কলকাতার চিকিৎসা ও ব্যতিক্রমী ডা. আর. হাসান



ড. মাহফুজ পারভেজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, বার্তা২৪.কম
কলকাতার ডা. আর. হাসান/ ছবি: বার্তা২৪.কম

কলকাতার ডা. আর. হাসান/ ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

‘কলকাতার চিকিৎসা ব্যবস্থা করপোরেট কোম্পানিগুলোর দখলে চলে গেছে। এখানে খরচ হয় অঢেল, চিকিৎসা হয় অল্প’ এমন অভিযোগ খোদ কলকাতাবাসীদের কাছ থেকেই শুনেছি। এমনও জেনেছি যে, আস্থাহীনতার কারণে কলকাতার লোকজনই চিকিৎসার জন্য দক্ষিণ ভারতের বেঙ্গালুরু, হায়দ্রাবাদে চলে যান।

তথাপি কলকাতায় চিকিৎসাপ্রার্থী লোকজনের কমতি নেই, যাদের অধিকাংশই বাংলাদেশ থেকে আগত। দক্ষিণ কলকাতার মুকুন্দপুরে একাধিক সুপার স্পেশাল, মাল্টি স্পেশাল তকমা লাগানো ক্লিনিক, হাসপাতালে মাছের বাজারের ভিড় দেখেছি। দালাল, ফড়িয়া, বিজ্ঞাপনের ভিড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বাংলাদেশ থেকে আগত উদভ্রান্ত মানুষ। অসংখ্য রোগী ও বিপন্ন পরিজন।

বাংলাদেশের ময়মনসিংহের ভালুকার গোলাম মুর্শেদ জানালেন, ‘অনলাইনে আগাম অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে এসেছিলেন তিনি। আসতেই আইসিইউতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তার রোগীকে। বিল দেওয়া হয়েছে ৭০ হাজার টাকার!’

কলকাতায় বাংলাদেশের মানুষকে ঘিরে বিরাট একটি দালাল ও মুনাফালোভী চক্র গড়ে উঠার তথ্য সর্বজনবিদিত। হাসপাতাল, হোটেল, গাড়ি ভাড়া থেকে শুরু করে সর্বত্র দালালের দাপট। বিশেষত যারা গ্রামের লোক ও খোঁজ-খবর কম জানেন, তাদের উপর সিন্দাবাদের দৈত্যের মতো হামলে পড়ে কলকাতার কুখ্যাত দালাল বাহিনি। গলা কেটে টাকা নেওয়ার পাশাপাশি, আর যেসব হয়, তার মধ্যে রয়েছে, এক ডাক্তারের নাম করে অন্য ডাক্তার দেখানো, মানহীন ল্যাবে কমিশনের ভিত্তিতে পরীক্ষার জন্য রোগী নিয়ে যাওয়া ইত্যাদি অন্যতম। খবর পেয়েছি, মৃতের নাকে নল লাগিয়ে তিন দিনের বিল নেওয়া হয়েছে। প্রকৃত বিশেষজ্ঞকে রেফার না করে রোগী ধরে রাখার ঘটনাও আছে।

এসব কারণে শুধু বাংলাদেশি নয়, কলকাতার লোকজনও সেখানকার চিকিৎসা ব্যবস্থার উপর চরম ক্ষুব্ধ। পত্র-পত্রিকাতেও জনক্ষোভের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাওয়া গেছে।
বিষয়টি নিয়ে একাধিক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপকের সঙ্গে কথা বলে যা জেনেছি, তা হলো, মানুষ করপোরেট কোম্পানির হাসপাতালের তকমা ও বিজ্ঞাপনে চমকে গিয়ে ভুল করে। অনেক হাসপাতালের স্থায়ী চিকিৎসক নেই। তিন দিন এখানে তো চার দিন আরেক জায়গায় চিকিৎসক ঘুরেন। সকালে থাকলে বিকেলে থাকেন না। ফলে রোগী দিনের পর দিন আটকে যান। স্থায়ী ও নিয়মিত চিকিৎসক খুব কম হাসপাতালেই রয়েছে।

