প্রথমবার ভারতে ভোট দেবেন সাবেক ছিটমহলবাসী



সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ভারতের সাবেক ছিটমহলবসীদের কয়েকজন, ছবি: সংগৃহীত

ভারতের সাবেক ছিটমহলবসীদের কয়েকজন, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

পৃথিবীর ইতিহাসে এক জ্বলন্ত সমস্যা ছিল ছিটমহল। যুগযুগ ধরে চলে আসতে থাকা এই সমস্যার সমাধান হয়েছিল, ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই, মধ্যরাতে। ঐ দিনে বাংলাদেশ সীমানায় ভারতীয় ছিটমহলে থেকে এসেছিল ৯২২ জন। যদিও সে সময় ভাবা হয়েছিল বাংলাদেশ থেকে বিশাল আকারে জনগণ আসতে থাকবে। তা কিন্তু হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ প্রশাসনে দেশটি ছেড়ে বাকিরা আসেননি। তারা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেছিলেন সেখানেই থেকে যেতে।

যা দেখে তৎকালীন গোটা ভারতের মিডিয়া যথেষ্ট অবাক হয়েছিল। কারণ তারা ভেবেছিল বিশাল জমায়েতে শরণার্থীর মতো আসা দেখাতে পেরে তাদের টিআরপি বাড়বে। কিন্তু তাদের চিন্তায় পানি ঢেলে দিয়েছিল তৎকালীন বাংলাদেশের দক্ষ প্রশাসন। তবে এরকম একটা অমীমাংসিত সমস্যার সমাধান হওয়াটা খুবই জরুরি ছিল। আগামী দিনে আরও কিছু জ্বলন্ত সমস্যা আছে তাও অচিরে মিটে যাবে বলে, আশা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Apr/10/1554881785629.gif

সম্প্রতি কলকাতার এক সেমিনারে তিনি বলেছিলেন, 'ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে নদী প্রবহমান আছে। ভারত সেটা দেখে যাতে পানি বাধাপ্রাপ্ত না হয় এবং পাকিস্তানের গোটা ইরিগেশন সিস্টেম এই নদীর ওপর ভিত্তি করেই চলে। বাংলাদেশের সঙ্গে এরকম চুক্তি কিন্তু আজও হয়নি। কিন্তু তিস্তাও একই রকম বিষয়। বিশ্বে ভারত অন্যতম শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে উঠে আসছে। প্রতিটি শক্তিশালী দেশ অকপটে স্বীকার করে নেয় সমস্যাগুলো এবং সমাধানের পথ খোঁজে। ভারতও একদিন তা করবে। সাবেক ছিটমহলের ন্যায়, পানি বণ্টনের মতো জ্বলন্ত সমস্যাও মিটবে।'

তা তো সময় বলবে। তবে কোচবিহারে আগামীকাল (১১ এপ্রিল) নির্বাচনের আগে কেমন আছেন সাবেক ছিটবাসী তথা অধুনা পশ্চিমবঙ্গের ওই অঞ্চলের মানুষজন? কথা বলেছিলাম, অধ্যাপক দেবব্রত চাকী (সিনিয়র ফেলো মিনিস্ট্রি অফ কালচার গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া)-র সঙ্গে। যিনি দীর্ঘ সময় ধরে ইস্যুটি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Apr/10/1554881804348.gif

দেবব্রতবাবু জানান, এমনি যারা এখানে আছে, এজ ইউজুয়াল ভালই আছেন। অনেক উন্নতি হয়েছে এখানে। সরকারি সুযোগ-সুবিধা যা পাওয়ার তা তারা পাচ্ছেন। কিন্তু ৯২২ জন বাংলাদেশ সীমানার ভারতীয় ছিটমহল থেকে নতুন পরিবেশে এল তিনটে ক্যাম্পে, (মেখলিগঞ্জ, হলদিবাড়ি, দিনহাটা) তাদের পরিবার প্রতি যদি একজনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যেত তাহলে ভালো হতো। প্রতি মাসে না হলেও অস্থায়ীভাবে যদি কিছু করা যেত।

