মসজিদ আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় জায়গা

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বরিশাল গুটিয়া মসজিদ, এশিয়ার অন্যতম মসজিদ। ছবি: সংগৃহীত

বরিশাল গুটিয়া মসজিদ, এশিয়ার অন্যতম মসজিদ। ছবি: সংগৃহীত

পৃথিবীতে জায়গার কোনো অভাব নেই। এসব জায়গায় আল্লাহতায়ালার জিকির করা যায়, ইবাদত-বন্দেগি পালন করা যায়। কিন্তু এসব জায়গার মধ্যে মসজিদ এক অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। মসজিদকে আল্লাহতায়ালার ঘর বলা হয়। এখানে আল্লাহতায়ালার জিকির করা যায়, জিকির পরিপন্থী কোনো কিছু জায়েজ নয়। এগুলো মসজিদ নির্মাণের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য পরিপন্থী।

মসজিদ আল্লাহতায়ালার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা এবং দিনরাত তার রহমত নাজিলের ক্ষেত্র। হাদিসে এ বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহতায়ালার কাছে সবচেয়ে পছন্দনীয় স্থান মসজিদ আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট স্থান বাজার।’ -সহিহ মুসলিম: ৬৭১

বিজ্ঞাপন

উপরোক্ত হাদিসের আলোকে বুঝা যায়, মসজিদের সঙ্গে মুমিন-মুসলমানের কেমন সম্পর্ক থাকা উচিত এবং সেটা তার জন্য কী পরিমাণ উপকারী ও কল্যাণকর। বস্তুত মসজিদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন আত্মিক প্রশান্তি লাভ, আল্লাহতায়ালার নৈকট্য অর্জন ও ঈমান-আমল উন্নত করার এক পবিত্র ও বরকতময় উপায়। সুতরাং প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য হলো- মসজিদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা এবং একে জ্ঞান ও আলো, হেদায়েত ও সফলতার কেন্দ্র মনে করা। মসজিদের সঙ্গে সম্পর্কের অনেক দিক রয়েছে। এসব দিকের অন্যতম হলো-

মসজিদের স্বরূপ উপলব্ধি
মসজিদের সঙ্গে যাবতীয় সম্পর্ক নির্ভর করে বিশ্বাসের ওপর। এটা যত গভীর ও আলোকিত হবে, সম্পর্ক তত দৃঢ় ও সুন্দর হবে। এটা ঈমানের অংশও বটে।

বিজ্ঞাপন

মসজিদের সার্বিক কল্যাণ কামনা
মসজিদের সার্বিক কল্যাণ কামনার অর্থ, প্রতিটি গ্রামে মসজিদ প্রতিষ্ঠা হোক। এসব মসজিদ সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরিচালিত হোক, মসজিদগুলো মুসল্লি ও জিকিরকারী দ্বারা পরিপূর্ণ হোক এবং এর মাধ্যমে সবখানে হেদায়েতের আলো ছড়িয়ে পড়ুক- এ প্রত্যাশা করা। পক্ষান্তরে মসজিদের কোনোরূপ অকল্যাণ কামনা, এর প্রতি চরম বেয়াদবি ও কুফরের পরিচায়ক।

মসজিদের সঙ্গে অন্তরের সম্পর্ক
কর্ম অবলম্বন শুধু মানবিক প্রয়োজন নয়, হালাল পন্থায় হালাল কর্ম অবলম্বন ইসলামের এক ফরজ বিধান। এই কর্মব্যস্ততার মধ্যেও যদি মসজিদের সঙ্গে অন্তরের সম্পৃক্ততা থাকে, তবে তা অত্যন্ত মর্যাদার বিষয়।

হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, সাত শ্রেণির মানুষকে আল্লাহ তার (আরশের) ছায়াতলে আশ্রয় দেবেন, যেদিন তার (আরশের) ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না। ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ। ওই যুবক, যে তার প্রতিপালকের ইবাদতে লালিত-পালিত হয়। ওই ব্যক্তি, যার অন্তর মসজিদের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে (এখান থেকে বেরুবার পর থেকে আবার ফেরা পর্যন্ত)...। –সহিহ বোখারি: ৬৬০

