত্রা বুঝতে হলে বেইজিংয়ের প্রতিক্রিয়া দেখা ছাড়া ভিন্ন উপায় নেই।

   

ইরান সফরে উত্তর কোরিয়ার প্রতিনিধি দল



আন্তর্জাতিক ডেস্ক বার্তা২৪.কম
ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

উত্তর কোরিয়ার একটি অর্থনৈতিক প্রতিনিধি দল ইরান সফরের উদ্দেশ্যে পিয়ংইয়ং ত্যাগ করেছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স। পরমাণু শক্তিধর দেশটির সরকারি সংবাদ মাধ্যম বুধবার (২৪ এপ্রিল) এ খবর নিশ্চিত করেছে।

এদিকে উত্তর কোরিযার প্রতিনিধি দলের এই ব্যতিক্রমী সফরকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে।

উত্তর কোরিয়ার বৈদেশিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ক মন্ত্রী উন জং হু দেশটির প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সির (কেসিএনএ) খবরে বলা হয়েছে, প্রতিনিধি দলটি সোমবার (২২ এপ্রিল) ইরানের উদ্দেশ্যে পিয়ংইয়ং ত্যাগ করেছে। তবে সংস্থার খবরে বিস্তারিত আর কিছু উল্লেখ করা হয়নি।

উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে মস্কোর সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা জোরদার করছে পিয়ংইয়ং। আর এই প্রেক্ষাপটেই ইরানে তাদের এই সফর অনুষ্ঠিত হলো।

অন্যদিকে সিউলের দাবি, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্যে রাশিয়াকে সাত হাজার কন্টেইনার গোলাবারুদ সরবরাহ করেছে উত্তর কোরিয়া।

উত্তর কোরিয়ার শুরু করা গোয়েন্দা স্যাটেলাইট কর্মসূচিতে মস্কোর কারিগরী সহায়তার বিনিময়ে এই কন্টেইনার সরবরাহ করা হয়েছে বলে ধারণা করছে সিউল।

ইরান ও রাশিয়াও ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক ও সামরিক মিত্র। রাশিয়া প্রায়শই ইউক্রেন যুদ্ধে ইরানের ড্রোন ব্যবহার করছে।

কোরিয়া ইন্সষ্টিটিউট ফর ন্যাশনাল ইউনিফিকেশনের সিনিয়র বিশ্লেষক হং মিন বলেছেন, সফরটি এই আভাস দিচ্ছে যে, ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক আরো সম্প্রসারণে আগ্রহী উত্তর কোরিয়া। সম্ভবত অস্ত্র সরবরাহের মাধ্যমে দেশটি সম্পর্ক আরো গভীর করতে চায়। ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘর্ঘের প্রেক্ষিতে ইরানের আরো অস্ত্র প্রয়োজন হতে পারে।

;

যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফিলিস্তিনের পক্ষে ব্যাপক বিক্ষোভ



আন্তর্জাতিক ডেস্ক বার্তা২৪.কম
ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

গত সপ্তাহে ১০৮ জন শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার এবং তিনজনকে বহিঃস্কার করা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থীদের দল দিন দিন শক্তিশালী হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশ শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পগুলোকে সরিয়ে দিয়ে যা অর্জন করার আশা করেছিল, তার বিপরীতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আরও বেগবান হয়েছে।

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পর যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের নিজস্ব ক্যাম্প স্থাপন, ভবন দখল এবং সমাবেশ করেছে।

ইসরায়েল থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া এবং গাজায় যুদ্ধবিরতির ক্রমবর্ধমান দাবির মধ্যে ইয়েল, ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (এমআইটি) এবং নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির (এনওয়াইইউ) মতো নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের এই বিক্ষোভ দমন করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে প্রশাসন।

ইউসি বার্কলে এবং ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগানের মতো বিশ্ববিদ্যালয়েও ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভ চলছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে উত্তেজনা অব্যাহত রয়েছে। কারণ, শিক্ষার্থীরা তাদের ক্যাম্প খালি করার দাবি মানতে অস্বীকার করেছে। প্রশাসনও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে।

ফলস্বরূপ কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেছে যে, আগামী সপ্তাহে শেষ হওয়া স্প্রিং সেমিস্টারের শেষ পর্যন্ত ক্লাসগুলো হাইব্রিড লার্নিং মোডে স্যুইচ করা হবে।

এনডিটিভি জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীরা নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা সেখানে সড়ক অবরোধের পরিকল্পনা করছেন। ওই এলাকায় মার্কিন সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা চাক শুমারের বাড়ি।

গত শুক্রবার থেকে এখন পর্যন্ত শিক্ষার্থীসহ কয়েক শ বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে কলম্বিয়া, ইয়েল, নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির মতো বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রয়েছেন।

