দায় বিসিবির, দায় সাকিবেরও বটে!
এশিয়া কাপ ক্রিকেটে খেলতে গিয়ে সাকিবের আঙ্গুলের চোট বাড়ে। এতই বাড়ে যে তাকে টুর্নামেন্টের মাঝপথ থেকে দেশে ফিরে আসতে হয়। শুধু তাই নয়, দেশে ফিরে তাকে জরুরি ভিত্তিতে অস্ত্রোপচারে যেতে হয়। যথাসময়ে চিকিৎসা না নেয়ায় তার চোটে পড়া বামহাতের কনে আঙ্গুলের ঘায়ে ইনফেকশান ধরা পড়ে। ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসকরা তার সেই ইনফেকশান থেকে ৫০-৬০ মিলি লিটার পুঁজ বের করেন। অবস্থা এমন শোচনীয় দাড়ায় যে চিকিৎসকরা আশঙ্কা করেন আর কিছুটা দেরি হয়ে সাকিবের সেই আঙ্গুল চিরতরে অকোজো হয়েও যেতে পারত!
এখন আঙ্গুলের চোট সারানোর চেয়ে ইনফেকশান নিয়েই সাকিবকে বেশি ভাবতে হচ্ছে। ইনজুরিতে পড়া আঙ্গুলের পরবর্তী চিকিৎসা পদ্ধতি কী হবে সেটা জানতে শুক্রবার রাতে সাকিব মেলবোর্ন গেছেন। যাওয়ার আগে যা শুনিয়েছেন সেটা আরও বড় দুঃসংবাদ-‘এই আঙ্গুলটা আর কখনোই শতভাগ ঠিক হবে না। যেহেতু নরম হাড়, আর কখনো এটা জোড়া লাগার সম্ভাবনা নেই। পুরোপুরি ঠিক হবে না। অস্ত্রোপচার করে ওরা এমন একটা অবস্থায় এনে দেবে হাতটা, ব্যাট ভালভাবে ধরতে পারবো, ক্রিকেট চালিয়ে যেতে পারবো।’
প্রশ্ন হল, সাকিবের মতো এমন হাই প্রোফাইল ক্রিকেটারের ইনজুরির এমন শোচনীয় অবস্থা কেন হলো? বিস্তারিত উত্তরটা খুঁজতে একটু পেছনের ঘটনা জানতে হবে।
সাকিব কনিষ্ঠ আঙ্গুলের যে ইনজুরিতে পড়েছেন সেটা কিন্তু নতুন কোন ইনজুরি নয়। চলতি বছর জানুয়ারিতে ঢাকায় তিনজাতি ক্রিকেটের ফাইনালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মিরপুরে ফিল্ডিংয়ের সময় সাকিব তার সেই আঙ্গুলে প্রথম চোট পান। সঙ্গে সঙ্গে সেদিনই স্ক্যান করা হয় তার চোটগ্রস্ত আঙ্গুলে। সাকিবের সেই চোট নিয়ে বিসিবির সেই সময়ের দেয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয় দলের চিকিৎসক ডা. দেবাশীষ চৌধুরীর বক্তব্যটা ছিল এমন-‘ এক্সরে তে কোন চিড় ধরা পড়েনি। যদিও তার বঁ হাতের আঙ্গুলের নিচের অস্থিসন্ধিটা মচকে গেছে। একজন কসমেটিক সার্জন সাকিবকে দেখেছেন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসাও করেছেন।’
সাকিব চোটের কারনে ২৭ জানুয়ারির ফাইনালে আর ব্যাট করতে নামতে পারেননি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুটি টেস্ট ম্যাচও মিস করেন তিনি। কিন্তু মার্চে শ্রীলঙ্কায় নিদাহাস কাপ ট্রফিতে শেষের দিকে খেলতে যান। সেই টুর্নামেন্টে ফাইনালসহ দুটি ম্যাচ খেলেন। এবং আঙ্গুলের চোট কিন্তু তখনো সারেনি সাকিবের!
