টাইম ম্যাগাজিনের বিশ্বের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের নতুন তালিকা
টাইম ম্যাগাজিন সদ্য প্রকাশ করেছে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের তালিকা। সেখানে বিশ্বব্যাংকের প্রধান অজয় বাঙ্গা, মাইক্রোসফ্টের সিইও সত্য নাদেলা, অলিম্পিয়ান সাক্ষী মালিকরা।
হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, এই তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তথা বিজ্ঞানী প্রিয়ম্বদা নটরাজন, লন্ডনের বৃহৎ রোস্তোরাঁর মালকিন আসমা খানও। দেখে নেওয়া যাক, টাইম তালিকার উল্লেখযোগ্য কিছু নাম :
ব্রিটেনে ভারতীয় বংশোদ্ভূত হিসাবে পরিচিতি রয়েছে আসমার। লন্ডনের সোহোতে রয়েছে তার বিখ্যাত রেস্তোরাঁ ‘দার্জিলিং এক্সপ্রেস।’ আসমার এই রেস্তোরাঁয় সব কর্মীই নারী। সকলের যে ফরমাল ট্রেনিং রয়েছে এমনও নয়। আর তাদের নিয়েই শেফ আসমা লন্ডনের বুকে দাপটে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তার রেস্তোরাঁর ব্যবসা।
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাস্ট্রো ফিজিক্সের অধ্যাপক প্রিয়ম্বদা। তার বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনা ঘোরাফেরা করে ডার্ক ম্যাটার ও কসমোলজি নিয়ে। নটরাজন ২০০৮ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাডক্লিফ ইনস্টিটিউটে এমলিন কনল্যান্ড বিগেলো ফেলোশিপ লাভ করেন। এমআইটি, কেমব্রিজের এই প্রাক্তনীও রয়েছেন তালিকায়।
যুগ যখন এআই-এর তখন সত্য নাডেলার নাম আলোচনায় আসবেই। মাইক্রোসফ্টের এই সিইও সদ্য ওপেন এআইতে বিনিয়োগ করেছেন। তার পার্টনারশিপ রয়েছে মিস্ট্রাল এআইতে।
বিশ্বব্যাঙ্কের সিইও এবং মাস্টার কার্ডের প্রাক্তন সিইও অজয় বাঙ্গাও রয়েছেন বিশ্বের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের তালিকায়। বিশ্বের বহু মানুষ যারা ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের মধ্যে ছিলেন না, তাদের ডিজিটাল অর্থনীতিমুখী করতে অবদান রয়েছে বাঙ্গার।
ভারতীয় অলিম্পিক মেডেল জয়ী সাক্ষী মালিক দেশের এক তাবড় অ্যাথলিট। তিনি জায়গা পেয়েছেন বিশ্বের সেরা প্রভাবশালীর তালিকায়। যৌন হেনস্থা ঘিরে রেসলিং ফেডারেশনে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলে লড়াকু প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন সাক্ষীসহ অনেকে। সেই সাক্ষী মালিকও এবার এই তালিকায়।
টাইমের ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় রয়েছেন বলিউড অভিনেত্রী আলিয়া ভাটও। পরিচালক টম হারপার বলছেন, তিনি ভারতীয় চলচ্চিত্রকেও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় অবদান রাখেন।
‘স্লামডগ মিলিয়নিয়ার’ খ্যাত দেব প্যাটেলও এবার টাইম ম্যাগাজিনের সেরা ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের তালিকায়। তার অভিনয় দক্ষতাই তাঁকে এই সম্মান এনে দিয়েছে।
জেলেনস্কিকে হত্যার পরিকল্পনাকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পোল্যান্ড
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে হত্যার কথিত ষড়যন্ত্রে রাশিয়ার সামরিক গোয়েন্দাদের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তি করার জন্য প্রস্তুত থাকার অভিযোগে পোল্যান্ডে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পোলিশ প্রসিকিউটরদের বরাতে খবরটি জানিয়েছে আল জাজিরা।
এক বিবৃতিতে বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) পোলিশ প্রসিকিউটররা বলেছেন, পোলিশ নাগরিক পাওয়েলকে রাশিয়ার সামরিক গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য সরবরাহ করার এবং জেলেনস্কির বিরুদ্ধে রাশিয়ার বিশেষ বাহিনীকে সম্ভাব্য হত্যা প্রচেষ্টার পরিকল্পনা করতে সহায়তা করার বিষয়ে সন্দেহ করা হচ্ছে।
ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সন্দেহভাজন বলেছেন যে, সে রাশিয়া ফেডারেশনের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষে কাজ করতে প্রস্তুত এবং তিনি ইউক্রেনের যুদ্ধে সরাসরি জড়িত রাশিয়ার নাগরিকদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, পাওয়েল দোষী সাব্যস্ত হলে তার আট বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
ইউক্রেনের প্রসিকিউটররা সন্দেহভাজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় প্রমাণ সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছিলেন বলে ওই বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে।
ইউক্রেনের প্রসিকিউটর-জেনারেল অ্যান্ড্রি কোস্টিন বলেছেন, সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে দক্ষিণ-পূর্ব পোল্যান্ডের রজেসজো-জাসিওনকা বিমানবন্দরের নিরাপত্তা সম্পর্কে আগ্রাসী রাষ্ট্রের তথ্য সংগ্রহ ও প্রেরণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।
বিমানবন্দরটি মার্কিন সেনাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। জেলেনস্কি তার বিদেশ ভ্রমণে প্রায়শই বিমানবন্দর ব্যবহার করেন। এটি বিদেশী কর্মকর্তারা এবং ইউক্রেনের দিকে যাওয়া ত্রাণবাহী গাড়িবহর দ্বারাও ব্যবহার করা হয়।
অ্যান্ড্রি কোস্টিন এক্স-এ লিখেছেন, ‘এই কেসটি রাশিয়ার ক্রমাগত হুমকিকে বোঝায় যা শুধুমাত্র ইউক্রেন এবং ইউক্রেনীয়দের জন্য নয়, বরং সমগ্র মুক্ত বিশ্বের জন্য।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘ক্রেমলিনের অপরাধী শাসন অন্যান্য সার্বভৌম রাষ্ট্রের ভূখণ্ডে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড সংগঠিত করে এবং পরিচালনা করে।’
পোলিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাডোস্লা সিকোরস্কি অপারেশনে তার দেশের বিশেষ পরিষেবা এবং প্রসিকিউটরদের কাজের পাশাপাশি প্রতিবেশী ইউক্রেনের সঙ্গে সহযোগিতার প্রশংসা করেছেন।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ান আগ্রাসনের পর থেকে ওয়ারশ কিয়েভের অন্যতম কট্টর সমর্থনকারী, যদিও সম্প্রতি কৃষি আমদানি নিয়ে বিরোধে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়েছে।
‘ইউক্রেন হেরে গেলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হবে’
পুরো যুদ্ধ পর্বে পশ্চিমা শক্তিগুলোর কাছে অর্থ ও অস্ত্র সাহায্য চেয়ে এসেছে ইউক্রেন। তাদের সাহায্য করেছেও যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো। কিন্তু, সম্প্রতি সেই সাহায্যে ভাটা পড়েছে। কারণ, যুদ্ধ-বাবদ খরচ নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস।
সেখানে আটকে রয়েছে বৈদেশিক সাহায্য সংক্রান্ত বিল। সামনে এ নিয়ে ভোটাভুটি হবে। এ অবস্থায় আমেরিকান কংগ্রেসের সামনে তোপ দাগলেন ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ডেনিস শ্মিহাল।
দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, তিনি বলেছেন, ‘রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেন যদি জিততে না পারে, তা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে।’’
ডেনিস আশাবাদী, কংগ্রেসের ভোটাভুটিতে শেষমেশ ইউক্রেনই জয়ী হবে। কমপক্ষে ৬১০০ কোটি ডলার সাহায্য দেওয়া হবে কিয়েভকে।
কিন্তু কোথাও যে সংশয় রয়েছে, সেটাও ডেনিসের কথায় স্পষ্ট। শনিবার বিপর্যস্ত দেশগুলোকে সাহায্য করা নিয়ে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে ভোট। এর মধ্যে ইউক্রেন ছাড়াও রয়েছে ইসরায়েল এবং ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অংশ।