তবে বিক্ষোভের নামে ইহুদি বিদ্বেষ ছড়ানো ও হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন সমালোচকদের অনেকেই। তাদের মধ্যে রিপাবলিকান দলের প্রভাবশালী কয়েকজন আইনপ্রণেতাও রয়েছেন।

অন্যদিকে ব্যাপক ধড়পাকড়ের সমালোচনা করেছেন অধিকারকর্মীরা। তাদের মতে, এর মধ্য দিয়ে বাকস্বাধীনতা খর্ব করা হচ্ছে।

গত শতকের ষাটের দশক থেকে নানা অধিকার আদায়ের আন্দোলনে সরব হতে দেখা যায় ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলের শিক্ষার্থীদের। এখানকার শিক্ষার্থীরাও গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলার বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নেমেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তাঁবু গেড়ে বিক্ষোভ করছেন তারা।

ক্যাম্পাসে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভের কারণে ক্যালফোর্নিয়া পলিটেকনিক হামবোল্ডট বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষের অনুরোধের পর ইউনিভার্সিটি অব মিনেসোটার সেন্ট পল ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিয়েছে পুলিশ।

নিউইয়র্ক পুলিশের মুখপাত্র জানিয়েছে, গত সোমবার সন্ধ্যা নাগাদ নিউইয়র্কের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো থেকে ১২০ জনের বেশি বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুরোধের পরই বিক্ষোভকারীদের আটক করেছে পুলিশ।

গত সপ্তাহে কলম্বিয়ায় বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার কারণে শতাধিক শিক্ষার্থী আটক করা হয়েছিল। বিক্ষোভের মুখে গত সোমবার সরাসরি ক্লাস বন্ধ করে দেয় কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি। ইহুদি শিক্ষার্থীরা হয়রানির শিকার হতে পারেন, এমন আশঙ্কা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নেয়।

নিউইয়র্কের মেয়র এরিক অ্যাডামস সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ হচ্ছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ততা নেই এমন কিছু মানুষ সমস্যা বাধানোর চেষ্টা করছেন বলে কর্তৃপক্ষ জানতে পেরেছে। আমরা তাঁদের সেই সুযোগ দিতে পারি না।’

;

মার্কিন সিনেটে টিকটক নিষিদ্ধকরণ বিল অনুমোদন



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে টিকটক নিষিদ্ধের বিল অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সংবাদ মাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। এর আগে মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) বিলটি সিনেটে অনুমোদন দেওয়া হয়।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজ বিলটি স্বাক্ষরের জন্য দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে যাবে। তার স্বাক্ষরের পর বিলটি চূড়ান্ত আইনে পরিণত হবে। বিলটি অনুমোদনের পক্ষে ৭৯ জন ভোট দিয়েছেন, অন্যদিকে বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন ১৮ জন।

অনুমোদিত বিলের শর্তে বলা হয়েছে, টিকটকের চীনা মালিক প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্সকে আগামী নয় মাসের মধ্যে তাদের শেয়ার বিক্রি করতে হবে। নয়তো এই অ্যাপটি যুক্তরাষ্ট্রে ব্লক করে দেওয়া হবে।

এটি হলে বাধ্যতামূলকভাবে টিকটক বিক্রির বিষয়ে চীনা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন চাইতে হবে বাইটড্যান্সকে। তবে বেইজিং এরই মধ্যে শক্তভাবে এর বিরোধিতা করেছে।

শর্ট-ভিডিও শেয়ারের জনপ্রিয় অ্যাপ টিকটেকের বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি ব্যবহারকারী আছে। তবে টিকটকের সঙ্গে চীনা সরকারের যোগসূত্র এবং এর ব্যবহারকারীদের তথ্য উপাত্তের নিরাপত্তা নিয়ে ক্রমশ প্রশ্ন উঠছে।

যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে চীন সরকার যুক্তরাষ্ট্রের এক কোটি ৭০ লাখ ব্যবহারকারীর তথ্য-উপাত্ত হস্তান্তরের জন্য টিকটককে বাধ্য করতে পারে। টিকটক অবশ্য বলছে, বিদেশি ব্যবহারকারীদের তথ্য তারা চীন সরকারকে দেবে না।

টিকটকের প্রধান নির্বাহী শোউ জি চিউ গত মাসে বলেছেন, প্ল্যাটফর্মটিকে রক্ষায় তার প্রতিষ্ঠান নিজ ‘আইনি অধিকারসহ’ সম্ভব যা কিছু করার, করে যাবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মার্কিন নাগরিকরা এই অ্যাপটি ব্যবহার করতে পারছেন না- এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে কয়েক বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। কারণ বাইটড্যান্স অ্যাপটির জোরপূর্বক বিক্রয় ঠেকাতে সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারে।

;

