মাশরাফি ক্রিকেটের ছিলেন, ক্রিকেটেরই আছেন!
৪ ডিসেম্বর। স্থান মিরপুর শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়াম। গোল হয়ে ঘিরে দাড়ানো মাশরাফির সামনে সাংবাদিকদের ভিড়। রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু করা নিয়ে সেটাই সাংবাদিকদের সঙ্গে তার প্রথম আনুষ্ঠানিক আলাপ-আলোচনা, প্রশ্ন-উত্তর পর্ব।
প্রথম প্রশ্নটাই যেন হঠাৎ শরীর ধেয়ে উড়ে আসা বাউন্সার!
-খেলার মাঝেই রাজনীতিতে জড়ালেন, এই সিরিজের ক্রিকেটের দিকে আপনার ফোকাস ঠিক থাকবে তো?
মাশরাফির জবাব-‘অবশ্যই থাকবে। আমার ফোকাস হারানোর কোন কারণ নেই। আমার পুরোপুরি অনুশীলনে মন আছে। রাজনীতি-নির্বাচন নিয়ে মনোযোগ দেবো ১৪ ডিসেম্বরের পর।’
১৪ ডিসেম্বর রাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের ওয়ানডে সিরিজ শেষ হচ্ছে। মাশরাফির সেসময়ের কথাই বলছেন। তার আগ পর্যন্ত ক্রিকেটই তার মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে। কথাটা যে স্রেফ বলার জন্য বলা-তা নয় সেটা একেবারে মাঠে করেও দেখালেন মাশরাফি। রাজনীতিতে নাম লেখানোর পর নিজের প্রথম ম্যাচে খেলতে নেমেই দলকে জেতাতে সবচেয়ে বড় ভুমিকাই তার। তাও আবার যেনতেন ধরনের নয়। পুরোদুস্তর ম্যাচ সেরার পারফরমেন্স! ১০ ওভারে ৩০ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যান অব দ্য ম্যাচ!
রাজনীতিতে নেমেছেন। নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন ফর্ম তুলেছেন। ফর্ম পূরণ করেছেন। দলের মনোনয়নও পেয়েছেন। মনোনয়নপত্র গৃহীতও হয়েছে তার। মাশরাফি এখন রাজনীতিক। তবে তারচেয়েও বেশি এখনো তিনি ক্রিকেটার; ২২ গজের মাঠের পারফরমেন্সেই তার প্রমাণ। সিরিজের প্রথম ম্যাচে উভয় দলের ২২ জন ক্রিকেটার খেললেন। কিন্তু সবাইকে ছাড়িয়ে মাশরাফিই ম্যাচসেরা।
যে জিততে জানে, সে সবসময়েরই বিজয়ী!
এই সিরিজ শুরুর আগে সামাজিক মাধ্যম থেকে শুরু করে ভিন্নমতের রাজনীতিতে বিশ্বাসী জনেরা এবং সাধারন, এমনকি অসাধারনের কৌতুহল এসে থামে এক প্রশ্নে-রাজনীতিতে নাম লেখানো মাশরাফি কি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে নিজের ক্রিকেটীয় মনোসংযোগ বা ফোকাস ঠিক রাখতে পারবেন?
টানা ৭ ওভারের প্রথম স্পেলে মাত্র ১৪ রান খরচ। ১০ ওভারে ৩০ রানে ৩ উইকেট শিকার। সাকুল্যে মাত্র একটি ওয়াইড। ৬০ বলের মধ্যে ৪১টিই ডটবল! স্লো উইকেটে ঠিক কিভাবে বল করতে হয়-তার একটা দুর্দান্ত উদাহরণ তৈরি অধিনায়কের দুই স্পেলের বোলিংয়ে। ওয়ানডেতে মাশরাফি এরচেয়ে ভাল বোলিংও করেছেন। কিন্তু সিরিজের প্রথম এই ম্যাচ খেলতে নামার আগে চারধারের বিরুদ্ধ ও সমালোচক মহল থেকে যে প্রচন্ড মানষিক চাপ তাকে সহ্য করতে হয়েছে সেটা উতরে যাওয়াটাও ছিলো তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তবে মাঠের বাইরে এসব ইস্যুর জবাব দেয়ার কোনকিছু দেখছেন না মাশরাফি। ক্যারিয়ারের ২০০ নম্বর ওয়ানডেতে ম্যাচ সেরা হওয়ার পর অধিনায়ক বলছেন-‘না আসলে জবাবের কি আছে? জবাবের কিছু নেই। তবে হ্যাঁ, খারাপ খেললে কথা উঠতো। কথা বলতো। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এসবের প্রসঙ্গে জবাব দেয়ার কিছু নেই। আমি ১৮ বছর ধরে ক্রিকেট খেলছি, এতো সহজে ফোকাস সরার তো কথা না। আমি জানি না সবাই নিজেকে ঠিকমতো চিনে কিনা কিন্তু আমি নিজেকে ঠিকই চিনি, তাই এত সহজে ফোকাস (ক্রিকেট থেকে) সরার কথা না। আর শেষের কিছুদিন ধরে তো আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি, বলটা যেখানে করতে চাই সেখানে ঠিকমতো করতে পারছি না। আর জবাব-টবাবের কিছু নেই।’
ক্রিকেটীয় ফোকাস সংক্রান্ত প্রশ্নটা শুনেছিলেন মাশরাফি ৪ ডিসেম্বর। সেদিন উত্তর দিয়েছিলেন মাইক্রোফোনের সামনে। ৯ ডিসেম্বর উত্তরটা আরেকবার দিলেন, এবার ২২ গজে, বল হাতে।
কোন কথা না বলেও তাহলে অনেককিছুর জবাব দেয়া যায়! মাশরাফির ম্যান অব দ্য ম্যাচের ট্রফি তো সেটাই শেখালো!