এদিকে, চুপ নেই রাশিয়াও। তাদের হুঙ্কার, আমেরিকা নতুন করে সাহায্য করলেও কোনও লাভ হবে না। কারণ যুদ্ধক্ষেত্রে কোনও পরিস্থিতিই ইউক্রেনের জন্য আর অনুকূলে নেই।
এক ব্রিটিশ দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী ডেনিস ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘আজ কিংবা আগামীকাল নয়, গতকালই আমাদের এই অর্থের প্রয়োজন ছিল। আমরা রক্ষা না করলে ইউক্রেন ভেঙে যাবে। এই বিশ্বে ভাঙন ধরবে। বিশ্বের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ভাঙন ধরবে। গোটা দুনিয়া তখন দেখতে পাবে নতুন নিরাপত্তা ব্যবস্থার দশা।’
তার ভাষ্যমতে, ‘তখন আরও দ্বন্দ্ব দানা বাঁধবে, আরও যুদ্ধ শুরু হবে। আর দিনের শেষে সেটা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ডেকে আনবে।’
এবারই প্রথম নয়, যুদ্ধে হার কিংবা বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কার কথা আগেও শোনা গিয়েছে ইউক্রেনের মুখে।
গতবছর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছিলেন, রাশিয়া যদি এই যুদ্ধে জিতে যায়, তাহলে এর পরে মস্কোর নিশানা হবে পোল্যান্ড। তখন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবেই। ক্রেমলিন অবশ্য ইউক্রেনের দাবি হাস্যকর বলে উড়িয়ে দিয়েছে বরাবরই।
সিরিয়ায় আইএসের হামলায় সরকার সমর্থক ২০ সেনা নিহত
যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার দামেস্ক-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) আইএস-এর দুটি হামলায় দেশটির সরকার সমর্থক বাহিনীর ২০ সেনা নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স। খবরটি নিশ্চিত করেছে সিরিয়ান যুদ্ধ পর্যবেক্ষক সংস্থা।
সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস বলেছে, হোমস প্রদেশের পূর্ব গ্রামাঞ্চলে একটি সামরিক বাসে আইএস হামলা চালিয়ে সরকারি বাহিনী ও সরকার সমর্থক বন্দুকধারীদের মোট ১৬ জনকে হত্যা করেছে।
ব্রিটেনভিত্তিক এই পর্যবেক্ষক সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলের আলবুকামাল প্রত্যন্ত এলাকায় একটি সামরিক সাইটে আইএস-এর অপর এক হামলায় সরকারি বাহিনীর ৪ সদস্য নিহত হয়েছে।
এদিকে, আইএস ছাড়াও সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে শুক্রবার একটি সামরিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সিরিয়ার সরকার ও ব্রিটিশ পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস এ কথা জানিয়েছে।
সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ইসরায়েলি শত্রু পক্ষ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে হামলা চালিয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলে আমাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে এবং এতে কিছু জিনিস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের প্রধান রামি আবদেল রহমান বলেন, সোয়াইদা ও দারা প্রদেশের মধ্যবর্তী জায়গায় সিরীয় সেনাবাহিনীর একটি রাডার ব্যবস্থাকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে দেশটির সেনাবাহিনী ও ইরান-সমর্থিত যোদ্ধাদের লক্ষ্য করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী শতাধিকবার হামলা চালিয়েছে।
গত ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকায় ইরান-সমর্থিত হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে হামলার হার বেড়েছে।
এদিকে এক মার্কিন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এবিসি নিউজের খবরে বলা হয়েছে, শুক্রবার ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। যদিও ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, ইস্পাহান বিমানবন্দরের কাছে বিস্ফোরণ হয়েছে।