এন এস কলেজে শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ
নাটোর: নাটোরের নবাব সিরাজ-উদ্-দৌলা সরকারি কলেজের (এন এস সরকারি কলেজ) উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রীরা বিভাগীয় প্রধান কাজী ইসমাইল হোসেনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন। এই অভিযোগ এনে স্থানীয় সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন তারা।
ছাত্রীদের দাবি, বিভাগের শিক্ষকরা প্রাইভেট বাণিজ্যের আড়ালে ছাত্রীদের যৌন হয়রানি করেন। এমনকি, বিভাগের প্রভাষক শরিফুল ইসলাম যৌন হয়রানির বিষয়টি জেনেও ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।
গত বৃহষ্পতিবার (১১ এপ্রিল) রাতে অভিযোগ সম্বলিত চিঠি স্থানীয় সাংবাদিকদের হাতে পৌঁছান তারা। তারপর থেকেই এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। বিষয়টি নজরে নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগ।
চিঠিতে ছাত্রীরা লিখেছেন, বিভাগের শিক্ষকদের কারণে তারা অনিরাপদবোধ করছেন। কয়েকদিন আগে বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রী বিভাগীয় প্রধান কাজী ইসমাইলের মাধ্যমে হয়রানির শিকার হন। বিষয়টি জানাজানি হলে তাকে কলেজে যেতে নিষেধ করেন অভিযুক্ত শিক্ষক। তবুও অভিযোগ জানাতে গেলে তাকে অপর শিক্ষক শরিফুল ইসলাম তাকে তাড়িয়ে দেন। বর্তমানে ওই ছাত্রীকে নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
‘ছাত্রনেতাদের সহায়তায় পুরো বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন বিভাগের প্রভাষক শরিফুল ইসলাম। এর আগে আরেক বিভাগের এক ছাত্রী একই ঘটনার শিকার হলে অভিযুক্ত শিক্ষককে বদলি করা হয়। দিনদিন অভিযুক্ত শিক্ষকরা বেপরোয়া হয়ে ওঠায় ছাত্রীরা ক্লাসে যেতে শঙ্কাবোধ করছেন।’
সহকর্মীদের পক্ষে কলেজের অধিকাংশ শিক্ষক সাফাই গাইলেও দু-একজন ঘটনাটিকে ‘লজ্জাজনক’ ও ‘বিব্রতকর’ বলে মন্তব্য করেছেন। আর এ বিষয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, তারা বিভাগের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চায় না। তবে ক্যাম্পাসের বাইরে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী স্বীকার করেন, তারা এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির ব্যাপারে শুনছেন।
এ বিষয়ে জানতে গত বৃহষ্পতিবার (১১ এপ্রিল) সকালে কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগে যাওয়া হলে অভিযুক্ত শিক্ষককে পাওয়া যায়নি। তবে অভিযুক্ত আরেক প্রভাষক শরিফুল ইসলামকে কলেজের প্রশাসনিক ভবনে পাওয়া যায়। তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে দুপুরের পর কথা বলব।’ কিন্তু দুপুরের পর থেকে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
অপরদিকে অভিযুক্ত শিক্ষক কাজী ইসমাইল হোসেন ছুটি নিয়ে বাড়িতে গেছেন বলে জানায় কলেজ কর্তৃপক্ষ। অভিযোগের ব্যাপারে তার বক্তব্য নিতে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সামসুজ্জামান বলেন, একজন ছাত্রী যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে বলে শুনেছি। লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনে কমিটি করে ঘটনা তদন্ত করা হবে।
জেলা পুলিশ সুপার সাইফুল্লাহ আল মামুন বলেন, নিরাপত্তাহীনতার বিবরণ দিয়ে লেখা ছাত্রীদের চিঠির ব্যাপারে জেনেছি। আমরা খোঁজ নিয়ে দেখছি। সেই সাথে ভিকটিম বা ছাত্রীদের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তা পুলিশকে দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শাহরিয়াজ বলেন, সাংবাদিকদের মাধ্যমে ছাত্রীদের অভিযোগের বিষয়ে প্রাথমিকভাবে জেনেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।