চিকিৎসকের ফিসের ব্যাপারেও তারতম্য রয়েছে। মাল্টি হাসপাতালে হাজার টাকা এবং সঙ্গে রেজিস্ট্রেশন ফি দিয়ে অনেক টাকা গুনতে হয়। সাধারণভাবে এই চিকিৎসকের ফি ৫০০/৬০০ টাকার বেশি নয়। আবার তাকে সপ্তাহে এক দিন বা দুই দিন পাওয়া যাওয়ায় টেস্ট করিয়ে বসে থাকার খরচ আছে। আর আছে দেরি হওয়ায় দ্বিতীয়বারের ভিজিটের টাকা। নিয়মিত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে এমনটি হয় না। সাধারণ ক্লিনিক বা নার্সিং হোমে ভর্তি হলে যেখানে ১৫০০ টাকা লাগে, মাল্টি স্পেশালে লাগে ৩০০০ টাকা।

এমনতর অব্যবস্থার মধ্যেও ভালো চিকিৎসক রয়েছেন কলকাতায়, যাদের দক্ষতা ও মানবিকতা দৃষ্টান্ত স্বরূপ। ডা. আর. হাসান তেমনি একজন, যার পুরো নাম রফিকুল হাসান। ইন্টারনাল মেডিসিন বিষয়ে এমডি করা এই চিকিৎসককে বারবার মাল্টি স্পেশালে নেওয়ার চেষ্টা করা হলেও তিনি যান না। কারণ, ‘সেখানে গেলে তাদের নিয়ম ও আনুসাঙ্গিক খরচ মিলিয়ে ফি বাড়াতে হবে। সাধারণ মানুষ তাতে কষ্ট পাবেন। আমি ৭০০ টাকা ভিজিটেই সন্তুষ্ট’ বললেন তিনি।
https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Mar/04/1551707406830.jpg

উত্তর কলকাতার ভিআইপি রোডের চিনার পার্ক এনপিজি হোটেলের পেছনে নিজস্ব চেম্বারে দুপুরে বসেন তিনি। আর সন্ধ্যা থেকে রাত অব্ধি দমদম সেন্টাল জেল মাঠের সামনের চেম্বারে। ‘স্যার বেশি রোগি দেখতে চান না, তবু মাঝ রাতের আগে রোগির ভিড় শেষ হয় না’, জানালেন তার সেক্রেটারি মোবারক হোসেন মোল্লা। কমিশনে প্যাথোলজিতে রোগী পাঠান না তিনি। সনদপ্রাপ্ত ‘সুরক্ষা’ বা ‘কোয়ার্ডা’ ল্যাবে টেস্ট করতে দেন, তাও সামান্য কিছু মৌলিক টেস্টই তিনি দিয়ে থাকেন।

ব্যস্ততার মধ্যেও ডা. আর. হাসান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘সুচিকিৎসার জন্য মনোযোগ ও গভীর অনুসন্ধান দরকার। রোগীর মূল সমস্যাটি চিহ্নিত করা গেলে চিকিৎসা কঠিন নয়। এজন্য চিকিৎসকের অভিজ্ঞতা ও নিয়মিত পড়াশোনা থাকা অপরিহার্য।’

মুর্শিদাবাদের লোক ডা. হাসানের কাছে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সমাজের জ্ঞানী, গুণীজনের দেখা পাওয়া গেলো। পার্থ ঘোষ, গৌরী ঘোষ, সৃজন সেন, সাগর ভৌমিক, প্রীতিশ্রী রায় প্রমুখ বুদ্ধিজীবী, কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী তাদের স্বাস্থ্য বিষয়ক দায় ডা. হাসানের উপর ছেড়ে নিশ্চিন্তে আছেন।

ডা. হাসানের সঙ্গে তার রোগীদের দেখতে নার্সিং হোমেও গেলাম। অ্যাপোলোতে যে রোগী থাকলে ৫০ হাজার খরচ হবে, ‘নিউ এভিনিউ নার্সিং হোম’-এ তার খরচ হচ্ছে ২০ হাজার টাকা। হোমের মালিক ডা. এস. ঘোষ পিতা-মাতার ছবির নিচে বসে অফিস করেন। বললেন, ‘আমাদের কোনো মার্কেটিং ডিপার্টমেন্ট নেই। রোগীরাই আমাদের বিজ্ঞাপন। আমরা প্রকৃত চিকিৎসা খরচের এক পয়সা বেশি নিই না। নিবেদিতপ্রাণ কিছু চিকিৎসক এখানে রোগী দেখেন, অপারেশন করান। সাশ্রয়ী মূল্যে চিকিৎসা সেবা দিতে আমরা সচেষ্ট।’

