জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা শায়খ মনসুরুল হাসান রায়পুরী রহমাতুল্লাহি আলাইহির দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
শনিবার (২৩ নভেম্বর) দুপুর ২টায় মৌলভীবাজার জেলার কনকপুরে নিজ বাড়ি সংলগ্ন মসজিদে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার বাবার কবরের পাশে দাফন করা হয়।
এর আগে জোহরের নামাজের পর মাওলানা রায়পুরীর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ইমামতি করেন মরহুমের দ্বিতীয় ছেলে মাওলানা সালেহ আহমদ সোহাইল। জানাজায় বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
জানাজায় উপস্থিত ছিলেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা ড. গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, জামেয়া রেঙা সিলেটের মুহতামিম মাওলানা মুহিউল ইসলাম বোরহান, কাতিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম হাফেজ মাওলানা এমদাদুল্লাহ, খতিব উবায়দুল হক (রহ.)-এর ছেলে মাওলানা আতাউল হক জালালাবাদী ও মাওলানা শহীদুল হক জালালাবাদী, গহরপুর মাদ্রাসার মুহতামিম ও বেফাক সহ-সভাপতি মাওলানা মোসলেহ উদ্দিন রাজু, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যুগ্ম-মহাসচিব ওয়ালী উল্লাহ আরমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি জাকির হোসাইন খান, নতুনবাগ মাদরাসার নায়েবে মুহতামিম মাওলানা নাসিরউদ্দিন ও মুঈনে মুহতামিম মুফতি মাহবুব আলম, খেলাফত মজলিস নেতা মাওলানা আহমদ বেলাল, কেন্দ্রীয় জমিয়ত নেতা প্রিন্সিপাল ড. সৈয়দ রেজোয়ান আহমদ, মাওলানা আবুল কাসেম ইসলামাবাদী, কেন্দ্রীয় জমিয়তের প্রচার সম্পাদক সৈয়দ তালহা আলম, সিলেট মহানগর সভাপতি মাওলানা খলিলুর রহমান, ঢাকা মহানগর সেক্রেটারি মুফতি আতাউর রহমান খান, মুফতি আবু সাঈদ, সুনামগঞ্জ জেলা সেক্রেটারি হাফেজ রশিদ আহমদ, কুমিল্লা জেলা সেক্রেটারি মাওলানা খলিলুর রহমান, সিলেট মহানগর সদস্যসচিব মাওলানা আবু বকর সরকার, যুব জমিয়ত সেক্রেটারি মুফতি সোহাইল আহমদ, হাফেজ শাব্বির আহমদ রাজী, সাবেক ছাত্র জমিয়ত সভাপতি মুফতি নিজামুদ্দীন আল আদনান, ছাত্র জমিয়ত সভাপতি খালেদ মাহমুদ ও সেক্রেটারি ফেরদৌস রুম্মান, মুফতি রেদওয়ানুল বারি সিরাজী, মুফতি মুশতাক আহমদ ফোরকানী, মাওলানা এরশাদ খান আল হাবিব, সিলেট মহানগর ছাত্র জমিয়ত সভাপতি দেলোয়ার হোসাইন ইমরান, মাওলানা উসামা প্রমুখ।
এর আগে শুক্রবার (২২ নভেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে ১১টায় ইন্তেকাল করেন মাওলানা শায়খ মনসুরুল হাসান রায়পুরী। তার মৃত্যুতে আলেমসমাজে শোকের ছায়া নেমে আসে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।
মাওলানা শায়খ মনসুরুল হাসান রায়পুরী মৃত্যুর আগে প্রায় মাসখানেক ধরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার পিতা শায়েখ হাবিবুর রহমান রায়পুরী (রহ.) ছিলেন ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়ক শায়খুল ইসলাম সাইয়্যেদ হোসাইন আহমদ মাদানি (রহ.)-এর ঘনিষ্ঠ শিষ্য ও খলিফা।
মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরী জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সাবেক খতিব মাওলানা উবায়দুল হক (রহ.)-এর বড় জামাতা। মৃত্যুকালে তিনি চার ছেলে ও চার মেয়ে রেখে গেছেন।
অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ হিসেবে ছয় দশকের বর্ণাঢ্য অতীতের পাশাপাশি তিনি একজন বিদগ্ধ আলেম ও মুহাদ্দিস ছিলেন। তিনি ঢাকার নতুনবাগ মাদরাসার শায়খুল হাদীস ছিলেন। আমৃত্যু সিলেট কারাগার জামে মসজিদের খতিবের দায়িত্ব পালন করেছেন।
মাওলানা শায়খ মনসুরুল হাসান রায়পুরী ছাত্রজীবন থেকেই জমিয়তের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ সিলেট জেলা ও মহানগরীর সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বপালন করেন। পরবর্তীতে তিনি জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের নির্বাহী সভাপতি নির্বাচিত হন। সর্বশেষ জমিয়তের কাউন্সিলে তিনি জমিয়তের সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি সাবেক ধর্মপ্রতিমন্ত্রী, সংসদের চীফ হুইপ ও এমপি আল্লামা মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাস (রহ.)-এর দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহযোদ্ধা ছিলেন।
সিলেটের আন্দোলন-সংগ্রামে মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরীর অনন্য অবদান রয়েছে। শায়খুল হাদিস আল্লামা মনসুরুল হাসান রায়পুরীর ইন্তেকালে গভীর শোক ও সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। এছাড়া শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আরও শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান, খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদেরসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ।
মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরী ১৯৫৪ সালে মৌলভীবাজার জেলার রায়পুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সিলেটের গলমুকাপন মাদরাসা থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসায় উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা করেন। ১৯৬৭ সালে জামিয়া ইসলামিয়া হোসাইনিয়া গহরপুরে ভর্তি হয়ে ১৯৭১ সালে দাওরায়ে হাদিস পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। অতঃপর ময়মনসিংহের বালিয়া মাদরাসায় ভর্তি হয়ে মাত্র ৫ মাসে পবিত্র কোরআন হেফজ করেন।
১৯৭৪ সালে স্বীয় উস্তাদ আল্লামা নূর উদ্দীন আহমদ গহরপুরী (রহ.)-এর নির্দেশনায় নেত্রকোনা জেলার কলমাসিন্দুর টাইটেল মাদরাসায় মুহাদ্দিস হিসেবে নিয়োজিত হন। ১৯৭৬ সালে শরীয়তপুর জেলার শরীয়তিয়া আলিয়া মাদরাসার মুহাদ্দিস পদে যোগ দেন। ১৯৭৮ সালে সিলেট নগরীর মদীনাতুল উলুম দারুসসালাম মাদরাসায় চলে আসেন। ৫ বছর হাদিসের খেদমত আঞ্জাম দেন। এছাড়া জামিয়া মাদানিয়া খেলাফত বিল্ডিং সিলেট, জামিয়া হোসাইনিয়া দক্ষিণকাছ সিলেট, জামিয়া ইসলামিয়া কওমিয়া মুন্সীবাজার মৌলভীবাজার সিলেটের শায়খুল হাদিস ছিলেন। ইন্তেকালের আগ পর্যন্ত তিনি রাজধানীর ঢাকা খিলগাঁওয়ে অবস্থিত জামিয়া আরাবিয়া দারুল উলুম নতুনবাগের শায়খুল হাদিস ছিলেন।