এছাড়া বিভিন্ন সময়ে যে প্রকৃত ভারতবাসী কোচবিহার রাজার আমলের থেকে ৫০০ পরিবার বসবাস করছিল যাদের প্রত্যেকের মহারাজার আমলের দলিল দস্তাবেজ, খাজনা রশিদ সবই আছে। এই মানুষগুলো যখন উদ্বাস্তু হয়ে এল, ছিটমহল বিনিময়ের পক্ষে এই মানুষগুলোকেও যুক্ত করা দরকার ছিল এবং এই মানুষগুলোর কথা অন্তত শোনা দরকার ছিল। কিন্তু শোনা হলো না।

আর সমস্যা বলতে, ছিটমহল হস্তান্তরের সময় ৯২২ জনের মধ্যে ৪০টা পরিবারের কথা বাংলাদেশ সরকারের ভাবা দরকার। যারা এখনও ফেলে আসা জমির টাকাটা পাইনি। জমিগুলোর কোনো ফয়সালা হয়নি বা কোন কমপেনসেশন পাইনি তারা। জমিগুলো এখন সরকারের তত্ত্বাবধায়নে আছে। এটাও একটা সমস্যা হয়ে আছে। এসব বাদ দিলে এখন তারা মেইনস্ট্রিমের সাথে যুক্ত হয়েছে। ভারতীয় নাগরিক যে রকম সুযোগ সুবিধা পাওয়ার কথা, তারাও সেটা পাচ্ছেন।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Apr/10/1554881822345.gif

এখন তো ভারতে নির্বাচন। কংগ্রেস যে নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করেছে তাতে তো বলা হয়েছে, যে বছরে গরিব পরিবার মাথাপিছু ৭২ হাজার রুপি বছরে পাবে। অর্থাৎ মাসে ৬০০০ পেলে তো ভালোই হবে।

কংগ্রেস এবার ক্ষমতায় আসছে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন দেবব্রতবাবু।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দুজনেই নির্বাচনী ভাষণ দিয়ে গেলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, 'এই অঞ্চলে ১১০০ কোটি রুপি ব্যয় এবং তাদের থাকার জমি দিয়েছে। অর্থাৎ উন্নতি কতটা হয়েছে?'

তিনি জানান, 'দেখুন রাজনীতির ভাষণ একরকম আর কাজ অন্যরকম। অর্থায়ন এবং পালন, এসবতো কেন্দ্রীয় সরকারের। তবে হ্যাঁ ভারতের যুক্ত রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে, বাস্তবায়ন করে রাজ্য সরকার। সে ক্ষেত্রে অঞ্চলগুলোর যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। ডেভেলপমেন্ট বলতে ধরুন, ওই সময়ের রাস্তাঘাট, বিশুদ্ধ পানি, সোলার বিদ্যুৎ, কমিউনিটি হল, প্রাইমারি স্কুল, চিকিৎসা ব্যবস্থা, ইরিগেশনের ব্যবস্থা, চাষের পানি মত অনেক কাজ হয়েছে। আর নির্বাচন এলে এসব কথা হবেই। এখন দেখার কে আসছেন কেন্দ্রে ক্ষমতায়।'

আমার বক্তব্য হলো, 'সমস্যার মধ্যেও কমবেশি সবাই ভালো আছে। আগামীতে তাদের আরও উন্নতি হবে। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সে সময় বাংলাদেশ থেকে আসা ৯২২ জন সহ ভারতীয় ছিটে থেকে গেছিলেন মোট পনের হাজার মানুষ এই বছর প্রথম নির্বাচনে অংশ নেবেন। এর আগের ভোটগুলিতে নথিপত্র জনিত সমস্যা থাকায় তারা ভোট দিতে পারেননি। প্রথম ভোটদান নিয়ে এলাকাবাসীদের মধ্যে উৎসাহ লক্ষ্য করা গেছে।'

