‘নির্বাচনকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলায় ছাত্রলীগ ঐক্যবদ্ধ থাকবে’
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রেজোয়ানুল হক চৌধুরী শোভন। কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীতে জন্মগ্রহণ করা শোভন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে পড়াশোনা করেছেন। ছাত্রলীগের দায়িত্ব পাওয়ার পর নিজের অভিজ্ঞতা, ছাত্রলীগ নিয়ে ভবিষ্যত চিন্তা ভাবনা ও নির্বাচনকালীন ছাত্রলীগের ভূমিকা কেমন হবে এসব বিষয় নিয়ে বার্তা২৪.কমের সঙ্গে কথা বলেছেন ছাত্রলীগ সভাপতি। রাজশাহীর সার্কিট হাউজে সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন সাইফ সাইফুল্লাহ।
বার্তা২৪.কম: কেমন আছেন?
রেজোয়ানুল হক চৌধুরী শোভন: আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি।
বার্তা২৪.কম: বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নিজে ঘোষণা করেছেন। ছাত্রলীগের রাজনৈতিক দর্শন ও ধারার আলোকে দুই মাসের নেতৃত্বে আপনার অভিজ্ঞতা কী?
শোভন: ছাত্রলীগ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজ হাতে গড়া সংগঠন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ছিষট্টির ছয় দফা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যূত্থান ও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। বঙ্গবন্ধু যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন, ছাত্রলীগ সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ।
বার্তা২৪.কম: ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নির্বাচনে সৎ, যোগ্য, মেধাবী, স্বচ্ছ রাজনৈতিক ধারণা ও রাজপথের শ্রম বিবেচনার পাশাপশি অন্য কোন বিষয়কে কি প্রাধান্য দেওয়া হবে?
শোভন: কর্মীদের একনিষ্ঠতা বিবেচনায় নেতৃত্বে আনা হবে। তবে এখন অঞ্চলভেদে মানুষ রাজনীতিতে অনেক বেশি আগ্রহী। নেত্রকোনা, জামালপুর, বরিশাল, ফরিদপুর অঞ্চলের অনেক মানুষ রাজনীতি করে। এসব অঞ্চলে যারা একনিষ্ঠতার সাথে রাজনীতি করেছে তাদের কিছুটা হলেও বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কারণ এক অঞ্চল থেকে একসাথে অনেকগুলো পদ দেওয়া সম্ভব না।
বার্তা২৪.কম: আগামী নির্বাচনে ছাত্রলীগের পদক্ষেপ কী হবে?
শোভন: ভোটারদের বৃহৎ অংশ তরুণ। ছাত্রলীগের লক্ষ্য হলো তরুণ ভোটারদের আওয়ামী লীগের পক্ষে উদ্বুদ্ধ করা। তরুণ প্রজন্ম অনেক সৃজনশীল এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী। সাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাসী সংখ্যা হাতেগুনা কয়েকজন। সাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী তরুণ প্রজন্মকে একত্রিত করে একই প্লাটফর্মে নিয়ে এসে নৌকার পক্ষে কাজ করানো এবারের লক্ষ্য।
বার্তা২৪.কম: নির্বাচনকালীন উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় ছাত্রলীগের ভূমিকা কী হবে?
শোভন: ছাত্রলীগ অনেক চরাই উতরাই পার করে এসেছে। সামনের নির্বাচনে দেশের পরিস্থিতি নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা রয়েছে। পূর্বের ধারাবাহিকতায় সকল পরিস্থিতি মোকাবেলায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবে।
বার্তা২৪.কম: বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নেতৃত্ব নির্বাচনে স্থানীয়রা প্রাধান্য পাওয়ায় অন্য অঞ্চলের ছাত্রলীগ কর্মীরা সুযোগ না পেয়ে হতাশ হয়ে রাজনীতি বিমুখ হয়ে পড়ে, এ বিষয়ে আপনি কী বলবেন।
শোভন: মৌলবাদী ছাত্র সংগঠন শিবিরের অপতৎপরতা মোকাবেলায় স্থানীয় রাজনীতিবিদদের সহায়তার প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে স্থানীয় রাজনীতিবিদদের দৃষ্টিভঙ্গি আরও উদার হতে হবে। একজন ছাত্রলীগ কর্মীকে স্থানীয় দৃষ্টিভঙ্গির উর্ধ্বে আচরণ করতে হবে।
বার্তা২৪.কম: ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঢাকার বাইরের নেতা-কর্মীদের উল্লেখযোগ্য মূল্যায়ন হওয়ার পেছনে কারণ কী?
শোভন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বা মহানগরে যারা রাজনীতি করে, তারা কিছুটা সুবিধা পান। কারণ তারা সহজেই সারাদেশে নেটওয়ার্কিং করতে পারেন। কিন্তু বাইরে যারা আছে তাদের পক্ষে তা সম্ভব হয় না। এছাড়া নেতৃত্ব মেনে নেওয়ারও একটি বিষয় রয়েছে। সে জায়গায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্ব সকলেই মানে।
বার্তা২৪.কম: ছাত্রলীগের বিভিন্ন মেয়াদোত্তীর্ণ শাখা কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি দেওয়ার বিষয়ে কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত কী?
শোভন: আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে নতুন কমিটি দিবো না। এখন কমিটি ভাঙলে শাখাগুলো সাংগঠনিকভাবে দূর্বল হয়ে পড়বে। নির্বাচনের পর নতুন কমিটি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করবো।
বার্তা২৪.কম: ছাত্রলীগ নিয়ে আপনার ভবিষ্যত চিন্তা কী?
শোভন: এমন একটি ছাত্রলীগ দেখতে চাই, যে ছাত্রলীগ দেখে সবাই গর্ব করবে। পিতা-মাতা গর্ব করে বলবে আমার সন্তান ছাত্রলীগ করে।
বার্তা২৪.কম: সম্প্রতি ঘোষিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায় নিয়ে ছাত্রলীগের প্রত্যাশা কী ছিলো?
শোভন: বঙ্গবন্ধুর অস্থিত্বকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করা হয়েছিলো ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। মূল উদ্দেশ্য ছিলো শেখ হাসিনাকে হত্যা করা। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ভালোবাসার কারণে দেশরত্ন সেদিন বেঁচে যান। মানুষ মানবঢাল তৈরি করে তাকে বাঁচিয়েছিলো। সেদিন ২৩ জন নেতাকর্মীকে আমরা হারিয়েছি। ৩০০ জনের অধিক নেতাকর্মী আহত হয়। আমরা চেয়েছিলাম সবার যেন ফাঁসির আদেশ হয়।
বার্তা২৪.কম: অনেক ব্যস্ততার মাঝে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
রেজোয়ানুল হক চৌধুরী শোভন: বার্তা২৪.কমকেও অনেক ধন্যবাদ।