এপ্রিলে ভারতে আইপিএল শুরু হয়। ভারতের ঘরোয়া সেই টি-টুয়েন্টি টুর্নামেন্টে সাকিব তার নতুন দল সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে সবগুলো ম্যাচ খেলেন। এবং কনে আঙ্গুলের চোট নিয়েই!
জুনের প্রথম সপ্তাহে আফগানিস্তানের বিপক্ষে দেরাদুনে তিন ম্যাচের টি-টুয়েন্টি সিরিজ খেলে বাংলাদেশ। সাকিব এই তিনটি টি-টুয়েন্টিতেই খেলেন। এবং তখনো তাকে পুরানো চোট ভোগাচ্ছিল!
জুলাইয়ের পুরোটা জুড়েই সাকিবের কাটে ক্রিকেটীয় ব্যস্ততার মধ্যে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই টেস্ট, তিনটি ওয়ানডে এবং তিনটি টি-টুয়েন্টির সবগুলোতেই খেলেন। এবং যথারীতি সেই সিরিজেও সাকিবের আঙ্গুলের পুরানো চোট নিয়েই খেলেছিলেন!
৯ আগস্ট দেশে ফিরে সাকিব জানান-অনেক হয়েছে। আর না। এবার চোটে পড়া আঙ্গুলে অস্ত্রোপচার করাতে চান তিনি। পুরোপুরি চোটের সমস্যা থেকে মুক্তি চাই তার। ঠিক তখনই বিসিবি থেকে নির্দেশনামার আকারে অনুরোধ এল-‘এই অস্ত্রোপচার এশিয়া কাপের পরে করাও। এশিয়া কাপ অনেক গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্ট।’
বিসিবি’র এই প্রেসক্রিপসান গিলতে বাধ্য হলেন সাকিব। না করতে পারলেন না! এশিয়া কাপে খেললেন।
এবং সেই আঙ্গুলের ইনজুরি নিয়েই খেললেন। এবার আর পুরোটা শেষ করতে পারলেন না। মাঝপথেই পুরানো চোটের যন্ত্রণায় দেশে ফিরতে হল তাকে।
তাহলে কি দাড়াল ব্যাপারটা? চলতি বছর জানুয়ারির শেষে আঙ্গুলে চোট পান সাকিব। সেই চোট নিয়ে দুটি টেস্ট ম্যাচ এবং সবমিলিয়ে বছরের পাঁচটি টি-টুয়েন্টি মিস করেন। কিন্তু ইনজুরিতে পড়ার পর খেলেন ৮টি টি-টুয়েন্টি, সাতটি ওয়ানডে ও দুটি টেস্ট ম্যাচ। এবং আইপিএলের কঠিন পরিশ্রমের মৌসুমটাকেও এর সঙ্গে যোগ করে নিন।
সবই আবার সেই ইনজুরি নিয়েই! ইনজুরিকে উপেক্ষা করে কখনো খেললেন বিসিবির অনুরোধের ঢেকি গিঁলে। আবার কখনো নিজের ক্যারিয়ার কমিটমেন্ট রক্ষায়। আঙ্গুলের অস্থিসন্ধির চোটকে বছরজুড়ে একঅর্থে অবহেলাই করলেন সাকিব আল হাসান।
বিসিবি ভাবল চোট নিয়ে আইপিএল খেলতে পারলে দেশের হয়ে কেন খেলা যাবে না। সাকিবও আঙ্গুলের চোট সইলেন। কিন্তু বিসিবিকে আর চটাতে চাইলেন না।
নিষ্ঠুর ক্রিকেটীয় সেই চাপেই পিষ্ঠ সাকিবের কনে আঙ্গুল! আহত থেকে ক্রমশ এখন ‘নিহত’ হওয়ার পথে!