সুয়ারেজের হ্যাটট্রিক, রিয়ালের জালে বার্সার ৫ গোল
বিস্ময়কর! না তারচেয়েও বেশি। রিয়াল মাদ্রিদ-বার্সেলোনা দ্বৈরথ এতোটা একপেশে হবে কে ভেবেছিল? মাঠের চির শত্রুর কাছে এভাবে রিয়াল উড়ে যাবে নিশ্চয়ই অনুমানও করেন নি বিশ্লেষকরা। কিন্তু হিসাবের ছক উল্টে দেওয়া ঘটনাই ঘটল। একেবারে হতাশ করা এল ক্লাসিকোতে হেসে-খেলে জিতল বার্সেলোনা।
রোববার স্প্যানিশ প্রিমেরা লিগায় চির প্রতিদ্ধন্দীর বিপক্ষে লুইস সুয়ারেজ করলেন হ্যাটট্রিক। আর ন্যু-ক্যাম্পে রিয়ালকে ৫-১ গোলে উড়িয়ে দিল বার্সেলোনা।
মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকোতেই রিয়ালকে দুঃস্বপ্ন উপহার দিল বার্সা। এই জয়ে লা লিগার পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষে উঠে গেছে কাতালান ক্লাবটি। দশ ম্যাচে তাদের পয়েন্ট এখন ২১। ১৯ পয়েন্ট নিয়ে এরপরই আছে অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ। ১৪ পয়েন্ট নিয়ে ৯ নম্বরে রিয়াল মাদ্রিদ।
ম্যাচে সুয়ারেজ করেন তিনটি গোল। অন্য দুটি গোল ফিলিপে কৌতিনিয়ো অার আর্তুরো ভিদালের। রিয়ালের হয়ে একমাত্র গোলটি করেন মার্সেলো।
ইতিহাস জানাচ্ছে-২০০৯ সালের পর এবারই প্রথম রিয়ালের জালে এতো বেশি গোল দিতে পেরেছে বার্সা। ওই বছর ৬-১ গোলে জয় তুলে নিয়েছিল কাতালান ক্লাবটি।
১১ বছর পর এবারই প্রথম লিওনেল মেসি আর ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে ছাড়া হয়ে গেল কোন এল ক্লাসিকো। মেসি ইনজুরির কারণে মাঠে বাইরে। আর মৌসুমের শুরতেই জুভেন্টাসে নাম লিখিয়েছেন রোনালদো।
কিন্তু মেসির অভাবটা একটুও টের পেতে দেননি সুয়ারেজ। অসাধারন ফুটবলের পসরা সাজিয়েছিলেন তিনি। যদিও ম্যাচে প্রথমে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগটা এসেছিল রিয়াল মাদ্রিদের সামনে। খেলার অষ্টম মিনিটে ম্যাচের সুযোগটা মিস করেন করিম বেনজেমা।
তারপর অবশ্য অতিথিদের ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে দেয়নি কাতালান ক্লাবটির ফুটবলাররা। ১১তম মিনিটে এগিয়ে যায় বার্সা। কৌতিনিয়োর গোলে গ্যালারিতে বসে আনন্দে মাতেন মেসি। ১৯তম মিনিটে থিবো কোর্তোয়া প্রতিরোধ গড়ে না তুললে ব্যবধানটা দ্বিগুণই হতে পারতো।
তবে ৩০তম মিনিটে ঠিকই ২-০ গোলে এগিয়ে যায় বার্সা। স্পট কিকে গোল করতে ভুল করলেন না সুয়ারেজ। ডি-বক্সে রাফায়েল ভারানের ট্যাকলে পড়ে যান তিনি। এরপর রেফারি ভিএআর প্রযুক্তিতে সাহায্য নিয়ে পেনাল্টির বাঁশি দেন।
দ্বিতীয়ার্ধের ৫ মিনিট না যেতেই ব্যবধানটা কমিয়ে দেন মার্সেলো। ডান পায়ের অসাধারন এক শটে এই ব্রাজিলিয়ান বল পাঠিয়ে দেন বার্সেলোনার জালে। লেভেন্তের বিপক্ষে গোলের রেশ থাকতেই ফের সাফল্য পেলেন মার্সেলো।
এরপর অবশ্য ম্যাচে ফেরার একাধিক সুযোগ পেয়েছিল রিয়াল। কিন্তু গোল সোনার হরিণ হয়েই থেকেছে। বিশেষ করে ৫৬ মিনিটে লুকা মডরিচের শট থেকে উড়ে গিয়ে বল পোষ্টে লাগে।
গোলের দেখা পেয়ে উজ্জীবিত হয়ে ওঠা রিয়াল একের পর এক আক্রমণ করতে থাকে। ৫৬তম মিনিটে সমতাও টানতে পারতো তারা; কিন্তু ডি-বক্সের মধ্যে থেকে লুকা মদ্রিচের শট পোস্টের নিচের অংশে লাগে। ৬৭তম মিনিটে লুকাস ভাসকেসের ক্রসে মাথা ছুঁইয়ে ছিলেন বেনজেমা। কিন্তু তার হেড ক্রসবারের উপর দিয়ে চলে যায়।
তবে এরপরের সময়টুকু শুধুই বার্সার। ৭৫তম মিনিটে ফের সুয়ারেজ ম্যাজিক। সার্জিও রবের্তার বলে দুর্দান্ত এক হেডে দলকে আরো এগিয়ে দেন উরুগুয়ের এই মহাতারকা।
তারপর খেই হারিয়ে ফেলে রিয়াল মাদ্রিদ। সেই সুযোগটা নিয়ে রীতিমতো গোল উৎসবেই মেতেছে বার্সা। ৮৩তম মিনিটে সেই রবের্তোর পাস বল পেয়ে হ্যাটট্রিক গোলটা করে ফেলেন সুয়ারেজ (৪-১)।
তারপর ক্লাব ফুটবলের সেরা দ্বৈরথটা আরো ম্লান করে দেন ভিদাল। খেলার ৮৭তম মিনিটে রিয়ালের উসমান ডেম্বেলের পাসে বল পেয়ে শেষ গোলটা করেন তিনি। দুঃস্বপ্নের মতো একটা একটা ম্যাচ শেষে মাথা নীচু করেই মাঠ ছাড়েন সার্জিও রামোসরা।
এই দুঃখ ভুলতে অনেক অনেক দিন লাগবে রিয়ালের!