নাদিয়া মুরাদ, আইনাল কুর্দি ও অনামা রোহিঙ্গা শিশু



ড. মাহফুজ পারভেজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, বার্তা২৪.কম
নাদিয়া মুরাদ, আইনাল কুর্দি ও অনামা রোহিঙ্গা শিশু, ছবি: সংগৃহীত

নাদিয়া মুরাদ, আইনাল কুর্দি ও অনামা রোহিঙ্গা শিশু, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

২০১৮ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার পেতে পারত আইনাল কুর্দি। নোবেল কমিটি মরনোত্তর পুরস্কার না দেওয়ায় সে সুযোগ পায় নি মধ্যপ্রাচ্য সঙ্কটের দগদগে প্রতীক আইনাল। মারা যাওয়ায় মহাত্মা গান্ধীও শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান নি। বেঁচে থাকলে পুরস্কারটি তিনি নির্ঘাত পেতেন। নোবেল কমিটি পুরস্কার দিয়ে যত না আনন্দ প্রকাশ করেছে, গুরুত্বপূর্ণ ও যোগ্য অনেককে পুরস্কার দিতে না পারার জন্য ব্যথিত হয়েছে তারচেয়ে ঢের বেশি।

আইনাল কুর্দি ও এবারের নোবেল শান্তি পদক প্রাপ্ত নাদিয়ার প্রসঙ্গ ধরে বলা যায়, আরাকানের অনামা সেই শিশুটির কথাও, বার্মিজ নির্যাতন থেকে পালিয়ে বাঁচতে গিয়ে যে নাফ নদীতে মরে-পচে-ফুঁলে ভেসে ছিল। শান্তির সন্ধানে জীবন ও স্বদেশ হারানো এইসব মৃতমুখের পাশে বেঁচে থাকা নাদিয়া যেন সকলেরই প্রতিনিধিত্ব করছেন।

অনামা রোহিঙ্গা শিশু বা আইনাল কুর্দি পুরস্কার ও স্বীকৃতি না পেলেও পেয়েছেন আইনালেরই স্বদেশী (স্বজাতির নয়) নাদিয়া মুরাদ। আপাত দৃষ্টিতে নাদিয়া মুরাদ বাসিই তাহা নামের ২৫/২৬ বছরের তরুণীকে বৃহত্তর কুর্দি জাতির সদস্য ধরা হলেও তিনি তা নন। নিজেদেরকে তারা বলেন ইয়াজিদি সম্প্রদায়, যারা মধ্যপ্রাচ্যে কুর্দি অধ্যুষিত ইরাক ও সিরিয়ার অঞ্চলগুলোর একটি অতি ক্ষুদ্র ধর্ম ও জাতি গোষ্ঠী। জাতিতে যেমন তারা কুর্দি পরিচয়কে অস্বীকার করেন, ধর্ম মতেও তারা মুসলিম নন। বরং একেশ্বরবাদী ধর্মগুলো, যেমন ইহুদি, খ্রিস্টান ও ইসলামের শংকর বলা হয় এ জনগোষ্ঠীকে। অনেকেই এদেরকে সুফিবাদি ও কাল্ট-ভিত্তিক রহস্যময় ধর্ম সম্প্রদায় হিসাবেও বিবেচনা করেন।

