শুক্রবার নিউইয়র্কে শুরু হচ্ছে তিনদিনব্যাপী বইমেলা
নিউইয়র্ক: ‘বই হোক আমাদের উত্তরাধিকার’ স্লোগান নিয়ে নিউইয়র্কের বাঙালি-অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটসে শুক্রবার (২২ জুন) থেকে বসছে নিউইয়র্ক বাংলা বইমেলা।
তিন দিনব্যাপী এই মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার। ২২ জুন শুক্রবার ৭২-১১ রোজভেল্ট এভিনিউতে অবস্থিত বেরাজিনো ব্যাংকোয়েট মিলনায়তনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হবে বিকেল ৫টা থেকে। ২৩ ও ২৪ জুন শনি ও রোববার সকাল ১১টা থেকে রাত ১১টা পযর্ন্ত চলবে পিএস ৬৯, ৭৭ স্ট্রিট ও ৩৭ এভিনিউউ, জ্যাকসন হাইটস স্কুল মিলনায়তনে।
বাংলাদেশ ও পশ্চিম বাংলার বাইরে বৃহত্তম ও সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী এই বাংলা বইমেলায় উত্তর আমেরিকার শতাধিক লেখক অংশ নিচ্ছেন। অতিথি হিসেবে যাঁরা ঢাকা থেকে এসেছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক ও আনিসুল হক ও কবি দিলারা হাফিজ।
মুক্তধারা ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা গেছে, এছাড়া আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে ইকবাল বাহার চৌধুরী, আবদুন নূর, আবুল হাসনাত, সাইফ ইমাম (জামি), জাফর আহমেদ রাশেদ, ইফতেখারুল ইসলাম, ইকবাল হাসান, সৈয়দ আল ফারুক, লুৎফর রহমান রিটন, আমীরুল ইসলাম, মোঃ আব্দুস সামাদ, সৌরভ সিকদার, গীতালি হাসান, পারমিতা হিম, নাজমুন নেসা পিয়ারী, সালেহা চৌধুরী, নাসরিন জাবিন, আলপনা হাবিব ও পারভিন আক্তার যোগ দিতে এসে পৌছেছেন নিউইয়র্কে। বিম্বসাহিত্য কেন্দ্রের সভাপতি আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ এসে পৌছাবেন শুক্রবার সন্ধ্যায়।
মেলায় সংগীত পরিবেশনের জন্য ঢাকা থেকে এসেছেন বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী লিলি ইসলাম,আধুনিক বাংলা গানের জনপ্রিয় শিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী। ফিলাডেলফিয়া থেকে আসছেন রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী কাদেরী কিবরিয়া।
এছাড়া তনিমা হাদী, জীবন বিশ্বাস, শহীদ হাসান, নাহিদ নাজিয়া, শবনম আবেদী, শান্তা নাগ, নীপা ভৌমিক, ফাহমিদা শারিমন, রুবিনা শিল্পী, শাহ মাহবুব ও কৃষ্ণা তিথী।
সেমন্তী ওয়াহেদ এর পরিচালনায় বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান থাকছে ‘‘যদি বন্ধু হও’’। অংশগ্রহণেঃ ময়ুরী, চন্দ্রিমা, মাইশা, সুস্বনা, দ্যুতি, উদিতা, অধরা, অনাকা, রেহা, অন্তরা, শ্রাবণী, মৌমি। নৃত্যে মাইশা ও সুস্বনা। গানে ময়ুরী। আবৃত্তি ও পাঠঃ দ্যুতি ও মাইশা।
মুক্তধারা ফাউন্ডেশন আয়োজিত এই মেলার আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও বিজ্ঞানী নূরন্নবী। বাংলা একাডেমি, প্রথমাসহ বাংলাদেশের ২০টির মতো প্রকাশনা সংস্থা মেলায় নতুন বইয়ের প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছে। বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশনা সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমদ ও বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি আরিফ হোসেন ছোটন মেলায় উপস্থিত থাকবেন এবং লেখক-পাঠকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে অংশ নেবেন। তাঁরা ইতিমধ্যে নিউইয়র্ক এসে পৌঁছেছেন।
প্রতিবছরের মতো এবারও বাংলা সাহিত্যে সার্বিক অবদানের জন্য একজন লেখক পুরস্কৃত হবেন। এই পুরস্কারের নতুন নামকরণ হয়েছে মুক্তধারা-জি এফ বি সাহিত্য পুরস্কার, যার মূল্যমান ২ হাজার ৫০০ ডলার। এ ছাড়া মুক্তধারা-কথা প্রকাশ চিত্তরঞ্জন সাহা পুরস্কার নামে মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশকদের মধ্যে সেরা প্রকাশক পুরস্কার প্রদান করা হবে, যার মূল্যমান ৫০ হাজার টাকা।
