ঈদের চাঁদের অপেক্ষায়
আজ সন্ধ্যায় বাংলাদেশের পশ্চিমাকাশে নতুন চাঁদ দেখা গেলে কাল শনিবার (১৬ জুন) ঈদ উদযাপিত হবে। আর চাঁদ দেখা না গেলে রোববার (১৭ জুন) পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর রোজাদারের জন্য পবিত্র ঈদুল ফিতর এক মহা আনন্দের দিন।
পবিত্র ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখার জন্য সন্ধ্যায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
পশ্চিম আকাশে পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার সঙ্গে সঙ্গে রোজাদার-অরোজাদার সবার মাঝে বইতে শুরু করবে আনন্দের বন্যা। শুধু রাতটা পোহালেই শুরু হবে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশে মুসলমানদের মিলনের বন্ধন। একে অন্যের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করতে থাকবে। কোলাকুলি আর ফিরনি সেমাই খাওয়ার ধুম থেকে বাদ যাবে না কেউই। পুরো বাংলাদেশ আনন্দের আলোয় ঝলমল করতে থাকবে। ইতোমধ্যে সবাই ঈদের সকল প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করেছেন। প্রত্যেকেই জামাকাপড়সহ পছন্দের জিনিসপত্র ক্রয় করেছেন। বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে বিভিন্ন উপহারসামগ্রী বিতরণ করছেন। ফেসবুক ও টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঈদের শুভেচ্ছা জানানো হচ্ছে।
পবিত্র ঈদ মুসলমানদের মাঝে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সুদৃঢ় করে এবং সম্প্রীতি বৃদ্ধি করে। বিশ্ব মুসলিম একই আত্মার বন্ধনে আবদ্ধ এ কথা স্মরণ করিয়ে দেয় পবিত্র ঈদ। ধনী-গরিব ভেদাভেদ ভুলিয়ে দিয়ে সবাইকে এক কাতারে শামিল করে পবিত্র ঈদ। হিংসা বিদ্বেষ ও অজঙ্কারসহ সকল অন্যায় ও পাপাচার মুছে দিয়ে নতুন করে সুখি ও পবিত্র জীবন শুরুর তাগিদ দেয় পবিত্র ঈদ।
ঈদের দিন আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবাই আনন্দে মেতে ওঠে। একেকজন একেকভাবে আনন্দ উপভোগ করে থাকেন। বিশেষ করে ছোট ও তরুণ-তরুণীদের আনন্দ উপভোগটা সবার নজরে কাড়ে।
চাঁদ দেখে রোজা শুরু ও সমাপ্তির নির্দেশনা ইসলাম দিয়েছে। এ ব্যাপারে হাদিস শরিফে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ রয়েছে। হজরত আবদুল্লাহ বিন ওমর রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রমজানের চাঁদ দেখা না যাওয়া পর্যন্ত তোমরা রোজা রেখো না। আর শাওয়ালের চাঁদ না দেখা পর্যন্ত তোমরা ইফতার করো না। আকাশ মেঘলা থাকার দরুণ চাঁদ তোমাদের দৃষ্টিগোচর না হলে রমজানের দিনগুলো পূর্ণ করে নেবে। -সহিহ বোখারি ও মুসলিম
চাঁদ দেখা প্রসঙ্গে ইমামদের বক্তব্য হচ্ছে, শাওয়ালের চাঁদ দেখা প্রমাণিত হওয়ার জন্য কমপক্ষে দু’জন বিশ্বস্ত লোকের স্বাক্ষ্য অপরিহার্য। আর মেঘমুক্ত বা পরিষ্কার আকাশ থাকলে অনেক লোকের চাঁদ দেখা শর্ত। তবে মাসের ৩০ দিন পূর্ণ হয়ে গেলে চাঁদ দেখার প্রয়োজন নেই।
ঈদ শব্দের সরল অর্থ আনন্দ। আর আল্লাহর পক্ষ থেকে ঈদ হচ্ছে বান্দার জন্য বিরাট আতিথেয়তা। তাই তিনি ঈদের দিন রোজা পালনকে হারাম করে দিয়েছেন। ফিতর মানে রোজা ভাঙা। ইফতার শব্দও ফিতর থেকে এসেছে। ঈদুল ফিতর মানে রোজা ভাঙার ঈদ। অন্য এক মত অনুযায়ী ফিতর ফিতরাত শব্দ থেকে এসেছে। এর অর্থ স্বভাব প্রকৃতি। রমজানের দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনায় কষ্ট ও ক্লান্তির পর স্বাভাবিকভাবেই সুখ ভোগের বিষয়টি এসে যায়। ঈদুল ফিতর রোজাদারদের সেই স্বভাবসমেত সুখ উপহার দেয়।
ঈদের রাতে ইবাদত-বন্দেগি করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে হজরত উবাদা বিন সামেত রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দু’রাত সজাগ থাকে। যে দিন সকল অন্তর মরে যাবে কিন্তু তার অন্তর মরবে না। তাবরানি
ঈদের দিন ভোরে ঈদের নামাজের আগে ফিতরা আদায় করতে হবে। তারপর ঈদের নামাজ আদায় করতে হবে। ঈদের নামাজ মাঠে আদায় করা উত্তম, সম্ভব হলে পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া উত্তম। ভিন্ন পথে ঈদগাহে যাতায়াত ও ভোরে উঠে খেজুর বা মিষ্টি কিছু খাওয়া হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত।
ঈদের দিন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাপড় পরিধান করা উত্তম। নতুন পোশাক পরিধান করায় কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এটিকে প্রাধান্য দেওয়া ভ্রান্ত ও অমূলক ধারণা।
ঈদের আনন্দ সর্বব্যাপী সবার জন্য এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ থাকার অবকাশ নেই। তবুও ঈদুল ফিতরের আসল উদ্দেশ্য ও তাৎপর্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এ ঈদ প্রকৃত সিয়াম পালনকারীদের জন্য। যারা রমজান মাসব্যাপী সুবহে সাদেক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার ও স্ত্রী সম্ভোগ থেকে নিবৃত থাকেন তারাই কেবল তাকওয়ার গুণাবলী অর্জনে সক্ষমতা লাভ করেন এবং তাদের জন্যই ঈদ নিয়ে আসে দুনিয়া ও আখেরাতের সওগাত।
তার পরও আমরা কামনা করি, ঈদের আনন্দ হোক প্রতিদিনের আনন্দ। সবার ঘরে, সবার মুখে ঈদের হাসিটুকু স্থায়িত্ব পাক। সবাইকে ঈদ মোবারক।