মনে রাখা ভালো, বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্যে একক ও প্রধান ধর্ম ইসলামের অধীনেই আছে চারটি প্রধান জাতিসত্ত্বা, যারা পরস্পরের প্রতি মৈত্রীর চেয়ে বিভেদ ও সংঘাতের ঐতিহ্য বহন করছে ঐতিহাসিক দিন থেকেই। আরব, পারসিক, তুর্কি, কুর্দি-এই প্রধান চার জাতিগুলোর বাইরে সেখানে বহু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধর্ম, ভাষা ও জাতিসত্ত্বাভিত্তিক জনগোষ্ঠী রয়েছে, ইয়াজিদিরা তেমনই একটি।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে চলমান নারকীয় সংঘাতের অন্তর্মূলে শিয়া-সুন্নি ধর্মীয় মতাদর্শ ও ইরান-সৌদি-সিরিয়া-তুরস্কের ক্ষমতার রাজনীতির বাইরে প্রধান জাতিগুলোর দ্বন্দ্ব-সংঘাতের দিকগুলো এখন আর অজানা থাকছে না। নানামুখী সংঘাত ও সংঘর্ষের ধারাবাহিকতায় আইএসআইএল-এর সশস্ত্র জঙ্গি গোষ্ঠী ভিন্নমতের ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের গ্রামগুলোতে হামলা চালাতে থাকে। হাজার হাজার মানুষকে হত্যা ও শত শত নারীকে দাস বানিয়ে নিয়ে যায় উগ্রবাদীরা। নাদিয়া মাত্র ১৯ বছর বয়সে এই আধুনিক সময়ের প্রেক্ষাপটে একটি বর্বর মধ্যযুগীয় বন্দি শিবিরে আটক হন। নানা রকমের নিপীড়ন-নিযাতনের পাশাপাশি তিনি যৌন লাঞ্ছনা ও মানব পাচারের মতো বীভৎস অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন আরও হাজার হাজার নারীর মতোই।

নাদিয়ার সৌভাগ্য যে তিনি সন্ত্রাসী-জঙ্গিদের মৃত্যুকূপ থেকে পালিয়ে ফিরে আসতে পেরেছিলেন মুক্ত পৃথিবীতে। বিশ্ববিবেককে জানাতে পেরেছিলেন যুদ্ধ ও সংঘাতের বাতাবরণে চলতে থাকা নারী ও শিশুদের প্রতি অমানবিক আচরণ, যৌন অত্যাচার, দাসবৃত্তি ও মানব পাচারের বিষয়গুলো। মধ্যপ্রাচ্যের তেল ও প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন লড়াইরত গ্রুপগুলোর কাছে আদর্শের চেয়ে মূল্যবান, তেমনি ধৃত নারী-শিশুদের সম্ভোগ ও বিক্রি করাটাও আরেকটি লাভজনক অপকর্ম। নাদিয়া তার অভিজ্ঞতার কথা জাতিসংঘ, পোপ এবং বিশ্বের নানা স্থানে বর্ণনা করেছেন এবং নিষ্ঠুর অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন ‘দ্য লাস্ট গার্ল: মাই স্টোরি অব ক্যাপ্টিভিটি’ এবং ‘মাই ফাইট এগেইস্টে ইসলামিক স্টেট’ নামক গ্রন্থে। ‘অন হার সোল্ডার’ নামের একটি ডকুমেন্টারি চলচ্চিত্রেও তিনি বিবৃত করেছেন যুদ্ধের অন্ধকার ও ভয়াবহতার অমানবিক দিকগুলোকে।

সংঘাত ও যুদ্ধের বিভীষিকার একই দুর্ভাগ্য ডেকে আনে মধ্যপ্রাচ্যের এবং পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ নারী, শিশু ও মানুষের। আইনাল কুর্দি তেমনই একজন, যে ছোট্ট শরীরটি নিয়ে মরে পড়েছিল সমুদ্র উপকূলে। সংঘাতের কবল থেকে বাঁচতে গিয়ে মানব পাচারকারীদের সবকিছু দিয়ে পালাতে চেয়েছিল আইনালের পরিবার। ভুল পথে তারা চলে যায় মৃত্যুর ঠিকানায়। আইনাল তার কাহিনী নাদিয়ার মতো লিখে যেতে পারে নি। আইনালের কথা লিখেছে বিশ্ব মিডিয়া এবং কানাডায় অপেক্ষারত তার বোন তিমা আবদুল্লাহ। যেমনভাবে নাফ নদী তীরের অনামা রোহিঙ্গা মৃতশিশুটির না-বলা কথা বলেছে বিশ্বের মানবিক কণ্ঠস্বর।