   

নজরুল চর্চার স্বীকৃতিতে সম্মানিত সোমঋতা মল্লিক



কনক জ্যোতি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
নজরুল চর্চার স্বীকৃতিতে সম্মানিত সোমঋতা মল্লিক/বার্তা২৪.কম

নজরুল চর্চার স্বীকৃতিতে সম্মানিত সোমঋতা মল্লিক/বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease
 
ছায়ানট (কলকাতা) নজরুল চর্চায় নিবেদিত অগ্রণী প্রতিষ্ঠান। সভাপতি শিল্পী সোমঋতা মল্লিকের নেতৃত্বে শুধু ভারত বা বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে ছায়ানট।
 
নজরুল জীবন ও সাহিত্যকর্মের নিরিখে বছরব্যাপী অনুষ্ঠান পালনের পাশাপাশি ছায়ানট প্রকাশ করেছে নতুনের গান, জীবনীভিত্তিক ক্যালেন্ডার ও বর্ণময় প্রকাশনা। গবেষণা করছে নজরুল জীবনের গুরুত্বপূর্ণ প্রপঞ্চ।
 
কলকাতায় নজরুল স্মৃতিধন্য জনপদ ও স্থাপনাসমূহকে ধ্বংস, দখল ও অবলুপ্তির কবল থেকে রক্ষা করার কৃতিত্ব ছায়ানটের। সেসব স্থানে তথ্য ফলক দিয়ে সংরক্ষণের আওতায় এনেছে সংগঠনটি।
 
নজরুল জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে আলীপুর জেল কিংবা রাঁচি মানসিক হাসপাতাল ছিল তাৎপর্যবাহী। ছায়ানট সেসব স্থানে নজরুল কর্নাল ও তথ্যফলক দিয়ে নজরুলের সংগ্রামমুখর জীবনের ঐতিহাসিক পরম্পরাকে সজিব রেখেছে।
 
নজরুলচর্চায় নিবেদিত ছায়ানট (কলকাতা) - এর সভাপতি সোমঋতা মল্লিক স্বীকৃতি পেয়েছেন কলকাতার 'অন্বেষণ পরিবার' নামক সামাজিক, সাংস্কৃতিক, সাহিত্য সংগঠন কর্তৃক। তাকে এ উপলক্ষে সম্মান প্রদান করেন সংগঠনের শ্রী অমিতাভ। 
 
বার্তা২৪.কম'কে শিল্পী সোমঋতা মল্লিক বলেন, 'যেকোনো সম্মাননা কাজের প্রণোদনা আরো বাড়িয়ে দেয়। বিশ্বময় নজরুল চর্চা এগিয়ে চলুক, এই প্রত্যাশায় আমি ও ছায়ানট কাজ করে যাবে।'
 
;

কলকাতায় দুদিনব্যাপী 'নজরুল কবিতা উৎসব'



কনক জ্যোতি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
কলকাতায় দুদিনব্যাপী 'নজরুল কবিতা উৎসব'

কলকাতায় দুদিনব্যাপী 'নজরুল কবিতা উৎসব'

  • Font increase
  • Font Decrease

গত ৪ এবং ৫ এপ্রিল রবীন্দ্র সদন চত্বরে অবনীন্দ্র সভাগৃহে ছায়ানট (কলকাতা) - এর উদ্যোগে 'নজরুল কবিতা উৎসব ২০২৪' অনুষ্ঠিত হয়। দু দিনে শতাধিক শিল্পী একক/দলীয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। বিকেল ৫টা-রাত্রি ৯টা অনুষ্ঠিত হয় এই কবিতা উৎসব।

