‘নিশ্চয়ই খোদাভীরুরা থাকবে জান্নাতে’
কোরআনে কারিমে ৫২ নম্বর সূরার নাম- সূরা তুর। সূরা তুরের ১৭ নম্বর আয়াতে ও এর পরের কয়েকটি আয়াতে খোদাভীরুদের জন্য নির্ধারিত অশেষ পুরস্কারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই খোদাভীরুরা থাকবে জান্নাতে ও নেয়ামতে। তারা উপভোগ করবে যা তাদের পালনকর্তা তাদের দেবেন এবং তিনি জাহান্নামের আজাব থেকে তাদেরকে রক্ষা করবেন।’
বেহেশতবাসীরা আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে নানা নেয়ামত পেয়ে খুশি হবেন এবং তারা এ প্রসঙ্গে আনন্দজ্ঞাপক ও সুমিষ্ট নানা কথা বলবেন। সেখানে তাদের অন্তর সব ধরনের দুঃখ ও বেদনা থেকে মুক্ত হবে এবং তারা নজিরবিহীন প্রশান্তি অনুভব করবেন। বিশেষ করে আল্লাহতায়ালা তাদেরকে শাস্তিমুক্ত রাখার নিশ্চয়তা দেওয়ায় এবং তাদেরকে দোজখের শাস্তি থেকে মুক্ত রাখায় তারা অপার সুখ ও শান্তি অনুভব করবেন।
বেহেশতে তাদেরকে বলা হবে, ‘তোমরা যা করতে তার প্রতিফল হিসেবে তোমরা তৃপ্ত হয়ে পান ও আহার করো।’
ইসলামি স্কলারদের অভিমত হলো- বেহেশতের নানা ধরনের খাবার ও পানীয় দুনিয়ার খাবার ও পানীয়ের মতো নয়। বেহেশতের সুখের উপকরণ ও নেয়ামতগুলো শেষ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা নেই, এসবে অনাকাঙ্ক্ষিত নানা প্রতিক্রিয়ারও ভয় নেই। তাই এসব পুরোপুরি উপভোগ্য।
সূরা তুরের ২১ নম্বর আয়াতে বেহেশতের আরও কিছু নেয়ামতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা ঈমানদার এবং যাদের সন্তানরা ঈমানে তাদের অনুগামী, আমি তাদেরকে তাদের পিতৃপুরুষদের সঙ্গে মিলন ঘটিয়ে দেবো এবং তাদের নেক আমলের প্রতিদান বিন্দুমাত্রও হ্রাস করবো না। প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কৃতকর্মের জন্য দায়ী।’
ঈমানদার সন্তান ও প্রিয় বংশধরদেরকে বেহেশতে নিজের কাছে পাওয়া বিশেষ অনুগ্রহ। তাদের প্রতি ভাললোবাসার সুযোগ অত্যন্ত তৃপ্তিদায়ক। কিন্তু এর বিনিময়ে বেহেশতিদের কোনো নেয়ামত কমানো হবে না।
এক কথায়, বেহেশতবাসীদের অশেষ প্রশান্তি ও সুখের জন্য যা যা দরকার তার সব কিছুরই ব্যবস্থা করেছেন আল্লাহতায়ালা। আর এসব বিষয়ে কিছু বর্ণনার পর বেহেশতি ফল ও খাবার সম্পর্কে বক্তব্য এসেছে সূরা তুরের আয়াতে।
বেহেশতের এসব খাবারও চিরস্থায়ী। সূরা তুরের ২২ থেকে ২৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আমি তাদেরকে দেবো ফল-মূল এবং গোশত যা তারা চাইবে। সেখানে তারা একে অপরকে সূরাপূর্ণ পানপাত্র দেবে; যাতে অসার বকাবকি নেই এবং পাপও নেই। দেখতে সুরক্ষিত মোতির মতো কিশোররা তাদের সেবায় ঘুরাফেরা করবে। তারা একে অপরের দিকে মুখ করে এতোসব সাফল্যের কারণ সম্পর্কে প্রশ্ন করবে। তারা বলবে, আমরা ইতোপূর্বে দুনিয়ায় নিজেদের ঘরে পরিবারের মধ্যে আজকের দিনের শাস্তি সম্পর্কে ভীতকম্পিত ছিলাম। অতঃপর আল্লাহ আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন এবং আমাদেরকে আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা করেছেন। আমরা আগেও আল্লাহকে ডাকতাম। তিনি সৌজন্যশীল, পরম দয়ালু।’
কিছু অবিশ্বাসী মানুষ কোরআনকে নবীর রচিত বই বলে মনে করে। সূরা তুরের ৩৪ নম্বর আয়াতে অবিশ্বাসীদের এ দাবির প্রেক্ষিতে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘যদি তারা সত্যবাদী হয়ে থাকে, তবে এর অনুরূপ কোনো রচনা উপস্থিত করুক।’ অর্থাৎ এই কোরআন যদি কোনো মানুষের চিন্তাপ্রসূত ও মানুষের রচিত হয়ে থাকে তাহলে তারা এর অনুরূপ রচনা নিয়ে আসুক। কারণ মানুষের রচিত নানা রচনার সঙ্গে যদি কোরআনেরও মিল থেকে থাকে তাহলে তো মানুষও কোরআনের বাণীর অনুরূপ বাণী রচনা করতে পারবে। কিন্তু সবার কাছেই এটা স্পষ্ট যে, কোরআনের অপূর্ব ভাষাশৈলী, এর বিষয়বস্তু, নানা ভবিষ্যদ্বাণী, অতীতের অজানা অনেক ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা ও ইতিহাস এবং নানা অচিন্তনীয় ও অভিনব তথ্য- এসব প্রমাণ করে যে কোরআনে কারিম মহান আল্লাহর রচনা।
এই চ্যালেঞ্জ বিশেষ কোনো যুগের জন্য নয় বরং তা সব যুগের মানুষকে দেওয়া হয়েছে। আল্লাহর এই চ্যালেঞ্জের ইতিবাচক জবাব আজও কেউ দিতে পারেনি। যদিও কোরআন নাজিল হওয়ার পর ১৪টি শতক পার হয়ে গেছে।