জার্মানিতে রমজানের ছোঁয়ায় উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়
স্টুটগার্ট (জার্মানি) থেকে: পবিত্র রমজান মাস বিশ্বমুসলিম উম্মাহর সিয়াম সাধনার কাল। এই মাসে পরম করুণাময় রাব্বুল আলামিন তার রহমতের দ্বার খুলে দেন বান্দাদের প্রতি।
বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায় তাদের আমলের পাল্লা ভারি করতে রমজান মাসে নামাজ-রোজার পাশাপাশি, জাকাত, ফিতরা, দান-খয়রাত ইত্যাদি ভালো ভালো কাজে নিজেদের নিয়োজিত রাখেন। আল্লাহ পাকের রহমত লাভের আশায় মশগুল থাকেন ইবাদত-বন্দেগিতে।
বছরের অন্য মাসগুলোর তুলনায় রমজান মাসে মুসলমানরা আল্লাহর আনুগত্য প্রকাশে নিজেকে ব্যস্ত রাখেন। ইউরোপের উন্নত দেশ জার্মানিতেও মুসলমানদের মধ্যে রমজানের ছোঁয়া পরিলক্ষিত হয় বিশেষভাবে।
জার্মানিতে তার্কিশরা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রবাসী। জার্মানির বিভিন্ন শহরের অনেক জায়গায় তার্কিশরা বহু মসজিদ নির্মাণ করেছেন। পবিত্র রমজান মাসে তাদের প্রতিটি মসজিদে ইফতার এবং তারাবির নামাজ বেশ উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন হয়। তাদের বেশিরভাগ মসজিদে নারীদের জন্য নামাজের এবং ইফতারের ব্যবস্থা থাকে।
জার্মানির ইফতারের আয়োজনও বিশাল। প্রতিটি পরিবার থেকেই প্রচুর ইফতারির আয়োজন করা হয় মসজিদে। বেশ উৎসবের আমেজে পরিপূর্ণ ধর্মীয় পরিবেশে নারী, পুরুষ, শিশুসহ সবাই ইফতার অনুষ্ঠানে শরিক হয়।
জার্মানিতে বাংলাদেশিদের সংখ্যা তার্কিশদের মতো খুব বেশি না, সংখ্যায় খুব কম। আমার বাস জার্মানির স্টুটগার্ট শহরে। স্টুটগার্ট মেইন শহরে চল্লিশটির মতো বাঙালি পরিবার বসবাস করেন। তাদের বেশিরভাগই মুসলিম। সবচেয়ে খুশির কথা হলো, স্টুটগার্টে বাঙালিদের পরিচালনায় দু’টো মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। দু’টো মসজিদের উদ্যোক্তা হাজি মো. নিজাম উদ্দীন। বর্তমানে তিনি একটির তত্বাবধানে আছেন। সেটি স্টুটগার্টের ফাইহিংগেনে (Stuttgart-Vaihingen) অবস্থিত। হাজি মো. নিজাম উদ্দীন ফাইহিংগেন মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে।
হাজি নিজাম উদ্দীনের জন্ম বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলায়। তিনি ১৯৭৯ সাল থেকে জার্মানিতে বসবাস করছেন। তিনি একজন সরকারি কর্মকর্তা, রোড এ্যান্ড হাইওয়ে ডিপার্টমেন্টে কর্মরত আছেন। চাকুরির পাশাপাশি ফাইহিংগেন মসজিদের উন্নয়নে সার্বক্ষণিক দেখাশোনার কাজে নিয়োজিত থাকেন। মসজিদের উন্নয়ন, দেখাশোনা এবং বিভিন্ন দেশের মুসল্লিদের খেদমতে তিনি পরম আত্মতৃপ্তি খুঁজে পান।
নিজাম ভাইকে এই মসজিদ উন্নয়নের কাজে বাংলাদেশ কমিউনিটির তারিকুল ইসলাম, নাসিম খান, মো. নবী, মনজুর আহমেদ, মো. আ. বাতেন ও মাহবুবুল আলম প্রমুখ সহযোগিতা করে থাকেন।
এই মসজিদে বাঙালিদের পাশাপাশি আফ্রিকান, বসনিয়ান, আলবেনিয়ান, রশিয়ান, পাকিস্তানি এবং আরবের বিভিন্ন দেশের মুসল্লিরা নামাজ আদায় করেন এবং মসজিদ উন্নয়নের কাজে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। নিজাম উদ্দীন ভাইয়ের সঙ্গে এসব দেশের মুসল্লিদের খুবই বন্ধুত্ব এবং আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক।
তার্কিশদের মসজিদে বিভিন্ন দেশের মুসল্লিদের এমন মিলনমেলা দেখা যায় না। বেশিরভাগ নামাজিই তাদের নিজের দেশের মানুষ। কিন্তু বাংলাদেশিদের মসজিদে নানা দেশের মুসলমানের সমাবেশ ঘটে। বর্তমানে এই মসজিদে ইমামতি করছেন মো. আবদুর রাজ্জাক। তিনি পাবনা জেলার অধিবাসি।
রমজান মাসে ফাইহিংগেন মসজিদে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক মুসল্লি নামাজ আদায় ও ইফতারে শরিক হন। গত জুম্মাবার যেন মসজিদে মুসল্লিদের ঢল নেমেছিলো। তিল ধারনের জায়গা ছিলো না। প্রতিটি বাঙালি পরিবার থেকে এবং মো. নিজাম উদ্দীন ভাইয়ের আয়োজনে পর্যাপ্ত পরিমাণে ইফতারের ব্যবস্থা করা হয় প্রতিদিন। মসজিদে ইফতার, সাহরি পাঠিয়ে মুসল্লিদের সেবাদানে স্টুটগার্টের প্রতিটি বাঙালি পরিবার ভীষণ তৎপর।
এভাবেই রমজানের প্রতিটি দিন পরম উৎসবমুখর পরিবেশে কাটিয়ে ঈদের আনন্দঘন পরিবেশের মাধ্যমে তার সমাপ্তি ঘটবে। পবিত্র রমজান মাস হতে সিয়াম সাধনা এবং ভালো কাজের দীক্ষা গ্রহণ করে পরবর্তী সময়ে তা মেনে ও পালন করতে পারলেই রমজানের সার্থকতা ও করুণাময় আল্লাহর রহমত লাভ সম্ভব। সেই সঙ্গে সম্ভব প্রবাসের প্রতিকূল পরিবেশে ধর্ম, সংস্কৃতি, ভাষা ও ঐতিহ্য ধরে রাখার প্রেরণা। যার মূলে রয়েছে রমজানের ভ্রাতৃত্বপূর্ণ চেতনা।