গুজব রটিয়ে চরিত্রহনন শয়তানের কাজ

  • মাহফুজ আবেদ, অতিথি লেখক, ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

গুজব রটিয়ে চরিত্র হনন শয়তানের কাজ, ছবি: সংগৃহীত

গুজব রটিয়ে চরিত্র হনন শয়তানের কাজ, ছবি: সংগৃহীত

গুজব ও গুজবের ভয়াবহতা সম্পর্কে সবাই কমবেশি অবগত। স্বাভাবিক কথোপকথন থেকে শুরু করে বক্তব্য, লেখনি ও ছবির ইত্যাদি মাধ্যমে গুজব রটানো হয়। হালসময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো পরিণত হয়েছে গুজবের খনিতে, যে খনির শেষ নেই।

স্বার্থের দ্বন্দ্ব, ব্যক্তিগত আক্রোশ, রাজনৈতিক মতপার্থক্য ও চিন্তা-চেতনার বিরোধকে পুঁজি করে গুজব নানাবিধ ছাড়ানো হয়। ক্ষেত্রবিশেষ অশ্লীল ও নোংরা ছবি বা ভিডিও প্রচার করা হয়। গুজবের মূলভিত্তি মিথ্যা এবং মিথ্যা।

বিজ্ঞাপন

গুজব রটনাকারীদের নোংরা মানসিকতা ধর্ম ও সমাজের কেউ সমর্থন করে না। আইনের দৃষ্টিতেও গুজব অপরাধের কাজ। যাচাই-বাছাই না করে গুজব রটানোর কারণে অনেক নিরপরাধের জীবন ও ক্যারিয়ার নষ্ট হয়েছে। আবার অনেকে না জেনে অসত্য তথ্য প্রচার করে নিজের ব্যক্তিত্ব ও সম্মান খুইয়ে, নিজেকে চিহ্নিত করেছেন মিথ্যাবাদী হিসেবে। কারণ হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘সব শোনা কথা (যাচাই-বাছাই করা ছাড়া) বলা কোনো ব্যক্তির মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য যথেষ্ট।’ –সুনানে আবু দাউদ: ৪৯৯২

গুজব রটনাকারী পাপী ও মিথ্যাবাদী। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যে ব্যক্তি কোনো অপরাধ বা পাপ অর্জন করে, অতঃপর কোনো নির্দোষ ব্যক্তির ওপর তা আরোপ করে, তাহলে সে তো মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য গুনাহের বোঝা বহন করল।’ -সূরা নিসা: ১১২

বিজ্ঞাপন

কোনো খবর দেখলেই বা শুনলে তা যাচাই-বাছাই ছাড়া বিশ্বাস করা অনুচিত। কোরআনে কারিমে কোনো ধরনের ভুল তথ্য অনুসরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তার অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই কান, চোখ, অন্তর-এগুলোর প্রতিটি সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হবে।’ -সূরা বনি ইসরাঈল: ৩৬

কোরআনের কারিমের সূরা আহজাবের ৫৭ ও ৫৮ নম্বর আয়াতে প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আল্লাহ ও তার রাসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদের প্রতি ইহকালে ও পরকালে অভিশাপ দেন এবং তাদের জন্যে প্রস্তুত রেখেছেন অবমাননাকর শাস্তি।’ ‘যারা বিনা অপরাধে মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদের কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে।’

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইসলামি স্কলাররা বলেছেন, আল্লাহর বান্দাদের যে কোনো ধরনের যন্ত্রণা বা কষ্ট দেওয়া হলে তা আল্লাহকে কষ্ট দেওয়ার শামিল। ঠিক যেভাবে পবিত্র কোরআনে আল্লাহর বান্দাদের সাহায্য করা ও তাদের ধার দেওয়াকে আল্লাহর প্রতি ঋণ দেওয়া বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

সুতরাং প্রমাণ ছাড়া শুধু সন্দেহের বশে কারও সম্পর্কে কোনো অপবাদ দেওয়া যাবে না। গুজব ছড়ানো যাবে না। অপবাদ দেওয়া অনেক বড় গুনাহের কাজ। বস্তুত গুজব রটিয়ে ও অপবাদ আরোপ করে ধর্মীয় নেতাদের চরিত্র হনন করা ইসলামের শত্রুদের একটি পুরনো কূটকৌশল। এ ব্যাপারে মুসলমানদের সতর্ক থাকতে হবে। কারো প্রসঙ্গে মিথ্যা, অপবাদ, গুজব ও কষ্টদায়ক কথাবার্তা বলা থেকে বিরত থাকতে হবে। কথা বলার সময় সাবধান হতে হবে। যে বক্তব্যের সত্যতা জানা নেই, সে সম্পর্কে কথা বলা যাবে না। প্রচার করা যাবে না।

মানুষ যদি ইসলামের এই শিক্ষা- জীবনের পরতে পরতে পালন করে, তবে সামাজিক অনেক সমস্যার সমাধান এমনিতেই হয়ে যাবে। সব সময় সংশয়, সন্দেহ ও ভুল ধারণাবশত কথা বলা থেকে বিরত থাকতে হবে। কোনো অবস্থাতেই মিথ্যা প্রচার করা যাবে না। গুজবে কান দেওয়া চলবে না।