স্বাস্থ্য সমস্যা হলেই বিদেশে লাফিয়ে চলে যাওয়া কোনো কাজের কথা নয়। সবচেয়ে ভালো ও প্রধান সমাধান হলো নিজের দেশের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থার মান ভালো করা। এক্ষেত্রে চিকিৎসকদের মনোযোগ বৃদ্ধি এবং ল্যাবরেটরিতে মানসম্পন্ন, সঠিক পরীক্ষা নিশ্চিত করে সেটা সম্ভব হতে পারে।

তথাপি চিকিৎসার্থে দেশের বাইরে গেলে ভালো করে খোঁজ-খবর করে, জেনে-বুঝে যাওয়াই উচিত। বিদেশে চলে গিয়ে একগাদা টাকা খরচ করলেই ভালো চিকিৎসা পাওয়া যাবে, এ ধারণা ভুল। ভালো চিকিৎসার জন্য ভালো চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে মানসম্পন্ন, ভালো ল্যাবরেটরি রির্পোটের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সমস্যার মূল কারণ চিহ্নিত করে চিকিৎসা গ্রহণ করাই উত্তম।

   

বয়সের ভারে শীর্ণ, তবু আজ ও ছুটেছে ১৫১ বছরের ট্রাম



ঋত্বিক মুখোপাধ্যায়, কলকাতা
-কলকাতার রাজপথে এখনও ছুটে চলছে ট্রাম

-কলকাতার রাজপথে এখনও ছুটে চলছে ট্রাম

  • Font increase
  • Font Decrease

সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বদলেছে সবকিছু। হয়েছে বিবর্তন। পুরনোকে বিদায় জানিয়ে নুতনকে স্বাগত জানিয়েছে মানুষ। পুরনো যা কিছু এখন দেখা যায় জাদুঘরে কিংবা কারও ব্যক্তিগত সংগ্রহে। একইভাবে সময়ের সঙ্গে তাল রেখে বদলেছে এক সময়ের ভারতবর্ষের রাজধানী কলকাতা । সময়ের পরিবর্তনে এখন যা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের প্রধান শহর।

অন্য আর পাঁচটা শহরের মত গতি পেয়েছে কল্লোলিনী কলকাতা। তবে ১৫১ বছর আগের কলকাতার একটা খন্ডচিত্রের অংশ ট্রাম এখনও দিব্যি চলছে কলকাতার বুকে । গেল ২৪ ফেব্রুয়ারি ছিল কলকাতার ট্রামের জন্মদিন । ১৮৭৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন ব্রিটিশ আমলে প্রথমবার শুরু রাস্তা দিয়ে চলে ঘোড়ায় টানা কাঠের ট্রাম।

শিয়ালদা থেকে আর্মেনিয়ান ঘাট পর্যন্ত প্রথমবার ছুটেছিল সেই ট্রাম। এই বছর কলকাতার সেই ট্রাম যাত্রা পা রাখতে চলেছে একশো একান্ন বছরে ৷ তবে প্রযুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ট্রামেরও বিবর্তন হয়েছে। ১৯০২ সালের ২৭ মার্চ ধর্মতলা খিদিরপুর-রুটে প্রথম বৈদ্যুতিক ট্রাম চলেছিল।

অনেকেই হয়তো জানেন না যে, ভারতে কলকাতা ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি শহরে একসময় চলত ট্রাম ৷ কলকাতার পর তৎকালীন মাদ্রাজ, দিল্লি, বোম্বে, কানপুর, ভাভনগর, নাসিক এবং পাটনাতেও শুরু হয়েছিল ট্রাম পরিষেবা। এমনকী ব্রিটিশ ইন্ডিয়ায় করাচি এবং কলম্বোতেও ছিল ট্রাম পরিষেবা। তবে সেগুলি সবই পরে বন্ধ হয়ে যায়। কল্লোলিনী কলকাতার জীর্ণকায়ে ট্রাম কোনওমতে বাঁচিয়ে রেখেছে নিজের অস্তিত্ব।