নাদিয়ার নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রাপ্তির সময় অবশ্যই মনে পড়বে যুদ্ধ ও সংঘাতে মৃত, আহত, যৌন অত্যাচিত, দাসরূপে বিক্রি হয়ে যাওয়া কিংবা মানব পাচারের পথ ধরে মুক্তির সন্ধানে গিয়ে জীবন হারানো লক্ষ লক্ষ মানুষের কথা। নাদিয়ার যে ক্ষুদ্র জাতিটি হাজারা বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যের নিজের ভূমিতে বসবাস করছিল, তারাও আর সেখানে থাকতে পারে নি। ইয়াজিদি সম্প্রদায় এখন জার্মানি, আজারবাইজান, আর্মেনিয়া, অস্ট্রেলিয়ায় পালিয়ে বেঁচেছে। অনেকেই ধুকছে উদ্বাস্তু শিবিরে। বলা হয়, অতি ক্ষুদ্র এই সম্প্রদায়ের ৮০% মানুষই হয় মরেছে, নয় পালিয়ে গেছে!

ইয়াজিদি নাদিয়ার সহনাগরিক মধ্যপ্রাচ্যের কুর্দিরাও একই পরিস্থিতির শিকার। আইনালের ভেসে আসা লাশের মতো এই জাতিটিও উদ্বাস্তু হয়ে ভাসছে বিশ্বের পথে-প্রান্তরে। একদা মুসলিম গৌরবের প্রতীক ক্রুসেড-বিজয়ী গাজি সালাহউদ্দিন আইয়ুবির বংশধর কুর্দি জাতি সংখ্যায় বড় হলেও দেশহারা। তাদের জন্মভূমি ভাগ হয়ে গেছে ইরাক, ইরান, সিরিয়া, তুরস্ক, আর্মেনিয়ায়। স্বাধীনতা ও স্বদেশ পাওয়ার বদলে বেঁচে থাকার অধিকারও হারিয়েছে কুর্দি জনগোষ্ঠী। সংঘাত ও যুদ্ধের আঘাতে দিকভ্রান্ত হয়ে পালিয়ে যাচ্ছে সমুদ্রের আরেক প্রান্তে। খুব সামান্য বাঁচতে পারছে। অধিকাংশই মানব পাচারের শিকার হয়ে মরেছে দুর্ভাগা আইনাল কুর্দির মতো। কিংবা নাম ও ধর্ম হারিয়ে বিক্রি হয়ে গেছে অড্রেয়াটিক সাগরের অপর প্রান্তীয় শহর ট্রিয়েস্ট, ভিয়েনা, নিকোশিয়ার ব্রোথেল ও নাইট ক্লাবে। ইউরোপের দরজায় কুর্দিদের কান্না ও আর্তনাদ ভারী করেছে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলকে।

ভূগোলের আরেক সীমানায় দক্ষিণ এশিয়ার মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ভোগ করছে অনুরূপ নির্মমতম জাতিগত আক্রমণ। মানবাধিকারের নূন্যতম সুযোগও বঞ্চিত হয়েছে তারা। জন্ম অধিকার ও হাজার বছরের বসবাসের স্বীকৃতি ও নাগরিকত্ব হারিয়ে রোহিঙ্গারা পাখির মতো মারা যাচ্ছে বার্মিজদের হাতে। যত ধরনের শারীরিক, মানসিক, যৌন নিপীড়ন আছে, সবই প্রয়োগ করা হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে। প্রাণ বাঁচাতে মরণ সাগর পেরিয়ে রোহিঙ্গারা স্বদেশ ছাড়ছে। আসার সময় পথে পথে মরেছে তারা। মৃত বাপ, মা, ভাই, বোন, স্বজনকে ফেলেই সর্বশ্রান্ত হয়ে ঠাঁয় নিয়েছে বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে। সেখান থেকে সুযোগ পেলেই মানব পাচারকারীদের হাত ধরে নানা বৈধ-অবৈধ পথে পালিয়ে যাচ্ছে বিশ্বের নানা দেশে। কখনো পালিয়ে বাঁচতে পারছে, অধিকাংশ সময়ই আইনাল কুর্দি বা অনামা রোহিঙ্গা শিশুর মতো মারা পড়ছে। ইয়াজিদি সম্প্রদায়, কুর্দি এবং বিশ্বের অন্যান্য প্রপীড়িত জাতিগোষ্ঠীর মতোই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বৃহত্তম অংশ এখন দেশছাড়া উদ্বাস্তু।

মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন নেত্রী অং সাং সুচিকে সেদেশের সামরিক বাহিনী অবরুদ্ধ ও দেশছাড়া করলে তিনি পেয়েছিলেন শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার। আর এখন যখন সুচি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে মিশে আস্ত রোহিঙ্গা জাতিকেই দেশছাড়া করছেন, তখন রোহিঙ্গারা পাচ্ছে মৃত্যুর যন্ত্রণা ও স্বদেশ হারানোর বেদনা। সুচির মতো যেসব অপশক্তি মধ্যপ্রাচ্যে কুর্দি বা ইয়াজিদিদের জীবন বিষিয়ে দিচ্ছে এবং প্রাণ হরণ করছে, একদিন হয়ত তারাও সুচির মতো নোবেল শান্তির দাবিদার হয়ে দাঁড়াতো, যদি না ভাগ্যক্রমে নাদিয়া মুরাদ বেঁচে ফিরে আসতেন। তিনি নিজের এবং আইনাল কিংবা রোহিঙ্গা শিশুটির হয়ে বিশ্বের সামনে কথা বলেছেন যুদ্ধবাজ, জঙ্গি, জাতিগত নিধনকারী, যৌণ নিপীড়িকদের বিরুদ্ধে। জানিয়েছেন যুদ্ধের ছদ্মবেশে নারীকে খুবলে ফেলার ও মানব পাচারের মর্মান্তিক বিবরণ। তিনি প্রকাশ করেছেন যুদ্ধের ভেতরে চলমান আধুনিক দাসবৃত্তির কথাও।

যুদ্ধ ও সংঘাতের কবল থেকে বাঁচার জন্য মানুষের চিরায়ত আকুতির যে প্রকাশ নাদিয়া মুরাদ করেছেন, তা বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের সম্মিলিত কণ্ঠস্বর। ইয়াজিদি, কুর্দি, রোহিঙ্গা এবং বিশ্বের সকল যুদ্ধাক্রান্ত বিপণ্ন মানুষের একীভূত আর্তি ধারণ করেছে নাদিয়ার ব্যক্তিগত উচ্চারণ। আইনাল কুর্দি, অনামা রোহিঙ্গা শিশু এবং যুদ্ধ প্রান্তরে নিহত শত-সহস্র নারী, শিশু, মানুষের হিস্যা হয়ে নাদিয়ার গলায় যে নোবেল শান্তি পুরস্কার উঠেছে, তা আসলে নিছক কোনও পুরস্কার মাত্র নয়; তা হলো যুদ্ধবাজ, জঙ্গি ও নিপীড়িকদের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক ভৎসনা; আইনাল ও রোহিঙ্গা শিশুর পক্ষ হয়ে আইএসআইএল বা সুচির গালে প্রচণ্ড চপোটাঘাত; মানবতার বিরুদ্ধে আক্রমণকারীদের মুখে ছিটিয়ে দেওয়া একদলা ঘৃণার থু থু।

   

মধ্যস্থতার জন্য ইতিবাচক হলে দোহায় থাকবে হামাস নেতারা



আন্তর্জাতিক ডেস্ক বার্তা২৪.কম
ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

কাতার মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) জানিয়েছে, হামাসের রাজনৈতিক নেতারা ততক্ষণ দোহায় থাকবেন, যতক্ষণ তাদের উপস্থিতি গাজা যুদ্ধের অবসানের লক্ষ্যে মধ্যস্থতা প্রচেষ্টার জন্য ইতিবাচক হবে।

কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা সবসময় বলেছি, ততক্ষণ তারা দোহায় থাকবেন, যতক্ষণ তাদের উপস্থিতি মধ্যস্থতা প্রচেষ্টায় কার্যকর এবং ইতিবাচক হবে।’

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও মিশরসহ মধ্যস্থতাকারীরা রমজান মাসে যুদ্ধবিরতি কার্যকরে ব্যর্থ হওয়ার পরে প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান বিন জসিম আল থানি গত সপ্তাহে বলেছেন, ‘কাতার তার ভূমিকা পুনর্মূল্যায়ন করছে।’

এই ঘোষণার ফলে হামাস নেতাদের গ্যাসসমৃদ্ধ উপসাগরীয় রাষ্ট্রটি ছেড়ে দিতে বলা হতে পারে বলে গুঞ্জন শুরু হয়েছিল।

সেই গুঞ্জন অবসানে আনসারি নিশ্চিত করে বলেন, ‘কাতার তার মধ্যস্থতা ভূমিকার পুনর্মূল্যায়ন চালিয়ে যাচ্ছে এবং দোহাতে হামাস সদস্যদের উপস্থিতির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না।’

রয়টার্স জানিয়েছে, এই অঞ্চলের বৃহত্তম মার্কিন সামরিক ঘাঁটি পরিচালনাকারী কাতারের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুসহ ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের মধ্যস্থতার প্রচেষ্টার সকল সমালোচনা প্রত্যাখ্যান করেছেন।

আনসারি মঙ্গলবার বলেন, ‘সবাই জানে যে, মধ্যস্থতা প্রচেষ্টায় কাতারের ভূমিকা কী।’

প্রসঙ্গত, গত নভেম্বরে সফলভাবে গাজা যুদ্ধের একমাত্র বিরতির মধ্যস্থতা করেছে কাতার।

;

ইউক্রেনের জন্য সর্ববৃহৎ সামরিক সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করবেন সুনাক



আন্তর্জাতিক ডেস্ক বার্তা২৪.কম
ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ইউক্রেনকে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করার জন্য তার সর্ববৃহৎ সামরিক সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য।

ব্রিটেন মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক পোল্যান্ড সফরের সময় ৫০০ মিলিয়ন পাউন্ডের ওই সামরিক প্যাকেজের বিস্তারিত বিবরণ দেবেন।

রাশিয়ার বাহিনী সামনের সারিতে অগ্রসর হতে শুরু করায় এবং তাদের বিমান হামলা বাড়ানোর কারণে বর্ধিত সাহায্যের জন্য মরিয়া হয়ে আহ্বান জানিয়েছে ইউক্রেন।

হোয়াইট হাউস প্রায় ৬০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের যুক্তরাষ্ট্র থেকে দীর্ঘ বিলম্বিত সহায়তা প্যাকেজের মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করার সময় যুক্তরাজ্য এই ঘোষণা দিয়েছে।

ব্রিটিশ সরকার বলেছে, চলতি অর্থবছরে ইউক্রেনের জন্য যুক্তরাজ্যের মোট সামরিক সহায়তাকে ৩ বিলিয়ন পাউন্ডে নিয়ে যাবে তারা।

নতুন প্যাকেজের আওতায় গোলাবারুদ, বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, ড্রোন এবং প্রকৌশল সহায়তার জন্য অর্থায়ন করবে যুক্তরাজ্য।

ব্রিটিশ মিডিয়া অনুসারে আল জাজিরা জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যের সর্ববৃহৎ এই প্যাকেজে ৬০টি নৌযান এবং ১,৬০০টিরও বেশি আক্রমণ ও প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্রের পাশাপাশি স্টর্ম শ্যাডো নামের দূর-পাল্লার নির্ভুল-নির্দেশিত ক্ষেপণাস্ত্র অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

এ ছাড়াও ১৬২টি সাঁজোয়া যানসহ ৪০০টিরও বেশি যানবাহনের পাশাপাশি ৪ মিলিয়ন রাউন্ড ছোট অস্ত্রের গোলাবারুদও সরবরাহ করা হবে এই প্যাকেজে।

