রঙিন মাছ চাষে ভাগ্য বদলেছেন সাতক্ষীরার সাইফুল

  • এসএম শহীদুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

মাছ চাষি সাইফুল, ছবি: বার্তা২৪

মাছ চাষি সাইফুল, ছবি: বার্তা২৪

সৌখিন রঙিন মাছ চাষ করে ভাগ্য বদলেছেন সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার সাইফুল ইসলাম। সংসারে তার সুদিন ফিরেছে। অভাবকে করেছেন জয়। তিনি বাণিজ্যিকভাবে রঙিন মাছ চাষ করছেন।

শখের বশে প্রথমে রঙিন মাছের চাষ শুরু করেন সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলার সাইফুল ইসলাম। এই রঙিন মাছ চাষ করে পাল্টে গেছে তার জীবন। অর্থ উপার্জনের পাশাপাশি তাকে দেশব্যাপী পরিচিতিও এনে দিয়েছে। এখন তাকে সবাই চেনেন ‘রঙিন মাছের কারিগর’ হিসেবে।

বিজ্ঞাপন

কলারোয়া উপজেলার ব্রজাবক্স গ্রামের সাইফুল ইসলাম জানান, সংসারের অভাবের তাড়না থাকলেও শখ তার পিছু ছাড়েনি। নানা সংকটের মাঝেও তিনি রঙিন মাছ চাষ করেছেন। ২০০৪ সালে এক বন্ধুর সহায়তায় প্রথমে তিনি ছয় জোড়া রঙিন মাছ ৬২০ টাকায় ক্রয় করে এই মাছ চাষ শুরু করেন।

এক সময় তিনি শখের বসে রঙিন মাছ চাষ করলেও পরে একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে পুকুর ইজারা নেন। ঋণ নিয়ে রঙিন মাছ চাষের পরিধি বাড়ান।

বিজ্ঞাপন

আজ তার মূলধনই প্রায় ২৫ থেকে ২৬ লাখ টাকা। সাইফুল ইসলাম জানান, এক সময় তার আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। অভাবের কারণে ভারতে গিয়েছিলেন কাজের সন্ধানে। সেখানে একটি রঙিন মাছ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে খুব কম বেতনে চাকরি শুরু করেন। বিদেশে ভালো না লাগায় কিছু দিন পর তিনি দেশে ফিরে আসেন।

সংসার চালাতে রাজধানীর মিরপুরে একটি তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ শুরু করেন। কিন্তু ওই বেতনে বাসাভাড়া দিয়ে সংসার চলে না। ফিরে আসেন আবারও গ্রামে। এক বন্ধুর সহায়তায় প্রথমে তিনি ছয় জোড়া রঙিন মাছ নিয়ে চাষ শুরু করেন।

কিছুদিনের মধ্যেই পেলেন সফলতা। সেখান থেকেই মাছ চাষের সূচনা। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তার।

দারিদ্র্য জয়ের সিঁড়ি বেয়ে আজ তিনি সফল মাছ চাষি। এভাবেই ধীরে ধীরে আজ তিনি কাঙ্ক্ষিত জায়গায় এসে পৌঁছেছেন।

সাইফুল ইসলাম আরও জানান, ২০১৪ সালে পুকুর ইজারা নিয়ে বেশি করে রঙিন মাছ চাষ শুরু করেন। বর্তমানে বিশেষ পদ্ধতিতে কমেট, কই কার্প, গোল্ড ফিস, অরেন্ডা, মিল্কি, সিল্কি কই, কার্প, কিচিং গোরামিনসহ ২০ থেকে ২৫ প্রজাতির রঙিন মাছ তার পুকুরে উৎপাদন হচ্ছে। এই মাছ রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হয়।

তিনি জানান, এক সময় এ সব মাছ বিদেশে থেকে আমদানি করতে হতো। কিন্তু এখন তার হ্যাচারিতে উৎপাদন করা মাছ সাতক্ষীরার চাহিদা পূরণ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। রঙিন মাছের জন্য দেশের সবচেয়ে বড় বাজার রাজধানীর কাঁটাবন। সেখানকার ব্যবসায়ীদের অনেকেই তার কাছ থেকে রঙিন মাছ নিয়ে যান।

বিশেষ পদ্ধতিতে মাছের রঙ পরিবর্তনও করার কথাও উল্লেখ করেন সাইফুল ইসলাম। রঙ বদলিয়ে সিল্কি নামের একটি মাছ তৈরি করেন তিনি। অনেকটা জরির মতোই দেখতে। সে জন্যই নাম দিয়েছেন সিল্কি। রঙ পরিবর্তন করা এ মাছের চাহিদাও রয়েছে।

তিনি আরও জানান, বর্তমানে ১৬ থেকে ২০টি পুকুর ইজারা নিয়ে তিনি রঙিন মাছ চাষ করছেন। প্রতিটি মাছ সর্বনিম্ন ১২ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এই ব্যবসাকে ঘিরেই বড় ছেলের নামে ‘রেজা অ্যাকুরিয়াম ফিস’ নামের একটি আলাদা প্রতিষ্ঠানও তিনি শুরু করেছেন। এক সময় তিনি অন্যের শ্রমিক ছিলেন। এখন তার অধীনে ২৫ জন শ্রমিক কাজ করছেন।

সাইফুল ইসলাম জানান, উৎপাদন বাড়িয়ে দেশে রঙিন মাছের চাহিদা মেটানো সম্ভব। সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ পেলে এ ব্যবসা আরও সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা পেলে ব্যাপকভাবে রঙিন মাছ চাষ করে বিদেশে রফতানি করা সম্ভব হবে। তার মতো অনেকেই এখন রঙিন মাছ চাষ শুরু করেছেন।

সাইফুলের স্ত্রী জেসমিন সুলতানা জানান, ২০০৪ সালে স্বামীর সঙ্গে মাছ চাষে সহযোগিতা করে আসছেন। তাদের উৎপাদন করা মাছ রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাচ্ছে।

সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর এলাকার অ্যাকুয়ামিয়ামে রঙিন মাছ সংগ্রহকারী মোবাশ্বের হোসেন জানান, রঙিন মাছ দেশে উৎপাদন হওয়ায় অ্যাকুয়ারিয়ামে এই মাছ আমদানি অনেকটাই কমে এসেছে। এই খাতে দেশ ধীরে ধীরে স্বয়ংসম্পূর্ণ হচ্ছে।

সাতক্ষীরা সুলতানপুর বড় বাজারের নাহার এন্টার প্রাইজের সত্ত্বাধিকারী আজমল হক জানান, সাতক্ষীরার সাইফুল ইসলাম রঙিন মাছ উৎপাদন করার পর থেকে এখন খুব একটা বিদেশ থেকে এই মাছ আমদানি করতে হচ্ছে না। এছাড়া তার মাছ টেকসই ও প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে এটি অনেক সময় টিকে থাকে।