একসময় রমরম করে স্বমহিমায় শহরের বুক চিঁড়ে ঘণ্টির শব্দ করে দৌঁড়ে যেত ট্রাম ৷ সেই দৃশ্য এখন বড়ই বিরল । ঠাণ্ডা ঘরে ঢুকেছে ট্রামের ভবিষৎ । তাই বোধহয় ট্রামের ১৫১ বছর নিয়ে মানুষের মধ্যে উৎসাহ একেবারেই নেই । তবে শহরের ট্রামপ্রেমী সংগঠন ক্যালকাটা ট্রাম ইউজারস অ্যাসোসিয়েশন, ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন ও ট্রাম যাত্রা বলে একটি সংগঠনের উদ্যোগে এই উপলক্ষ্যে এক বিশেষ উদ্যোগ নেয়।

কলকাতায় ট্রাম পরিবহণ ব্যবস্থা অন্যান্য দেশের ট্রাম নেটওয়ার্ক তুলনায় অনেকটাই অন্যরকম। শতাব্দী প্রাচীন এই ট্রামগুলি এখনও পরিষেবা দিয়ে চলেছে । সাধারণ মানুষের মতে শুধুমাত্র ট্রামকে উন্নত করলেই চলবে না। ট্রাম এবং অন্যান্য পরিবহণ ব্যবস্থা যাতে একে অপরের সমস্যা সৃষ্টি না-করে পরিষেবা দিতে পারে সেইভাবে পরিকল্পনা করতে হবে ।

ট্রামের তার দেখিয়ে মহানগর কলকাতার পরিচয় তুলে ধরতে চেয়েছিলেন সত্যজিৎ। কিন্তু কলকাতার পরিচয় বহনকারী সেই ট্রাম এখন যেন ‘ফেয়ারওয়েল’ পাওয়ার অপেক্ষায়। দেড়শো বছর ধরে শহরের ‘ঐতিহ্য’ হয়ে থেকে গেলেও ‘হেরিটেজ’ তকমা জোটেনি তার।

;

হুগলির কোন্নগরে অনাদরে ভাষাশহিদ শফিউরের জন্মভিটা!



ঋত্বিক মুখোপাধ্যায়, কলকাতা
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারী আমি কি ভুলিতে পারি’ ১৯৫২ সালের তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকা শহরের একদল দামাল ছেলে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতির দাবিতে বর্বর পাকিস্তানি পুলিশের গুলির সামনে বুক পেতে দিয়েছিলেন। রক্তে ভেসে গিয়েছিল ঢাকার রাজপথ। সেইদিন স্মরণে ১৯৯৯ সালের ৭ নভেম্বর জাতিসংঘ ২১ ফেব্রুয়ারিকে 'আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস' হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। সারা পৃথিবীর মানুষ এই দিনটিকে 'ভাষা দিবস' হিসেবে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।

সেদিনের সেই রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের যে বীর শহিদেরা মাতৃভাষার সম্মানার্থে প্রাণ দিয়েছিলেরন, তাদের মধ্যে ছিলেন রফিক, জব্বার , শফিউর, সালাম, বরকতের মতোন যুবক। তাদের মধ্যে শফিউর রহমান ছিলেন ওপার বাংলার মানুষ। পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার কোন্নগরের কাছে জিটি রোডের ওপর এখনো তাদের বাড়িটি শহিদের জন্মভূমি হিসেবে দাঁড়িয়ে রয়েছে অত্যন্ত অবহেলায় ও অনাদরে!

