সৌদি আরবে ‘অসহায়’ তাজুলদের কেউ নেই

  • জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সুখের আশায় সৌদি আরব গেলেও  সুখের দেখা পাননি তাজুল ইসলাম, ছবি: বার্তা২৪.কম

সুখের আশায় সৌদি আরব গেলেও সুখের দেখা পাননি তাজুল ইসলাম, ছবি: বার্তা২৪.কম

মদিনা মোনাওয়ারা (সৌদি আরব) থেকে: সুখের আশায় সৌদি আরব গেলেও বাংলাদেশে যাপিত জীবনের তুলনায় রীতিমতো নরক যন্ত্রণায় আছেন ঢাকার তাজুল ইসলাম (৪০)।

সাভারের মতো শহরে নিজের মুদি দোকান ছিলো। ভালোই চলছিলো সবকিছু। অধিক সুখ ও সচ্ছলতার আশায় সৌদি আরবে এসে রীতিমতো মরুভূমির মধ্যে পড়েছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

রিক্রুটিং এজেন্সির প্রতারণার ফেরারি হয়ে সৌদি আরবের পথে পথে ঘুরছেন তাজুল। প্রায় এক বছর ধরে সৌদি আরবে আছেন। কাজ পাননি, পাননি কাজের অনুমতিপত্র। যে কারণে ‘অবৈধ’ হয়ে এক রকম ফেরারি জীবন তাজুলের।

চাঁদপুরের মতলব থানার আবদুল হামিদ মিয়ার ছেলে তাজুল। পরিবারের সপ্তম সন্তান হিসেবে ভাইদের সঙ্গে বসবাস করেন সাভারের জামসিং মহল্লায়। স্ত্রী আর তের বছরের কন্যাকে নিয়ে সুখেই ছিলেন। ছিমছাম জীবনে বড় ভাই আবদুল হালিমের পরামর্শ এখন জীবনের জন্যে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে তার।

বিজ্ঞাপন

অধিক সচ্ছলতার আশায় বড় ভাইয়ের কথায় আত্নীয়-স্বজনের কাছ থেকে ধারদেনা করে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা তুলে দেন মহাখালীর রিয়াজ ট্রাভেলসকে। প্রতিশ্রুতি ছিলো, জেদ্দা এয়ারপোর্টে মালপত্র লোড-আনলোডের কাজ দেবে। বেতন ১৩শ’ রিয়াল। সঙ্গে বখশিশ তো রয়েছেই।

এমন আশ্বাসে গত বছরের ৩১ অক্টোবর অনেক আশা নিয়ে উড়াল দেন সৌদি আরবে।

সৌদি আসার পরের ঘটনা প্রসঙ্গে তাজুল বলেন, ‘প্রথম দুই মাস আমাকে একটি ভবনে রাখা হলো। তারপর নেওয়া হলো- দাম্মাম এয়ারপোর্টে। সেখানে ২২ দিন কাজ করিয়ে এক রিয়াল বেতনও দেয়নি। এর মধ্যে আকামা (কাজের অনুমতিপত্র) না পেয়ে অবৈধ হয়ে যাই। সেখান থেকে এক স্বজনের আশ্বাসে রিয়াদে হয়ে মদিনা যাওয়ার পথে ধরা পড়ি পুলিশের হাতে। দুই দিন জেল খাটার পর সেই স্বজন এক সিলেটি দালালের মাধ্যমে ২৫শ’ রিয়াল দিয়ে আমাকে মুক্ত করে এখানে নিয়ে আসেন। গত এক মাসে লুকিয়ে কাজ করে ২ হাজার ৫০ রিয়াল পেয়েছি। পুরোটাই তুলে দিয়েছি তার হাতে।’

কথা শেষ হয় না তাজুলের। কান্না বিজড়িত কণ্ঠে বলতে থাকেন, ‘এখানে কিন্তু আকামা ছাড়া এখানে কাজ করা সম্ভব না। রিক্রুটিং এজেন্সির মালিককে ফোন দিলে সে উল্টো হুমকি-ধমকি দেয়।’

গোটা সৌদিজুড়ে কর্মক্ষেত্রে চলছে বিশেষ সংস্কার কার্যক্রম। সর্বত্র সৌদিকরণের ফলে ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছে ভিনদেশিদের কাজের পরিধি। আয় কমছে, বাড়ছে ব্যয়। তার মধ্যে ৫ লাখ টাকা দিয়ে আসা তাজুল কিভাবে দেশে ফিরবেন? কিভাবে উঠবে তার অভিবাসন ব্যয়? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে তাজুলের সামনে ভেসে ওঠে ধূসর মরুভূমির ছবি!