বিতর্কের মুখেই বঙ্গবন্ধু চেয়ারের দায়িত্ব নিচ্ছেন চবি উপাচার্য
সিন্ডিকেটের জোর আপত্তি আর নীতিমালার তোয়াক্কা না করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) বঙ্গবন্ধু চেয়ারের দায়িত্বভার গ্রহণ করছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী। নীতিমালা কমিটির প্রধান হয়েও এবং যোগ্যতা না থাকার পরও এ পদে আসীন হতে চাওয়ায় তাকে নিয়ে প্রগতিশীল শিক্ষকদের মাঝে বিরাজ করছে ক্ষোভ আর হতাশা।
মর্যাদাপূর্ণ এই আসনে স্বাধীনভাবে কাজ করার জন্য একজন বঙ্গবন্ধু গবেষক নিয়োগের দাবি তাদের। তবে অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী।
ঢাকা ও ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচলিত বঙ্গবন্ধু চেয়ারের নীতিমালা পর্যালোচনা করে ২০১৭ সালের ২৭ অক্টোবর চবির ৫১০তম সিন্ডেকেট সভায় বঙ্গবন্ধু চেয়ারের অনুমোদন দেওয়া হয়। বাংলাদেশের উন্নয়ন, রাজনীতি, ইতিহাস প্রভৃতি বিষয়ে অধ্যাপক সমমর্যাদা সম্পন্ন একজন বিশিষ্ট গবেষক বঙ্গবন্ধু চেয়ারে অধিষ্ঠ হন। তিনি অধ্যাপকের সমান বেতন-ভাতা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকার সুবিধা পান। এক বছরের মেয়াদ হলেও ক্ষেত্র বিশেষে তা দু’বছর করার সুযোগ রয়েছে।
ওই সভায় বঙ্গবন্ধু চেয়ার সৃষ্টি এবং প্রবর্তনের ব্যাপারে পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রণয়নের লক্ষ্যে উপাচার্যকে প্রধান এবং বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রারকে সদস্য সচিব করে সাত সদস্যবিশিষ্ট কমিটি করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরিন আখতার, কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সেকান্দর চৌধুরী, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মহীবুল আজিজ, নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক মাইনুল হাসান চৌধুরী।
নির্দেশনা মোতাবেক কমিটি ২০১৮ সালের ৭ মে ও ৩ সেপ্টেম্বর এবং চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি তিন দফা বৈঠক করেন। সর্বশেষ সভায় সর্ব সম্মতিক্রমে পূর্ণাঙ্গ একটি নীতিমালা সিন্ডিকেটে অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হয়। ওই সভায় নীতিমালা অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হয়। একইসাথে পদের জন্য উপাচার্যের নাম প্রস্তাব করা করা হয়। কিন্তু সুপারিশকৃত ওই সভায় কমিটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরিন আখতার উপস্থিত ছিলেন না। ফলে সভার সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. সেকান্দর চৌধুরী।
গঠিত কমিটির তিনদফা প্রস্তাবনা ও কার্যক্রম ২৩ ফেব্রুয়ারি নগরীর চারুকলা ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত ৫২০তম সভায় রিপার্ট আকারে তুলে ধরেন। এক্ষেত্রে বিষয়টি সিন্ডিকেটের এজেন্ডা না করে রিপোর্ট হিসেবে আনায় দুই সিন্ডিকেট সদস্য নোট অফ ডিসেন্ট দেন। সিন্ডিকেট সদস্যদের আপত্তি এবং যথাযথ নিরীক্ষার পরও উপাচার্য নীতিমালা না মেনেই বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) বঙ্গবন্ধু চেয়ারের দায়িত্বভার গ্রহণ করছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. সুলতান আহমেদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, সিন্ডিকেটে পদের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। কেবল পদ পরিচালনার বিষয়ে নীতিমালা অনুমোদন করা হয়। আর রিপোর্ট আকারে সিন্ডকেটে আনায় এ নিয়ে দুই সদস্য নোট অফ ডিসেন্ট দেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু চেয়ারের অনুমোদনের বিষয়ে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল সুপারিশ করে, কিন্তু নীতিমালা তৈরি হওয়ার পর অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের মতামত ছাড়াই সিন্ডিকেটে পাঠিয়ে দেয়। এক্ষেত্রে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করা হয়নি। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় স্ট্যাটিউটের ১৩ এর (গ) ধারা অনুযায়ী উপাচার্য রিপোর্ট টু সিন্ডিকেট দিয়ে কাজ চালিয়ে নিতে পারে। তবে এক্ষেত্রে স্ট্যাটিউটের ১৩ এর (গ) ধারায় বলা হয়েছে, শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি অবস্থায় উপাচার্য তাৎক্ষণিক যে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন। সেক্ষত্রে পরে সিন্ডিকেটকে অবহিত করতে হবে।
নীতিমালায় বলা আছে, বঙ্গবন্ধু চেয়ারে নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একাধারে ২০ বছরের গবেষণা এবং স্বীকৃত জার্নালে বঙ্গবন্ধুর ওপর কমপক্ষে ১০টি প্রকাশনা থাকতে হবে। উপাচার্যের এ যোগ্যতা নিয়ে স্বয়ং বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য ও সাবেক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. কাজী এস. এম. খসরুল আলম কুদ্দুসী।
বার্তা২৪.কমকে তিনি বলেন, এ পদের দায়িত্ব নেওয়ার ব্যাপারে যার নাম শুনছি, তিনি দু’টি শর্ত পূরণ করেন না। তিনি প্রণয়ন এবং নির্বাহী কমিটির সভাপতি পদে থেকে দায়িত্ব নিতে পারেন না। বঙ্গবন্ধু আমাদের আবেগের ভালোবাসার স্থান। তরুণ প্রজন্মের মাঝে তাঁকে তুলে ধরতে এ পদে অন্তঃপ্রাণ বঙ্গবন্ধু গবেষক নিয়োগ দেওয়া হলে এর সার্থকতা অর্জন করা যাবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বার্তা২৪.কমকে বলেন, ইনশাআল্লাহ আগামীকাল (৭ মার্চ) বঙ্গবন্ধু চেয়ারের উদ্বোধন হবে। তিনি বাংলাদেশের নন, বিশ্বের সম্পদ। তাই বঙ্গবন্ধু চেয়ার লাইব্রেরিতে নেওয়া হয়েছে।
সিন্ডিকেটের আপত্তি এবং নীতিমালার বিষয়ে উপাচার্য বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী সিন্ডিকেটে রিপোর্টে কোনো নো অফ ডিসেন্ট দেওয়া যায় না। রিপোর্ট সিন্ডিকেটে অনুমোদন দিয়েছেন। এ বিষয়ে কেউ প্রতিবেদন করলে সরাসরি রাষ্ট্রবিরোধী মামলা দেব।