শেষের অংক মেলাতে পারল না বাংলাদেশ! ভারত ফাইনালে
শেষের অংকই মিলে না বাংলাদেশের! ‘বিগ’ ম্যাচে প্রতিপক্ষ ভারত হলেই যেন সহজ হিসেবও ঘুলিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। সিনিয়র দলের সেই কু-অভ্যাস এবার জুনিয়রদেরও আকঁড়ে ধরলো!
আর এই শেষের এই হিসেব মেলাতে না পারায় অনুর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের ফাইনালে খেলা হলো না বাংলাদেশের। সেমিফাইনালে বাংলাদেশ হেরে গেল ২ রানে। জয় যখন মনে হচ্ছিল হাতের মুঠোয়, ঠিক তখনই ছিটকে গেল বাংলাদেশ। আহা এত কাছে তবু কত দুরে...!
‘বিগ’ ম্যাচ থেকে আরেকবার এমন হতাশা, এমন দুঃখ নিয়েই ফিরলো বাংলাদেশ। ভারতের গড়া ১৭২ রানের জবাবে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ ১৭০ রানে।
অথচ এই সেমিফাইনালে একসময় মনে হচ্ছিল বাংলাদেশ বড় ব্যবধানেই জিতে যাবে। ৬৫ রানে ৫ উইকেট হারানো বাংলাদেশকে ঠিকই টেনে তোলেন আকবর আলী ও শামীম হোসেন। এই দুজনের ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে আসা ১৫.৪ ওভারে ৭৪ রান বাংলাদেশকে সহজ জয়ের স্বপ্নই দেখাচ্ছিল। কিন্তু ৪৫ রানে আকবর আলী ফেরার পর দুঃশ্চিন্তার কালো ছায়া সেই যে ভর করল বাংলাদেশের ইনিংসে। আর সেখান থেকে মুক্তি মিললো না। শামীম হোসেন ৫৯ রান করে যখন আউট হলেন তখন ম্যাচ জিততে বাংলাদেশের চাই ১৩ রান। শেষের দুই উইকেটে বাংলাদেশ এই হিসেবও মিলিয়ে দেবে-এমন আশা নিয়েই বসেছিলেন সবাই। কারণ তখন হাতে ওভার যে প্রচুর। রকিবুল ও মিজানুরের শেষ জুটি জয়ের একেবারে দ্বারপ্রান্তে পৌছে দিয়েছিলেন বাংলাদেশ অনুর্ধ্ব-১৯ দলকে।
কিন্তু ঐ যে, শেষের হিসেবে গরমিল! শেষটায় একটু বেশি তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে মিজানুরের রান আউটে বাংলাদেশ অলআউট! স্কোরবোর্ডে তখন বাংলাদেশের সঞ্চয় ১৭০।
জয় থেকে দল ২ রান দুরে! রুদ্ধশ্বাস এই সেমিফাইনাল জিতে ভারতীয় দল একদিকে আনন্দে মত্ত, অন্যদিকে চোখে জল এবং মাথা নিচু করে বাংলাদেশের জুনিয়র দলের ভাবনা তখন- কেন এমন হয়?
বাংলাদেশ-ভারত ক্রিকেট ম্যাচ মানেই এখন শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইয়ের গল্প। সেটা সিনিয়র বা জুনিয়র যে কোন দলেরই হোক না কেন? দুবাইয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালে দুই দলের সিনিয়রদের অমন লড়াইয়ের পর ঢাকায় অনুর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের সেমিফাইনালেও মিললো সেই রুদ্ধশ্বাস ক্রিকেট ম্যাচের আমেজ। যে আমেজটা এখানেও বেশি উপভোগ্য ভারতের কাছে। কেননা ম্যাচ জিতেছে যে তারা। আর এই জয়েই ভারত পৌছে গেল অনুর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের ফাইনালে।
ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ কে সেটা নির্ধারিত হবে ৫ অক্টোবর আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কার সেমিফাইনাল শেষে।
সেমিফাইনালে সাফল্যের বাগানটা সাজিয়েছিল বাংলাদেশের বোলাররা। খানিকবাদে সেই বাগান যে নষ্ট করেন এলেন ব্যাটসম্যানরা! ১৭২ রান টপকে যেতে না পারার কারণ আর কিছু নয়- স্লো ব্যাটিং ব্যর্থতা এবং কিছু মানষিক দ্বিধা! ভারতের ১৭২ রানের জবাবে বাংলাদেশের ইনিংসের চেহারা ছিল ৬৫ রানে ৫ উইকেট নেই! সে সময়টা ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ভারতের হাতে। বাংলাদেশের ডাগআউটে সবার চেহারা তখন দুঃশ্চিন্তায় ঝুলে পড়া মুখ! ষষ্ঠ উইকেটে আকবর আলী ও শামীম হোসেনের ব্যাটে ধীরে ধীরে সরে গেল হতাশার মেঘ। মিডলঅর্ডারের এই দুই ব্যাটসম্যানের ব্যাটেই মিললো ফাইনালে খেলার আলোর রেখা। কিন্তু এই দুজন প্রাথমিক বিপদ থেকে দলকে উদ্ধার করতে পারলেও কেউ যে ফিনিসার হতে পারলেন না। ম্যাচ জেতাতে হলে কাউকে তো অন্তত ফিনিসারের দায়িত্ব পালন করতে হয়। সেই শূণ্যতাই পুরুণ করতে পারল না বাংলাদেশ এই সেমিতে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: ভারত ১৭২/১০ (৪৯.৩ ওভারে, জাসওয়াল ৩৭, রাওয়াত ৩৫, বাদোনি ২৮, সামির ৩৬, শরিফুল ৩/১৬, মৃত্যুঞ্জয় ২/২৭, রিশাদ ২/৩৬, হৃদয় ২/৪)। বাংলাদেশ: ১৭০/১০ (৪৬.২ ওভারে, মাহমুদুল হাসান ২৫, শামীম হোসেন ৫৯, আকবর আলী ৪৫, জাঙ্গরা ৩/২৫, দেশাই ৩/৩৫, ত্যাগি ২/২৯)। ফল: ভারত ২ রানে জয়ী।