সলোমন দ্বীপপুঞ্জে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাল চীনপন্থী প্রধানমন্ত্রী মানসেহ সোগাভারে



আন্তর্জাতিক ডেস্ক বার্তা২৪.কম
ছবি: আল-জাজিরা

ছবি: আল-জাজিরা

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র সলোমন দ্বীপপুঞ্জের নির্বাচনে নিজেদেগর সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করতে পারেনি চীনপন্থী প্রধানমন্ত্রী মানসেহ সোগাভারে। প্রতিদ্বন্দ্বী বিরোধী রাজনীতিবিদদের সাথে জোট গঠন ছাড়া নতুন করে সরকার গঠন করতে পারবেন না তিনি।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) নির্বাচনী ফলাফলে দেখা গেছে সোগাভারের ‘আওয়ার পার্টি’ জাতীয় সংসদে ৫০টি আসনের মধ্যে ১৫টি আসন জিতেছে, যেখানে প্রধান বিরোধী দলগুলো ২০টি এবং স্বতন্ত্র ও ক্ষুদ্র দলগুলি ১৫টি আসন পেয়েছে।

সলোমন দ্বীপবাসীরা এক সপ্তাহ আগে হওয়া নির্বাচনী লড়াইয়ে ভোট দেন। সোগাভারে ২০১৯ সালে তাইপেই থেকে বেইজিং-এ কূটনৈতিক সম্পর্ক পরিবর্তন করে চীনের সাথে একটি বিতর্কিত নিরাপত্তা চুক্তিতে সম্মত হয়েছিল।

ইউনাইটেড পার্টির নেতা পিটার কেনিলোরিয়া জুনিয়র তাইওয়ানের সাথে সম্পর্ক ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স পার্টির নেতা রিক হাউ রয়টার্স নিউজ এজেন্সিকে বলেছেন, সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ২৬টি আসন নিশ্চিত করার জন্য রাজনীতিবিদরা স্বতন্ত্রদের লবিং করছেন।

বিশ্লেষকরা আল জাজিরাকে বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় চীন সম্পর্কের দিকে মনোনিবেশ করতে পারে, সলোমন দ্বীপবাসীরা জীবনযাত্রার ব্যয়, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষার মতো সমস্যা নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন ছিল।

সোগাভারে তার আসনে অল্প ভোটে পুনঃনির্বাচিত হওয়ার পর জানান, তিনি দেশের নিরাপত্তার নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন।

তাভুলি নিউজের এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, যখন এই দেশের নিরাপত্তার কথা আসে তখন আমি পূর্ণ নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করি। আমি দেশ পরিচালনা চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি সম্ভাব্য দাঙ্গা সম্পর্কে উদ্বিগ্ন বলেও জানিয়েছেন।

হোনিয়ারা ২০২১ সালে দাঙ্গায় কেঁপে উঠেছিল যখন বিক্ষোভকারীরা রাজধানীর চায়নাটাউনে ব্যবসাগুলিকে লক্ষ্যবস্তু করেছিল এবং সোগাভারের বাসভবনে হামলার চেষ্টা করেছিল। সে সময় সরকারের অনুরোধের প্রেক্ষিতে অস্ট্রেলিয়ান পুলিশের সহায়তায় শান্তি পুনরুদ্ধার হয়।

সোগাভারে বলেন, তার দলের প্রতি দুটি ছোট দলের সমর্থন রয়েছে। তিনি দাবি করেন, বিরোধী দলগুলি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে কাকে সমর্থন করবে তা নিয়ে স্বতন্ত্রদের প্ররোচিত করবে।

ম্যাথু ওয়েলের সলোমন আইল্যান্ডস ডেমোক্রেটিক পার্টি (U4C) এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী রিক হাউ-এর ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স পার্টির (CARE) জোট ১৩টি আসনে রয়েছে।

কেনিলোরিয়া জুনিয়র বলেছেন যে তার দল, সাতটি আসন জিতেছে তারা সমমনা গ্রুপের সাথে একত্রিত হবে।

সলোমন দ্বীপপুঞ্জের শত শত দ্বীপ জুড়ে ৭ লাখ ৬০ হাজার জনসংখ্যা রয়েছে। নির্বাচন পরবর্তী সময়টি উত্তেজনাপূর্ণ হতে পারে কারণ রাজনীতিবিদরা একটি শাসক জোটকে একত্রিত করার চেষ্টা করছেন।

সোগাভারের সরকারের আমন্ত্রণে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, পাপুয়া নিউগিনি এবং ফিজির পুলিশ ও প্রতিরক্ষা বাহিনী নির্বাচনী নিরাপত্তায় সহায়তা করছে।

ইতিমধ্যে নির্বাচনের ফলাফলকে কেন্দ্র করে মালাইতা দ্বীপে দুটি গ্রামের মধ্যে সহিংসতা দমন করেছে পুলিশ।

;