অত্যন্ত আক্ষেপের বিষয় একজন ভাষাশহিদের জন্মভিটা আজ ধ্বংসের মুখে। ১৯১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি এই মহান ভাষাশহিদের জন্ম হয় কোন্নগরে। শফিউর রহমানের বাবা ছিলেন ঢাকার পোস্ট অ্যান্ড টেলিগ্রাফ অফিসের সুপারিনটেনডেন্ট। কোন্নগর হাইস্কুলে পড়া শেষ করে কলকাতা গভর্মেন্ট কমার্শিয়াল কলেজ থেকে আইএসসি পাস করার পর ১৯৪৮ সালের শফিউররা সপরিবারে ঢাকায় চলে যান। ঢাকা হাইকোর্টে কেরানির পদে কর্মরত ছিলেন তিনি। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে মাতৃভাষাকে রাষ্ট্র ভাষার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশে অন্যান্যদের সঙ্গে সামিল হয়েছিলেন শফিউরও।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪৪ ধারা অমান্য করে রফিক, জব্বার,সালাম, বরকত, শফিউরসহ হাজারও ভাষাপ্রেমী মানুষ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। সেদিনের সেই বিক্ষোভ সমাবেশে ঢাকা শহরের মানুষ শামিল হয়েছিলেন। ক্ষিপ্ত পাকিস্তানি পুলিশ সেই বিক্ষোভকে ছত্রভঙ্গ করতে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে দামাল ছেলেদের দেহ মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছিল। সেদিন প্রভাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের রাস্তা রক্তের নদীতে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু তাতেও দমেনি বিক্ষোভ সংগ্রাম। তাদের সেই মরণপণ সংগ্রাম আরো তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছিল। অবশেষে, ১৯৫৪ সালের ৭ মে পাকিস্তান সরকার বাংলা ভাষাকে পূর্ব পাকিস্তানের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। তারপর থেকেই এপার ওপার দুই বাংলা মিলিয়ে এই দিনটি শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করে আসছে। কিন্তু সব থেকে বড় আক্ষেপের বিষয়, সেদিনের সেই মরণপণ সংগ্রামের অন্যতম যোদ্ধা শফিউর রহমান যার জন্ম ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হুগলিতে, তাঁর সেই জন্মভিটাটি আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে অত্যন্ত অনাদর ও অবহেলায়।

সম্প্রতি, যখন পশ্চিমবঙ্গের বড় বড় দেশপ্রেমী মনীষীদের স্মরণে রাখতে তাঁদের জন্মভূমি এবং কর্মক্ষেত্রগুলি সরকার স্বীকৃতি দিয়ে তীর্থস্থানে পরিণত করেছে, কিন্তু সেই ১৯৫২ সালে ঢাকার মাটিতে শহিদ হওয়া সফিউর রহমানের কথা আজ আর কেউ আর মনে রাখেননি। যে বিদ্যালয়ে শফিউর পড়াশোনা করেছেন, পৌরসভার পক্ষ থেকে সেই কোন্নগর হাইস্কুলের একপাশে জিটি রোডের ধারে ছোট্ট একটি শহিদ বেদি তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। সেখানেই প্রতিবছর গুটিকয়েক মানুষ যারা শফিউর রহমানকে চেনেন, ভাষা আন্দোলনের বীরগাথার কথা জানেন, তারা ’২১-এর সকালে কয়েক মুঠো ফুল দিয়ে শহিদবেদিতে তর্পণ করেন।

কোন্নগরবাসীর অত্যন্ত আক্ষেপ, এই শহরে এত বড় একজন ভাষা শহিদ জন্ম নিয়েছিলেন, শিক্ষার প্রথম পাঠ হিসেবে এখানকার কোন্নগর হাইস্কুলে পড়াশোনা করেছিলেন, তাঁর কথা আজ আর কেউই মনে রাখেননি। স্থানীয়দের দাবি, শফিউরের বাড়িটি অন্তত সংরক্ষণ করা হোক অথবা তাঁর স্মরণে এই শহরে যদি একটি মিনার তৈরি করা হয়, তাহলে ভৌগলিক সীমানা অতিক্রম করে আপামর বাঙালি সেই গৌরবের অংশীদার হতে পারবেন। সেইসঙ্গে অমরত্ব পাবে ভাষা সংগ্রামের ইতিহাসও!

;

হেলিকপ্টার শট: 'শাকাহারি আমিষ' সংস্থায় বিনিয়োগ ধোনি-র!



ঋত্বিক মুখোপাধ্যায়, কলকাতা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

শাকাহারি আমিষ...তাও আবার হয় নাকি? এ যেন ঐ সোনার পাথর বাটির মত! আর এবার তাকে ঘিরেই এক বিপুল ব্যবসায়িক এবং বাণিজ্যিক সম্ভাবনার দ্বার যেন খুলে যাচ্ছে।

উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো ভারতবর্ষের যে সংস্থা এই ব্যবসায়িক বা বাণিজ্যিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য এগিয়ে এসেছে, তাকে বিনিয়োগ করে বসে আছেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক এবং অন্যতম জনপ্রিয়তম ইয়ুথ আইকন মহেন্দ্র সিং ধোনি বা মাহি। উল্লেখ করা যেতে পারে ধোনি তার ক্রিকেটীয় ক্যারিয়ারে কিছুটা অ-ক্রিকেটীয় শট বা উদ্ভাবনী শট - যেমন হেলিকপ্টার শট - এইসবের জন্যই বিখ্যাত ছিলেন। আর এইবার ব্যবসা-বাণিজ্য বিনিয়োগের জগতে প্রবেশ করেও বেছে নিবেন এক উদ্ভাবনী ব্যবসা।