পরিকল্পনা ও পরিচালনায় ছায়ানটের সভাপতি সোমঋতা মল্লিক। নজরুল কবিতা উৎসবের উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট কবি এবং পশ্চিমবঙ্গ কবিতা আকাদেমির সভাপতি
মাননীয় সুবোধ সরকার। ৪ এপ্রিল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. শেখ কামাল উদ্দীন, অধ্যক্ষ- হিঙ্গলগঞ্জ মহাবিদ্যালয় ও সভাপতি- নজরুল চর্চা কেন্দ্র। তাঁর আলোচনার বিষয় ছিল 'বাংলা সাহিত্যে অভিনবত্বের দিশারী নজরুল'। ৫ এপ্রিল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. শেখ মকবুল ইসলাম (ডি. লিট.), বিভাগীয় প্রধান, বাংলা বিভাগ, সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল মিশন কলেজ, কলকাতা'। কাজী নজরুল ইসলামের ব্যক্তিগত জীবনের পাশাপাশি তাঁর সৃষ্টি নিয়ে গবেষণার অনেকখানি অবকাশ রয়েছে বলে উল্লেখ করেন ড. শেখ মকবুল ইসলাম।

একক পরিবেশনায় অংশগ্রহণ করেন ঊর্মিলা সেন, অতসী নন্দ গোস্বামী, বর্ণালী সরকার, পীতম ভট্টাচার্য, শম্পা দাস,
তাপস চৌধুরী, সুদীপ্ত রায়, শম্পা বটব্যাল, শুভদীপ চক্রবর্তী, নীলাঞ্জনা চট্টোপাধ্যায়, আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবযানী বিশ্বাস, ইন্দ্রাণী লাহিড়ী, শাশ্বতী ঘোষ, দেবলীনা চৌধুরী, সৌমিতা নস্কর, মিতালী ভট্টাচার্য্য, সুকন্যা রায়, তৃষিতা সাহা, এরিসা কামিলা, ইনশ্রী নাথ, শতাক্ষী নাথ, সোনালী চট্টোপাধ্যায়, মোনামি সামন্ত, দোয়েল চ্যাটার্জী, চিত্রা সোম বাসু, গোপা ভট্টাচার্য্য রায়, ইন্দ্রাণী নাগ, ডক্টর সৌমিত্র নারায়ণ শূর, মিতালী মুখার্জী, দীপ্তি বর্মন, অন্বেষা মুখার্জী, রাকা দাস, দেবলীনা দাশগুপ্ত, শর্মিলা মাজী, মোনালিসা শীল, অপর্না চক্রবর্তী, দীপিকা গোস্বামী, পাপিয়া ভট্টাচার্য, সৃজিতা ঘোষ, শাশ্বতী বাগচী, প্রাযুক্তা চক্রবর্তী, জয়িতা দত্ত এবং রুনা মুখার্জি।

দলীয় পরিবেশনায় অংশগ্রহণ করেন ছায়ানট (কলকাতা), আন্তরিক, বরানগর প্রতিশ্রুতি, নৈহাটি বঙ্কিম স্মৃতি সংঘ, আরশি হরিণঘাটা, প্রেরণা আবৃত্তি অনুশীলন কেন্দ্র, আমরা অ আ ক খ স্বরবর্ণ ব্যঞ্জনবর্ণ, অন্বেষণ, কাব্যপথিক, শ্রুতিবৃত্ত, আবৃত্তিওয়ালা, শৃণ্বন্তু, বৈখরী, পাঠশালা, অনন্ত উড়ান, অনুরণন, চেতনা, শ্রুতিকথন, যাদবপুর কথাছন্দ এবং প্রতিধ্বনি - এর শিল্পীবৃন্দ।

সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন সোমা মুখোপাধ্যায়, অপরাজিতা মল্লিক, দেবলীনা চৌধুরী এবং রাকা দাস।

