কোটা আন্দোলনের ৫ নেতা আহত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে 'নিরাপদ বাংলাদেশ চাই' ব্যানারে সমাবেশ করতে গিয়ে অতর্কিত হামলায় আহত হয়েছেন পাঁচ আন্দোলনকারী। হামলাকারীরা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা।
রোববার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুর তিনটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) অভ্যন্তরে এই হামলার ঘটনা ঘটে।
আহত পাঁচজন হচ্ছেন বিনইয়ামিন মোল্লা, তারেক রহমান, আহমেদ কবির, জসিম উদ্দিন আকাশ ও সোহরাব হোসেন। নিরাপত্তা জনিত কারণে আহতদের প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এরা সবাই কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্লাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক।
আহত সোহরাব হোসেন বার্তা ২৪ কে বলেন, 'আমরা ব্যক্তিগতভাবে 'নিরাপদ বাংলাদেশ চাই' ব্যানারে রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান কর্মসূচির পালনের জন্য দুপুর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে বসে ছিলাম। পরে দুপুরের খাবার খেতে টিএসসির ভেতরে গেলে ছাত্রলীগের ৮০ থেকে ৯০ জন কর্মী আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা করে। হামলাকারীদের মধ্যে সোহান, শহীদুল, আনোয়ার ও মামুন অন্যতম। হামলায় আমাদের পাঁচজন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।'
উল্লেখ্য, হামলায় নেতৃত্ব দেয়া সোহানুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি। আর শহীদুল শান বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের স্কুল-ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক। এরা সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসের অনুসারী। তবে, তাৎক্ষনিকভাবে আনোয়ার ও মামুনের পুরো পরিচয় পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক নুরুল হক নুর বার্তা ২৪ কে জানান, 'কিছু ছাত্র নিজেদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থেকে 'নিরাপদ বাংলাদেশ চাই' ব্যানারে রাজু ভাস্কর্যে একটা মানব বন্ধন করতে চেয়েছিল। তাদের সাথে আমাদের সংগঠনের কিছু লোক ছিল। কিন্তু অবস্থানের পূর্বেই ছাত্রলীগ ওদের ওপর অতর্কিত হামলা করে। এতে আমাদের পাঁচজন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর।'
হামলার কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আসলে ছাত্রলীগ কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরু থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। কারণ তাদের একটাই কথা, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা যেন কোথাও কোনো আন্দোলন করতে না পারে। আমাদের ওরা শত্রু ভাবে। ওরা অতীত ক্ষোভ থেকে আমাদের ওপর হামলা করেছে। এমনকি আমরা প্রশ্ন ফাঁসের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন করেছি সেই আন্দোলনেও তারা হামলা করেছে। ওরা দেখছে আমরা সাধারণ ছাত্রদের পক্ষে কথা বলি যেটা ওদের বিরুদ্ধে যায়। এজন্য ওরা হামলা-মামলা করে আমাদের দমাতে চায়। আমাদের ভয় দেখাতে চায়। যাতে সাধারণ ছাত্ররা আমাদের সাথে না আসে।'
প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে নুরুল হক বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ওদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না। যে কারণে ওরা আরও সাহস পাচ্ছে এধরনের কাজ করার। আমরা ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্ম-কাণ্ডের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানাই। এর প্রতিবাদে আমরা কর্মসূচি দেব।'
হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী বার্তা ২৪ কে বলেন, 'হামলার মর্মে আমার কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। তবে ভিন্ন সূত্রে জানার পর আমি প্রক্টরিয়াল টিমকে সেখানে পাঠিয়েছিলাম। প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে তারা জানিয়েছে কোনো একটা গ্রুপ কিছু করার জন্য তৎপরতা চালাচ্ছিল। এই কারণে দুই গ্রুপের মধ্যে একটা সংঘর্ষ হয়েছে।'
হামলার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস জানান, 'হামলার বিষয়ে আমি এখনও কিছু জানি না। খোঁজ নিয়ে পরে জানাব।'