বাংলাদেশের রেকর্ডসংখ্যক প্রকাশক দিচ্ছেন ২৭তম নিউইয়র্ক বইমেলায়। যোগ দিচ্ছেন বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক, বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশনা সমিতির সভাপতি ও সময় প্রকাশনের কর্ণধার ফরিদ আহমেদ, বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি আরিফ হোসেন ছোটন, বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশনা সমিতির নির্বাহী পরিচালক ও অনন্যা প্রকাশনার স্বত্বাধিকারী মনিরুল হক, আহমেদ, বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি পুথিনিলয়ের স্বত্বাধিকারী শ্যামল পাল, নিউ ইয়র্ক বইমেলা কর্তৃক ঘোষিত চিত্তরঞ্জন সাহা প্রকাশনা পুরস্কার-এর সহযোগী ও কথাপ্রকাশ এর স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, মাওলা ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী আহমেদ মাহমুদুল হক, কালি ও কলম সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক ও বেঙ্গল প্রকাশনের নির্বাহী আবুল হাসনাত, প্রথমা প্রকাশনের নির্বাহী জাফর আহমেদ রাশেদ।
আরো যোগ দিচ্ছেন বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশনা সমিতির পরিচালক ধ্রুবপদের স্বত্বাধিকারী এম ডি আবুল বাশার ফিরোজ শেখ, বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশনা সমিতির পরিচালক ও তাম্রলিপি প্রকাশনার স্বত্বাধিকারী এ কে এম তরিকুল ইসলাম রনি, গতিধারা প্রকাশনার স্বত্বাধিকারী এমডি আবুল বাশার শিকদার, বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির প্রাক্তণ সভাপতি ও আকাশ প্রকাশনার স্বত্বাধিকারী আলমগীর শিকদার লোটন, ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ পরিচালক জহিরুল আবেদীন জুয়েল, নালন্দা প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ রেদওয়ানুর রহমান জুয়েল , থিয়েটার, বাবুল বিশ্বাস, গণ প্রকাশন-মাহমুদুর হাসান মানিক ও আলপনার রান্নাঘর-এর আলপনা হাবিব।
উত্তর আমেরিকা থেকে যেসব বই বিক্রেতা ও প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান রেজিস্ট্রেশন করেছে তাদের মধ্যে রয়েছে মুক্তধারা নিউইয়র্ক, ঘুংঘুর, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন নিউ ইয়র্ক, ইসলাম ইন্টারন্যাশনাল পাবলিকেশন্স,গ্লোবাল বাংলা মিশন, সৃজনকাল ও বাংলা গবেষণা, পঞ্চায়েত প্রকাশনী, লুৎফুর রহমান বিনু ও ঊনবাংলা ।
এবছরই প্রথমবারের মত ২৭তম বইমেলায় ২৮টি বইয়ের স্টল হচ্ছে নিউ ইয়র্ক বইমেলায়। ইতিপূর্বে কখনো এত বইয়ের স্টল হয়নি। বইয়ের স্টল ছাড়াও বাংলাদেশের শুকনো খাদ্য সংস্থা বেঙ্গল বিস্টিুটস লিমিটেড, কলকাতা থেকে তিয়ারা বুটিক, ক্লাসিক বুটিক, ফ্লোরিডা থেকে লিয়া শাড়ী, নিউইয়ক থেকে বিভা বুটিক, সায়ীদা কালেকশন্স, পিয়াল কালেকশন্স অংশগ্রহণ করছে। থাকছে রকমারী খাবারের স্টল।
তিন দিনের অনুষ্ঠানমালার অন্যতম আকর্ষণ হলো শহীদ জননী জাহানারা ইমামের স্মরণে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘জননী’। ১৯৯২ সালে জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ঢাকায় একাত্তরের ঘাতক-দালালদের বিচারের দাবিতে যে গণ-আদালত বসে, তাতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের আইনজীবী টমাস কিটিং। এই মেলায় কিটিংকে তাঁর সাহসী ভূমিকার জন্য বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হবে।
মেলার অন্যান্য অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের সঙ্গে আলাপচারিতা, ‘লেখক বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক আলোচনা ও ডায়াসপোরা সাহিত্য নিয়ে মতবিনিময়। প্রয়াত কবি রফিক আজাদ ও সৈয়দ শামসুল হকের স্মৃতির উদ্দেশে থাকবে শ্রদ্ধাঞ্জলি। এতে অংশ নেবেন কবিপত্নী দিলারা হাফিজ ও আনোয়ারা সৈয়দ হক।
প্রতিবছরের মতো এবারেও থাকবে প্রবাসী শিল্পীদের গান, কবিদের কবিতাপাঠ ও তাঁদের রচিত গ্রন্থের ওপর আলোচনা। উল্লেখ্য, এ বছর যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাঙালি লেখকদের দেড় শর মতো নানা স্বাদের বাংলা বই প্রকাশিত হয়েছে। এবছর মেলার মূল মিলনায়তনের নাম রাখা হয়েছে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম মিলনায়তন।
বইমেলার প্রাঙ্গণের নাম রাখা হয়েছে শওকত আলী প্রাঙ্গণ। সেমিনার কক্ষের নাম রাখা হয়েছে মুস্তাফা নূরউল ইসলাম কক্ষ। বইমেলার আহ্বায়ক ডঃ নূরন নবী জানিযেছেন বইমেলার অনুষ্ঠানের জন্য কোন প্রবেশমূল্য থাকবেনা এবং তিনি সকলকে যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। ম্যাগাজিন সম্পাদনা করেছেন আহমাদ মাযহার। প্রচ্ছদ এঁকেছেন কে সি মং। মঞ্চ সজ্বা করেছেন এটিএন বাংলার শিল্প নির্দেশক জসীম উদ্দীন।