মসজিদের সঙ্গে অন্তর সম্পৃক্ত থাকার অর্থ, সে নামাজের সময়ের ব্যাপারে সতর্ক থাকে। সময়মতো মসজিদে গমন করে। নামাজের পর যখন মসজিদ থেকে বের হয় পরবর্তী নামাজের প্রতীক্ষায় থাকে। ফলে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজই সে স্বচ্ছন্দে মসজিদে গিয়ে জামাতের সঙ্গে আদায় করতে সক্ষম হয়।

মসজিদে যেয়ে জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায়
নামাজ শুধু একটি ফরজ বিধান নয়, ঈমানের নিদর্শন। হাদিসে এসেছে, ‘একা নামাজের চেয়ে জামাতের নামাজের মর্যাদা সাতাশ গুণ বেশি।’ –সহিহ বোখারি: ৬৪৫

অন্য এক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে সবচেয়ে দূর থেকে (মসজিদে) আসে তার নামাজের সওয়াব সবচেয়ে বেশি। তারপর যে তার চেয়ে কম দূর থেকে আসে। আর যে ইমামের সঙ্গে নামাজ আদায়ের জন্য অপেক্ষা করে, সে ওই ব্যক্তি অপেক্ষা বেশি সওয়াব লাভ করবে যে নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে যায়।’ –সহিহ বোখারি: ৬৪৫

এ থেকে বোঝা যায়, মসজিদ দূরে হলেও সেখানে যেয়ে নামাজ আদায় করতে হবে এবং দূরত্ব অনুযায়ী সওয়াবের পরিমাণ বেশি হবে।

দ্বীন শেখার মজলিসের আয়োজন করা
মসজিদ শুধু নামাজ আদায় নয়, কোরআন-হাদিস, মাসয়ালা-মাসাইল ও ইসলামি শিক্ষা শেখা- শেখানোর জায়গা। সুতরাং সবার কর্তব্য মসজিদে এসব শিক্ষার ব্যবস্থা করা এবং তাতে নিয়মিত উপস্থিতির চেষ্টা করা এবং এসব মজলিসে মানুষকে উপস্থিতি করা।

বস্তুত প্রকৃত মসজিদ আবাদ কেবল বাহ্যিক কারুকার্যে নয়, বরং ক্রমাগত মুসল্লির সংখ্যাবৃদ্ধি, তাদের মধ্যে তাকওয়া ও খোদাভীতি সঞ্চার এবং সর্বত্র হেদায়েতের আলো ছড়ানোর ব্যবস্থা করা। সুতরাং মসজিদের নির্মাণ ও উন্নয়নে যেমন চেষ্টা করা কর্তব্য তেমনি মানুষকে মসজিদমুখী করার ব্যাপারেও ঐকান্তিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা জরুরি।

পক্ষান্তরে মানুষকে মসজিদবিমুখ করা কিংবা তাতে আসতে কিংবা জিকির-আজকার ও ইবাদত-বন্দেগি করতে বাধা দেওয়া খুবই অন্যায় এবং জঘন্য ধৃষ্টতা। এ প্রসঙ্গে কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সেই ব্যক্তির চেয়ে বড় জালেম আর কে আছে, যে আল্লাহর মসজিদসমূহে তার নাম নিতে বাধা দেয় এবং একে বিরান করার চেষ্টা করে? অথচ এরূপ লোকদের জন্য তো সংগতই ছিল না যে, ভীত-বিহ্বল না হয়ে তাতে প্রবেশ করে। এরূপ লোকদের জন্য দুনিয়ায় রয়েছে লাঞ্ছনা আর তাদের জন্য আখিরাতে রয়েছে মহা শাস্তি।’ -সূরা বাকারা: ১১৪

মসজিদে ইবাদত-বন্দেগি, জিকির-আজকার ও নামায থেকে বাধা দেওয়ার যেকোনো পন্থাই নাজায়েজ। তার মধ্যে একটি পন্থা হচ্ছে মসজিদে যেতে নিষেধ করা। মসজিদে হট্টগোল বা আশেপাশে গান-বাজনা করা। এমনকি ফরজ নামাজের সময় উচ্চস্বরে, জিকির, তাসবিহ কিংবা কোরআন তেলাওয়াত করা। তবে মসজিদে যখন মুসল্লি না থাকে তখন উচ্চস্বরে জিকির বা কোরআন তেলাওয়াত করতে কোনো অসুবিধা নেই।