অরক্ষিত শহীদ মিনার, ঘষামাজা শুধু ফেব্রুয়ারিতেই
ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নির্মিত হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। ১৯৫৭ সালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির তত্ত্বাবধানে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯৬৩ সালে।
কিন্তু শহীদদের আত্মত্যাগের এই গৌরবস্থল আজ অবহেলা, বঞ্ছনা ও ময়লা-আবর্জনার স্তূপে পরিণত হয়েছে। কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলায় শহীদ মিনার এলাকায় বিভিন্ন রকম অশালীন, অনৈতিক, নিয়মবহির্ভূত কর্মকাণ্ড ঘটেই চলছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সন্ধ্যার পরে শহীদ মিনার এলাকা মাদকসেবীদের অখড়ায় পরিণত হয়। নিয়মিত পরিষ্কার করার কথা থাকলেও দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের সেদিকে নজর নেয়। তাই ফেব্রুয়ারি ঝকঝকে শহীদ মিনার বছরের অন্য সময়টায় থাকে অপরিষ্কার।
গত ১১ বছর ধরে রাতের বেলা শহীদ মিনার দেখাশোনার কাজে নিয়োজিত আছেন সিটি করপোরেশনের কর্মচারী রিয়াদ। তিনি বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ’ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কতো আল্পনা করে, কতো যত্ন করে মানুষকে দেখানোর জন্য দেয়ালে আল্পনা করে! অথচ সেখানেই অনেকে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করেন।’
রিয়াদ বলেন, ‘হাইকোর্ট থেকে সিটি করপোরেশনকে বলা হয়েছে সকাল-বিকাল এটি পরিষ্কার করার জন্য। কিন্তু তারা তিন দিনে একবার অথবা সপ্তাহে একবার আসে। সিটি করপোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাশেদুরকে এই দায়িত্ব দেওয়া হলেও তাকে ফোন দিয়ে পাওয়া যায়না।’
শহীদ মিনারের আশপাশ যেন পরিণত হয়েছে ফুটপাতের দোকান রাখার আশ্রমখানায়। রিয়াদ বলেন, 'যে কেউ এসে দোকানপাট তালা মেরে রেখে চলে যায়। কিছু বলতে গেলে অমুক-তমুক নেতার নাম বলে। শহীদ মিনারের বেদীতে জুতা খুলে উঠতে বললে অনেকে ধমক দেন।’
শহীদ মিনারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে কয়েকটি তথাকথিত মাজার। মাজারের পাশেই অন্ধকার জায়গা, যেখানে সব ধরণের অনৈতিক কর্মকাণ্ড চলে। সেখানে একটি জানালা ভাঙা ঘর রয়েছে, রাত ১২টার পর এখানে বসে গাঁজা, মাদক ইয়াবার আড্ডা।
শহীদ মিনারের উত্তর পাশ হাঁটার জন্য সম্পূর্ণ অনুপযোগী। ভাসমান মানুষরা এখানে নিয়মিত প্রস্রাব-পায়খানা করেন। শহীদ মিনারে কোনো পাবলিক টয়লেট না থাকায় এটি আরও প্রকট হচ্ছে।
শহীদ মিনারের বেদীর উপরে উঠা-নামায় পবিত্রতা রক্ষার্থে বিডি ক্লিনার নামে একটি সংগঠনের লিখিত কিছু প্ল্যাকার্ড থাকলেও তা শহীদ মিনারের অব্যবহৃত জায়গায় পড়ে আছে। জানা যায়, বিডি ক্লিনার নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বেশকিছু দিন যাবৎ সংগঠনটি শহীদ মিনার পরিষ্কার করছিলেন। তবে শহীদ মিনারে জুতা নিয়ে উঠা এক বৃদ্ধকে ঝাড়ু দিয়ে মারার অভিযোগ উঠে বিডি ক্লিনারের এক কর্মীর বিরুদ্ধে। সেই ঘটনার জের ধরে তাদের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড.একেএম গোলাম রব্বানীর কাছে এই অব্যবস্থাপনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শহীদ মিনারের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে একজন লোক রয়েছে। তিনিই দেখাশোনা করেন। যাবতীয় সবকিছু তারাই দেখেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আসলে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে শহীদ মিনারে ফুল দেওয়া, প্রোগ্রাম করার ক্ষেত্রে অনুমতি দেওয়া। কিন্তু সার্বক্ষণিক রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সম্পূর্ণ মন্ত্রণালয় তথা সিটি করপোরেশনের হাতে।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের (যার অধীনে রয়েছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার) পরিচ্ছন্নতার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা রাশেদুর রহমানের কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুসারে শহীদ মিনারের পরিচ্ছন্নতার জন্য তিন জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী থাকার কথা। সেখানে আরও একজন বাড়িয়ে মোট চার কর্মীকে শহীদ মিনার পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য রেখেছি।’
‘আমাদের কর্মীরা প্রতিদিনই সকালে নিয়মিত পরিচ্ছন্নতার কাজটি করে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সারাদিন অনেক দর্শনার্থী শহীদ মিনার পরিদর্শনে আসেন, ফলে দ্রুত এটি নোংরা হয়ে যায়।’