সুনাক বলেছেন, ‘রাশিয়ার নৃশংস উচ্চাকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে রক্ষা করা আমাদের নিরাপত্তা এবং সমগ্র ইউরোপের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যদি পুতিনকে এই আগ্রাসনের যুদ্ধে সফল হতে দেওয়া হয়, তবে পোল্যান্ডও ছাড়বেন না।’

এদিকে, সুনাক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করতে পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্কের সঙ্গে ও ইউরোপীয় নিরাপত্তা এবং ইউক্রেনের জন্য সমর্থন নিয়ে আলোচনা করতে ন্যাটোর মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গের সঙ্গে ওয়ারশতে
দেখা করার কথা রয়েছে। এরপর জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজের সঙ্গে দেখা করতে জার্মানি যাবেন তিনি।

যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা সচিব গ্রান্ট শ্যাপস বলেছেন, ‘প্যাকেজটি ইউরোপে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইউকে সর্বপ্রথম এনএলএডব্লিউ ক্ষেপণাস্ত্র প্রদান করবে। এ ছাড়াও সর্বপ্রথম আধুনিক ট্যাংক এবং সর্বপ্রথম দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রদান করা হবে।’

সুনাক বলেন, ‘এখন আমরা আরও এগিয়ে যাচ্ছি। ইউক্রেন যে অস্তিত্বের লড়াই চালাচ্ছে, তা আমরা বিশ্বকে কখনোই ভুলতে দেব না এবং আমাদের স্থায়ী সমর্থনে তারা জয়ী হবে।’

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানিয়েছে, পোল্যান্ডের জন্যও সুনাকের একটি প্রস্তাব রয়েছে। সেটি হলো, আগামী বছর পোল্যান্ডে ন্যাটোর বিমান পুলিশিং চালানোর জন্য একটি ব্রিটিশ রয়্যাল এয়ারফোর্সের টাইফুন স্কোয়াড্রন মোতায়েন করা।

;

‘এই গ্রীষ্মে অপ্রত্যাশিত এলাকায় হামলা চালাবে রাশিয়া’



আন্তর্জাতিক ডেস্ক বার্তা২৪.কম
ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ইউক্রেনের ন্যাশনাল গার্ডের কমান্ডার ওলেক্সান্ডার পিভনেঙ্কো মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) বলেছেন, রাশিয়ার সেনারা যখন ইউক্রেনে তাদের গ্রীষ্মকালীন আক্রমণ পরিচালনা করবে, তখন তারা ফ্রন্টের অপ্রত্যাশিত অংশে হামলা চালাবে এবং তারা উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর খারকিভে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করতে পারে।

রয়টার্স জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরে ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন দ্বারা হামলা চালানো হয়েছে।

তবে ওলেক্সান্ডার পিভনেঙ্কো বলেছেন, কিয়েভের বাহিনী মস্কোর যেকোনো আক্রমণকে ব্যর্থ করতে প্রস্তুত থাকবে।

তিনি ইউক্রেনের নিউজ আউটলেট রিগা ডট নেট-কে বলেন, ‘আমরা প্রস্তুত হচ্ছি। হ্যাঁ, শত্রুরা আমাদের অপ্রীতিকরভাবে চমক দেবে। তারা এমন এলাকায় হামলা করবে, যেখানে আমরা আশা করি না। কিন্তু, তারা লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে না।’

এদিকে, রাশিয়া পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে শুরু করেছে। কিন্তু, দীর্ঘ বিলম্বিত মার্কিন সামরিক সহায়তা অবশেষে এই সপ্তাহে অনুমোদিত হবে এবং শীঘ্রই ইউক্রেনে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ওই সহায়তার আওতায় গোলাবারুদের ঘাটতি দূর হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলছেন, তারা বিশ্বাস করেন যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েত বিজয় দিবস মস্কো ৯ মে’র মধ্যে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ পূর্বাঞ্চলীয় শহর চসিভ ইয়ার দখল করতে চাইবে।