শাকাহারিকে একটু উদ্ভাবনী উপায়ে লিখে শাখা হ্যারি- বাজারে এই সংস্থা আনতে চলেছে শাকসবজি বা গাছ পাতাভিত্তিক আমিষ খাদ্যদ্রব্য। ইতিমধ্যেই তারা বেশ কিছু এই ধরনের খাদ্যদ্রব্য বাজারে এনেছে এবং যা ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আর এবার তারা আরেকটি নতুন ব্র্যান্ড বা সাব-ব্র্যান্ড - শেফসক্লুসিভ নিয়ে দখল করতে চাইছে হোরেকা বা হোটেল রেস্টুরেন্ট এন্ড ক্যাফে - বাজারের এই অংশটিকে বা এই সেগমেন্টটিকে।

এর পেছনে কারণ ও যথেষ্ট রয়েছে। ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন বাজারে অত্যন্ত দ্রুত হারে বেড়ে চলেছে। ভারতের বাজারে খুব শিগগির এই হোরেকা সেগমেন্টের আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছবে বলে মনে করা হচ্ছে। বাজারে ক্রেতা বা উপভোক্তাদের পছন্দ এবং চাহিদা নিয়মিতই বদলাচ্ছে। নিরামিষ খাবারের দিকে যেমন ঝোঁক বাড়ছে, প্ল্যান্ট-বেসড প্রোটিন এর চাহিদাও বাড়ছে। এই দুইয়ের মধ্যে একটা সমন্বয় বা সামঞ্জস্য সাধনের লক্ষ্যেই শাকাহারি বাজারে নিয়ে আসছে শেফসক্লুসিভ। এই ব্র্যান্ডের অধীনে বাজারে আসছে হরেক রকমের স্নাক্স, স্টার্তার্স, মিলস এবং অ্যাকম্পানিমেন্টস। এবং এসবগুলোই আসছে উপভোক্তাদের স্বাদের সঙ্গে কোনরকম আপস না করেই।

উল্লেখ করা যেতে পারে, আর এক ক্রিকেটীয় মহা তারকা এবং প্রাক্তন ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলিও এই ধরনের একটি প্লান্ট বেসড প্রোটিন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছেন।

;

সঙ্গীতশিল্পী কবীর সুমন অক্সিজেন সাপোর্টে



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলা আধুনিক গানের শিল্পী কবীর সুমন বুকে সংক্রমণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে তাঁকে অক্সিজেন সাপোর্ট রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে কলকাতার বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার। তিনি কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

সোমবার (২৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় পত্রিকাটির অনলাইন ভার্সনে এ খবর জানানো হয়।

খবরে বলা হয়, “অসুস্থ সঙ্গীতশিল্পী কবীর সুমন। বুকে সংক্রমণ নিয়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ‘গানওয়ালা’। অক্সিজেন সাপোর্টে রাখা হয়েছে তাঁকে। সূত্রের খবর, সোমবার দুপুর ৩টে নাগাদ সঙ্গীতশিল্পীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের সুপার স্পেশালিটি ব্লকে ভর্তি করানো হয় তাঁকে।”

এদিকে, শিল্পী তাঁর ফেসবুকে ওয়ালে এক পোস্টে অসুস্থতার কথা জানিয়ে লিখেছেন, ‘শ্বাসকষ্ট নিয়ে কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। শিগগির সেরে উঠব। চিন্তা করবেন না।’

দৈনিক আনন্দবাজার হাসপাতাল সূত্রের বরাত দিয়ে জানায়, বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন সুমন। সোমবার তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বুকে সংক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর হৃদযন্ত্রেও সমস্যা রয়েছে শিল্পীর। তীব্র শ্বাসপ্রশ্বাসের কষ্টে ভুগছিলেন।

তাঁর চিকিৎসার জন্য একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে, তাঁর শারীরিক পরীক্ষাও করা হয়েছে। তবে তাঁর শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে জানিয়েছে দৈনিকটি।

;