ছায়ানটের সভাপতি সোমঋতা মল্লিক বলেন, "এ বছর দ্বিতীয়বারের মতো আমরা 'নজরুল কবিতা উৎসব' - এর আয়োজন করলাম। আমাদের প্রাণের কবি কাজী নজরুল ইসলামের সৃষ্টি নিয়ে ২ দিন ব্যাপী এই বিশেষ আয়োজনে বাচিকশিল্পীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে আমরা আপ্লুত।
অনেক বাচিক শিল্পীকে আমরা সুযোগ দিতে পারিনি, আমরা সত্যিই ক্ষমাপ্রার্থী, আগামী বছর আরও বেশীদিন ধরে এই আয়োজন করার চেষ্টা করব। কাজী নজরুল ইসলামের লেখা জনপ্রিয় কবিতার পাশাপাশি বেশ কিছু স্বল্পশ্রুত কবিতা আমরা শুনতে পেলাম এই কবিতা উৎসবে - এখানেই আয়োজনের সার্থকতা।"

;

বয়সের ভারে শীর্ণ, তবু আজ ও ছুটেছে ১৫১ বছরের ট্রাম



ঋত্বিক মুখোপাধ্যায়, কলকাতা
-কলকাতার রাজপথে এখনও ছুটে চলছে ট্রাম

-কলকাতার রাজপথে এখনও ছুটে চলছে ট্রাম

  • Font increase
  • Font Decrease

সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বদলেছে সবকিছু। হয়েছে বিবর্তন। পুরনোকে বিদায় জানিয়ে নুতনকে স্বাগত জানিয়েছে মানুষ। পুরনো যা কিছু এখন দেখা যায় জাদুঘরে কিংবা কারও ব্যক্তিগত সংগ্রহে। একইভাবে সময়ের সঙ্গে তাল রেখে বদলেছে এক সময়ের ভারতবর্ষের রাজধানী কলকাতা । সময়ের পরিবর্তনে এখন যা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের প্রধান শহর।

অন্য আর পাঁচটা শহরের মত গতি পেয়েছে কল্লোলিনী কলকাতা। তবে ১৫১ বছর আগের কলকাতার একটা খন্ডচিত্রের অংশ ট্রাম এখনও দিব্যি চলছে কলকাতার বুকে । গেল ২৪ ফেব্রুয়ারি ছিল কলকাতার ট্রামের জন্মদিন । ১৮৭৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন ব্রিটিশ আমলে প্রথমবার শুরু রাস্তা দিয়ে চলে ঘোড়ায় টানা কাঠের ট্রাম।

শিয়ালদা থেকে আর্মেনিয়ান ঘাট পর্যন্ত প্রথমবার ছুটেছিল সেই ট্রাম। এই বছর কলকাতার সেই ট্রাম যাত্রা পা রাখতে চলেছে একশো একান্ন বছরে ৷ তবে প্রযুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ট্রামেরও বিবর্তন হয়েছে। ১৯০২ সালের ২৭ মার্চ ধর্মতলা খিদিরপুর-রুটে প্রথম বৈদ্যুতিক ট্রাম চলেছিল।

অনেকেই হয়তো জানেন না যে, ভারতে কলকাতা ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি শহরে একসময় চলত ট্রাম ৷ কলকাতার পর তৎকালীন মাদ্রাজ, দিল্লি, বোম্বে, কানপুর, ভাভনগর, নাসিক এবং পাটনাতেও শুরু হয়েছিল ট্রাম পরিষেবা। এমনকী ব্রিটিশ ইন্ডিয়ায় করাচি এবং কলম্বোতেও ছিল ট্রাম পরিষেবা। তবে সেগুলি সবই পরে বন্ধ হয়ে যায়। কল্লোলিনী কলকাতার জীর্ণকায়ে ট্রাম কোনওমতে বাঁচিয়ে রেখেছে নিজের অস্তিত্ব।