পিভনেঙ্কো বলেন, তিনি কিয়েভের সেনাদের কিছু অসুবিধা আগে থেকেই দেখেছেন। তবে, রাশিয়ান বাহিনী জয় লাভ করতে পারবে না।

তিনি বলেন, ‘রাশিয়া সম্ভবত তাদের লক্ষ্যের ১০-১৫% পূরণ করতে সক্ষম হতে পারে। কিন্তু, এটি কৌশলগত বিজয় হবে না।’

তিনি আশা করেন যে, রাশিয়ার সেনারা খারকিভের বেসামরিক অবকাঠামোতে আঘাত হানবে, যার বেশিরভাগই ইতিমধ্যে রাশিয়ান হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।

;

ইসরায়েলের দুটি ঘাঁটি লক্ষ্য করে হিজবুল্লাহর হামলা



আন্তর্জাতিক ডেস্ক বার্তা২৪.কম
ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

লেবাননের ইরান-সমর্থিত গ্রুপ হিজবুল্লাহ বলেছে, তারা ইসরায়েলের হামলার প্রতিশোধ নিতে মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) ইসরায়েলের দুটি ঘাঁটিতে ড্রোন হামলা চালিয়েছে।

ইসরায়েলের ড্রোন হামলার প্রতিক্রিয়া হিসাবে তারা ওই হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি। ইসরায়েলের ওই ড্রোন হামলায় দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লাহর এক যোদ্ধা নিহত হয়।

জবাবে মঙ্গলবার, হিজবুল্লাহ একরির উত্তরে দুটি ইসরায়েলি ঘাঁটি লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালায়।

গ্রুপটি একটি বিবৃতিতে বলেছে, লেবাননে মঙ্গলবার ইসরায়েলের হামলায় ইরান-সমর্থিত ওই যোদ্ধা নিহত হন। ওই যোদ্ধা গাড়িতে করে যাওয়ার সময় ইসরায়েলের হামলার শিকার হন।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের নজিরবিহীন হামলার মধ্যদিয়ে গাজা যুদ্ধের সূত্রপাত হওয়ার পর থেকে হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর মধ্যে প্রায় প্রতিদিনই আন্তঃসীমান্ত গুলি বিনিময় হচ্ছে।

এএফপি’র এক সাংবাদিক জানান, সীমান্ত থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে উপকূলীয় তায়ার নগরীর কাছে আবু আল-আসওয়াদ এলাকায় সর্বশেষ এ হামলার ঘটনা ঘটে।

সূত্রটি এএফপিকে জানায়, নিহত যোদ্ধা হিজবুল্লাহর বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনীর একজন প্রকৌশলী ছিলেন।

লেবাননের রাষ্ট্রায়ত্ত জাতীয় বার্তা সংস্থা জানায়, ইসরায়েলি বাহিনী তার গাড়ি লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালায়। এএফপি’র এক সাংবাদিক জানান, ওই ড্রোন হামলায় গাড়িটি সম্পূর্ণভাবে পুড়ে যায়।

খবরে বলা হয়, হিজবুল্লাহ সাম্প্রতিক সময়ে ইসরাইলি লক্ষ্যবস্তুতে তাদের রকেট হামলা জোরদার করেছে এবং রবিবার সন্ধ্যায় তারা ইসরাইলের একটি ড্রোনকে গুলি করে ভূপাতিত করেছে।

এএফপির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ৭ অক্টোবর থেকে লেবাননে ইসরায়েলের হামলায় কমপক্ষে ৩৭৭ জন নিহত হয়েছে। এদের বেশিরভাগই
হিজবুল্লাহ যোদ্ধা। তবে নিহতদের মধ্যে ৭০ জন বেসামরিক নাগরিকও রয়েছে।

এদিকে ইসরায়েল বলছে, তাদের দেশের সীমান্তে হিজবুল্লাহ গ্রুপের বিভিন্ন হামলায় ইসরায়েলের ১১ সেনা ও আটজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।

;