একসময় রমরম করে স্বমহিমায় শহরের বুক চিঁড়ে ঘণ্টির শব্দ করে দৌঁড়ে যেত ট্রাম ৷ সেই দৃশ্য এখন বড়ই বিরল । ঠাণ্ডা ঘরে ঢুকেছে ট্রামের ভবিষৎ । তাই বোধহয় ট্রামের ১৫১ বছর নিয়ে মানুষের মধ্যে উৎসাহ একেবারেই নেই । তবে শহরের ট্রামপ্রেমী সংগঠন ক্যালকাটা ট্রাম ইউজারস অ্যাসোসিয়েশন, ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন ও ট্রাম যাত্রা বলে একটি সংগঠনের উদ্যোগে এই উপলক্ষ্যে এক বিশেষ উদ্যোগ নেয়।

কলকাতায় ট্রাম পরিবহণ ব্যবস্থা অন্যান্য দেশের ট্রাম নেটওয়ার্ক তুলনায় অনেকটাই অন্যরকম। শতাব্দী প্রাচীন এই ট্রামগুলি এখনও পরিষেবা দিয়ে চলেছে । সাধারণ মানুষের মতে শুধুমাত্র ট্রামকে উন্নত করলেই চলবে না। ট্রাম এবং অন্যান্য পরিবহণ ব্যবস্থা যাতে একে অপরের সমস্যা সৃষ্টি না-করে পরিষেবা দিতে পারে সেইভাবে পরিকল্পনা করতে হবে ।

ট্রামের তার দেখিয়ে মহানগর কলকাতার পরিচয় তুলে ধরতে চেয়েছিলেন সত্যজিৎ। কিন্তু কলকাতার পরিচয় বহনকারী সেই ট্রাম এখন যেন ‘ফেয়ারওয়েল’ পাওয়ার অপেক্ষায়। দেড়শো বছর ধরে শহরের ‘ঐতিহ্য’ হয়ে থেকে গেলেও ‘হেরিটেজ’ তকমা জোটেনি তার।

;

হুগলির কোন্নগরে অনাদরে ভাষাশহিদ শফিউরের জন্মভিটা!



ঋত্বিক মুখোপাধ্যায়, কলকাতা
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারী আমি কি ভুলিতে পারি’ ১৯৫২ সালের তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকা শহরের একদল দামাল ছেলে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতির দাবিতে বর্বর পাকিস্তানি পুলিশের গুলির সামনে বুক পেতে দিয়েছিলেন। রক্তে ভেসে গিয়েছিল ঢাকার রাজপথ। সেইদিন স্মরণে ১৯৯৯ সালের ৭ নভেম্বর জাতিসংঘ ২১ ফেব্রুয়ারিকে 'আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস' হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। সারা পৃথিবীর মানুষ এই দিনটিকে 'ভাষা দিবস' হিসেবে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।

সেদিনের সেই রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের যে বীর শহিদেরা মাতৃভাষার সম্মানার্থে প্রাণ দিয়েছিলেরন, তাদের মধ্যে ছিলেন রফিক, জব্বার , শফিউর, সালাম, বরকতের মতোন যুবক। তাদের মধ্যে শফিউর রহমান ছিলেন ওপার বাংলার মানুষ। পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার কোন্নগরের কাছে জিটি রোডের ওপর এখনো তাদের বাড়িটি শহিদের জন্মভূমি হিসেবে দাঁড়িয়ে রয়েছে অত্যন্ত অবহেলায় ও অনাদরে!

অত্যন্ত আক্ষেপের বিষয় একজন ভাষাশহিদের জন্মভিটা আজ ধ্বংসের মুখে। ১৯১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি এই মহান ভাষাশহিদের জন্ম হয় কোন্নগরে। শফিউর রহমানের বাবা ছিলেন ঢাকার পোস্ট অ্যান্ড টেলিগ্রাফ অফিসের সুপারিনটেনডেন্ট। কোন্নগর হাইস্কুলে পড়া শেষ করে কলকাতা গভর্মেন্ট কমার্শিয়াল কলেজ থেকে আইএসসি পাস করার পর ১৯৪৮ সালের শফিউররা সপরিবারে ঢাকায় চলে যান। ঢাকা হাইকোর্টে কেরানির পদে কর্মরত ছিলেন তিনি। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে মাতৃভাষাকে রাষ্ট্র ভাষার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশে অন্যান্যদের সঙ্গে সামিল হয়েছিলেন শফিউরও।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪৪ ধারা অমান্য করে রফিক, জব্বার,সালাম, বরকত, শফিউরসহ হাজারও ভাষাপ্রেমী মানুষ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। সেদিনের সেই বিক্ষোভ সমাবেশে ঢাকা শহরের মানুষ শামিল হয়েছিলেন। ক্ষিপ্ত পাকিস্তানি পুলিশ সেই বিক্ষোভকে ছত্রভঙ্গ করতে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে দামাল ছেলেদের দেহ মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছিল। সেদিন প্রভাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের রাস্তা রক্তের নদীতে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু তাতেও দমেনি বিক্ষোভ সংগ্রাম। তাদের সেই মরণপণ সংগ্রাম আরো তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছিল। অবশেষে, ১৯৫৪ সালের ৭ মে পাকিস্তান সরকার বাংলা ভাষাকে পূর্ব পাকিস্তানের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। তারপর থেকেই এপার ওপার দুই বাংলা মিলিয়ে এই দিনটি শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করে আসছে। কিন্তু সব থেকে বড় আক্ষেপের বিষয়, সেদিনের সেই মরণপণ সংগ্রামের অন্যতম যোদ্ধা শফিউর রহমান যার জন্ম ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হুগলিতে, তাঁর সেই জন্মভিটাটি আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে অত্যন্ত অনাদর ও অবহেলায়।

সম্প্রতি, যখন পশ্চিমবঙ্গের বড় বড় দেশপ্রেমী মনীষীদের স্মরণে রাখতে তাঁদের জন্মভূমি এবং কর্মক্ষেত্রগুলি সরকার স্বীকৃতি দিয়ে তীর্থস্থানে পরিণত করেছে, কিন্তু সেই ১৯৫২ সালে ঢাকার মাটিতে শহিদ হওয়া সফিউর রহমানের কথা আজ আর কেউ আর মনে রাখেননি। যে বিদ্যালয়ে শফিউর পড়াশোনা করেছেন, পৌরসভার পক্ষ থেকে সেই কোন্নগর হাইস্কুলের একপাশে জিটি রোডের ধারে ছোট্ট একটি শহিদ বেদি তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। সেখানেই প্রতিবছর গুটিকয়েক মানুষ যারা শফিউর রহমানকে চেনেন, ভাষা আন্দোলনের বীরগাথার কথা জানেন, তারা ’২১-এর সকালে কয়েক মুঠো ফুল দিয়ে শহিদবেদিতে তর্পণ করেন।

কোন্নগরবাসীর অত্যন্ত আক্ষেপ, এই শহরে এত বড় একজন ভাষা শহিদ জন্ম নিয়েছিলেন, শিক্ষার প্রথম পাঠ হিসেবে এখানকার কোন্নগর হাইস্কুলে পড়াশোনা করেছিলেন, তাঁর কথা আজ আর কেউই মনে রাখেননি। স্থানীয়দের দাবি, শফিউরের বাড়িটি অন্তত সংরক্ষণ করা হোক অথবা তাঁর স্মরণে এই শহরে যদি একটি মিনার তৈরি করা হয়, তাহলে ভৌগলিক সীমানা অতিক্রম করে আপামর বাঙালি সেই গৌরবের অংশীদার হতে পারবেন। সেইসঙ্গে অমরত্ব পাবে ভাষা সংগ্রামের ইতিহাসও!

;